পুজোয় অদূরে ৫ / দেওঘর-মধুপুর-গিরিডি

Ushri Falls

এখন আর পুজোয় বেড়ানোর বড়ো পরিকল্পনা করা যাবে না। ট্রেনের টিকিট নেই, অনেক বেশি বিমানভাড়া গুনতে হবে, হোটেল-রিসর্টে জায়গা মেলাও ভার। তবে পুজোর ছুটিতে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরে কাছেপিঠে ভ্রমণ করে আসতেই পারেন। তেমনই কিছু জায়গার সুলুকসন্ধান দিচ্ছে ভ্রমণ অনলাইন। আজও চলুন ড্যাঞ্চিবাবুদের পশ্চিমে, দেওঘর-গিরিডি।

ভ্রমণসূচি

প্রথম দিন – চলুন দেওঘর। হাওড়া থেকে ট্রেনে চলুন জসিডি। এমনিতে হাওড়া থেকে জসিডি যাওয়ার এক গাদা ট্রেন রয়েছে। কিন্তু টিকিট পাওয়ার দিক থেকে সব থেকে ভালো ট্রেনটি হল পটনা জনশতাব্দী এক্সপ্রেস। ট্রেনটি রবিবার ছাড়া প্রতি দিন দুপুর ২:০৫-এ হাওড়া থেকে ছেড়ে জসিডি পৌঁছোয় সন্ধে ৬.১৬-তে। জসিডি থেকে দেওঘর ৯ কিমি। ট্রেন আছে, গাড়িও পাবেন।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন – দেওঘর ঘোরাঘুরি।

বৈদ্যনাথধাম, দেওঘর।

কী দেখবেন দেওঘরে

(১) দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম বৈদ্যনাথধাম শিবমন্দির। মন্দিরচত্বরে লর্ড শিবের মন্দিরটি ছাড়াও আছে ২১টি মন্দির। মন্দিরের উত্তরে ১৫০ সিঁড়ির ক্ষীরগঙ্গা দিঘি।

(২) শহরের ক্লক টাওয়ার থেকে ১২ কিমি দূরে তপোবন। এখানকার ছোটো গুহায় তপস্যা করেছিলেন বালানন্দ ব্রহ্মচারী। এর দক্ষিণ-পুবে শিবকুণ্ড আর শূলকুণ্ড। ৩৫০ ফুট উপরে শিবঠাকুর। শিব বা প্রকৃতি, যার আকর্ষণেই হোক উপরে উঠলে ঠকবেন না।

(৩) করণীবাগে নওলাক্ষি মন্দির, শ্বেত পাথরে বালানন্দ ব্রহ্মচারীর মূর্তি।

(৪) আরও এক কিমি যেতে বীর হনুমানের সংকটমোচন মন্দির

(৫) ডাইনে আধ কিমি যেতে কুণ্ডেশ্বরী মন্দির, করিঙ্গাসুরের পিঠে সিংহাসীনা চতুর্ভুজা জগদ্ধাত্রী।

(৬) বমপাস টাউনে নবদুর্গা মন্দির

(৭) ক্লক টাওয়ার থেকে ২ কিমি ডাইনে উইলিয়ামস টাউনে শ্রীরামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম বিদ্যালয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ-সারদামা-স্বামীজির মন্দির

রোপওয়ে চড়ে ত্রিকুট পাহাড়ে।

(৮) ক্লক টাওয়ার থেকে ৪ কিমি দূরে কাছারি রোডে ৯৫ সিঁড়ির নন্দন পাহাড়। রয়েছে মনোরঞ্জন পার্ক।

(৯) পথেই পড়ে সৎসঙ্গ নগর তথা ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের আশ্রম

(১০) দূর থেকে দেখতে হাতির মতো লাগে। তাই টিলার নাম হাতি পাহাড়। টিলার মাথায় শিবমন্দির। একটি ঝরনাও প্রবাহিত এই পাহাড় থেকে। এর জলে নাকি অনেক ওষধি গুণ আছে। তাই অনেকেই এর জল পান করেন।

(১১) চলুন ত্রিকুট পাহাড়। দুমকাগামী পথে ২০ কিমি দূরে ২৪৭০ ফুট উঁচু পাহাড়শিরে চলুন রোপওয়ে চড়ে। অনিন্দ্যসুন্দর নৈসর্গিক শোভা।

