দুর্গাপার্বণ: সন্ধিপূজায় চৌষট্টি যোগিনীর উদ্দেশে ৬৪টি পদ্ম দেওয়া হয় মল্লিক ফটকের ভট্টাচার্য পরিবারে

নিজস্ব প্রতিনিধি: পুজোর ঢাকে কাঠি ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে। বনেদিবাড়ির ঠাকুরদালানও সেজে উঠছে উমার আগমনে। বনেদিবাড়িতে দশভূজা মহিষমর্দিনীর আরাধনা যেমন হয় নিষ্ঠার সঙ্গে তেমনই পরম্পরার রীতিনীতিও থাকে প্রবল। তেমনই এক বনেদিবাড়ি হল হাওড়ার মল্লিক ফটকের ভট্টাচার্যবাড়ি।

হাওড়া জেলার বনেদিবাড়িগুলির মধ্যে অন্যতম হল ভট্টাচার্যবাড়ি। আন্দুলের শঙ্করী কালীমন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ভৈরবীচরণ বিদ্যাসাগরের (ভট্টাচার্য) পূর্বপুরুষ দক্ষিণ রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ সমাজভুক্ত নোয়াপাড়া অঞ্চলের শাণ্ডিল্য গোত্রীয় ‘ভট্টাচার্য’ উপাধিধারী বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের রঘুনাথ তর্কবাগীশ আন্দুলের দত্তচৌধুরী কর্তৃক সপরিবার প্রতিষ্ঠিত হন। এই রঘুনাথ তর্কবাগীশ শুরু করেছিলেন পরিবারে দুর্গার আরাধনা ১৬৫১ সালে।

আনুমানিক ১৭৬৫ সালে ভৈরবীচরণের কনিষ্ঠ পুত্র গোপীমোহন ভট্টাচার্য আন্দুলের সমস্ত সম্পত্তি ছেড়ে দিয়ে হাওড়া অঞ্চলের মল্লিক ফটকে চলে আসেন। আন্দুলের তৎকালীন জমিদার বসুমল্লিকদের দান করা ভদ্রাসনের ওপর তৈরি হয়েছিল ঠাকুরদালান সমেত বসতবাড়িও, কারণ মল্লিকদের গুরুবংশ ছিল ভট্টাচার্য পরিবার। এই ভাবেই হাওড়া অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল মল্লিক ফটকের ভট্টাচার্যবাড়ি।

গোপীমোহনের দ্বিতীয় পুত্র রামনারায়ণের চারটি পুত্রসন্তানের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উমাচরণ। আন্দুলের বাড়িতে পুজো শুরু হয় ১৬৫১ সালে এবং প্রাচীন পুজোটি স্থান পরিবর্তন করে মল্লিক ফটকের বাড়িতে চলে আসে আনুমানিক ১৭৬৫ সালে।

এই বাড়িতে দেবী সিংহবাহিনী দশভূজা, সঙ্গে রয়েছেন তাঁর চার সন্তান অর্থাৎ সেই সাবেকি ডাকের সাজের প্রতিমাই তৈরি হয় ভট্টাচার্যবাড়িতে। এই বাড়ির পুজো শুরু হয় রথযাত্রার দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে। তার পর শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে ঘট বসিয়ে চণ্ডীপাঠ হয়। এই বাড়ির পুজো হয় কালিকাপুরাণ মতে, দক্ষিণাচারী তান্ত্রিক পদ্ধতি মেনেই। অতীতে মহিষবলি ও পাঁঠাবলি হত। বর্তমানে পশু বলিদান বন্ধ, তবে প্রতীকী বলিদান হয় সেই পুরাতন খাঁড়া দিয়ে।

দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন ঠাকুরদালানেই নবপত্রিকার স্নান হয়। তার পর বরণ করে নবপত্রিকাকে স্থাপন করা হয়। পুজোর সব ক’টি দিনে অন্নভোগ দেওয়া হলেও সন্ধিপূজার সময় লুচিভোগ দেওয়া হয় দেবীকে এবং এই সময়ে একটি বিশেষ পূজা হয়। চৌষট্টি যোগিনীর পূজা, যাতে ৬৪টি পদ্ম নিবেদন করা হয়। মহানবমীর দিন কুমারীপুজো হয় এবং দশমীর দিন ভট্টাচার্যবাড়িতে কনকাঞ্জলি প্রথাও পালিত হয়।

এই বাড়ির প্রতিমা সকাল ১২টা থেকে ১টার মধ্যে বিসর্জন হয় এবং হাওড়া অঞ্চলের বনেদিবাড়ির মধ্যে এই ভট্টাচার্যবাড়ির প্রতিমাই প্রথম নিরঞ্জন হয়।

আরও পড়তে পারেন

টালা ব্রিজ চালু হলেও বড়ো গাড়ি এখনই চলবে না

দুর্গাপার্বণ: আজও ভিয়েন বসিয়ে হরেক রকম মিষ্টি তৈরি হয় চুঁচড়ার আঢ্যবাড়ির দুর্গাপুজোয়

পুজোয় সারা রাত চলবে মেট্রো, জেনে নিন সময়সূচি

তিন দিনের মধ্যে বর্ষা বিদায় শুরু, পুজোয় উত্তর ভারতে দুুর্দান্ত আবহাওয়া থাকার সম্ভাবনা

এ বার পুজোয় ঠাকুর দেখুন পরিবহণ দফতরের বিশেষ প্যাকেজে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *