নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: পর্যটকদের জন্য খুলে গেল শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক। সমস্ত কোভিড প্রোটোকল মেনেই গত বুধবার ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে সাফারি পার্ক।
পার্কের অধিকর্তা বাদল দেবনাথ জানিয়েছেন, আগের মতোই পার্কে ঢোকার দু’ ধরনের বুকিং চালু রয়েছে – অফলাইন ও অনলাইন। যাঁরা অনলাইনে টিকিট বুকিং করতে পারবেন না, তাঁরা এখানে এসে টিকিট কেটে পার্কে প্রবেশ করতে পারবেন। যাবতীয় কোভিডবিধি মেনেই পার্ক খোলা থাকছে। স্যানিটাইজেশন থেকে শুরু করে মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা-সহ সমস্ত বিধিনিষেধ মেনেই পর্যটকদের ভিতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে বলে জনান তিনি।
ভিতরে পর্যটকদের সাফারির জন্য ১০টা গাড়িই চালু করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী কালে পর্যটকের ভিড়ের ওপর গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো-কমানো নির্ভর করবে বলে জানান বাদল দেবনাথ।
বাদলবাবু বলেন, করোনাকালে পার্ক খোলা-বন্ধ নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা ছিল। এখন পার্ক খুলে গিয়েছে। আশা করা যায়, ধীরে ধীরে পার্কে ফের পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। সামনেই পুজো আসছে। পর্যটনপ্রেমী মানুষ এই পুজোকে কেন্দ্র করে ঘুরতে ভালোবাসেন। তাই বাদলবাবুর আশা, এ বারের পুজোতেও পার্কে ভিড় থাকবে চোখে পড়ারই মতো।
বুধবার খোলার পর স্বল্প সংখ্যক পর্যটকের দেখা মিলল। তবে বাদলবাবুর আশা, আগামী দু-এক দিন পর থেকে ধীরে ধীরে এই সংখ্যাটা বাড়বে। তাঁর কথায়, “যাঁরা ঘুরতে ভালোবাসেন তাঁরা কার্যত গৃহবন্দি হয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন। এই পার্ক খুলে দেওয়ার ফলে এ বার তাঁরা পার্কমুখো হবেন। শিশুদের কাছেও এখানে আসার একটা তাগিদ ছিল। পার্ক খুলে দেওয়ায় আবার সেটা চাগাড় দিয়ে উঠবে।”
গত বছর করোনাকালের প্রথম ঢেউয়ের সময় থেকেই বন্যপ্রাণী ও জনগণের স্বার্থেই সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয় পার্ক। পরে এ বছর দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝে কিছু দিনের জন্য আংশিক ভাবে খুলে দেওয়া হয় ওই পার্ক। তবে মে মাসের ২ তারিখে ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ সাড়ে চার মাস পর আবার খুলল পার্ক। কোভিডবিধি মেনে দর্শনার্থীরা পার্কে যেতে পারছেন।
শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক উত্তরবঙ্গের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। মমতা বন্দোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই তৎকালীন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের হাত ধরেই বেঙ্গল সাফারি পার্কের পথ চলা শুরু। পার্কটিতে এক দিকে যেমন রয়েছে ঘন বনাঞ্চল, তেমনই বিভিন্ন বন্যপ্রাণী নিয়ে এসে রাখা হয়েছে এই পার্কে। এক কথায় ‘ইকো ট্যুরিজম’-এর পাশাপাশি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও প্রজননের লক্ষ্যেই পার্কটিকে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে বাঘ, চিতাবাঘ, হাতি, কুমির, গন্ডার-সহ বিভিন্ন ধরনের রংবেরঙের পাখি।
স্থানীয় ও বাইরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের বিনোদনের লক্ষ্যে এবং তাঁরা যাতে বনাঞ্চলে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা বোধ করতে পারেন সেই উদ্দেশ্য নিয়ে এই পার্কটি তৈরি করা হয়। শুরুর দিনগুলি থেকেই এই পার্কটিতে পর্যটকদের ভিড় থাকত প্রতি দিনই। কিন্তু করোনার গ্রাসে সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়। এ বার করোনার দাপট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসায় ফের সাধারণ পর্যটকদের জন্য পার্ক খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সরকার।
কথা হচ্ছিল পার্কে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা নরেন সোরেনের সঙ্গে। নরেনবাবু আগে কখনও পার্কে আসেননি। দীর্ঘ দিন ধরেই ভাবছিলেন বেঙ্গল সাফারি পার্কে সাফারি করবেন। কিন্তু করোনার জন্য ঘর থেকে বেরোতেই পারেননি। এখন পার্ক খুলেছে। তাই প্রথম সুযোগেই পার্কে ঘুরতে চলে এসেছেন। পার্ক ঘুরে খুবই আনন্দিত তাঁর গোটা পরিবার। সন্তান-সহ স্ত্রী, বৃদ্ধা মা, সবাই খুব খুশি। সব মিলিয়ে পার্কে ঘুরে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে আনন্দিত সোরেন পরিবার।
সূত্র: খবর অনলাইন
আরও পড়তে পারেন
হাওয়া বদলের পশ্চিমে – বর্ষশেষে শিমুলতলা চলুন ট্র্যাভেলিজমের সঙ্গে
টিটিএফ-এ ট্যাব-এর সেমিনারে ডাক: অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ বাধাহীন হোক
নানা উৎসব আয়োজন করছে জম্মু-কাশ্মীর, পর্যটক টানতে পরিকল্পনা পর্যটন দফতরের
দিল্লি বিধানসভা থেকে লালকেল্লা সুড়ঙ্গপথের খোঁজ, বছরখানেকের মধ্যেই খুলে দেওয়া হবে দেখার জন্য