গ্রামবাংলায় আনন্দময়ীর আগমনবার্তা নিয়ে এল ভাদ্র-সংক্রান্তির ‘অরন্ধন’

ইন্দ্রাণী সেন বোস

‘অরন্ধন’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ যে দিন রান্না নিষিদ্ধ অর্থাৎ অ-রন্ধন। বাঙালির বারো মাসের তেরো পাবনের একটি অন্যতম হল রান্নাপুজো। ভাদ্র মাস জুড়ে গ্রামবাংলা জুড়ে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে।

অবিরাম বর্ষার পর যখন তার জোর কিছুটা কমে আসে, আকাশে যখন শরৎ-মেঘের ভেলা দেখা দেয়, তখনই আকাশ-বাতাস জুড়ে আনন্দময়ীর আগমনবার্তা বয়ে আনেন শিল্পস্রষ্টা ইঞ্জিনিয়ারবাবু বিশ্বকর্মা। ভাদ্র-সংক্রান্তিতে ইঞ্জিনিয়ারবাবুর সঙ্গেই মায়ের দুই কন‍্যা লক্ষ্মী ও মনসাদেবীর আরাধনায় মাতেন গৃহবাসী।

বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন ঘোর অন্ধকার রাতে রান্না করে মা মনসাদেবীকে অর্পণ করা হয়। গোবরবেড়ি দিয়ে, ধূপধুনো জ্বালিয়ে, ঘট পেতে, আলপনা এঁকে আর ফুল দিয়ে প্রণাম জানিয়ে গৃহকর্ত্রীরা নিদ্রা যান।

যথাবিহিত পূজা।

যে উনুনে রান্না করা হবে পরের দিন সকালে স্নান করে সেই উনুন সুন্দর করে সাজিয়ে পুজো করা হয়। যে হেতু মায়ের সন্তানরা গর্তে থাকেন তাই উনুনের গর্তকে প্রতীকী রূপে পুজো করার প্রচলন রয়েছে জনসমাজে।

এখানে দেবীর প্রসাদ দুই ধরনের – ফলমুল, চিঁড়ে-মুড়কি, মিষ্টির পাশাপাশি আগের দিনের রান্না পান্তাভাত শাক বিজোড় সংখ্যার ভাজাভুজি আলু-কুমড়ো, ছাঁচিকুমড়ো, নারকেল-হোপা, কাঁচকলা, পটল, বেগুন, ওলের বড়া ইত্যাদি ছাড়াও মশুরডাল, আলুপোস্ত, মাছভাজা, মাছের ঝাল, চালতার অম্বল মাকে নিবেদন করা হয়। ব্রাহ্মণ এসে পুজো করে যান।

এর পর চলে পাতপেড়ে খাওয়াদাওয়া। স্থান বিশেষে বিভিন্ন নামে পরিচিত এই পুজো – কোথাও অরন্ধন, কোথাও বুড়োরান্না, কোথাও বা রান্নাপুজো আবার কোথাও মনসাপুজোও।

নিয়মকানুন যা-ই হোক, সকলকে নিয়ে সবাই মিলে একসাথে খাওয়াদাওয়াই এই পুজোর অন্যতম রীতি। আর সাত দিন পরেই মহালয়া। তার পরই ঢাকে পড়বে কাঠি। বাঙালির ঘরের মেয়ের আগমনের দিন গোনা শুরু হয়ে যায় এই অরন্ধনের উৎসব দিয়ে।

আরও পড়তে পারেন

২৩ তারিখ থেকে ভারতীয় পর্যটকদের জন্য খুলছে ভূটান, তবে গুণতে হবে প্রচুর টাকা

পুজোয় অদূরে ৫ / দেওঘর-মধুপুর-গিরিডি

অথেনটিক চাইনিজ খাবার চাই? সক্কালেই চলুন কলকাতার লালবাজারের কাছে ছাতাগলিতে

ভগবানের আপন দেশে ৫/ সন্ধ্যা কাটল মাত্তানচেরি, ফোর্ট কোচিনে

দিল্লি-দেহরাদুন এক্সপ্রেসওয়েতে তৈরি হবে এশিয়ার দীর্ঘতম ‘ওয়াইল্ডলাইফ করিডোর’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *