টিটিএফ-এ ট্যাব-এর সেমিনারে ডাক: অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ বাধাহীন হোক

শ্রয়ণ সেন

অভ্যন্তরীণ ভ্রমণকে বাধাহীন করার ডাক উঠল ‘ট্যাব’-এর সেমিনার থেকে। শুক্রবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে দেশের সব থেকে পুরোনো ট্রাভেল ট্রেড শো ‘ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার’ (TTF) কলকাতা। পর্যটন মেলার প্রথম দিনেই এক বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করেছিল ‘ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’ (TAAB) তথা ট্যাব। সেই সেমিনারেই দেশের ভিতরে ভ্রমণকে বাধাহীন করার ডাক ওঠে।

সেমিনারে টিটিএফ-এর সংগঠক ফেয়ারফেস্ট মিডিয়ার চেয়ারম্যান ও সিইও সঞ্জীব আগরওয়াল বলেন, “কেউ যদি একটা রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভ্রমণে যেতে চান, তাঁকে যদি আটকানো হয়, সেটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণকে বাধাহীন করতেই হবে।” তিনি চান, বেড়াতে বেরিয়ে কাগজপত্র দেখানো বন্ধ হোক।  

এ বারের টিটিএফ কলকাতার লক্ষ্য হল করোনা পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড ভাবে মার খাওয়া পর্যটন শিল্পকে আবার চাঙ্গা করে তোলা। দেড় বছর ধরে চলছে অতিমারি। বিশ্ব জুড়ে মানুষের দুর্দশা বেড়েছে। অর্থনৈতিক তো বটেই, সামাজিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষ। উন্নত দেশ, অনুন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশ, কেউই অতিমারির আঘাত থেকে বাঁচতে পারেনি। একাধিক শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে পর্যটনও অন্যতম।

রাষ্ট্রপুঞ্জের ডাক: ‘ট্যুরিজম ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ’

প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালন করা হয়। করোনাকালে ধুঁকতে থাকা পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়েই রাষ্ট্রপুঞ্জ এ বছর বিশ্ব পর্যটন দিবসের থিম রেখেছে ‘ট্যুরিজম ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ (Tourism for Inclusive Growth)। অর্থাৎ সর্বাত্মক উন্নয়নের স্বার্থেই পর্যটনকে কাজে লাগানোর ডাক দেওয়া হচ্ছে এই থিমের মাধ্যমে। আগামী এক বছর ধরে এই থিমের ওপরেই এগিয়ে যাবে পর্যটন শিল্প। এরই যবনিকা উত্তোলন অনুষ্ঠান হিসেবে টিটিএফ-এ সেমিনারের আয়োজন করে ট্যাব।

ট্যাব-এর সেমিনারে উপস্থিত শ্রোতৃমণ্ডলী। নিজস্ব চিত্র।

এখন অধিকাংশ মানুষের কাছেই ভ্রমণ আর বিলাসিতা নয়, প্রয়োজনীয়তা। মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে গেলে ভ্রমণের থেকে সুন্দর ওষুধ আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু গত দেড় বছরে পর্যটন মারাত্মক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। অতিমারি মারাত্মক আকার ধারণ করার সময় মানুষ বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পেয়েছেন। কিন্তু এখন যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিকে, তখন এক শ্রেণির বিশেষজ্ঞ মানুষকে ভয় দেখিয়েই চলেছেন, সংবাদমাধ্যমের একাংশও লাগাতার ভ্রমণের বিরুদ্ধে প্রচার করে চলেছে।

অথচ এই অতিমারি পরিস্থিতিতেও যাঁরা সাহস করে ভ্রমণে বেরিয়েছেন, তাঁরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, ভ্রমণে বেরোলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তো দূর, শরীর আরও ভালোই হয়ে যায়। তাই ভ্রমণের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তা ছাড়া এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রচুর সংখ্যক মানুষও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদেরও চাঙ্গা করা অত্যন্ত জরুরি।

কাগজ দেখানো বন্ধ করতে হবে, উঠল দাবি

বর্তমানে বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণে অনুমতি দিলেও মানুষকে প্রচুর বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই ভ্রমণের সময় আরটিপিসিআর পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু রাজ্য এমনও রয়েছে যারা টিকার দু’টো ডোজ নিয়ে নেওয়া ব্যক্তিকেও আরটিপিসিআর পরীক্ষা করিয়ে আসতে বলছে। এই নিয়ম তুলে দেওয়ার দাবি জানালেন সঞ্জীব আগরওয়াল।

তিনি বলেন, “লকডাউন, কাজ হারানোর মতো ঘটনা অনেক ঘটে গিয়েছে আমাদের জীবনে। এ বার সময় এসেছে অতীতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণকে বাধাহীন করতেই হবে। মানুষ যাতে নিজের মতো করে যেখানে খুশি বেড়াতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতেই হবে। কাগজ দেখানোর জাঁতাকলে পড়লে মানুষ বেরোতে চাইবেন না। ফলে, ভ্রমণশিল্পটার বারোটা বেজে যাবে।”

শ্রোতৃমণ্ডলীর একাংশ। নিজস্ব চিত্র।

সেমিনারে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের তরফ থেকে উপস্থিত ছিলেন সায়ক নন্দী। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে পর্যটনের প্রসারে রাজ্য সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার দিকে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সে কথাই বলেন সায়কবাবু। পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রামের পর্যটনের প্রসারের ওপরে বিশেষ জোর দেন তিনি।

মধ্যপ্রদেশ পর্যটনের কলকাতা আঞ্চলিক অফিসের রেসিডেন্ট ম্যানেজার অভিজিৎ ধর, জম্মু কাশ্মীর পর্যটনের তরফে টুরিস্ট অফিসার এহসান উল হক সায়েদ-সহ উপস্থিত ছিলেন আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। ছিলেন ট্যাবের প্রবীণ সদস্যরাও।

এই সেমিনারে ট্যাবের বিভিন্ন কাজকর্মের কথা তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ সরকার। বর্তমানে ট্যাবের সদস্য সংখ্যা সাড়ে তিনশো। আগামী দিনে সদস্যের সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথা বলেন তিনি। অমিতাভবাবুর কথায়, “পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করার জন্য আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করছি। আগামী দিনেও করব।”

তবে শুধু পর্যটনের প্রসারেই নয়, সামাজিক অনেক কাজকর্মেই ব্রতী হয়েছে ট্যাব। দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে ট্যাব। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়াই হোক বা কোভিডকালে অসুস্থ মানুষকে সাহায্য করা, সব কিছুই করছে ট্যাব। অমিতাভবাবু বলেন, সাধারণ মানুষ ট্যাবকে যাতে শুধুমাত্র পর্যটন ব্যবসায়িক সংস্থার চোখে না দেখে সেটাই তাঁদের লক্ষ্য।

সেমিনার সঞ্চালনা করার দায়িত্বে ছিলেন ট্যাবের যুগ্ম সম্পাদক স্বর্ণাভ পাল। উল্লেখ্য, টিটিএফ কলকাতা চলবে রবিবার ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

আরও পড়তে পারেন

নেতাজি ইন্ডোরে শুরু হল ট্রাভেল ট্রেড শো টিটিএফ

নানা উৎসব আয়োজন করছে জম্মু-কাশ্মীর, পর্যটক টানতে পরিকল্পনা পর্যটন দফতরের

দিল্লি বিধানসভা থেকে লালকেল্লা সুড়ঙ্গপথের খোঁজ, বছরখানেকের মধ্যেই খুলে দেওয়া হবে দেখার জন্য

লিঙ্গরাজ মন্দিরের দরজা খুলে গেল ১ সেপ্টেম্বর থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *