গ্রাম্য পর্যটনের নতুন ঠিকানা ‘চাষার বাসা’

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: গ্রাম্য পর্যটন বা Village Tourism এখন পর্যটনের নতুন একটা ধারা। এর মধ্যেই পড়ে ‘Village Trail’ অর্থাৎ গ্রামের পথ ধরে হেঁটে যাওয়া। বাধা গতের কোনো পর্যটন সার্কিট নয়, এখানে উদ্দেশ্য থাকে গ্রাম্য জীবনযাপনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া।

ভ্রামণিকরা অনেকেই এখন তথাকথিত পর্যটন সার্কিটের বাইরে বেরিয়ে গ্রাম্য পরিবেশে নিরিবিলিতে কয়েকটা দিন কাটাতে চান। তাই এই গ্রাম্য পর্যটন এখন বেশি জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে। এমনই এক সুন্দর রিসর্টের সন্ধান আজ দিচ্ছে ভ্রমণ অনলাইন। তবে এই রিসর্ট কিন্তু আর পাঁচটা রিসর্টের থেকে একদমই আলাদা। কারণ এটা তৈরির পেছনে উদ্দেশ্য ছিল অন্য রকম।

দ্বারকেশ্বর নদের ধারে, লালমাটির বাঁকুড়া আর ছোটোনাগপুর মালভূমির পুরুলিয়া যেখানে মিশেছে, সেখানে আছে ধামসা-মাদল-পলাশ-মহুয়া আর সরল মানুষদের ছোট্ট ছোট্ট ছবির মতো সাঁওতাল গ্রাম। এ রকমই দুটো গ্রাম উষারডিহি ও পড়াশিবোনার একদম পাশেই ‘গাঁওতা খামার’।

কলকাতার দম্পতি কুণাল ও সীমা কুশারির মস্তিস্কপ্রসুত এই খামার। ‘গাঁওতা’ এক সাঁওতালি শব্দ, যার অর্থ সমিতি। কলকাতা থেকে অনেক দূরে, এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাসায়নিক সার বিষ না দিয়ে দেশীয় বিভিন্ন ফসলের চাষ-আবাদ শুরু করেছিলেন এই দম্পতি কিছু বছর আগে। দুজনেই চাষি পরিবারের সন্তান হওয়ার জন্য জানতেন যে চাষ এবং বাস এক জায়গায় না হলে পরম্পরার চাষ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

বিশেষত, বীজ সংরক্ষণ, গবাদিপশু প্রতিপালনের মতো কাজগুলো চাষির অনুপস্থিতিতে ঠিক ভাবে হওয়া খুবই মুশকিল। এই সমস্যা দূর করতে দুজনই স্থায়ী ভাবে খামারে থাকতে শুরু করলেন। তবে চাষের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ উপার্জনও করতে হবে, নইলে তাঁদের এই স্বপ্নের কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

এ বার দম্পতির বন্ধুবান্ধব আসতে শুরু করলেন। তাঁরা দু’চার দিন থাকতেন। অর্থ সাহায্যও করতেন। কিন্তু খামারের জীবনযাত্রা একদম অত্যন্ত সাধারণ মানের হওয়ার ফলে কলকাতার মানুষদের অসুবিধাও হত। সেই সমস্যা মেটাতে খামারের ভেতরেই অতিথিশালা তৈরি করলেন কুণালবাবু।

এই থেকেই পথ চলা শুরু করল ‘চাষার বাসা।’ বর্তমানে ‘চাষার বাসা’-এ সাঁওতালি শিল্প প্রযুক্তিতে তৈরি কিন্তু সুযোগ সুবিধা-সহ তিনটে কটেজ রয়েছে। প্রত্যেকটা কটেজে দুটো কুইন সাইজ বেড রয়েছে। অর্থাৎ চার জন আরাম করে সেই ঘরে থাকতে পারবেন।

ইতিহাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পূর্ব পুরুষের কৃষি-সংস্কৃতি হাত ধরাধরি করে চলে ‘চাষার বাসা’-য়। ঘরের ঠিক বাইরেই রয়েছে এক বিশাল পুকুর। সব মিলিয়ে এখানে কয়েকটা দিন কাটাতে পারলে আপনাদের অভিজ্ঞতা অসাধারণ হবে।

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া-আদ্রা রুটের সিরজাম স্টেশন থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ‘চাষার বাসা।’ কিন্তু সিরজামে যে দুটো ট্রেন থামে (হাওড়া-চক্রধরপুর এক্সপ্রেস এবং রানি শিরোমণি এক্সপ্রেস), তাতে সমস্যা রয়েছে। হাওড়া-চক্রধরপুর এক্সপ্রেস পৌঁছোয় চেক-ইন টাইমের অনেক আগে, ভোর সাড়ে চারটেয়। আর রানি শিরোমণি এক্সপ্রেসে রিজার্ভেশন করে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

তাই ‘চাষার বাসা’-য় যাওয়ার সহজ উপায় হল ট্রেনে বাঁকুড়া পৌঁছে, তার পর গাড়িতে চলে যাওয়া। বাঁকুড়া থেকে ‘চাষার বাসা’ ৩০ কিলোমিটার।

বুকিং সংক্রান্ত তথ্য

চাষার বাসা-য় এক একটি ঘরের ভাড়া ২ হাজার টাকা দিনপ্রতি। খাওয়ার খরচ একজনের, একদিনের ৭০০ টাকা করে। এর মধ্যে প্রথম দিনের মধ্যাহ্নভোজন, বৈকালিক আহার, নৈশভোজ এবং পরের দিনের প্রাতরাশের খরচ ধরা আছে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন 9903763296 নম্বরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *