মৌ বসু
কথায় বলে বাঙালির পায়ের তলায় সরষে। বাঙালির যতগুলি অত্যন্ত প্রিয় পর্যটনকেন্দ্র আছে তাদের মধ্যে অন্যতম অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম বা ভাইজাগ। পাহাড়, সমুদ্র, কফিবাগান, আদিবাসী সমাজ, সব কিছুর দেখা মেলে বিশাখাপত্তনমে। আর বিশাখাপত্তনমের আর-এক আকর্ষণ ১১৩ কিমি দূরের আরাকু।
সবুজের সমারোহ এই আরাকু উপত্যকা। প্রকৃতি যেন ঢেলে সাজিয়েছে নিজেকে আরাকুতে। আরাকু যেমন প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য তেমনই অ্যাডভেঞ্চার যাঁরা ভালোবাসেন তাঁদেরও বেড়ানোর প্রিয় গন্তব্য।। রোমাঞ্চকর ভৌতিক অনুভূতি পেতে আপনার গন্তব্য হতেই পারে দক্ষিণ ভারতের এই পরিচিত পর্যটনকেন্দ্র।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকরভূমি বলা চলে আরাকুর চাপারাই বা ডুমব্রিগুদা জলপ্রপাত। পাদেরুগামী সড়কে আরাকু থেকে মাত্র ১৩ কিমি দূরে এই জলপ্রপাত। অনেক পর্যটক এখানে বেড়াতে এসে সন্ধ্যা নামলেই অচেনা কারওর কান্নার আওয়াজ পেয়েছেন বলে দাবি করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জলপ্রপাতের জলে ডুবে মৃত্যু হওয়া এক তরুণীর অশরীরী আত্মাকে এখানে দেখা যায়।
চাপারাই বা ডুমব্রিগুদা জলপ্রপাত।
আরাকুর সর্বোচ্চ জায়গা হল গালিকোন্ডা ভিউপয়েন্ট। ৪৩০০ ফুট উঁচু। গোটা আরাকু উপত্যকার অসাধারণ দৃশ্য চাক্ষুষ করা যায় এখানে ভিউপয়েন্ট থেকে। সূর্যাস্তের পর অনেকেই এই জায়গায় বুদ্ধিতে ব্যাখ্যা করা যায় না এমন সব ভৌতিক অনুভূতি পেয়েছেন। অনেকেই এখানে রাতারাতি অস্বাভাবিক ভাবে ঠান্ডা শিরশিরানি ধরানো অনুভূতি পেয়েছেন।
আরাকু উপত্যকায় ঘন সবুজ জঙ্গলে ঢাকা অনন্তগিরিতে বিঘার পর বিঘা বিস্তৃত কফির বাগানের দেখা মেলে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা সন্ধ্যা নামার পর কফির বাগানের দিকে যেতে বারণ করেন। ইকো-ট্যুরিজমের জন্য পরিচিত টাইদা নেচার ক্যাম্পও খুব জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র আরাকুর। অনেকেই এই নেচার ক্যাম্পে এসে তাঁবুর মধ্যে রাত কাটাতে পছন্দ করেন। অনেকেই রাতের অন্ধকারে এই নির্জন জায়গায় তাঁবুর বাইরে কারওর গলার আওয়াজ, ফিসফিসানি স্বর শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তাঁবুর বাইরে বেরিয়ে এলে কারওকে দেখতে পাননি। ফুলে ও গাছপালায় ঢাকা আরাকুর পদ্মপুরম গার্ডেনের পুরোনো অংশে অনেকেই বাগানের পুরোনো প্রয়াত এক নিরাপত্তারক্ষীর আত্মাকে দেখেছেন বলে দাবি করেন।
পদ্মপুরম গার্ডেন।
আদিবাসী সমাজ ও সংস্কৃতির এক ঝলক দেখা মেলে আরাকুর আদিবাসী মিউজিয়ামে গেলে। সেখানেও অনেকে অনেক সময় রহস্যময় আওয়াজ পেয়েছেন শুনতে। প্রাকৃতিক ভাবে স্টালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট পাথর আপনাআপনি বহু বছর ধরে জমে জমে গড়ে তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিক গুহা বোরা কেভ। অনেকেই অন্ধকারের মধ্যে কারওর পায়ের শব্দ, ফিসফিসানি স্বর টের পেয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে সেখানেও কারওর দেখা মেলেনি।
বোরা গুহার পাশেই নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে গোস্তানি নদী। গোদাবরীর শাখা নদী গোস্তানি। সন্ধ্যা নামলেই অচেনা অজানা রহস্যময় আওয়াজ অনেকেই শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি করেন। আরাকুর অন্যতম ভৌতিক রহস্যময় জায়গা বলে কুখ্যাত গোস্তানি নদীর পাড়।
আরও পড়ুন
পর্যটকদের নতুন গন্তব্য উত্তরপ্রদেশের রানিপুর টাইগার রিজার্ভ