ভারতের অতীত ইতিহাস নানা দিক দিয়ে সমৃদ্ধ। এই দেশে এক সময় ছিল শত শত রাজারাজড়ার রাজত্ব। তারই ফলস্বরূপ দেশ জুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাসাদ। প্রতিটিরই কিছু না কিছু বিশেষত্ব আছে। বেশির ভাগ প্রাসাদই মিশ্র সংস্কৃতির নজির। বেশ কিছু প্রাসাদ রোমান স্থাপত্যশৈলীতে অনুপ্রাণিত। আবার বেশ কিছু প্রাসাদ ইসলামিক স্থাপত্যে প্রভাবিত। দেখে আসা যাক এ রকমই কিছু অনন্য প্রাসাদ। আজ চলুন ত্রিপুরার আগরতলায়, দেখে নিন উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ।
ত্রিপুরার রাজপরিবারের সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যোগাযোগ ছিল। তিনি বহুবার ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। শোনা যায়, এই প্রাসাদের নাম উজ্জয়ন্ত রবীন্দ্রনাথই রেখেছিলেন।
এই প্রাসাদের বয়স ১২১ বছর। ত্রিপুরার রাজপরিবারের মূল প্রাসাদটি ছিল আগরতলা শহর থেকে ১০ কিমি দূরে। ঈশান চন্দ্র মাণিক্য ১৮৬২ সালে এটি নির্মাণ করান। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায় সেই প্রাসাদ। তখন শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে তোলা হয় আজকের উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ। প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই প্রাসাদপুরী। এই প্রাসাদ তৈরি হয় মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্যের উদ্যোগে।
এই প্রাসাদ নির্মাণ শুরু হয় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে। অভিনব স্থাপত্যের এই প্রাসাদ আয়তনে বিশাল। ত্রিতলিকা প্রাসাদের শিরে রয়েছে রয়েছে তিনটি গম্বুজ, যার মধ্যে সর্বোচ্চটির উচ্চতা ৮৬ ফুট। এটি চারতলা বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় টাওয়ারের উপর অবস্থিত। এই প্রাসাদের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয় ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে।

এর স্থাপত্যে মুঘল, রোমান ও ব্রিটিশ প্রভাবের মিশ্রণ রয়েছে। এই প্রাসাদের টাইলের মেঝে, কারুকার্যময় দরজা-জানলা ও কাঠের সিলিং দেখার মতন। এই প্রাসাদে রয়েছে সিংহাসন-কক্ষ, দরবার হল, পাঠাগার, অভ্যর্থনা হল, চাইনিজ রুম ও পাবলিক হল। প্রাসাদ চত্বরে রয়েছে দু’টি বিশাল জলাশয়, মোঘল গার্ডেনের ধাঁচে বাগিচাও রয়েছে। প্রাসাদের আরও এক আকর্ষণ মিউজিক্যাল ফাউন্টেন অর্থাৎ বাজনার তালে তালে ঝরনার নৃত্য।
১৯৭২ সালে এই রাজবাড়ি কিনে নেয় ত্রিপুরা সরকার। তখন থেকে এই রাজবাড়িতে বসত ত্রিপুরা বিধানসভা। তবে ২০১১ সালের জুলাই থেকে এখানে আর বিধানসভার অধিবেশন বসে না। উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ এখন সংরক্ষিত জাদুঘর। উত্তরপূর্ব ভারতের মানুষদের জীবনধারা, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের নমুনা এবং কারুশিল্প প্রদর্শিত হয়েছে এই জাদুঘরে। পাশাপাশি রয়েছে পাথরের ভাস্কর্য, মানিক্য রাজবংশের মুদ্রা এবং অন্যান্য কিছু নিদর্শন।
প্রাসাদ দর্শনের সময়
সোমবার বাদে প্রতিদিন প্রাসাদ-জাদুঘর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দর্শনী লাগে ১০ টাকা করে।
কী ভাবে যাবেন
ত্রিপুরা ভ্রমণে গেলে তো আগরতলা থেকে ভ্রমণ শুরু করবেন। আগরতলায় অবশ্যই দেখবেন উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ। আগরতলা দেশের প্রায় সব জায়গার সঙ্গে বিমানপথে যুক্ত। কলকাতা থেকে বেশ কয়েকটি উড়ান আছে আগরতলা যাওয়ার। ইদানীং ট্রেন যাচ্ছে কলকাতা থেকে। প্রতি মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও রবিবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস শিয়ালদহ থেকে সকাল ৬.৩৫ মিনিটে ছেড়ে আগরতলা পৌঁছোয় পরের দিন বিকেল ৫.৫৫ মিনিটে।
আরও পড়তে পারেন
তৃতীয় দিনে ৬০ হাজার বিসর্জন হলেও, গণেশ উৎসবে এখনও মাতোয়ারা মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্র
উঠে গেল অভ্যন্তরীণ বিমানভাড়ায় নিয়ন্ত্রণ, যাত্রীরা কি লাভবান হলেন
সুন্দরবনকে নিয়ে দশ দিনের দুর্গাপুজো প্যাকেজ, পর্যটনের প্রসারে একাধিক উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের
পুজোয় অদূরে ৩ / রাঁচি-নেতারহাট-বেতলা