দুর্গাপুজো আর এক মাসও নেই। ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়া। এখন আর পুজোয় বেড়ানোর বড়ো পরিকল্পনা করা যাবে না। কারণ ট্রেনের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর সময় খুব কম থাকায় বিমানের টিকিটের জন্যও অনেক টাকা গুনতে হবে। তা ছাড়া হোটেল-রিসর্টও প্রায় সব ভর্তি। তবে পুজোর ছুটিতে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরে কাছেপিঠে ভ্রমণ করে আসতেই পারেন। এমন জায়গায় যেতে পারেন যেখানে দিনে দিনেই পৌঁছে যাবেন। তেমনই কিছু জায়গার সুলুকসন্ধান দিচ্ছে ভ্রমণ অনলাইন। শুরু করা হল বাঙালির অতি পরিচিত ও প্রিয় জায়গা ঘাটশিলা দিয়ে। ৩ রাত ৪ দিনের ট্যুরে বেরিয়ে পড়ুন।
প্রথম দিন
সকালেই রওনা হয়ে যান। কলকাতা থেকে সকালেই রওনা হয়ে চলুন ঘাটশিলা।
হাওড়া-বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস সকাল ৬:২০-তে হাওড়া থেকে ছেড়ে ঘাটশিলা পৌঁছোয় সকাল ৯.১০-এ। ইস্পাত এক্সপ্রেস সকাল ৬:৩৫-এ হাওড়া থেকে ছেড়ে ঘাটশিলা পৌঁছোয় সকাল ৯:৩৪-এ। এ ছাড়াও ঘাটশিলা যাওয়ার ট্রেন আছে। তবে পৌঁছোতে পৌঁছোতে দুপুর হয়ে যাবে।
দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে বেরিয়ে পড়ুন। দেখে নিন –
(১) ধারাগিরি ফলস্ – শহর থেকে বুরুডি লেক ৯ কিমি। বুরুডি লেক পেরিয়ে চলুন আরও কিমি তিনেক। তার পর কিছুটা হাঁটা। পাহাড়-জঙ্গলের মাঝে সুন্দরী ঝরনা।
(২) বুরুডি লেক – ফেরার পথে দেখুন পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা লেক।
(৩) ফুলডুংরি পাহাড় – শহর থেকে ২ কিমি দূরে, জাতীয় সড়কের ধারে। টিলার টং থেকে ঘাটশিলা শহরের দৃশ্যটি ভারী সুন্দর।
(৪) ডাহিগোড়ায় শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির, রাজবাড়ি, বিভূতি সংস্কৃতি পরিষদ।
(৫) ‘পথের পাঁচালী’ খ্যাত বিভূতিভূষণের স্মৃতিবিজড়িত ‘গৌরীকুঞ্জ’।
(৬) অদূরে পঞ্চপাণ্ডব টিলা, পাহাড়ে কালী মন্দির।
(৭) রাতমোহনা – শহর পেরিয়ে মোহন কুমারমঙ্গলম সেতুতে সুবর্ণরেখা পেরিয়ে ডান দিকে আরও ১ কিমি। পাহাড়ি টিলায় সূর্যাস্ত দেখার মতন।
দ্বিতীয় দিন
প্রাতরাশ করে বেরিয়ে পড়ুন। একে একে দেখে নিন –
(১) গালুডি ড্যাম – ১১ কিমি দূরে সুবর্ণরেখার ওপরে।
(২) রনকিনি দেবীর মন্দির – আরও ১০ কিমি গিয়ে জাদুগোড়ায় পাহাড়ের ঢালে জাগ্রত দেবী মন্দির।
(৩) জুবিলি পার্ক – জামশেদপুর শহরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ জুবিলি পার্ক। রনকিনি মন্দির থেকে ৩২ কিমি।
(৪) ডিমনা লেক – আরও ১৩ কিমি গেলে দলমা পাহাড়ে ঘেরা ডিমনা লেক।
(৫) দলমা পাহাড় – ডিমনা লেক দেখে চলুন দলমা পাহাড়ের শীর্ষে। ৩৫ কিমি পথ। যেতে হবে দলমা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে। অভয়ারণ্যের ফটক দিয়ে ঢুকে ৯ কিমি চড়াই ভেঙে ৩০৬০ ফুট উচ্চতায় দলমা শীর্ষ। মহুয়া, পলাশ, কুসুম, শিমুল, কুরচি, বনচামেলি, করঞ্জ, বন-গন্ধরাজের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রোমাঞ্চকর যাত্রাপথ। হাতি-দর্শন বিরল নয়। পাহাড়ি গুহায় শিবমন্দির। পাহাড়ের টঙে হনুমানজির মন্দির।
(৬) চান্ডিল ড্যাম – দলমা পাহাড় দেখে চলুন পশ্চিমবাংলার সীমানায় চান্ডিল ড্যাম, ৩৮ কিমি পথ। সুবর্ণরেখা নদীর উপর পাহাড়ে ঘেরা লেক, সূর্যাস্ত মনোরম।
ফিরে চলুন ঘাটশিলায়, ৭৮ কিমি পথ। ফিরতে ফিরতে রাত হবে।
তৃতীয় দিন
আজও প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন। চলুন –
(১) দুয়ারসিনি – ২৫ কিমি দূরে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় পাহাড় আর শাল, পিয়াল, শিমূল, পলাশ, বহেড়ার জঙ্গলে ঘেরা। এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে সাতগুড়ুং নদী।
(২) কাঁকড়াঝোড় – আরও ৩২ কিমি গেলে কুসুম, শাল, পিয়াশাল, সেগুন, মহুয়া, পলাশ, আকাশমণির সমারোহ কাঁকড়াঝোড়ে। পাহাড়ি প্রকৃতি, বয়ে গেছে একাধিক পাহাড়ি নদী, রয়েছে একাধিক ঝরনা।
(৩) ঢাঙিকুসুম – আরও ১৪ কিমি গেলে ঢাঙিকুসুম। দেখে নিন মনভোলানো ডুংরি ঝরনা।
(৪) বেলপাহাড়ি – আরও ১৫ কিমি গেলে সুন্দর নৈসর্গিক শোভার মাঝে বেলপাহাড়ি। এখান থেকে দেখে নিন ৬ কিমি দূরে ঘাঘরা ফল্স ও শাল-পিয়াল-অমলতাস-ইউক্যালিপটাসের বনবাসর। পাহাড়ে ঘেরা চারপাশ। তারই মাঝে তারাফেনি জলধারা। ৫ কিমি দূরে তারাফেনি ব্যারেজ।
বেলপাহাড়ি হয়ে ফিরে চলুন ঘাটশিলায়, ৫২ কিমি পথ।
চতুর্থ দিন
সুবিধামতো সময়ে ঘরপানে চলুন। ঘাটশিলা থেকে সকাল ৬.৪৯-এর স্টিল এক্সপ্রেস হাওড়া পৌঁছে দেয় সকাল ১০.২০-তে। সকাল ৭.১৮-এর শালিমার এক্সপ্রেস সাঁতরাগাছি পৌঁছে দেয়, শালিমার পৌঁছে দেয় সকাল ১১.৩৫-এ। ঘাটশিলা-হাওড়া মেমু এক্সপ্রেস ঘাটশিলা থেকে ছাড়ে দুপুর ২.১০-এ, হাওড়া পৌঁছোয় সন্ধে ৬.১০ মিনিটে। বারবিল-হাওড়া জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ঘাটশিলা থেকে ছাড়ে দুপুর ২.৩৭-এ, হাওড়া পৌঁছোয় সন্ধে ৬.১৫ মিনিটে।
কোথায় থাকবেন
ঘাটশিলায় ঝাড়খণ্ড পর্যটনের হোটেল বিভূতি বিহার পর্যটনের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে বুক করা যায় না। হোটেল বিভূতি বিহারের সঙ্গে যোগাযোগ – ০৯৬৯৩৯৯৮৬৩৬। অনেক বেসরকারি হোটেলও রয়েছে। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সন্ধান পেয়ে যাবেন।
কী ভাবে ঘুরবেন
ঘাটশিলায় একটা গাড়ি ভাড়া করে দ্রষ্টব্য স্থান দেখে নিন। যেখানে থাকবেন সেখানে বললেই গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
মনে রাখবেন
(১) ধারাগিরি ফল্স-এ যাওয়ার জন্য একজন স্থানীয় গাইড নেওয়া ভালো।
(২) দলমা পাহাড়-শীর্ষে ওঠার জন্য অভয়ারণ্যের গেটে প্রবেশদক্ষিণা দিতে হবে।
(৩) দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে পথেই সেরে নেবেন দুপুরের আহার।
(৪) ট্রেনের সময় পালটায়। দেখে নিন erail.in ।
আরও পড়তে পারেন
গোয়ার জলপ্রপাত এবং তার সন্নিহিত অঞ্চলে সঠিক পর্যটন-পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ
ভোপাল-জব্বলপুর জনশতাব্দীতেও ভিস্টাডোম, কোন কোন ট্রেনে পেতে পারেন এই কোচ
চলুন ত্রিযুগীনারায়ণ, রাত কাটান জিএমভিএন পর্যটক আবাসে
পর্যটনকে নেতিবাচক চোখে দেখবেন না, সংবাদমাধ্যমের কাছে আর্জি ভ্রমণ সংগঠনগুলির
পূর্ব উপকূলের অল্প-চেনা সৈকত: সূর্যলঙ্কা
Very informative and compact information.
Thank you dear