চতুর্থ দিন – দেওঘর থেকে চলুন গিরিডি। সরাসরি এলে দূরত্ব পড়বে ৬৮ কিমি। আর যদি মধুপুর-পাতরোল-বাকুলিয়া হয়ে আসেন, তাহলে দূরত্ব পড়বে ১০৪ কিমি। গাড়িতে চলুন দেওঘর থেকে গিরিডি।

পাতরোলের কালীমন্দির।

দেওঘর থেকে রওনা হয়ে মধুপুর হয়ে চলুন। দেখে নিন পাতরোলের কালীমন্দির। দেউলধর্মী মন্দিরে ৩০০ বছরের প্রাচীন দেবীমূর্তি। দেওঘর থেকে মধুপুর ৩২ কিমি, পাতরোল আরও ৭ কিমি। ইচ্ছা হলে মধুপুরের শেখপুরায় দেখে নিতে পারেন বাংলার বাঘ আশুতোষের ‘গঙ্গাপ্রসাদ ভবন’, বাহান্ন বিঘায় আশু ঘোষের ‘সোনার বাংলা’, ড. আর আহমেদের ‘রিভার ভিউ’, ‘কপিল ধাম’ ইত্যাদি। মধুপুর-পাতরোল দেখে চলুন গিরিডির পথে। দেখে নিন বাকুলিয়া ঝরনা

পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিন – গিরিডিতে ঘোরাঘুরি।

কী দেখবেন গিরিডিতে

(১) বাঙালির আরেক পশ্চিম গিরিডি। বাঙালি উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল বারগান্ডায়। কে আসেননি এখানে? রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য গিরিডিতে বাড়ি ছিল প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ, যোগীন্দ্রনাথ সরকার, নলিনীরঞ্জন সরকার, সুনির্মল বসু প্রমুখের। এখানকার শান্তিনিবাস এখন স্মারকভিলা। হাওয়া বদল করতে এসে জগদীশচন্দ্র বসু এখানেই মারা যান। প্রশান্তচন্দ্রের ‘মহুয়া’য় আজ হয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণ মহিলা বিদ্যালয়। নিচু দিয়ে বয়ে চলেছে উশ্রী নদী।

(২) ধানবাদ-কুলটি সড়কে ৭ কিমি গিয়ে ডান দিকে আরও ৪ কিমি গেলে উশ্রী ফল্‌স। চলার পথে বেশ দূরে দেখা যায় পরেশনাথ পাহাড়। ভিউ পয়েন্ট থেকে নেমে বাঁ হাতি কিছুটা গেলে বোঝা যায় ঝরনার উচ্ছলতা।

(৩) শহর থেকে ১০ কিমি দূরে খান্ডোলি পাহাড়, ড্যাম, পার্ক।

পরেশনাথ পাহাড়।

(৪) ৩৮ কিমি দূরে ঝাড়খণ্ডের উচ্চতম পাহাড় পরেশনাথ (৪৪৭৮ ফুট)। জৈনতীর্থ পরেশনাথ। সকাল সকাল বেরিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ মধুবন পৌঁছে চড়া যেতে পারে পাহাড়ে। পাহাড়ের মাথায় অসংখ্য মন্দির। জৈন ধর্মের ২৪ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে ২০ জন এখানে মোক্ষ লাভ করেন। তাই এই পাহাড়কে বলা হয় ‘শিখরজি’। এই পাহাড়ে চড়া এক বিরল অভিজ্ঞতা। জঙ্গল-পথে পড়ে বেশ কিছু ঝরনা। পায়ে হেঁটে বা ডুলিতে চড়ে ন’ কিমি পথ ভেঙে শিখরে পৌঁছোতে পারেন। তাতে অবশ্য সকাল সকাল পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছে গেলেও শিখর থেকে নামতে বিকেল হয়ে যায়। তবে পাহাড়শীর্ষে যাওয়ার জন্য জিপ আছে। তবে পরেশনাথ পাহাড় থেকে নিসর্গদৃশ্য ভোলার নয়।

(৫) পরেশনাথ দেখে আরও ২২ কিমি এগিয়ে গেলে তোপচাঁচি লেক। পরেশনাথ পাহাড়মালা দিয়ে ঘেরা এই লেকের সঙ্গে বাংলা সিনেমার অনেক নস্টালজিয়া জড়িয়ে।

সপ্তম দিন – বাড়ির পানে ফিরুন। গাড়ি করে ৫৪ কিমি দূরের মধুপুরে আসুন। সেখান থেকে ট্রেন ধরুন। হাওড়া আসার অনেক ট্রেনই আছে। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে আগাম সংরক্ষণের উপযুক্ত পটনা-হাওড়া জনশতাব্দী এক্সপ্রেস। মধুপুর থেকে ছাড়ে সকাল ৯.২২-এ, হাওড়া পৌঁছোয় দুপুর ১.২৫-এ। ট্রেনটি রবিবার চলে না।  

গিরিডি থেকে মধুপুর ট্রেনেও আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে ভোর ৪.৫০-এর গিরিডি-মধুপুর স্পেশাল ধরতে হবে। এই ট্রেন মধুপুর পৌঁছে দেবে ভোর ৫.৪৫-এ।  

কোথায় থাকবেন

দেওঘর, গিরিডিতে রয়েছে ঝাড়খণ্ড পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হোটেল। অনলাইন বুকিং: https://tourism.jharkhand.gov.in/hotelBooking

তা ছাড়া সর্বত্রই বেসরকারি হোটেল আছে। গুগুল সার্চ করলেই সন্ধান পাবেন। পাবেন হলিডে হোমও। হলিডে হোম-এর জন্য দেখুন www.holidayhomeindia.com। 

খান্ডোলি ড্যাম।

কী ভাবে ঘুরবেন

(১) দেওঘরে গাড়ি, অটো ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। প্রথম দিন বৈদ্যনাথ মন্দির, তপোবন, নওলাক্ষি মন্দির, সংকটমোচন মন্দির ও কুণ্ডেশ্বরী মন্দির দেখে নিন।  

(২) দ্বিতীয় দিন দুমকার বাসে বা শেয়ার ট্রেকারে ত্রিকুট পাহাড় চলুন। বাসে গেলে ২ কিমি মতো হাঁটতে হবে। ত্রিকুট ঘুরে এসে দেওঘরের বাকি দ্রষ্টব্য দেখে নিন।

(৩) বেড়ানোর জন্য গিরিডিতে প্রায় তিনটি দিন রয়েছে। প্রথম দিন পৌঁছে শহরটা ঘুরে নিন, কিছুটা হেঁটে, কিছুটা স্থানীয় যানে। স্মৃতিধন্য বাড়িগুলো দেখুন। দ্বিতীয় দিন চলুন উশ্রী ফল্‌স, খান্ডোলি পাহাড়। বাকি সময়টা শহরে ঘুরুন। তৃতীয় দিন পুরো রাখুন পরেশনাথ বা পরেশনাথ-তোপচাঁচির জন্য।

দূর থেকে ত্রিকুট পাহাড়।

মনে রাখবেন

(১) ভ্রমণ কাটছাঁট করার জন্য দেওঘর বা গিরিডি আলাদা আলাদা করে ঘুরতে পারেন। শুধু গিরিডি যেতে চাইলে হাওড়া-পটনা জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে মধুপুর চলে আসুন। সেখান থেকে গাড়ি বা ট্রেনে গিরিডি পৌঁছে যান। ট্রেনের সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in। শুধু দেওঘর যেতে চাইলে ওই ট্রেনেই জশিডি চলে যান। সেখান থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরে দেওঘর চলে যান গাড়িতে। এ ভাবেই ফিরুন। জশিডি থেকে ট্রেনেও যেতে পারেন দেওঘর।

(২) দেওঘরে বৈদ্যনাথ মন্দিরে পাণ্ডাদের সাহায্য ছাড়াও পুজো দেওয়া যায়।

(৩) পরেশনাথ পাহাড়ে হেঁটে চড়লে সে দিন তোপচাঁচি লেক দেখা যাবে না।

আরও পড়তে পারেন

পুজোয় অদূরে ৪ / শিমুলতলা

পুজোয় অদূরে ৩ / রাঁচি-নেতারহাট-বেতলা

পুজোয় অদূরে ২ / রাঁচি-ম্যাকলাস্কিগঞ্জ

পুজোয় অদূরে ১ / ঘাটশিলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *