বৃষ্টি থামার নাম নেই, পুজোর মুখে বন্যা পরিস্থিতি দক্ষিণবঙ্গের একাধিক পর্যটনকেন্দ্রে

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: গত কয়েক দিন ধরে প্রবল বৃষ্টি চলছে দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ অঞ্চলে। সেই বৃষ্টির থামার কোনো নামগন্ধ এখনো পর্যন্ত নেই। অন্য দিকে, জল ছাড়ার পরিমাণ ক্রমশ বাড়াচ্ছে ডিভিসি। সব মিলিয়ে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। পুজোর মুখে একাধিক পর্যটনকেন্দ্রও বন্যার কবলে পড়তে পারে।

ঝাড়খণ্ডের গালুডি ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে সুবর্ণরেখা নদীর জলস্তর। এর ফলে ঝাড়গ্ৰামের প্রতিটি নদী তীরবর্তী ব্লকে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষকে নদীর জলে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। মাইকিং করে সচেতন করা হচ্ছে প্রশাসনের তরফ থেকে।

ঝাড়গ্ৰাম জেলার গোপীবল্লভপুর-১ এবং ২ ব্লক, সাঁকরাইল এবং নয়াগ্ৰাম ব্লক প্রশাসন নদীতীরবর্তী এলাকায় নজরদারি শুরু করেছে। প্রতি মুহূর্তে নদীর জলস্ফীতি পর্যবেক্ষণ করছেন ব্লক প্রশাসনের কর্মীরা। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে নয়াগ্রামের রামেশ্বর মন্দির, তপোবনে পর্যটকদের আগমনে প্রভাব পড়তে পারে।

ডিভিসি থেকে আবার জল ছাড়ার ফলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে হাওড়ার একাধিক জায়গায়। আমতা এবং উদয়নারায়ণপুরের পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই আশঙ্কাজনক। দফায় দফায় বৃষ্টিতে মুণ্ডেশ্বরী, রূপনারায়ণ এবং দামোদরের জলস্তর বাড়ছে। দামোদর নদের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় উদয়নারায়ণপুরের হরালি, দাসপুর, সীতাপুর, সুলতানপুর, গজা, কুড়চি, হরিহরপুর, হোদল, রামপুর বালিচক, শিবপুর, বিনোদবাটি, জঙ্গলপাড়া, শিবানীপুর, পাঁচারুল-সহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

লাগাতার বৃষ্টি চলছে। তার মধ্যে দুর্গাপুর ব্যারেজ ও মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে ছাড়া জলে উদ্বেগ বাড়ছে বাঁকুড়ায়। দ্বারকেশ্বর নদের জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার ফলে জলের তলায় চলে যায় ওই নদের উপর থাকা একাধিক সেতু। ডিভিসির দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ছাড়া জলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বড়জোড়া, সোনামুখী, পাত্রসায়ের এবং ইন্দাস ব্লকে।

বাঁকুড়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, কংসাবতী-সহ বিভিন্ন নদীতে জল বেড়েছে। সোমবার রাত থেকে ফুঁসছে দ্বারকেশ্বর। এই নদের উপর বাঁকুড়া শহর লাগোয়া মীনাপুর ও ভাদুল সেতুর উপর প্রায় চার ফুট উচ্চতা দিয়ে প্রবল বেগে জল বইছে।

দামোদরে জল বাড়ায় পূর্ব বর্ধমানের শম্ভুপুর-সহ কয়েক’টি নদীর ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার। লাগাতার বৃষ্টির জন্য জলাধারগুলো টইটম্বুর। এ দিকে অজয়ের জলস্তর বেড়ে যাওয়ার অট্টহাস মন্দিরের জন্য পরিচিত কেতুগ্রাম এবং কাটোয়ার মধ্যে সংযোগকারী সেতুটির ওপরে জল চলে আসতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। তবে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমানোয় পশ্চিম বর্ধমানে বন্যার আশংকা আপাতত নেই।

সতীপীঠের মাটি বীরভূমের একাধিক জায়গা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায়। বৃষ্টি না কমলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে ফুল্লরাখ্যাত লাভপুর, কঙ্কালিতলা এবং নন্দীকিশোরী মন্দিরের জন্য বিখ্যাত সাঁইথিয়া।

বন্যার আশঙ্কা না থাকলেও দক্ষিণ ২৪ পরগণাতেও সমস্যায় পর্যটকরা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বকখালির সমুদ্রসৈকতে কড়া নজরদারি শুরু করেছে নামখানা ব্লক প্রশাসন। বেড়াতে আসা পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে দেওয়া হয়নি মঙ্গলবার। বকখালি সমুদ্র সৈকতে ব্লক প্রশাসনের তরফে চলছে লাগাতার প্রচার। আরও ৪৮ ঘণ্টা এই সতর্কতা বজায় থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *