পুজোয় অদূরে ৪ / শিমুলতলা

Latupahar

আর মাত্র দিনদশেক পরেই মহালয়া। পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে যাবে। এখন আর পুজোয় বেড়ানোর বড়ো পরিকল্পনা করা যাবে না। ট্রেনের টিকিট নেই, অনেক বেশি বিমানভাড়া গুনতে হবে, হোটেল-রিসর্টে জায়গা মেলাও ভার। তবে পুজোর ছুটিতে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরে কাছেপিঠে ভ্রমণ করে আসতেই পারেন। তেমনই কিছু জায়গার সুলুকসন্ধান দিচ্ছে ভ্রমণ অনলাইন। আজ চলুন বাঙালির অতি পরিচিত পশ্চিমে, শিমুলতলায়

শিমুলতলা — এক সময়ে বাংলা সিনেমার শ্যুটিং স্পট। সত্যজিৎ রায়ের ‘মহাপুরুষ’, তরুণ মজুমদারের ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রের আউটডোর শ্যুটিংয়ের জায়গা। স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য বাঙালিরা পশ্চিমে যেতেন। সেই পশ্চিমেরই একটি প্রিয় জায়গা শিমুলতলা।

কথায় বলে, টিলা টিলা শিমুলতলায় ভিলা ভিলা বাড়ি। পাহাড়, প্রকৃতি, জলবায়ুর আকর্ষণে বাঙালি ছুটে আসত এই শিমুলতলায়। তারই চিহ্ন সর্বত্র ছড়ানো। পাহাড়, টিলা, শাল, মহুয়া গাছের মাঝে ঘুরে বেড়ান, উপভোগ করুন প্রকৃতি।

ভ্রমণসূচি

প্রথম দিন – চলুন শিমুলতলা। এমনিতে হাওড়া থেকে শিমুলতলা যাওয়ার এক গাদা ট্রেন রয়েছে। কিন্তু টিকিট পাওয়ার দিক থেকে সব থেকে ভালো ট্রেনটি হল পটনা জনশতাব্দী এক্সপ্রেস। ট্রেনটি রবিবার ছাড়া প্রতি দিন দুপুর ২:০৫-এ হাওড়া থেকে ছেড়ে ঝাঝা পৌঁছোয় সন্ধে ৭.১৩-য়। ঝাঝা থেকে শিমুলতলা ২২ কিমি রাস্তা, গাড়িতে চলে আসুন। হাওড়া-মোকামা এক্সপ্রেস রাত ১১.২০-তে হাওড়া ছেড়ে শিমুলতলা পৌঁছোয় সকাল ৬.৩১-এ।

টিলা টিলা শিমুলতলায় ভিলা ভিলা বাড়ি।

দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিন – শিমুলতলায় ঘোরাঘুরি।

দু’টো দিন শিমুলতলায় কাটান, হাঁটাহাঁটি করুন, প্রকৃতি উপভোগ করুন, পুরোনো বাংলোবাড়িগুলো ঘুরে ঘুরে দেখুন।

কী দেখবেন শিমুলতলায়

(১) স্টেশন থেকে বেরোতেই বাঁ দিকে সে কালের হাউস অব লর্ডস অর্থাৎ লর্ড এস পি সিংহের বাড়ি। আরও দেখুন স্যার রাজেন মুখার্জির বাড়ি ‘রিট্রিট’, ভূতুড়ে বাড়ি হিসাবে পরিচিত ‘দুলারি ভবন’, যশোদা ভবন (আগে নাম ছিল দ্রৌপদী ধাম), কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট পি সি চন্দর বাড়ি ‘বিজনাবাস’, ‘মহেন্দ্র ভবন’, ‘চারু মঞ্জিল’, ঘোষ পরিবারের ‘স্বাস্থ্য কুটীর’, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির ‘মা হাউস’, বিচারপতি শ্যামল সেনের বাড়ি ‘দ্য রিজ’, নির্বাক চলচ্চিত্র ‘দেবদাস’-এর পরিচালক নরেশ মিত্রের বাড়ি (যা এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভের হলিডে হোম) ইত্যাদি। 

(২) স্টেশন থেকে দেড় কিমি দূরে লাটু পাহাড়। পায়ে পায়ে চলুন। পথে দেখুন দুর্গের আকারের বাড়ি পাটনা লজ, নলডাঙার রাজবাড়ি। ১০০০ ফুট উঁচু গাছগাছালিতে ভরা লাটুপাহাড়ে চড়ে দেখে নিন আদিবাসী দেবতার স্থান। নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত। কাছেই একটি সরোবর।

(৩) রেললাইন পেরিয়ে ৬ কিমি দূরে হলদি ফল্‌স

(৪) রেললাইন পেরিয়ে ২ কিমি দূরে পাহাড়ি ঝোরা লীলাবরণ

(৫) ১৬ কিমি দূরে টেলবা নদী পেরিয়ে ধারারা তথা ধরহরা ফল্‌স

নলডাঙার রাজবাড়ি।

চতুর্থ দিন – আজ চলুন দেওঘর। শিমুলতলা থেকে ৩৯ কিমি। এখানে দেখে নিন –

(১) দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম বৈদ্যনাথধাম শিবমন্দির। মন্দির চত্বরে লর্ড শিবের মন্দিরটি ছাড়াও আছে ২১টি মন্দির। মন্দিরের উত্তরে ১৫০ সিঁড়ির ক্ষীরগঙ্গা দিঘি।

(২) শহরের ক্লক টাওয়ার থেকে ১২ কিমি দূরে তপোবন। এখানকার ছোটো গুহায় তপস্যা করেছিলেন বালানন্দ ব্রহ্মচারী। এর দক্ষিণ-পুবে শিবকুণ্ড আর শূলকুণ্ড। ৩৫০ ফুট উপরে শিবঠাকুর। শিব বা প্রকৃতি, যার আকর্ষণেই হোক উপরে উঠলে ঠকবেন না।

(৩) চলুন ত্রিকুট পাহাড়। দেওঘর থেকে দুমকাগামী পথে আরও ২০ কিমি দূরে। ২৪৭০ ফুট উঁচু পাহাড়শিরে চলুন রোপওয়ে চড়ে। অনিন্দ্যসুন্দর নৈসর্গিক শোভা।

পঞ্চম দিন – আজ চলুন গিরিডি, শিমুলতলা থেকে ৯০ কিমি। এখানে দেখে নিন –

(১) গিরিডি থেকে ধানবাদ-কুলটি সড়কে ৭ কিমি গিয়ে ডান দিকে আরও ৪ কিমি গেলে উশ্রী ফল্‌স। চলার পথে বেশ দূরে দেখা যায় পরেশনাথ পাহাড়। ভিউ পয়েন্ট থেকে নেমে বাঁ হাতি কিছুটা গেলে বোঝা যায় ঝরনার উচ্ছলতা।

(২) গিরিডি শহর থেকে ১০ কিমি দূরে খান্ডোলি পাহাড়, ড্যাম, পার্ক

মন্দার হিল।

ষষ্ঠ দিন – আজ ঘুরে আসুন ভাগলপুরের কাছে মন্দার হিল, ৭৩ কিমি। রোপওয়ে চড়ে যাওয়া যায় ১৫০০ ফুট উচ্চতার পাহাড়শিরে। এখানে রয়েছে ২০ ফুটের বুদ্ধমূর্তি, ৫ ফুটের বিষ্ণু, শাকম্ভরী দেবী, জৈন তীর্থঙ্করদের নানান মূর্তি।

সপ্তম দিন – ঘরপানে ফিরুন। মোকামা-হাওড়া এক্সপ্রেস বিকেল ৪.১৯-এ শিমুলতলা ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় ভোর ৩টেয়। পটনা-হাওড়া জনশতাব্দী এক্সপ্রেস সকাল ৮.২৬-এ ঝাঝা ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় দুপুর ১.২৫-এ।

কোথায় থাকবেন

শিমূলতলায় থাকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ট্রাভেলিজম-এর সঙ্গে। ফোন: ৮২৭৬০০৮১৮৯, ৯৯০৩৭৬৩২৯৬। শিমুলতলায় পাবেন হলিডে হোম। হলিডে হোম-এর জন্য দেখুন www.holidayhomeindia.com। 

কী ভাবে ঘুরবেন

(১) শিমূলতলায় হেঁটে, অটোয় চেপে ঘুরুন। দূরের জায়গা যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিন।

(২) দেওঘরে  বৈদ্যনাথের মন্দিরে পাণ্ডাদের সাহায্য ছাড়াও পুজো দেওয়া যায়।

(৩) হাওড়া-মোকামা এক্সপ্রেসে দু’ সপ্তাহ আগে আগাম সংরক্ষণ করতে হয়। তাই পুজোর সময় হলেও এই ট্রেনে টিকিট পাওয়া মোটামুটি নিশ্চিত। ট্রেনের সবিস্তার সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in।

(৪) শিমুলতলা যাওয়ার জন্য ঝাঝা স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। শিমুলতলায় যেখানে থাকবেন, সেখানে বলে রাখলে তারাও ঝাঝা স্টেশনে গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। 

(৫) ইচ্ছা করলে গিরিডি, দেওঘর আর মন্দার হিলের মধ্যে কোনো একটা জায়গা সূচি থেকে বাদ দিয়ে ভ্রমণ কাটছাঁট করতে পারেন।

আরও পড়তে পারেন

পুজোয় অদূরে ৩ / রাঁচি-নেতারহাট-বেতলা

পুজোয় অদূরে ২ / রাঁচি-ম্যাকলাস্কিগঞ্জ

পুজোয় অদূরে ১ / ঘাটশিলা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *