ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: বাঁসওয়াড়া। রাজস্থানের এক শহর। তবে পর্যটকদের কাছে সে ভাবে পরিচিত সে নয়। বাঁসওয়াড়ার আরও দু’টো নাম আছে – ‘একশো দ্বীপের শহর’ এবং ‘রাজস্থানের চেরাপুঞ্জি’। নামেই সহজেই অনুমেয় কেমন জায়গা এই বাঁসওয়াড়া। বাঁসওয়াড়ার মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে মাহি নদী তথা ‘চাচাকোটা’, আর তাতেই রয়েছে অসংখ্য ছোটো ছোটো দ্বীপ। আর রাজস্থানে সব চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় এই বাঁসওয়াড়ায়।
রাজস্থান বলতেই যে ছবি চোখের সামনে ভাসে তার এক দম উলটো ছবি পূর্ব রাজস্থানের এই বাঁসওয়াড়ায়। মরুদেশ নয়, সবুজ ঢেউ খেলানো ভূমির দেশ এই বাঁসওয়াড়া, ছোটো ছোটো পাহাড়ে ঘেরা। আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণির একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে বাঁসওয়াড়া। এখানকার মূল অধিবাসী ভিল। রাজস্থানের ইতিহাসে এদের অনেক অবদান আছে। আদিবাসী-সংস্কৃতি উপভোগ করার উৎকৃষ্ট জায়গা বাঁসওয়াড়া। মহারাওয়াল জগমল সিং-এর রাজত্বকালে বাঁসওয়াড়ার রমরমা ছিল।
কী দেখবেন
আনন্দ সাগর লেক – বাঁসওয়াড়া শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত এই লেক রানি লঞ্চিবাঈয়ের তৈরি। এর আর একটি নাম বাঈ তালাও। এই লেকের ধারেই রয়েছে ‘কল্পবৃক্ষ’। কাছেই রয়েছে রাজবংশের ছত্রী।
দইলাব লেক – শহরের প্রতাপগড় রোডে এই লেক। লেকের ধারেই ‘হরিহর মারুতি ধাম’ তথা হনুমান মন্দির। এক দিকে হনুমান মন্দিরে মঙ্গলারতি, অন্য দিকে লেকের পাড় থেকে পাহাড়-ঢালে সূর্যোদয় দেখতে খুব সুন্দর লাগে।
মদ্রেশ্বর মন্দির – প্রচুর মন্দির আছে বাঁসওয়াড়ায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মদ্রেশ্বর মন্দির। শহরের পূর্ব দিকে পাহাড়শীর্ষে প্রাকৃতিক গুহামন্দির, ভিতরে শিবলিঙ্গ।
সাই মন্দির – বাঁসওয়াড়া শহরের সব চেয়ে জনপ্রিয় দ্রষ্টব্য সাই মন্দির। ২০০৪ সালে তৈরি এই মন্দিরে রয়েছে শিরডি সাইবাবার মূর্তি। শান্ত পরিবেশ মন ভালো করে দেয়।
কাগাদি পিকাপ ওয়্যার – শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে ৩ কিমি, কাগাদি লেকের পাড়ে সুন্দর বাগান, ফোয়ারা আর জলাশয়।
তলওয়াড়া – বাঁসওয়াড়া শহর থেকে সাড়ে ১২ কিমি দূরে, প্রাচীন মন্দির কমপ্লেক্স। মন্দিরগুলির স্থাপত্য দেখার মতো। এখানে রয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, সূর্য মন্দির, দ্বারকাধীশ মন্দির, গণেশ মন্দির, সম্ভরনাথ জৈন মন্দির প্রভৃতি। বেশ কিছু স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এই তলওয়াড়ায়।
