ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: দীপান্বিতা অমাবস্যা আর এক পক্ষ কালও নেই। সেই অমাবস্যায় এই বাংলার নানা প্রান্তে ধুমধাম করে কালীপুজো হয়। প্রস্তুতি চলছে তার। চলুন যাওয়া যাক হুগলি জেলার সিঙ্গুরে, ডাকাতকালীর পুজো দেখতে।
মনে আছে সেই গল্প? অসুস্থ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে মা সারদা কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর চলেছেন। পথে রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত মায়ের পথ আটকে দাঁড়াল ডাকাতির উদ্দেশ্যে। সেই সময় হঠাৎই তারা দেখে সারদামায়ের পিছনে রক্তচক্ষু মা কালীর মুখ। নিজেদের ভুল বুঝতে পারে তারা, ক্ষমা চেয়ে নেয় মা সারদার কাছে। সন্ধ্যা নামায় সেই রাতে নিজেদেরই আস্তানায় মা সারদার থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ডাকাতরা। মা সারদাকে রাতে খেতে দেওয়া হয় চালভাজা ও কড়াইভাজা।
প্রায় সাড়ে ৫০০ বছরের পুরোনো সিঙ্গুরের ডাকাতকালী মন্দির ঘিরে রয়েছে এ রকমই নানা ইতিহাস। বৈদ্যবাটী-তারকেশ্বর রোডের পাশে পুরুষোত্তমপুর এলাকার মল্লিকপুরে এই ডাকাতকালী মন্দির।
মন্দিরের সেবাইত রবীন বন্দোপাধ্যায় জানালেন, কালীপুজোর দিন মন্দিরের দরজা বন্ধ করে শুদ্রদের আনা গঙ্গার জল ঘটে দেওয়া হয়। সেই জল সারা বছর থাকে। চার প্রহরে চার বার পুজো হয়। প্রথা মেনে আজও ছাগবলি হয়।
রক্তচক্ষু মায়ের যে মূর্তি এখন এই মন্দিরে রয়েছে সেই মূর্তি নাকি তৈরি করেছিলেন রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত, এ রকমই প্রবাদ। স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সিঙ্গুর থানার চালকেবাটি গ্রামের মোড়লরা। কালীপুজোর দিন মোড়লরা পুজো দেওয়ার পর অন্য ভক্তরা পুজো দেন।
মল্লিকপুরে এই ডাকাতকালীর মন্দির থাকায় মল্লিকপুর, জামিনবেড়িয়া ও পুরুষোত্তমপুর, এই তিন গ্রামে কোনো কালীপুজো হয় না। এমনকি কোনো বাড়ির দেওয়ালে টাঙানো থাকে না কোনো দেবীর ছবি সম্বলিত ক্যালেন্ডার বা কোনো মূর্তি। কথিত আছে, ডাকাতেকালীমা এতটাই জাগ্রত যে তাঁর পুজো ছাড়া অন্য কোনো দেবীর পুজো করতে সাহস পায় না এলাকার মানুষজন।
কী ভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতে চলে যেতে পারেন পুরুষোত্তমপুরের ডাকাতকালী মন্দিরে, দূরত্ব ৪০ কিমি। ট্রেনে হাওড়া থেকে সিঙ্গুর গিয়ে সেখান থেকে রিকশা বা টোটোয় চলে যেতে পারেন মন্দিরে। দূরত্ব প্রায় ৩ কিমি। ট্রেনের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in।
আরও পড়তে পারেন
কালীপুজো-দীপাবলি: দিঘলগ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারে পূজিতা হন সিদ্ধেশ্বরী কালী
কালীপুজো-দীপাবলি: পশ্চিম মেদিনীপুরের খেপুত সাবর্ণবাড়ির পুজোর ২২৫ বছর