স্বল্পচেনা উত্তরবঙ্গ: লাল আর ঝামেলার গল্প শুনতে চলুন লালঝামেলা বস্তি

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: চেংমারি চা বাগানের পাশ দিয়েই ছুটে যাবে আপনাদের গাড়ি। কিছুটা দূরেই সুবিশাল হিমালয়, যা ক্রমশ এগিয়ে আসবে আপনাদের দিকে। ওই দিকেই ভুটান। আর আপনাদের গন্তব্য লালঝামেলা বস্তি।

ডুয়ার্সের পর্যটন মানচিত্রে এই লালঝামেলা এখনও সে ভাবে পরিচিতি পায়নি। কিন্তু বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে এই লালঝামেলার গুরুত্ব অপরিসীম।

ঘটনাটি সত্তরের দশকের। স্থানীয় আদিবাসীদের জমি দখল করে নিয়ে তা বেসরকারি চা সংস্থাগুলির হাতে তুলে দিতে থাকে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার। শুরু হয় আদিবাসীদের ওপরে অত্যাচার এবং শোষণ। সেই শোষণের বিরুদ্ধেই আন্দোলন গড়ে তোলেন সিপিএমের স্থানীয় শাখার দুই কর্মী। দু’ জনে চা বাগানের পর চা বাগান ঘুরে বেড়াতেন লাল পতাকা নিয়ে। একজন অবশ্য অন্য জনের তুলনায় ছিলেন অনেক বেশি দামাল। চা বাগানের বাবুদের প্ররোচনায় পুলিশের হাতে যথেষ্ট অত্যাচারিত হন দু’ জন। কিন্তু নিজেদের আন্দোলন থেকে কখনোই সরে আসেননি।

এই দু’ জনের একজনের নাম হয়ে যায় লাল সোমরা ওঁরাও এবং অন্য জনের, ঝামেলা সোমরা ওঁরাও। আন্দোলন অবশ্য কোনো ভাবেই বিফলে যায়নি। লাল এবং ঝামেলার নেতৃত্বে এই আন্দোলনের চাপে পড়ে আশির দশকের গোড়ায় আদিবাসীদের তাদের জমির অধিকার ফিরিয়ে দেয় সরকার। এই দুই নেতা তখন স্থানীয়দের কাছে নায়ক। তাঁদের নাম থেকেই স্থানীয় এই গ্রামের নাম হয় লালঝামেলা বস্তি।

আপনাদের গাড়ি এসে দাঁড়াবে একটা ভিউ পয়েন্টে। নীচে দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা ডায়না নদী। গত চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরে এই ডায়না নদী দিয়ে অনেক জলই বয়ে গিয়েছে। বৃদ্ধ হয়েছেন লাল আর ঝামেলা দু’ জনেই। রাজনৈতিক পটও অনেকটাই বদলে গিয়েছে। লাল আর ঝামেলার প্রিয় দলটাও এখন ক্ষমতা থেকে অনেকটাই দূরে। তবে এই গ্রামটা এখনও দরিদ্রই রয়ে গিয়েছে।

তবে বদলায়নি লালঝামেলার নৈসর্গিক অবস্থান। সুউচ্চ হিমালয় দু’ দিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে এই অঞ্চলকে। পাহাড়টা পুরোটাই ভুটানে। ঠিক যেমন ওই ব্রিজটা। ব্রিজটাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন হাত বাড়ালেই তাকে ছুঁয়ে ফেলা যাবে। ওর ওপর দিয়ে বেশ কিছু গাড়িও চলাচল করছে। তবে এই গোটা ঘটনাটাই ঘটছে ভুটানে।

ভিউ পয়েন্ট থেকে ধীরে ধীরে নামতে থাকুন। পৌঁছে যাবেন ডায়নার কোলে। পা ডুবিয়ে ছোঁয়া নিন জলের। দেখতে থাকুন ভুটানকে।

আপাতত রাত্রিবাসের কোনো জায়গা না থাকলেও বদলাচ্ছে লালঝামেলা। এই দিকটায় এখন পর্যটকদের আনাগোনা বেশ বেড়েছে। হয়তো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এখানে বেশ কিছু হোমস্টেও তৈরি হয়ে যাবে। ফলে আগামী দিনে এখানকার আর্থিক অবস্থা উন্নত হবে, সেই স্বপ্নই দেখছে লালঝামেলা বস্তির মানুষজন।

এখানে যাওয়ার এবং রাত্রিবাস সম্পর্কিত তথ্য

নিকটবর্তী রেল স্টেশন নিউ মাল জংশন থেকে লালঝামেলা বস্তির দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। নিকটবর্তী বড়ো জনপদ নাগরাকাটা। লাটাগুড়ি অথবা ঝালং, সুন্তালেখোলার মধ্যে কোথাও রাত্রিবাস করলে সেখান থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন লাল ঝামেলা বস্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *