দুর্গাপুজো আর এক মাসও নেই। ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়া। এখন আর পুজোয় বেড়ানোর বড়ো পরিকল্পনা করা যাবে না। কারণ ট্রেনের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর সময় খুব কম থাকায় বিমানের টিকিটের জন্যও অনেক টাকা গুনতে হবে। তা ছাড়া হোটেল-রিসর্টও প্রায় সব ভর্তি। তবে পুজোর ছুটিতে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরে কাছেপিঠে ভ্রমণ করে আসতেই পারেন। এমন জায়গায় যেতে পারেন যেখানে দিনে দিনেই পৌঁছে যাবেন। তেমনই কিছু জায়গার সুলুকসন্ধান দিচ্ছে ভ্রমণ অনলাইন। চলুন বাঙালির আর-এক অতি পরিচিত ও প্রিয় জায়গা রাঁচি, সঙ্গে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। ৫ রাত ৬ দিনের ট্যুরে বেরিয়ে পড়ুন।
প্রথম দিন
সকালে বেরিয়ে পড়ুন রাঁচির উদ্দেশে। হাওড়া-রাঁচি শতাব্দী এক্সপ্রেস রবিবার বাদে প্রতি দিন সকাল ৬.০৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়ে রাঁচি পৌঁছোয় দুপুর সোয়া ১টায়।
২১৩৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট রাঁচি একসময়ে ছিল বিহারের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী, এখন ঝাড়খণ্ডের রাজধানী। রাঁচি শহরেই রয়েছে অনেক দ্রষ্টব্য – জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য টেগোর হিল তথা মোরাবাদি হিল, পাদদেশে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, রাঁচি পাহাড়, রাঁচি লেক, শহর থেকে ৯ কিমি উত্তরে কাঁকে ড্যাম ও রক গার্ডেন, শহর থেকে ৭ কিমি দক্ষিণে পুরীর মন্দিরের আদলে তৈরি জগন্নাথ মন্দির, তার থেকে কিছুটা দূরে হাতিয়া ড্যাম।
এ দিন দুপুরের খাওয়া সেরে টেগোর হিল, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, রাঁচি পাহাড়, রাঁচি লেক দেখে নিন।
দ্বিতীয় দিন
প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন। প্রথমে চলুন হুড্রু ফল্স, রাঁচি থেকে ৪৬ কিমি। ৩২০ ফুট উঁচু থেকে জলধারা পড়ছে সুবর্ণরেখার। ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গিয়েছে ঝরনাতলায়।
আরও ২৪ কিমি গেলে সীতা ফল্স। আকারে ছোটো হলেও রূপে অনবদ্য। কাছেই রয়েছে ছোটো একটি মন্দির, পাথরে সীতার পায়ের ছাপ। এখান থেকে ৪ কিমি দূরেই রাঁচির আর-এক আকর্ষণীয় জলপ্রপাত জোনা ফল্স, এখন নাম হয়েছে গৌতমধারা। ১৫০ ফুট উপর থেকে জলধারা নামছে ধাপে ধাপে।
জোনা দেখে চলুন দসম ফল্সে, ৫২ কিমি। ১৪৪ উঁচু থেকে দশটি ধারায় নামছে কাচনি নদী। দসম দেখে ফিরে আসুন ৩৪ কিমি দূরের রাঁচিতে। পথেই সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাওয়া।
তৃতীয় দিন
চলুন রাজরাপ্পা, রাঁচি থেকে ৭৪ কিমি। দামোদর ও ভৈরবী নদীর সঙ্গমে ছিন্নমস্তার মন্দির। সকাল সকাল রওনা হয়ে দুপুরের মধ্যে ফিরে রাঁচির বাকি দ্রষ্টব্য দেখে নিন।
চতুর্থ দিন
প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন। চলুন ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। সোজা পথে না গিয়ে চলুন পাত্রাতু হয়ে, দূরত্ব ৯৯ কিমি। পথে পাত্রাতু ঘাটের হেয়ারপিন বেন্ডওয়ালা পাহাড়ি পথ উপভোগ করুন। ঘাটেই কিছু ভিউপয়েন্ট আছে। দেখুন দামোদরের উপর গড়ে ওঠা পাত্রাতু ড্যাম ও লেকের দৃশ্য। মধ্যাহ্নভোজের আগে পৌঁছে যান ম্যাকলাস্কিগঞ্জ।
এ দিনটা হাঁটাহাঁটি করুন ম্যাকলাস্কিগঞ্জে। শাল-সেগুন-মহুয়া গাছের সমারোহ ম্যাকলাস্কিগঞ্জকে করেছে আরণ্যক। জল-হাওয়া তুলনাহীন। এপ্রিলেও হালকা শীতের আমেজ, ভরা বর্ষায় রুক্ষ মালভূমির শ্যামলিমা, বসন্তে পলাশ-শিমূল-কৃষ্ণচূড়ার লালের সঙ্গে জাকারান্ডার বেগুনি আর অমলতাসের হলুদ-সোনালি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় ম্যাকলাস্কিগঞ্জে। প্রকৃতির মাঝে ছোটো অবকাশ যাপনের জায়গা ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। একসময়ে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বসতি গড়েছিলেন এখানে। লাল কাঁকরের পথ, এ-দিকে ও-দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাংলো, ভিলা। তাদের স্থাপত্য দেখবার মতো। হেঁটে ঘুরুন ম্যাকলাস্কিগঞ্জে।
পঞ্চম দিন
প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন। এ দিনটাও থাকুন ম্যাকলাস্কিগঞ্জে।
প্রথমে চলুন শহর থেকে ২০ কিমি দূরে জঙ্গলের মাঝে ঝুনঝুনিয়া ঝরনা। ফেরার পথে একে একে দেখে নিন মছলি পার্ক, চাট্টি নদীর উপর রেলসেতু, বকসি বাংলো (এখানে শ্যুটিং হয়েছিল কঙ্কনা সেনশর্মার ছবি ‘দ্য ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’), ম্যাকলাস্কিগঞ্জ স্টেশন, নজরমিনার ও ডুগাডুগি নদী।
আবাসস্থলে ফিরে এসে দুপুরের আহার সেরে আবার বেরিয়ে পড়ুন। চলুন দুল্লি গ্রামে ১০০ বছরের সর্বধর্মস্থল, কাছেই সীতাকুণ্ড। ফেরার পথে দেখে নিন বুদ্ধদেব গুহ, অপর্ণা সেনদের বাংলো। অবশ্য এই সব বাংলোর এখন হাতবদল হয়ে গিয়েছে।
ষষ্ঠ দিন
ঘরপানে চলুন। সক্কালেই বেরিয়ে পড়ুন। বাসে বা গাড়িতে ফিরুন রাঁচি। গাড়িতে সরাসরি আসুন, দূরত্ব ৬৭ কিমি। রাঁচি থেকে হাওড়াগামী শতাব্দী এক্সপ্রেস ধরুন। রবিবার ছাড়া ট্রেনটি প্রতি দিন দুপুর ১:৪৫-এ রাঁচি ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় রাত সাড়ে ন’টায়।
কোথায় থাকবেন
রাঁচি ও ম্যাকলাস্কিগঞ্জে থাকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ভ্রমণ সংস্থা ট্রাভেলিজম-এর (Travelism) সঙ্গে। যোগাযোগ ৮২৭৬০০৮১৮৯, ৯৯০৩৭৬৩২৯৬। রাঁচিতে ঝাড়খণ্ড পর্যটনের হোটেল বিরসা বিহার রয়েছে। বুকিং: tourism.jharkhand.gov.in/
মনে রাখবেন
(১) অক্টোবরে রাঁচি ও ম্যাকলাস্কিগঞ্জের আবহাওয়ায় হালকা হালকা ঠান্ডা ভাব থাকে। হালকা শীতের পোশাক রেখে দেওয়া ভালো।
(২) রাঁচিতে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরুন। সেই গাড়িতেই চলে আসুন ম্যাকলাস্কিগঞ্জে। এখানে টোটো ভাড়া করে ঘুরতে পারেন।
(৩) রাঁচি ও ম্যাকলাস্কিগঞ্জে যেখানে থাকবেন, সেখানে বলে রাখলে তারাই গাড়ি/টোটোর ব্যবস্থা করে দেবে।
(৪) ট্যুর কাটছাঁট করতে হলে শুধু রাঁচি থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
(৫) রাঁচিতে একটা দিন বেশি থাকলে হিরনি ফল্স দেখে আসতে পারেন। রাঁচি থেকে চক্রধরপুরের পথে ৭০ কিমি দূরে এই ফল্স। নয়নাভিরাম এই ফল্সে যাওয়ার রাস্তাটি গেছে টেবোর ঘাটের মধ্য দিয়ে। পাহাড়ি ঘাটপথের শোভা আপনাকে মুগ্ধ করবে। রাঁচি থেকে গাড়ি ভাড়া করে বা চক্রধরপুরের বাসে ঘুরে আসতে পারেন হিরনি।
আরও পড়তে পারেন
এ বার থেকে লিফ্ট চড়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে ইলোরার কৈলাশ গুহার দোতলায়
পূর্ব উপকূলের অল্প-চেনা সৈকত: মাদকতায় ভরা অপরূপা বাগদা
পূর্ব উপকূলের অল্প-চেনা সৈকত: সূর্যলঙ্কা
গোয়ার জলপ্রপাত এবং তার সন্নিহিত অঞ্চলে সঠিক পর্যটন-পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