ভীমকুণ্ড – তলওয়াড়া থেকে আরও সাড়ে ৮ কিমি এগোলে পাহাড়ে ঘেরা ভীমকুণ্ড। পাহাড়ের নীচে একটি গভীর গুহা থাকার কারণে স্থানীয় লোকেরা একে বলে ‘ফাটি খান’। রয়েছে একটি জলাশয়, যেখানে বছরভর জল থাকে। এখানকার জল খুব ঠান্ডা।
ত্রিপুরসুন্দরী মন্দির – বাঁসওয়াড়া শহর থেকে ১৭ কিমি, তলওয়াড়া থেকে ৬ কিমি দূরে বিখ্যাত ত্রিপুরসুন্দরী মন্দির, স্থানীয় লোকেরা বলে তুরিতামাতা। এখানে দেবী ব্যাঘ্রপৃষ্ঠে উপবিষ্টা। খুব প্রাচীন মন্দির। কুষাণরাজ কণিষ্কের আমলেরও আগে তৈরি এই মন্দির। অন্যতম শক্তিপীঠ হিসাবে খ্যাত।
পরহেদা – বাঁসওয়াড়া শহর থেকে ২২ কিমি, ১২ শতকের প্রাচীন শিবমন্দিরের জন্য বিখ্যাত। রাজা মান্ডলিক এই মন্দির নির্মাণ করান। শহরে এক টিলার মাথায় রয়েছে শ্রীরাজ মন্দির, যা সিটি প্যালেস নামে খ্যাত।
মাহি ড্যাম – বাঁসওয়াড়া থেকে ১৬ কিমি দূরে, রাজস্থানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ড্যাম। ড্যামের পাশেই চর্চিত বাগান। আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি মন ভোলায়।
কুপদা – বাঁসওয়াড়া শহর থেকে ২৮ কিমি দূরে, বাঁসওয়াড়া-দুঙ্গারপুর রোডে। বেজবামাতা মন্দিরের জন্য বিখ্যাত।
অনেকান্ত বাহুবলী মন্দির – বাঁসওয়াড়া-উদয়পুর রোডে, বাঁসওয়াড়া থেকে ৩৭ কিমি দূরে লোহারিয়ায় এই জৈন মন্দির। এখানে রয়েছে শ্বেতপাথরে তৈরি ভগবান বাহুবলীর ২৭ ফুট উঁচু মূর্তি। এখানে আরও অনেক মন্দির রয়েছে। উদয়পুর যাওয়া-আসার পথে দেখে নেওয়া যায়।
কুশলগড় – বাঁসওয়াড়া থেকে ৫২ কিমি, পাহাড়ের মাথায় অন্ধেশ্বর পার্শ্বনাথজি মন্দির। রয়েছে দশ শতকের শিলালেখ।
আরথুনা – বাঁসওয়াড়া থেকে ৫২ কিমি, একাদশ, দ্বাদশ ও পঞ্চদশ শতকে তৈরি অসংখ্য হিন্দু ও জৈন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের সমাবেশ। মন্দিরগুলির স্থাপত্য দেখার মতো। কাছেই লঙ্কিয়া গ্রামে নীলকান্ত মহাদেবের মন্দির।
কী ভাবে যাবেন
দেশের প্রায় সব বড়ো শহরের সঙ্গে উদয়পুর ট্রেন ও বিমানপথে যুক্ত।
কলকাতা থেকে ট্রেন – (১) অনন্যা এক্সপ্রেস – প্রতি বৃহস্পতিবার কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়ে দুপুর ১.১০ মিনিটে, উদয়পুর সিটি পৌঁছোয় তৃতীয় দিন, রাত ১২:২৫-এ।
(২) শালিমার-উদয়পুর সিটি এক্সপ্রেস – প্রতি রবিবার শালিমার থেকে ছাড়ে রাত ৮.২০ মিনিটে, উদয়পুর সিটি পৌঁছোয় তৃতীয় দিন সকাল ৫:৩৫ মিনিটে।
উদয়পুর বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে চলুন বাঁসওয়াড়া, ১৩২ কিমি। আর উদয়পুর শহর থেকে বাঁসওয়াড়া ১৫৭ কিমি, বাসে বা গাড়িতে চলুন।
কোথায় থাকবেন
বাঁসওয়াড়ায় থাকার জন্য রয়েছে অনেক বেসরকারি হোটেল, লজ। সন্ধান পাবেন makemytrip.com, goibibo.com, tripadvisor.in, tourmyindia.com, holidayiq.com প্রভৃতি ওয়েবসাইট থেকে।