পুজোয় চলুন/ কেরল ভ্রমণছক ১: এর্নাকুলাম-মুন্নার-পেরিয়ার-আলাপ্পুঝা-কোল্লম-তিরুঅনন্তপুরম

Chinese Fishing Net, Kochi

আর মাত্র কয়েকটা দিন। তার পরেই শুরু হয়ে যাবে পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের আসনের আগাম সংরক্ষণ। সুতরাং আর দেরি নয়। এখনই করে ফেলুন পুজোর ভ্রমণ পরিকল্পনা। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ভ্রমণ অনলাইন এ বারও সাজিয়ে দিচ্ছে এক গুচ্ছ ভ্রমণ পরিকল্পনা। এ বার দক্ষিণ ভারত। চলুন কেরলের দক্ষিণ ভাগে।

পর্যটন-সম্পদে ভরপুর ‘ভগবানের আপন দেশ’ কেরল। বৈচিত্র্যে ভরপুর। রয়েছে সমুদ্র, পাহাড়, জঙ্গলের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ, তেমনই রয়েছে নানা ঐতিহ্যশালী স্থাপত্য।

সফরসূচি

ভ্রমণ শুরু করুন এর্নাকুলাম থেকে। ভারতের সব প্রান্তের সঙ্গে এর্নাকুলামের যোগ রয়েছে ট্রেন ও বিমানপথে। এর্নাকুলামের যমজ শহর কোচিতে রয়েছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রেলের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in এবং বিমান উড়ানের সময় গুগুল সার্চ করে দেখে নিন। চেষ্টা করুন যতটা সকাল সকাল সম্ভব এর্নাকুলাম পৌঁছোতে।

ডাচ প্রাসাদ, মাত্তানচেরি।

প্রথম থেকে তৃতীয় দিন – থাকুন এর্নাকুলামে। প্রথম দিন দেখে নিন স্থানীয় দ্রষ্টব্য –  

(১) চাইনিজ ফিশিং নেট – ভেম্বানাড় হ্রদের ধারে। সূর্যাস্ত নয়নাভিরাম।

(২) সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ – চাইনিজ ফিশিং নেটের কাছেই। কোচিতে মৃত্যুর পর ভাস্কো-দা-গামার দেহ কয়েক বছর এখানেই রাখা হয়েছিল।

(৩) সিনাগগ – ১৫৬৭ সালে তৈরি। মাতাঞ্চেরিতে।

(৪) ডাচ প্রাসাদ – সিনাগগের পাশেই।

(৫) ভেম্বানাড়ে নৌকাযাত্রায় ভাইপিন দ্বীপ – ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম নোনাজলের হ্রদ ভেম্বানাড় লেকে আধ ঘণ্টার নৌকাবিহারে ঘুরে আসুন ভাইপিন দ্বীপে। কোচির জেটি থেকে নিয়মিত লঞ্চ ছাড়ছে।

আথিরাপল্লি জলপ্রপাত।

দ্বিতীয় দিন বেরিয়ে পড়ুন এর্নাকুলম থেকে। প্রথমে চলুন শঙ্করাচার্যের জন্মস্থান কালাডি, দূরত্ব ৪১ কিমি। এখানে অবশ্যই দেখে নিন বেলুড় মঠের অধীন শ্রীরামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রম। কালাডি থেকে চলুন আথিরাপল্লি জলপ্রপাত, ৩৭ কিমি। আথিরাপল্লি দেখে চলুন ভাঝাচল জলপ্রপাত, ৭ কিমি। ফিরে আসুন এর্নাকুলামে, দূরত্ব ৮৮ কিমি।  

তৃতীয় দিন এর্নাকুলাম থেকে প্রথমে চলুন গুরুভায়ুর, ৯২ কিমি। শ্রীকৃষ্ণমন্দিরের জন্য বিখ্যাত। পোশাকবিধি পালনীয়। গুরুবায়ুর থেকে চলুন দক্ষিণের কৈলাস ত্রিসুর, ২৯ কিমি। দেখে নিন কেরলের বৃহত্তম ১২ শতকের বড়াক্কুনাথন শিবমন্দির। প্যাগোডাধর্মী কারুকার্যময় মন্দিরে পাথরের বিগ্রহ – নৃত্যরত শিব। মন্দিরের দেওয়ালচিত্রে মহাভারতের আখ্যান। ফিরুন এর্নাকুলামে, ৮৫ কিমি।

চতুর্থ দিন – এর্নাকুলাম থেকে চলুন মুন্নার (১৭০০ মিটার), ১২৭ কিমি। কেরলের শৈলশহর। চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত। রাত্রিবাস মুন্নার

এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যানে নীলগিরি থর। ছবি সৌজন্যে keralatourism.org

পঞ্চম দিন – মুন্নারে ঘোরাঘুরি, রাত্রিবাস। মুন্নারে দ্রষ্টব্য —

(১) এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান – মুন্নার থেকে ১৪ কিমি। নীলগিরি থরের জন্য বিখ্যাত। অভয়ারণ্যের মধ্যেই রয়েছে সুন্দর ঝরনা।

(২) পল্লিভাসাল জলপ্রপাত – মুন্নার থেকে ১২-১৩ কিমি। কোচির দিকে কিছুটা এসে বাঁ দিকে রাস্তা নেমে গিয়েছে, পথের শেষে জলপ্রপাত।

(৩) ইকো পয়েন্ট – টপ স্টেশনের পথে ১৮ কিমি দূরে। মাট্টুপেট্টি ড্যামের জলে তৈরি হ্রদ। হ্রদের এ-পার থেকে চিৎকার করলে, ও-পারের পাহাড়ে ধাক্কা লেগে তা ইকো হয়।

(৪) কুন্ডলা ড্যাম – ইকো পয়েন্ট থেকে ৭ কিমি।

টপ স্টেশন ভিউ পয়েন্ট, মুন্নার। ছবি সৌজন্যে munnertourism.co.in

(৫) টপ স্টেশন ভিউ পয়েন্ট (৬১০০ ফুট) – কুন্ডলা ড্যাম থেকে ১০ কিমি। এক দিকে পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি, অন্য দিকে তামিলনাড়ুর থেনি জেলার উপত্যকা দেখা যায়।

(৬) দেবীকুলাম লেক – মুন্নার থেকে ১৬ কিমি।

ষষ্ঠ দিন– মুন্নার থেকে আসুন পেরিয়ার, ৯৮ কিমি। রাত্রিবাস পেরিয়ার।

সপ্তম দিন– ঘোরাঘুরি। রাত্রিবাস পেরিয়ার।

পেরিয়ার জাতীয় উদ্যানে সাফারি করা ছাড়াও কুমিলিতে করতে পারেন প্ল্যান্টেশন ট্যুর অর্থাৎ মশলার বাগান দেখা।

পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান।

অষ্টম দিন– চলুন আলাপ্পুঝা (আলেপ্পি) ১২৮ কিমি। রাত্রিবাস আলাপ্পুঝাআলাপ্পুঝার দ্রষ্টব্য –

(১) আম্বালাপুজায় পনেরো শতকের শ্রীকৃষ্ণ মন্দির – আলাপুজা স্টেশন থেকে ১৪ কিমি।

(২) আলেপ্পি সৈকত ও লাইটহাউস

(৩) বিকাশনম সৈকত – আলাপুজা স্টেশন থেকে সাড়ে ৪ কিমি।

(৪) থুম্পলি সৈকত – বিকাশনমের পাশে।

নবম দিন – আলাপ্পুঝা থেকে চলুন কোল্লম। সড়কপথে দূরত্ব ৮৬ কিমি। ট্রেনে দেড় ঘণ্টার মতো। বোটে ৮ ঘণ্টা। (তবে বোটেই আসা উচিত)। বাস/গাড়ি বা ট্রেনে কোল্লাম এলে সে দিনই ঘুরে আসুন ৩২ কিমি দূরে ভারকালা সৈকতশ্রীজনার্দন স্বামী মন্দির। কোল্লমে ফিরে সন্ধ্যায় দেখে নিতে পারেন মহাত্মা গান্ধী সৈকত। রাত্রিবাস কোল্লম।

ভারকালা সৈকত।

দশম দিন – আগের দিন আলাপুঝা থেকে বোটে কোল্লম এলে আজ ভারকালা সৈকত হয়ে চলুন তিরুঅনন্তপুরম, ৭৯ কিমি। এখানে দেখে নিন –

(১) পদ্মনাভস্বামী মন্দির

(২) চিড়িয়াখানা

(৩) সম্মুঘম সৈকত – স্টেশন থেকে ৯ কিমি।

(৪) ভেলি টুরিস্ট ভিলেজ – সম্মুঘম থেকে ৪ কিমি।

বিকেলে চলুন ১৮ কিমি দূরে কোভালম সৈকত। সূর্যাস্ত দেখুন।

কোভালম সৈকত।

একাদশ দিন – আজও থাকুন তিরুঅনন্তপুরমে, চলুন নেয়ার ড্যামঅভয়ারণ্য হয়ে হিলস্টেশন পোনমুড়ি (১১০০ মিটার)। ২২টি হেয়ারপিন বেন্ড পোনমুড়ির পথে। পথে পড়বে কাল্লার ও মিনমুট্টি ফলস্‌। যাতায়াত ১৩৫ কিমি।

দ্বাদশ দিন– ফিরুন ঘরপানে। তিরুঅনন্তপুরম থেকে বিমানে বা ট্রেনে ফিরতে পারেন। রেলের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in এবং বিমান উড়ানের সময় গুগুল সার্চ করে দেখে নিন।

কী ভাবে ঘুরবেন

কেরলে বাস পরিষেবা ভালো। কিছু কিছু জায়গায় অনলাইনে বাসের টিকিট বুকিং-এর ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে নিজের ইচ্ছেমতো ঘুরতে চাইলে মুন্নার যাওয়ার দিন এর্নাকুলাম থেকে গাড়ি ভাড়া করে সেই গাড়ি ফেরার দিন তিরুঅনন্তপুরমে ছেড়ে দিন। এর্নাকুলামে যেখানে থাকবেন, সেখান থেকে গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

শৈলশহর পোনমুড়ি।

কোথায় থাকবেন

সব জায়গাতেই রয়েছে কেরল পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হোটেল। তবে এর্নাকুলমের বোলগাট্টি আইল্যান্ড রিসোর্ট এবং মুন্নারে টি-কাউন্টিতে ঘরভাড়া তুলনায় অনেক বেশি। পেরিয়ারে আছে পেরিয়ার হাউস, আলেপ্পিতে আছে ট্যামারিন্ড আলাপুঝা, কোল্লমে রয়েছে ট্যামারিন্ড কোল্লম এবং তিরুঅনন্তপুরমে রয়েছে হোটেল চৈত্রম। হোটেলগুলি অনলাইনে বুক করার জন্য লগইন করুন www.ktdc.com। আর আছে বহু বেসরকারি হোটেল। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সন্ধান পেয়ে যাবেন।

এর্নাকুলাম, মুন্নার, ভারকালা ও কোভলমে থাকার অন্য যোগাযোগ করতে পারেন ‘ট্রাভেলিজম’-এর সঙ্গে। যোগাযোগ: ৯৯০৩৭৬৩২৯৬, ৮২৭৬০০৮১৮৯।

মনে রাখবেন

(১) পেরিয়ারে পৌঁছেই চেষ্টা করবেন প্রথম দিনেই বিকেলের সাফারি ধরতে। সাফারির টিকিট অনলাইনে বুক করা এবং পেরিয়ার টাইগার রিজার্ভ সম্পর্কে বিশদ জানার জন্য দেখুন https://www.periyartigerreserve.org/।

(২) আলাপ্পুঝায় ১৮৬২ সালের লাইটহাউস সোম থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টে থেকে সাড়ে ৪টে খোলা।

কেরল পর্যটনের পেরিয়ার হাউস। ছবি সৌজন্যে ktdc.com

(৩) আলাপ্পুঝা থেকে কোল্লম চলুন বোটে। স্টেট ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের জেটি থেকে বোট ছাড়ে রোজ সকাল সাড়ে ১০টায়। পাম্বা নদী, কায়ামকুলাম কয়াল ও অষ্টমুড়ি লেক দিয়ে ৮ ঘণ্টার এই যাত্রা এক বিরল অভিজ্ঞতা। বোট যায় কুট্টানাড় দিয়ে, সমুদ্রতল থেকে ২.২ মিটার নীচে অবস্থিত ভারতের একমাত্র অঞ্চল। যাওয়ার আগে বোটের সময় ও ভাড়া জেনে নেবেন।

(৪) তিরুঅনন্তপুরমের বদলে কোভলমে থেকেও দ্রষ্টব্যগুলো দেখে নিতে পারেন। কোল্লমের বদলে ভারকালাতেও থাকতে পারেন।

আরও পড়তে পারেন

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ১: গুয়াহাটি-হাফলং-শিলচর

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ২: গুয়াহাটি-পোবিতোরা-কাজিরাঙা-মাজুলি-শিবসাগর

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ৩: গুয়াহাটি-শিলং-চেরাপুঞ্জি-মওলিননং-ডাওকি

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ৪: শিলং-চেরাপুঞ্জি-মওলিননং-গুয়াহাটি-ভালুকপং-বমডিলা-তাওয়াং-দিরাং

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ৫: গুয়াহাটি-নামেরি-বমডিলা-তাওয়াং-দিরাং

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ৬: ত্রিপুরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *