কালীপুজো-দীপাবলি: দিঘলগ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারে পূজিতা হন সিদ্ধেশ্বরী কালী

ইন্দ্রাণী সেন বোস

উৎসবের মরশুমে এ বার আসছে কালীপুজো ও দীপাবলি। দীপান্বিতা অমাবস্যা আর এক পক্ষ কালও নেই। সেই অমাবস্যায় এই বাংলার বহু বনেদি বাড়িতে ধুমধাম করে কালীপুজো হয়। প্রস্তুতি চলছে তার।  চলুন আজ যাওয়া যাক বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানা এলাকায় দিঘলগ্রামে।     

দিঘলগ্রামের অবস্থান হুগলি জেলার সীমানায়। এই গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী কালীপুজো খুবই বিখ্যাত। ঠিক কবে থেকে এই পুজো শুরু হল তার সঠিক দিনক্ষণ আজ আর কেউ বলতে পারেন না। তবে এই পুজো যে সুপ্রাচীন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কী ভাবে শুরু হল এই পুজো? দিঘলগ্রামে ভট্টাচার্য পরিবারের একটি টোল ছিল।  মাটির চালায় বসে গুরুমশাইয়ের কাছে পাঠ নিত পড়ুযারা। কেউ গীতা, কেউ রামায়ণ আবার কেউ মহাভারতের পাঠ নিত। পাঠ সমাপ্ত করে সাধ্যমতো গুরুদক্ষিণা দিয়ে চলে যেত পড়ুয়ারা, প্রবেশ করত কর্মজীবনে।

দিঘলগ্রামের ওই টোলে পড়তে এসেছিলেন দ্বারকেশ্বর নদের তীরবর্তী গোঘাট থানার আসপুর গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারের এক ব্যক্তি। পরে ওই ব্যক্তি ওই দিঘলগ্রামেই ত্রিমুণ্ডী আসনে বসে কালীসাধনায় সিদ্ধি লাভ করে নিজ গ্রামে ফিরে যান এবং নিজের বাড়িতে পঞ্চমুণ্ডীর আসনে বসে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন।

ওই ব্যক্তি দিঘলগ্রামে ত্রিমুণ্ডী আসনে পুজোর ভার দিয়ে যান তাঁর ভট্টাচার্য শিক্ষাগুরুকে। সেই সময় থেকেই দিঘলগ্রামের ভট্টাচার্য পরিবার বংশানুক্রমে এই পুজো করে আসছে। তবে এখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গড়া হয়েছে পুজো কমিটি। সেই কমিটিই এখন পুজোর দেখাশোনা করে।

এই পুজোর নিয়মও ভিন্ন। গঙ্গাজলে দেবীর অর্চনা হয় না। নিজেদের পুকুরের জল ও নিজস্ব ধ্যান ও পুজোর মন্ত্রে মা পূজিতা হন। পুজো ও বিসর্জন সম্পূর্ণ নিঃশব্দে হয়। মূর্তি তৈরিতে বিশেষ নিয়মনীতি পালন করা হয়।

দুর্গাপুজোর পরই শুরু হয় কালীপুজোর প্রস্তুতি। প্রথম থেকেই এই মূর্তি তৈরি হয় আসপুরের মুখোপাধ্যায় পরিবারে। তাই সিদ্ধেশ্বরী মূর্তি তৈরির জন্য কাঠের অবয়ব আজও দিঘলগ্রাম থেকে আসপুরে পাঠানো হয়। আসপুরের মুখোপাধ্যায় বাড়িতে দু’টি মূর্তি তৈরি হয়। একটি নিজেদের পুজোর জন্য, অন্যটি দিঘলগ্রামে পুজোর জন্য।

দ্বারকেশ্বর তীরের আসপুর গ্রাম থেকে দিঘলগ্রামে মায়ের মন্দিরে বিগ্রহ আনা হয় ভ্যানোতে চাপিয়ে। সুদীর্ঘ ১১ কিলোমিটার রাস্তায় আমড়া, বাউড়ো, নেত্রখণ্ড, কেঁজরা গ্রামের মানুষ মায়ের যাত্রাপথে পুজো দেন। দিঘলগ্রামে ধুপ-ধুনো জ্বালিয়ে, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে দেবীকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

স্থানীয় তপনকুমার দে বলেন, “আগে পুজোসামগ্রী ভট্টাচার্য পরিবার থেকেই আসত। বর্তমানে পুজো কমিটির তরফে সমস্ত কিছুর আয়োজন করা হয়। তবে প্রচলিত প্রথা অনুসারে পুজোয় প্রথম সংকল্প ওই পরিবারের নামেই করা হয়।”

দিঘলগ্রামে মায়ের মন্দিরটি ছিল মাটির। স্থানীয় জমিদারের সহায়তায় ওই মন্দির তৈরি করেছিলেন ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা। মাটির মন্দির ভেঙে পড়ার পর কাছাকাছি খড়শি গ্রামের অভয় সরকার ওই জায়গাতেই নতুন পাকা মন্দির তৈরি করে দেন।

দিঘলগ্রামের মা সিদ্ধেশ্বরী স্থানীয় মানুষের কাছে ‘সিধুমা’ বলেই পরিচিত। তিন-চার দিন ধরে মন্দিরচত্বর সংলগ্ন এলাকায় মেলা বসে। যাত্রাপালার আসর বসে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন গ্রামের মানুষ। তার পর একটি শুভ দিন দেখে স্থানীয় পুকুরে মূর্তি বিসর্জন করা হয়।

কী ভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে গেলে আরামবাগ হয়ে চলুন। দূরত্ব ১০৭ কিমি।

ট্রেনে দু’ ভাবে যাওয়া যায়। আরামবাগ চলুন। সেখান থেকে গাড়িতে দিঘলগ্রাম ২৬ কিমি। অথবা বর্ধমান চলুন। সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে দিঘলগ্রাম ৩০ কিমি। ট্রেনের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in।

আরও পড়তে পারেন

কালীপুজো-দীপাবলি: পশ্চিম মেদিনীপুরের খেপুত সাবর্ণবাড়ির পুজোর ২২৫ বছর

দীর্ঘ ৬০ বছর পর ভ্রামণিকদের জন্য খুলল ট্রান্স ভুটান ট্রেল

ভগবানের আপন দেশে ৭ / ঘুরে এলাম টপ স্টেশন  

কাশ্মীর-কেরলের অভিজ্ঞতা পশ্চিমবঙ্গেও, রাত্রিবাস করুন হাউসবোটে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *