ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: টিলা টিলা শিমুলতলায় ভিলা ভিলা বাড়ি’… কথাটা অনেকেই শুনেছেন নিশ্চয়ই। এক কালে এই শিমুলতলা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল বাঙালির মনোমত একটি উপনিবেশ – স্বাস্থ্যনিবাস।
কেন স্বাস্থ্যনিবাস?
এর পেছনে একটি গল্প আছে। ১৮৭১ সালে এই অঞ্চলে প্রথম বাঙালি হিসেবে পা রাখেন হুগলি জেলার বিজয়নারায়ণ কুণ্ডু। মধুপুর-গিরিডি শাখার রেললাইন পাতার ঠিকাদারি নিয়ে আসেন এখানে।
তাঁর সেই কাজের মেয়াদ একদিন ফুরোয়। কিন্তু বিজয়নারায়ণ আবিষ্কার করেন তাঁর পেটের দুরারোগ্য পুরোনো আমাশা রোগ এখানকার জলের গুণে পুরোপুরি ঠিক হয়ে গিয়েছে।
তাই তিনি এখানেই নিজের বাড়ি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকে বাঙালির এই অঞ্চলে আগমন শুরু। এটাকেই বলা হয় বাঙালির ‘স্বাস্থ্য বদলের পশ্চিম।’
আরও একটা নাম আছে এই অঞ্চলের, ‘ড্যাঞ্চিবাবুদের দেশ।’ তার পেছনের গল্পটাও একটু জেনে নিই।
স্বাস্থ্যবদল করতে আসা বাঙালিরা এই সব অঞ্চলের হাটে তাজা শাকসবজি, মাছ, মাংস এই সব কিনতে গিয়ে তাদের দাম শুনে অবাক হয়ে যেতেন। কলকাতার তুলনায় এখানে দাম ছিল অনেক কম। সে কারণে বাজার করতে এসে ইংরেজিতে বলে উঠতেন ‘ড্যাম চিপ।’
বাজারে এই সব বাঙালিবাবুর মুখে নিয়মিত ‘ড্যাম চিপ’ কথাটা শুনে শুনে সেখানকার আদিবাসী মানুষজন এদের নাম দিয়েছিল ড্যাঞ্চিবাবু। ‘ড্যাঞ্চি’ কথাটা আদতে ওই ‘ড্যাম চিপ’ কথারই অপভ্রংশ।
বাঙালির এই স্বাস্থ্যবদলের পশ্চিম-তথা শিমুলতলায় চলুন ট্র্যাভেলিজমের সঙ্গে। এই বছরের শেষে।

পুরো সূচিটা জেনে নিন:-
২৯ ডিসেম্বর, ২০২১: যাত্রা শুরু। হাওড়া থেকে সরাসরি শিমুলতলা পৌঁছোনোর জন্য মোকামা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার রয়েছে। কিন্তু সেখানে স্লিপার ক্লাসে সফর করার অভিজ্ঞতা অবর্ণনীয়। তাই ০৩০৪৩ আপ হাওড়া-রক্সৌল স্পেশালে ঝাঝার উদ্দেশে রওনা হওয়াই শ্রেয়। ট্রেনটি ছাড়বে রাত ১০:৫৫-এ।
৩০ ডিসেম্বর, ২০২১: ভোর সাড়ে ৫টায় ঝাঝা। স্টেশনে গাড়ি থাকবে। এক ঘণ্টার যাত্রায় পৌঁছে যাওয়া শিমুলতলার হোটেলে।
হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিয়েই প্রাতরাশ। তার পর শিমুলতলার দ্রষ্টব্য স্থানগুলোর উদ্দেশে গাড়ি ছুটবে। শিমুলতলার দু’প্রান্তে দুই বিখ্যাত ঝরনা ধারারা ও হলদি, মনে দাগ কাটবেই।
লাঞ্চ সেরে একটু বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে। আবার শীতের মিঠে রোদ পিঠে মেখে পায়ে হেঁটে হেঁটেই দেখা যেতে পারে শিমুলতলার বিখ্যাত ভিলা বাড়িগুলো।
বিকেলের রোদ যখন পড়ন্ত- সাড়ে তিনটে নাগাদ, আবার গাড়ি ছুটবে শিমুলতলা রাজবাড়ির উদ্দেশে। রাজবাড়িতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে লাট্টু পাহাড়ে চড়া হবে। খুব সহজ চড়াই। উঠতে লাগবে মিনিট পনেরো। সেখান থেকে সূর্যাস্তের মনোরম শোভা উপভোগ করা যাবে।

৩১ ডিসেম্বর, ২০২১: সক্কাল সক্কাল রওনা দেওঘরের উদ্দেশে। সঙ্গে থাকবে প্যাক্ড ব্রেকফাস্ট। রাস্তাতেই কোথাও একটা গাড়ি দাঁড় করিয়ে খাওয়াদাওয়া হবে। কেউ চাইলে দেওঘরে বৈদ্যনাথ মন্দির দর্শন করতেই পারেন, তবে ট্র্যাভেলিজমের মূল লক্ষ্য ত্রিকুট পাহাড়।
হোটেলে ফিরেই মধ্যাহ্নভোজন। একটু হয়তো দেরি হতে পারে। তার পর যথারীতি শীতের মিঠে রোদ, পিঠে মেখে পায় হেঁটে শিমুলতলা ঘোরা যেতে পারে।
এটি বর্ষশেষের সন্ধ্যা। তাই সন্ধ্যার মুখে মুখে শুরু হবে একটি ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যে যার নিজের মতো পারফর্ম করবে। এখানে, কোনো বাধ্যতামূলক কিছু নয়। গান, নাচ, কবিতা, আড্ডায় বিগত বছরের সমস্ত স্মৃতি রোমন্থন করা হবে।
১ জানুয়ারি, ২০২২: আজ গন্তব্য গিরিডি। লাল মাটি, জঙ্গল, ছোটো ছোটো পাহাড়, মালভূমি ও জলপ্রপাত নিয়ে আদরের গিরিডি। প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়া। একে একে দেখে নেওয়া, উশ্রী ঝর্না, খান্দলি। পথেই মধ্যাহ্নভোজন।

২ জানুয়ারি, ২০২২: ঘরে ফেরার দিন, অনেক রং, গন্ধ, আহ্লাদী স্মৃতি নিয়ে। প্রাতরাশ সেরে একটু জলদি তৈরি হয়ে যাওয়া। ঝাঝা স্টেশনের অভিমুখে গাড়ি ছুটবে। ঝাঝা থেকে ০২৩০৪ পূর্বা এক্সপ্রেস ধরতে হবে বেলা এগারোটাতে। হাওড়া পৌঁছে দেবে বিকেল বিকেল ৫টায়।
প্যাকেজ- ৭,২০০ টাকা জনপ্রতি
কী ভাবে টাকা দিতে হবে
১) ১৫ থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা জনপ্রতি দিয়ে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে।
২) ২৫ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা দিতে হবে।
৩) ৩০ ডিসেম্বর হোটেলে চেকইনের পর বাকি ১,২০০ টাকা জনপ্রতি দিতে হবে।
প্যাকেজের মধ্যে ধরা রয়েছে
১) ঝাঝা স্টেশন থেকে পিক আপ।
২) ঝাঝা স্টেশনে ড্রপ
৩) শিমুলতলার লোকাল সাইটসিয়িং। গিরিডি এবং দেওঘর ভ্রমণ।
৪) ) হোটেলে রাত্রিবাস এবং ৩০ ডিসেম্বর প্রাতরাশ থেকে ২ জানুয়ারি প্রাতরাশ পর্যন্ত সব খাওয়াদাওয়া।
প্যাকেজে ধরা নেই
১) ট্রেনের ভাড়া।
২) কোনো প্রবেশমূল্য।
৩) ত্রিকুট পাহাড়ে ওঠার রোপওয়ের ভাড়া।
টাকা ফেরতের ব্যবস্থা
১) ট্র্যাভেলিজমের তরফ থেকে সফর বাতিল হলে পুরো টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে।
২) গ্রুপের সদস্য যদি নিজের থেকে সফর বাতিল করেন, তা হলে ৫০ শতাংশ টাকা ফেরত পাবেন।
ইচ্ছুকরা যোগাযোগ করতে পারেন ট্র্যাভেলিজমের কর্ণধার শ্রয়ণ সেন-এর সঙ্গে। যোগাযোগের নম্বর 9903763296। আরও একটি নম্বর 8276008189। অথবা ভ্রমণঅনলাইনের ফেসবুক পেজেও যোগাযোগ করতে পারেন।