ঘুরে আসুন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দুর্গ, রানা প্রতাপের জন্মস্থান কুম্ভলগড়

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: যত মূল গন্তব্যের দিকে এগোতে থাকবেন, নজরে পড়বে এক দীর্ঘ প্রাচীর। ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই প্রাচীরটিই পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম প্রাচীর। এই প্রাচীরই ঘিরে রেখেছে এক আশ্চর্য সুন্দর দুর্গশহরকে। নাম তার কুম্ভলগড়। উদয়পুর থেকে ৮২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, মেবার ও মারোয়াড়ের সীমান্তে দুর্গটি তৈরি করেছিলেন রাণা কুম্ভ। 

সাত-সাতটি দরজা পেরিয়ে তবেই পৌঁছোনো যায় কুম্ভলগড়ের প্রাসাদে। কারুকাজ করা পাথরের খিলানের মাঝে ভারী কাঠের দরজা, স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘পোল’। দক্ষিণে অ্যারেত পোল পেরিয়ে কেল্লায় ওঠা শুরু। সেখান থেকেই প্রথম দর্শন মেলে কুম্ভলগড়ের।

৩৬০টি মন্দির, বেশ কিছু ঘরবাড়ি, পাথরে বাঁধানো উঁচু-নিচু রাস্তা, প্রাসাদ, মহল নিয়ে আরাবল্লীর কোলে ছড়িয়ে থাকা এই দুর্গচত্বরের আনাচকানাচে ইতিহাস কথা বলে।

দুর্গের ভেতরে রয়েছে কুম্ভলগড়ের রাজপ্রাসাদ বাদলমহল। রাণা ফতেহ সিংহের তৈরি এই প্রাসাদ রাজপুত স্থাপত্যরীতিতে তৈরি। দোতলা প্রাসাদের দু’টি ভাগ— এক দিকে মহিলামহল, অন্য দিকে পুরুষদের, মাঝে প্রশস্ত চত্বর। জেনানামহলের পাথরের দেওয়ালে অপূর্ব জালির কাজ। সেই ঝরোখার আড়াল থেকে রাজসভার কাজকর্ম দেখতেন রাজপুত রানিরা। দু’ মহলেই রয়েছে বর্ণময় দেওয়াল চিত্র। এই কেল্লাতেই ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম হয় মহারাণা প্রতাপের। প্রাসাদসংলগ্ন যে ঘরে তিনি জন্মেছিলেন, সেটি নিতান্তই সাধারণ।

বাদলমহলের ছোটো-বড়ো ঘর, অপ্রশস্ত সিঁড়ি, খিলানওয়ালা অলিন্দ পেরিয়ে দোতলায় উঠে, সেখান থেকে  খোলা জানালা দিয়ে নীচে তাকাতেই ভেসে ওঠে গোটা কেল্লা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দিগন্তপ্রসারী বিস্তার। এক দিকে স্নিগ্ধ অরণ্যে ঢাকা মেবার, অন্য দিকে রুক্ষ মারোয়াড়।

এই দৃশ্যমানতার কারণেই কেল্লাবাসীর নজর এড়িয়ে, অতর্কিতে দুর্গ আক্রমণ ছিল প্রায় অসম্ভব। তাই কুম্ভলগড় বারবার ফিরিয়ে দিতে পেরেছে শত্রুসৈন্যকে, বিপদের দিনে মেবারের রাজপরিবারকে দিয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের আশ্বাস। জাঁকজমক নয়, প্রতিরোধ ও অনমনীয়তাই ছিল কুম্ভলগড়ের আসল গর্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *