ডুয়ার্স কোনো ছোটো জায়গা নয়!

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: এক ট্র্যাভেল এজেন্ট ফোনটা ধরতেই ওপার থেকে এক ব্যক্তি বলতে শুরু করলেন, “দাদা, আমরা ডুয়ার্স যেতে চাই, দু’রাত-তিন দিনের একটা প্যাকেজ তৈরি করে দেবেন?”

— “নিশ্চয়ই দেব। আপনারা ডুয়ার্সের কোন জায়গায় যেতে চান বলুন?” জবাবে বললেন ওই এজেন্ট।

এজেন্ট কী বলতে চাইলেন, সেটা বুঝতে না পেরে ওই ব্যক্তি বলে উঠলেন, “কোন জায়গা মানে? বললাম তো আমরা দু’রাত-তিন দিনের জন্য ডুয়ার্স যেতে চাই।”

ওই এজেন্টের উত্তর, “ডুয়ার্স একটা বিশাল অঞ্চল। ভালো করে ডুয়ার্স ঘুরতে হলে দু’রাত কেন, সাত-আট রাতেও সম্ভব নয়। এ বার আপনারা সিদ্ধান্ত নিন ডুয়ার্সের কোন দিকে যাবেন।”

এটা একটা সমস্যা। দক্ষিণবঙ্গের সাধারণ ভ্রামণিকদের একটা বড়ো অংশের মধ্যে একটা ব্যাপার লক্ষ করা যায় যে ডুয়ার্স সম্পর্কে তাঁদের ধারণা কিছুটা কম। অনেকেই মনে করেন যে ডুয়ার্স একটা ছোটো জায়গা যেখানে জঙ্গল আছে, নদী আছে আর দূরে পাহাড় দেখা যায়।

কিন্তু আদতে ডুয়ার্স ছোটো কোনো জায়গা নয়, বরং বিশাল অঞ্চল জুড়ে এর বিস্তৃতি। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে অসমেও ছড়িয়ে রয়েছে ডুয়ার্স। তা হলে ডুয়ার্স কী আর কেন এমন নাম?

‘ডুয়ার্স’ শব্দটির উৎপত্তি ইংরেজি শব্দ Doors তথা ‘দরজা’ থেকে। উত্তরপূর্ব ভারত এবং ভুটানের মধ্যে ১৮টি দরজা তথা প্রবেশদ্বার রয়েছে। এই ১৮টার মধ্যে কয়েকটি প্রবেশদ্বার এখনও সক্রিয়। আমরা যখন ভুটান বেড়াতে যাই, তখন জয়গাঁতে সুবিশাল ভুটান-গেট দেখি। জয়গাঁ প্রবেশদ্বার কিন্তু এই ১৮টি গেটের অন্যতম।

পশ্চিমবঙ্গ-অসম সীমানা দিয়ে বয়ে চলে সঙ্কোশ নদী। এই সঙ্কোশ নদীই ডুয়ার্সকে দু’ ভাগে ভাগ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের অংশটিকে বলে পশ্চিম ডুয়ার্স আর অসমের অংশটি হল পূর্ব ডুয়ার্স। পশ্চিমবঙ্গে ডুয়ার্সের বিস্তৃতি তিস্তা থেকে সঙ্কোশ নদী পর্যন্ত। দার্জিলিং-কালিম্পং জেলার সমতল, জলপাইগুড়ি জেলা, আলিপুরদুয়ার জেলা এবং কোচবিহার জেলা জুড়ে বিস্তার করছে ডুয়ার্স অঞ্চল।

অন্য দিকে অসমে ধুবড়ি, কোকড়াঝাড়, বরপেটা, গোয়ালপাড়া ও বঙাইগাঁও জেলা নিয়ে ডুয়ার্স গঠিত। দুই রাজ্য মিলিয়ে ৮৮০ বর্গ কিলোমিটার তথা ৩৪০ বর্গ মাইল অঞ্চল জুড়ে ডুয়ার্স বিস্তৃত। ডুয়ার্সের গড় উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে ৯০ থেকে ১,৭৫০ মিটার। তাই ডুয়ার্সকে কোনো ভাবেই ছোটো একটা জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না।

ডুয়ার্স মানে কী

ডুয়ার্স মানে বন্য পশুদের মাঝে হারিয়ে যাওয়া, পাখিদের সেই কোলাহলের মিছিলে শামিল হওয়া। ডুয়ার্স মানে চা বাগানে আনন্দে মেতে ওঠা। ডুয়ার্স মানে দূরে উঁকি মারা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখে মোহিত হয়ে যাওয়া। ডুয়ার্স মানে তিস্তা-মূর্তি-জলঢাকা-তোর্সা-জয়ন্তি নদীতে নিজেদের যৌবন ফিরে পাওয়া। ডুয়ার্স মানে সমরেশ মজুমদারের সাহিত্যে ডুবে যাওয়া।

ডুয়ার্স মানে অবশ্যই প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া, এখানকার মানুষজনের জীবনযাপনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। ভাওয়াইয়া গানের সঙ্গে একাত্ম বোধ করা। গোটা বাংলার মুকুট হল উত্তরবঙ্গ। আর ডুয়ার্স হল সেই মুকুটে একটা মুক্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *