নেই কোনো রক্ষণাবেক্ষণ, আগাছায় হারিয়ে গিয়েছে সোদপুরে গান্ধীজির ‘দ্বিতীয় বাড়ি’

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: সবরমতীর পরই সোদপুর। ভারতীয় ইতিহাসের ভূ-কেন্দ্র। গান্ধীজির ‘সেকেন্ড হোম’। ফলকে লেখাও রয়েছে সে কথা। এখানেই নেতাজি বৈঠকে বসেছিলেন গান্ধীজি ও নেহরুর সঙ্গে। সেই বাড়িতে এখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা।

এক সময়ের সাজানো বাগানে আজ অবহেলার ঝোপঝাড়। এই গান্ধী আশ্রমে বহু কাল আগেই বন্ধ হয়েছে খাদি সামগ্রী তৈরির কাজ। ভাঙাচোরা আসবাবের সঙ্গে ঠাঁই হয়েছে বহু পুরোনো তাঁত, চরকা-সহ বিভিন্ন মূল্যবান ছবি, নথি।

সোদপুর স্টেশন থেকে বেরিয়ে বিটি রোডের দিকে এক মিনিট হাঁটলেই যেখানে উড়ালপুল শেষ হচ্ছে, তার বাঁ দিকেই রয়েছে সরকারি আবাসন। তার ভেতরেই রয়েছে প্রায় বিস্মৃত গান্ধী আশ্রম ।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সহযোগী, মহাত্মা গান্ধীর স্নেহভাজন সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত বেঙ্গল কেমিক্যালসের চাকরি ছেড়ে ১৯২১ সালে তৈরি করেন এই আশ্রম। গান্ধীর ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হাতে কাটা চরকায় সুতো, খাদি বস্ত্র, মধু, ধুপকাঠি প্রভৃতি তৈরি শুরু করেন তিনি। আশ্রমের উদ্বোধনে গান্ধীজি, মতিলাল নেহরু ছাড়া সেই সময়ের জাতীয় স্তরের বিখ্যাত কিছু ব্যক্তি এসেছিলেন। পরে বারবার এখানে এসেছেন গান্ধীজি। বলেছেন, এটি ‘দ্বিতীয় গৃহ’ নিজের লেখায় এ ভাবেই বর্ণনা করেছেন সোদপুরের আশ্রমকে।

১৯৩৯ সালের মার্চে গান্ধীজির সঙ্গে এই আশ্রমেই বৈঠকে বসেন সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু। ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজোর দিন নোয়াখালিতে দাঙ্গা শুরু হয়। তখন সোদপুরের আশ্রম থেকেই নোয়াখালির উদ্দেশে রওনা দেন জাতির পিতা।

তবে পৌনে তিন বিঘা জমির উপরে তৈরি গান্ধী আশ্রম বড়ো অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এককালের সাজানো বাগান এখন ঝোপঝাড়ে ভরা। ছাদের টালি বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। আশ্রমের সব ঘরই তালাবন্ধ।নেতাজি-নেহরু-সহ বিভিন্ন নেতাদের ছবি লাগানো রয়েছে গান্ধী আশ্রমের নোনা ধরা দেওয়ালে। দরজা জানলাও প্রায় ভেঙে পড়ার জোগাড়। চতুর্দিকে আগাছা।

১৯৭৪ থেকে এই আশ্রমের সচিবের দায়িত্বে প্রবীণ গান্ধীবাদী অসিতরঞ্জন দাস। কলেজ স্ট্রিটের খাদি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বেও তিনি রয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “এই বাড়িটাকে ঠিকঠাক করার কোনো সদিচ্ছা কেন্দ্রের নেই।” একবার আশ্রমের হাল ফেরানোর দায়িত্ব নিয়েছিল অমদাবাদের ‘সবরমতী আশ্রম প্রিজার্ভেশন অ্যান্ড মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।’ কিন্তু অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদীর সরকার সোদপুরের গান্ধী আশ্রম সংরক্ষণের প্রকল্পটি বাতিল করেছে।

আজ ২ অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। আজই জাতির জনকের বন্দনায় মেতে উঠেছে গোটা দেশ। অমদাবাদের সবরমতী আশ্রম, রাজকোটের গান্ধী মিউজিয়াম, কৌশানির অনাশক্তি আশ্রমে গান্ধী বন্দনায় মেতে উঠবেন মানুষজন। কিন্তু বিস্মৃতির অতল গহ্বরে থেকে যাবে সোদপুরের এই গান্ধী আশ্রম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *