পর্যটনকে চাগিয়ে তুলতে পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকিয়ে কর্নাটক

Hampi, Karnataka
হাম্পি। ছবি: শ্রয়ণ সেন।

বেঙ্গালুরু: একটা কথার খুব প্রচলন আছে – ডিকশনারিতে ‘ট্যুরিস্ট’ শব্দের অর্থ লেখা আছে ‘বাঙালি’। এটা হয়তো নেহাতই কথার কথা। কিন্তু এই কথায় খুব একটা কিছু ভুল নেই। ভারতে দেশীয় পর্যটকদের মধ্যে বাঙালির সংখ্যাই সর্বাধিক। এবং সেই বিষয়টা অনুবাধন করতে পেরেই কর্নাটক তাদের পর্যটনকে চাগিয়ে তুলতে বাঙালি পর্যটকদের উপর মনোনিবেশ করছে।

এমনিতেই বাঙালিরা বেড়াতে খুব ভালোবাসে। তার ওপর কর্মসূত্রে অসংখ্য বাঙালি বেঙ্গালুরুতে বাস করেন। এখানকার তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সেক্টরে বাঙালিদের রীতিমতো রমরমা। কোভিড অতিমারির জন্য গত দু’ বছরে আইটি সেক্টরে কাজ হয়েছে ‘বাড়ি থেকে’। ফলে বহু বাঙালি বেঙ্গালুরু ছেড়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এর ফলে কর্নাটকের পর্যটন শিল্প বেশ ঝিমিয়ে পড়েছিল বলে মনে করে সে রাজ্যের পর্যটন দফতর।

অতিমারির পরে একটু একটু করে অফিসে বসে কাজ শুরু হয়েছে। বাঙালি কর্মীরা আবার ফিরে আসছেন। এই পরিস্থিতিতে মাঠে নেমে পড়েছে কর্নাটক পর্যটন দফতর। পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করতে বাঙালি ট্যুরিস্টরা যে বড়ো ভরসা সেটা বুঝেই সোমবার কলকাতায় রোড শো-র আয়োজন করে তারা।

আবে ফলস্‌, কুর্গ। ছবি: শ্রয়ণ সেন।

কর্নাটক পর্যটন দফতরের ডিরেক্টর বেঙ্কটেশ টি বলেন, “বাংলা থেকে প্রচুর মানুষ বেঙ্গালুরু ও তার আশেপাশে আইটি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করেন। কর্নাটকে থেকে তাঁরা একদিকে যেমন রাজ্যের জন্য প্রচুর রাজস্ব আনেন, তেমনই সপ্তাহান্তে ছুটে যান রাজ্যের পর্যটনস্থলগুলিতে, কখনও কখনও লম্বা ছুটি কাটাতেও যান। কিন্তু কোভিড শুরু হতেই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ শুরু হয়। আর কর্নাটক পর্যটনও প্রায় ধসে পড়ে। তবে এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আমরা আশা করছি প্রযুক্তিকর্মীরা ফিরে আসবেন এবং আমাদের পর্যটন চাঙ্গা হয়ে উঠবে।”

কর্নাটক পর্যটনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ পর্যন্ত সে রাজ্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে পর্যটকের সংখ্যায় বাংলার স্থান ছিল চতুর্থ। প্রথম তিনটি রাজ্য ছিল মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই তিন রাজ্যই কিন্তু কর্নাটকের প্রতিবেশী। কর্নাটকে মোট পর্যটকের ১৫ শতাংশই ছিল বাঙালি।

বৃন্দাবন গার্ডেন্স-এ আলোকসজ্জা। ছবি: শ্রয়ণ সেন।

বেঙ্গালুরুর স্কাইওয়ে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস-এর ডিরেক্টর এস মহালিঙ্গাইয়া-মনু বলেন, “এ বছর আমরা বাংলা ২০ থেকে ২৫ লক্ষ ট্যুরিস্ট আশা করছি। বাঙালি পর্যটকদের একটা অভ্যাস খুব ভালো। তাঁরা আগে থেকে ভ্রমণ পরিকল্পনা করে নেন। দলবদ্ধভাবেও বেড়াতে আসেন। কখনও কখনও বেঙ্গালুরুতে কয়েকটা দিন আত্মীয়-বাড়িতে কাটিয়ে বেরিয়ে পড়েন কর্নাটক ভ্রমণে।”

বাঙালি পর্যটকদের জন্য নতুন নতুন আকর্ষণীয় গন্তব্য এবং কিছু নতুন প্যাকেজের কথা জানিয়ে কর্নাটক পর্যটনের আধিকারিকরা বলেছেন, কর্নাটকে তাঁরা প্রচুর সংখ্যায় বাজেট এবং প্রিমিয়াম ‘স্টেকেশন’ চালু করেছেন। ‘স্টেকেশন’ মানে যেখানে থেকে ছুটি কাটানো যায় আবার কাজও করা যায়।

কর্নাটক স্টেট ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের যে বিভাগটি জঙ্গল লজ এবং রিসর্টগুলি দেখাশোনা করে, তার অধিকর্তা মনোজ কুমার (আইএফএস) বলেন, ‘আগে আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের রিসর্ট-হোটেলের অনন্যতা ধরে রাখতে নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি সীমিত রাখার উপর জোর দিতাম। কিন্তু কোভিডের পরে আমরা সমস্ত রিসর্টে ইন্টারনেট ও ওয়াইফাই চালু করেছি। যাতে এগুলো ‘স্টেকেশন’ হিসাবে ব্যবহার করা যায়।”

আরও পড়তে পারেন

মিলনমেলা প্রাঙ্গণে শুরু হল পর্যটনমেলা টিটিএফ, চলবে রবিবার পর্যন্ত 

পুজোয় চলুন/ কেরল ভ্রমণছক ২: ওয়েনাড়-কোঝিকোড়-কান্নুর-কাসারাগোড়

পুজোয় চলুন/ কেরল ভ্রমণছক ১: এর্নাকুলাম-মুন্নার-পেরিয়ার-আলাপ্পুঝা-কোল্লম-তিরুঅনন্তপুরম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *