Ma-i-to Kali, Sonamukhi

কালীপুজো-দীপাবলি: মা-ই-ত কালীর পুজোয় মেতে উঠছে সোনামুখী

ইন্দ্রাণী সেন বোস

শারদোৎসবের পরেই এসে গেল হেমন্তোৎসব। কার্তিকের হেমন্তোৎসবে মা কালী তথা শ্যামামায়ের আরাধনা। গোটা রাজ্যেই পুজোর প্রস্তুতি পৌঁছে গিয়েছে একেবারে শেষ লগ্নে। পিছিয়ে নেই বাঁকুড়া জেলাও। বিশেষ করে বাঁকুড়ার সোনামুখী।

প্রাচীন শহর সোনামুখী। এখানে কালীপুজোর খুব রমরমা। মাই-ত-কালী, রক্ষাকালী, ডাকাতকালী, ঘুঘুকালী, সার্ভিসকালী, জামাইকালী-সহ কত কী!  সব নামকরণের পেছনেই কোনো না কোনো ইতিহাস আছে। তেমনই মাই-ত-কালী নামের পেছনেও ইতিহাস আছে।

বাঁকুড়ার প্রাচীন কালীপুজোগুলির মধ্য অন্যতম সোনামুখীর ‘মা-ই-ত’ কালী। শোনা যায়, এই পুজো প্রায় ৪০০ বছরের। এখানে সারা বছর জুড়েই চলে মাতৃ-আরাধনা। তবে জেলার মানুষ অপেক্ষা করে থাকে দীপান্বিতা অমাবস্যাকে ঘিরে বিশেষ চার দিনের জন্য।

মা কালীর নাম ‘মা-ই-ত’। এই অদ্ভুত নামের পিছনে একটা কাহিনি আছে। ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দ, বাংলা সন ১১৪৯। মরাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত বর্গীদের দল সহ এসেছে বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী। সেই বর্গীদল লুঠপাট করার জন্য উপস্থিত সোনামুখীর রানির বাজারে মায়ের মন্দিরে। এই এলাকার চার দিক তখন গাছপালায় ভরা ছিল। তারই মধ্যে ছিল কালীর মন্দির। শোনা যায়, দিনের বেলাতেই অনেকে ভয়ে মন্দিরের সামনে আসতে সাহস করত না।

সময়টা সন্ধ্যা। মন্দিরের পুরোহিত সন্ধ্যায় প্রদীপ দিতে মন্দিরে আসতেই খাঁড়া দিয়ে পুরোহিতের মাথা কাটতে উদ্যত হল ডাকাতদল। কিন্তু পুরোহিতকে বলি দেওয়া গেল না। হাতের খাঁড়া হাতেই রয়ে গেল। গলায় নেমে এল না। উপরন্তু ডাকাতসর্দারের দৃষ্টিশক্তিও চলে গেল। এর পর পুরোহিতই দেবীর ঘটের জল ছিটিয়ে দিলেন সর্দারের চোখে। দৃষ্টি ফিরে পেলেন ডাকাতসর্দার। দুধর্ষ দস্যু চিৎকার করে বলে উঠল ‘মা-ই-তে!’। সেই থেকেই শ্যামা মা এখানে ‘মা-ই-ত’ কালী নাম নিলেন।

এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এখানে কালীপুজোর দিনই ঘট বিসর্জন করা হয়। আবার সেই দিনই ঘট নিয়ে আসা হয়। এই জন্যই সারা বছর মা মন্দিরে পূজিত  হন, এমনটাই জানালেন সোনামুখীর স্থানীয়  বাসিন্দারা। মায়ের পাশেই রাখা আছে বর্গীসর্দারের খাঁড়া।

তাঁরা আরও জানালেন, মূর্তি তৈরিতে বিশেষ নিয়ম পালন করা হয়। মূর্তি তৈরি করেন  শিল্পী বিপত্তারণ সূত্রধর। বিজয়াদশমীর দিন মূর্তি মন্দিরে আনা হয়। বংশ পরম্পরাগত ভাবে পুজোর ভার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের ওপর। পুজোয় থাকে প্রসাদ বিতরণের বিশেষ ব্যবস্থা। প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রসাদ গ্রহণ করেন। ঐতিহ্য মেনে ৪২ জন বেহারা আসেন কোচডিহি থেকে। পুজোর শেষের দিন থাকে আতসবাজির প্রদর্শনী।

আরও পড়তে পারেন

কালীপুজোর ছুটিতে বিশাখাপত্তনম বা ওড়িশা যাচ্ছেন? সতর্ক থাকুন আবহাওয়া নিয়ে

পাখিকে কেন্দ্র করে পর্যটন বিকাশের ভাবনা পাহাড়-ডুয়ার্সে

কালীপুজো-দীপাবলি: চলুন সেখানে যেখানে মায়ের দু’টি পায়ের ছাপ পূজিত হয় জঙ্গলিকালী হিসাবে

কালীপুজো-দীপাবলি: মা সারদার স্মৃতি বিজড়িত ডাকাতকালীর পুজো সিঙ্গুরে

কালীপুজো-দীপাবলি: দিঘলগ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারে পূজিতা হন সিদ্ধেশ্বরী কালী

আরও পড়তে পারেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *