ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: উত্তরবঙ্গের চিরাচরিত পর্যটন সার্কিটে নাম নেই জলপাইগুড়ি শহরের কাছেই অবস্থিত বোদাগঞ্জের। কিন্তু এই বোদাগঞ্জের জঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে এক সতীপীঠ, যেখানে গেলে গা ছমছমে পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
জলপাইগুড়ি শহর থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে বোদাগঞ্জের জঙ্গলে এই মন্দির অবস্থিত। এক কালে মন্দিরের ঠিক পাশ দিয়েই তিস্তা বয়ে যেত। মন্দিরটি তিস্তা নদীর তিন স্রোতের মাঝে অবস্থান করত বলে এই মন্দিরকে ‘ত্রিস্রোতা’ ভ্রামরী দেবী মন্দিরও বলা হয়।
বোদাগঞ্জের জঙ্গলে রয়েছে সারিবদ্ধ শাল ও সেগুন গাছ। চারিদিকে একটা মায়াবী এবং অলৌকিক পরিবেশের মাঝখানে বুক উঁচিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে ভ্রামরীর মন্দির। পীঠনির্ণয়তন্ত্র মতে এখানে দেবীর বাঁ পা পড়েছিল।
মন্দিরের সামনে রয়েছে পার্কিং স্পট। সেখান থেকেই শানবাঁধানো পথ চলে গিয়েছে মন্দিরের প্রবেশপথে। দরজার উপরে রয়েছে শিব-পার্বতীর বসে থাকার মূর্তি। মূল মন্দিরের প্রবেশমুখের বাঁ দিকে রয়েছে সিদ্ধিদাতা গণেশ। গণেশের আরাধনা করেই মন্দিরে প্রবেশ করেন অনেকে। দেবীমূর্তি দেখে মন ছুঁয়ে যাবে।
দেবী অষ্টভূজা, সালংকারা। দেবীর সামনে রাখা বড়ো বড়ো পাত্রে রাখা রয়েছে ভক্তদের নিবেদন। মন্দির প্রাঙ্গণেই রয়েছে বিশাল এক দালান। সেখানকার দেওয়ালে দেওয়ালে রয়েছে দেবদেবীর চিত্র। মূল মন্দিরের দরজা দিয়ে এগোলেই দেবীর সামনে রয়েছে ছোটো একটি ব্যারিকেড। মহাদেবের মূর্তি রয়েছে দেবীর ডান পাশে, এবং তাঁর পাশে বসে রয়েছেন ষাঁড়রূপী নন্দী।
কক্ষের বাঁ দিকে রয়েছে সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি নিয়ে যাবে সোজা ভ্রামরীদেবী মন্দিরের গর্ভগৃহে। সেখানেই রাখা রয়েছে সিংহবাহিনী কৃষ্ণবর্ণা দেবীর মূর্তি। পাশে রয়েছে সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম সতীর বাম পা। সেই পা রীতিমতো রক্তবর্ণ লাল। মহিলাদের নিবেদনের সিঁদুর ও ফুল দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সেই গর্ভগৃহ। এই পা দেখতে ও পায়ে ফুল দিতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন। মায়াবী এক টান কাজ করে মন্দিরে প্রবেশ করলেই।
স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, অরুণাসুর নামে এক অসুরের অত্যাচারে বিব্রত হতেন স্বর্গের দেবতারা। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে দেবীর শরণাপন্ন হন অন্য দেবতারা। তাঁদের সবাইকে রক্ষা করার জন্য দেবী অসংখ্য ভ্রমরের রূপধারণ করে অবশেষে জিতে যান। এই থেকে নামকরণ ভ্রামরীদেবীর।
পৌরাণিক কাহিনি যা-ই হোক না কেন, এই মন্দিরে এলে আপনার যে অন্য রকম একটা অনুভূতি হবে, তা বলাই বাহুল্য।