কলকাতা: এ অভিজ্ঞতা করোনাকালের। আগেও দেখা গিয়েছে, এখনও দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে করোনাস্ফীতি হলেই তার কারণ হিসেবে শুধু পর্যটনকেই দায়ী করে রাজ্যের এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম। আর পর্যটনের পরেই টার্গেট করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু যেখান থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশংকা সব থেকে বেশি, যেমন ধর্মীয় বা রাজনৈতিক সভাসমাবেশ, তার বিরুদ্ধে খুব একটা খবরাখবর হয় না ওই সংবাদমাধ্যমগুলিতে।
পর্যটনকে অতি সহজ টার্গেট বানিয়ে তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক খবরাখবর করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাল ভ্রমণ সংগঠনগুলি। বাংলার সংবাদমাধ্যমগুলির কাছে তাদের আর্জি, অবিলম্বে এ ধরনের খবরাখবর করা যেন বন্ধ করা হয়। সম্প্রতি কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেদের মতামত স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরল ওই সংগঠনগুলি।
যৌথ ভাবে ওই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে ভ্রমণবন্ধু তথা ট্রাভেল এজেন্টদের নিয়ে তৈরি রাজ্যের চারটে সংগঠন, যথাক্রমে ‘ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’ (ট্যাব), ‘এন্টারপ্রাইজিং ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ (ইটিএএ), ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়া হোটেলিয়ার্স অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ইআইএইচটিএএ) এবং ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ টুরিজম সার্ভিস প্রোভাইডার্স অফ বেঙ্গল’ (এটিএসপিবি)।
এই সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত এক প্রেস বিবৃতি পাঠ করা হয়। ওই বিবৃতির মধ্যে দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে শিল্প হিসেবে পর্যটনের গুরুত্ব ঠিক কতটা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সামগ্রিকভাবে সারা পৃথিবী জুড়ে পর্যটন কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং স্থায়িত্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বোত্তম আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল পর্যটন শিল্প। এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসা সরকারের তরফ থেকে অথবা অন্য কোনো না কোনো সাহায্য পেয়েছিল। কিন্তু পর্যটন ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য শুধুমাত্র পুরোনো ক্লায়েন্টদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের শক্তি ও জীবিকা পুনরুদ্ধারের ক্ষীণ আশা ছাড়া কিছুই পায়নি।”
গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা কতটা, সেটা মনে করিয়ে দেওয়া হয় এই বিবৃতিতে। সেই সঙ্গে বলা হয়, “সংবাদ যদি সঠিক ভাবে পরিবেশন করা হয়, তা হলে সমাজের প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহে সংবাদমাধ্যমের একটা বড়ো ভূমিকা থেকে যায়। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আবহে জনসমাবেশের প্রধান উৎস হিসাবে পর্যটনকে এককভাবে চিহ্নিত করার প্রবণতা এর পরিপন্থী।”
সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতি আর্জি জানিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পর্যটনের বিরুদ্ধে আঙুল না তুলে বরং নিরাপদে কী ভাবে ভ্রমণ করা যায়, তা নিয়ে প্রচার করুন। সব নিয়মকানুন মেনে যদি পর্যটন শিল্পকে সংরক্ষণের চেষ্টা করা যায়, তা হলে সেই উদ্যোগের ফলাফল আর্থিক ও সামাজিক উভয় দিক থেকেই ভালো হবে বলে জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি পর্যটনকে যাতে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দেখা হয়, সব রকম নেতিবাচকতা যাতে বন্ধ করা হয়, সেই ডাক দেওয়া হয়েছে এই সাংবাদিক সম্মেলনে। কারণ অসংগঠিত হলেও এটাও একটা বড়ো শিল্প। এবং পর্যটন শিল্পের ওপরে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। পাশাপাশি পর্যটনের মধ্যে দিয়ে ভ্রামণিকদেরও মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
বিবৃতির শেষে কিছুটা কড়া ভাষাতেই বলা হয়, “একটি ক্ষুদ্র নেতিবাচক অবাস্তব সিদ্ধান্ত পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তিদের ওপর সব চেয়ে বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে যথেষ্ট।” সেটা যাতে না হয়, সেই দিকেই নজর দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে ভ্রমণ সংগঠনগুলি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় করোনাবৃদ্ধির কারণ হিসেবে একক ভাবে পর্যটনকেই চিহ্নিত করে নেতিবাচক খবর বাংলার এক বহুলপ্রচারিত দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই খবর প্রকাশের পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন রাজ্যের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন লক্ষ লক্ষ ভ্রামণিকও। ওই দিনের সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ ব্যবসায়ীরা বুঝিয়ে দিলেন এই ধরনের খবরাখবর আরও প্রকাশিত হলে তাঁরা চুপ করে থাকবেন না।
আরও পড়তে পারেন
পূর্ব উপকূলের অল্প-চেনা সৈকত: সূর্যলঙ্কা