নিজস্ব প্রতিনিধি: পুজোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি রাজ্য জুড়েই। বনেদিবাড়িতেও পুজোর ব্যস্ততা এখন চরমে। ঠাকুরদালানে সেই বড়ো বড়ো ঝাড়বাতির আলো আবার জ্বলে উঠছে। আর তার সঙ্গে প্রস্তুতি চলছে নানা রীতিনীতি আর প্রথা ঝালিয়ে নেওয়ার। এমনই এক বনেদিবাড়ি রয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের খান্দরা গ্রামে, যে বাড়ির পুজো বহু দিনের। আজকের পর্বে খান্দরার সরকারবাড়ির পুজো নিয়ে আলোচনা।
আনুমানিক ৫০০ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়েছিল। প্রচলিত লোককথায় জানা যায়, এই সরকারদের আদি বাসস্থান ছিল মুর্শিদাবাদের কান্দি অঞ্চলে এবং সেখানেই দুর্গাপুজো প্রথম শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয় পশ্চিম বর্ধমানের খান্দরায়।
তবে কান্দি অঞ্চলে থাকাকালীন সরকার পরিবারের উপাধি ছিল ‘দাস’। আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে পর্বত দাস মুর্শিদাবাদ ছেড়ে চলে আসেন খান্দরায় রাজস্ব ভাগ দেখাশোনা করার জন্য। সে সময় তিনি বর্ধমানের মহারাজার থেকে ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেছিলেন।
কিছু কাল পরে সরকার পরিবারের দুই সদস্য, পাহাড় সরকার ও পর্বত সরকারের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ায় পরিবার দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। খান্দরায় আসার পর বংশের সুসন্তান মুচিরাম সরকার এই বাড়ির ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। সেই পুজোই আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছেন বর্তমান সদস্যরা
এই বাড়ির পুজো শুরু হয় রথযাত্রার দিন কাঠামোপুজোর মাধ্যমে। প্রতিমাতে দু’ মাটির প্রলেপ দেওয়ার পর খড়ি দিয়ে রঙ দেওয়া হয়। দেবীর দশ হাতের অস্ত্র রাংতা দিয়ে তৈরি করা হয়। সাবেকি একচালার প্রতিমায় নানা রকমের প্রাচীন গয়না দিয়ে সাজানো হয় উমাকে। এই পরিবারে প্রতিমার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল দেবীর ডান দিকে থাকেন লক্ষ্মী ও কার্তিক এবং বাঁ দিকে থাকেন সরস্বতী ও গণেশ।
দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন নবপত্রিকা স্নান করানো হয় নিকটবর্তী দুর্গাপুকুরে। স্নানপর্ব শেষ হলে ঠাকুরদালানে এসে পরিবারের মহিলারা তাঁকে বরণ করেন এবং তার পর শুরু হয় দেবীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা ও তার পরেই পুজো শুরু হয়ে যায়। বর্তমানে সরকার পরিবারের পাঁচ উত্তরসুরির জন্য পাঁচটি ঘট বসানো হয় এবং লোককথায় জানা যায় যে এক সময়ে এই বাড়িতে অঞ্জলি দিতে এসেছিলেন তৎকালীন পুলিশমন্ত্রী কালীপদ মুখোপাধ্যায়।
খান্দরার সরকারবাড়িতে দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীর দিন বিশেষ ভোগের আয়োজন করা হয়। ভোগে থাকে লুচি, নানান রকমের ভাজা, নাড়ু, মিষ্টি ইত্যাদি। পশু বলিদানের প্রথা এই পরিবারে বহু দিন আগে প্রচলিত ছিল। তবে বর্তমানে আখ ও চিনি বলিদান হয়।
দুর্গাপুজোর মহানবমীর দিন এই বাড়িতে হোম হয় এবং বাড়ির প্রতিটি সদস্য হোমের তিলক নিয়ে তার পর দেবীকে দর্শন করেন। সন্ধ্যাবেলায় পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে ধুনুচিনাচে যোগ দেন। দশমীতে সকালে দেবীর দর্পণে বিসর্জন হয়। এর পর মাছপোড়া খেয়ে নিয়ম ভঙ্গ করেন পরিবারের সদস্যরা।
সন্ধ্যায় দেবীবরণের পর মহিলারা সবাই মিলে ঠাকুরদালানে সিঁদুর খেলেন। কনকাঞ্জলিপ্রথার পর দেবীকে বিসর্জনের পথে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ভাবে ঐতিহ্যের সঙ্গে আজও পরম্পরাকে অক্ষুণ্ন রেখে পুজো করে আসছেন পশ্চিম বর্ধমানের খান্দরা গ্রামের সরকার পরিবারের সদস্যরা।
কী ভাবে যাবেন
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন এই বনেদিপুজো দেখতে হলে আপনাকে হাওড়া থেকে ট্রেনে চড়ে প্রথমে অণ্ডাল পৌঁছোতে হবে। অণ্ডাল স্টেশন থেকে খান্দরা আধ ঘণ্টার রাস্তা। এই পথে বাস বা ট্রেকার পেয়ে যেতে পারেন। অথবা অণ্ডাল স্টেশন থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন।
আরও পড়তে পারেন
দুর্গাপার্বণ: আজও ভিয়েন বসিয়ে হরেক রকম মিষ্টি তৈরি হয় চুঁচড়ার আঢ্যবাড়ির দুর্গাপুজোয়
পুজোয় সারা রাত চলবে মেট্রো, জেনে নিন সময়সূচি
তিন দিনের মধ্যে বর্ষা বিদায় শুরু, পুজোয় উত্তর ভারতে দুুর্দান্ত আবহাওয়া থাকার সম্ভাবনা
এ বার পুজোয় ঠাকুর দেখুন পরিবহণ দফতরের বিশেষ প্যাকেজে
গ্রামবাংলায় আনন্দময়ীর আগমনবার্তা নিয়ে এল ভাদ্র-সংক্রান্তির ‘অরন্ধন’