তের ভ্রমণ ৩-এ ভ্রমণ অনলাইন গুজরাত ভ্রমণের একটি ছক দিয়েছিল। এই কিস্তিতে পাঠকদের জন্য রইল আরও দু’টি ভ্রমণ পরিকল্পনা।
১) কচ্ছভূমি
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন – রাত্রিবাস অমদাবাদ।
ভ্রমণ শুরু করুন অমদাবাদ থেকে। হাওড়া-অমদাবাদ এক্সপ্রেস প্রতি দিন রাত ১১:৫৫-য় হাওড়া ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় তৃতীয় দিন দুপুর ১.২৫-এ। হাওড়া-ওখা এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গল, শুক্র এবং শনিবার হাওড়া থেকে রাত ১০:৫০-এ ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় তৃতীয় দিন সকাল ৯টায়। শালিমার-ভুজ এক্সপ্রেস প্রতি শনিবার রাত ৮:২০-এ ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় সোমবার সকাল ৯.২০ মিনিটে। সাঁতরাগাছি-পোরবন্দর কবিগুরু এক্সপ্রেস প্রতি রবিবার রাত ৯:২৫-এ ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় মঙ্গলবার সকাল ১০.৫০-এ। হাওড়া-গান্ধীধাম গর্ভ এক্সপ্রেস প্রতি সোমবার রাত ১১টায় ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় বুধবার সকাল ১০.৫০-এ।

দিল্লি থেকে সব চেয়ে ভালো ট্রেন অমদাবাদ রাজধানী। প্রতি দিন নিউদিল্লি স্টেশন থেকে রাত ৭.৫৫-য় ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৯.৪০-এ। আশ্রম এক্সপ্রেস প্রতি দিন দিল্লি থেকে বিকেল ৩.২০-তে ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৭.৪০-এ। এ ছাড়াও ত্রিসাপ্তাহিক, সাপ্তাহিক ট্রেন আছে দিল্লি থেকে অমদাবাদ যাওয়ার জন্য।
মুম্বই থেকে ছ’ থেকে ন’ ঘণ্টার মধ্যে অমদাবাদ পৌঁছোনোর জন্য দিনেরাতে অনেক ট্রেন আছে। এমন ট্রেন বাছুন যাতে সকালে অমদাবাদ পৌঁছে যেতে পারেন। তা হলে সেই দিনটা অমদাবাদ ঘোরাঘুরির জন্য রাখতে পারেন।
ট্রেনের সময় বিস্তারিত জানার জন্য দেখে নিন erail.in ।
ভারতের যে কোনো জায়গা থেকে বিমানে পৌঁছোতে পারেন অমদাবাদ।
অমদাবাদে কী দেখবেন – পড়ুন শীতে চলুন/৩: হেরিটেজ গুজরাত
চতুর্থ দিন – রাত্রিবাস ধ্রানগাধরা।

ক্ষুদ্র রনের জন্য বিখ্যাত ধ্রানগাধরা। রাত্রিবাস করুন দেবজিভাই ধামেচার ইকো ক্যাম্পে। দেবজিভাইয়ের উদ্যোগে বিকেলে একটা সাফারি করুন বন্য গাধার অরণ্যে।
অমদাবাদ থেকে ধ্রানগাধরা ১২৪ কিমি। আমদাবাদ থেকে ধ্রানগাধরা যেতে পারেন ট্রেনে, বাসে বা গাড়িতে। তবে ট্রেনের সময়ের সঙ্গে আপনার সময় মিলতে নাও পারে।
পঞ্চম দিন – সকালেও একটা সাফারি করুন দেবজিভাইয়ের উদ্যোগে। দুপুরে রওনা হন ভাচাউয়ের উদ্দেশে। দূরত্ব ১৩৫ কিমি। রাত্রিবাস ভাচাউ।
ধ্রানগাধরা থেকে ভাচাউ ট্রেনে, বাসে বা গাড়িতে আসতে পারেন। তবে ট্রেনের সময় দেখে নেবেন আপনার ভ্রমণসূচির সঙ্গে খাপ খায় কিনা।
ষষ্ঠ দিন – রাত্রিবাস ভাচাউ।

ভাচাউ থেকে ঘুরে আসুন হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন ধোলাভিরা। যাতায়াত ৩০০ কিমি।
সপ্তম দিন – রাত্রিবাস মাণ্ডবী।

ভাচাউ থেকে মাণ্ডবী দূরত্ব ১৩০ কিমি। কচ্ছ উপসাগরের তটে মাণ্ডবী। সৈকতশহর মাণ্ডবীতে দেখুন বিজয়বিলাস প্যালেস, নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত।
অষ্টম দিন – রাত্রিবাস ভুজ।
মাণ্ডবী থেকে আসুন ভুজ। কিন্তু ঘুরপথে। প্রথমে যান ভারতের শেষ প্রান্ত কোটেশ্বর, (কোটিলিঙ্গেশ্বরের মন্দির) নারায়ণ সরোবর। দূরত্ব ১৪১ কিমি। নারায়ণ সরোবরে কিছুক্ষণ কাটিয়ে চলুন লাখপত (দুর্গনগরী, গুরু নানকের স্মৃতিধন্য)। দুরত্ব ৩৩ কিমি। লাখপাত থেকে আসুন মাতা নো মাঢ়। দূরত্ব ৪১ কিমি। দর্শন করুন মা আশাপুরাকে। এখান থেকে চলে আসুন ভুজ। মাণ্ডবী থেকে মোট দূরত্ব ৩১২ কিমি।

নবম দিন – রাত্রিবাস ভুজ।
ভুজে দেখে নিন আলামপন্না দুর্গে রাও লাক্ষা প্রাসাদ, মহারাও প্রাসাদ ও আয়না মহল, হামিরসর লেকের পুবে শারদ বাগ প্যালেস, প্রাগ মহল প্রাসাদ, লেকের দক্ষিণ পুবে কচ্ছ মিউজিয়াম ইত্যাদি।

দশম দিন – ভুজ থেকে চলুন সাদা রন দেখতে। জায়গার নাম ধোরদো। দূরত্ব ৮০ কিমি। ধোরধো থেকে যেতে পারেন কচ্ছের সর্বোচ্চ পর্বত কালো দুঙ্গার দেখতে। দূরত্ব ৪৮ কিমি। উচ্চতা ৪৬২ মিটার। সন্ধ্যায় ফিরে আসুন ভুজ। মোট দূরত্ব হবে ২১৭ কিমি। রাত্রিবাস ভুজ।
একাদশ দিন – ঘরে ফেরা।
ভুজ থেকে সরাসরি কলকাতা ফিরতে পারেন। ভুজ-শালিমার এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার দুপুর ২.২০ মিনিটে ভুজ থেকে ছেড়ে শালিমার পৌঁছোয় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায়। গান্ধীধাম থেকেও ফেরার ট্রেন ধরতে পারেন। গর্ভ এক্সপ্রেস প্রতি শনিবার বিকেল ৫:৪০-এ ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় সোমবার দুপুর ১:০৫-এ। ভুজ থেকে গান্ধীধাম ৫৯ কিমি।
ভুজ থেকে আমদাবাদ ফিরে সেখান থেকেও হাওড়ার ট্রেন ধরতে পারেন। দূরত্ব ৩৩৩ কিমি। সে ক্ষেত্রে এক রাত আমদাবাদে থেকে পরের দিন ট্রেন ধরুন।
ভুজ থেকে সরাসরি মুম্বই ফেরার দৈনিক ট্রেন আছে। ভুজ থেকে দিল্লি ফেরার ট্রেন বরেলি এক্সপ্রেস, সপ্তাহে চার দিন। না হলে অমদাবাদ হয়ে দিল্লি ফিরুন।
বিমানেও অমদাবাদ থেকে দেশের যে কোনো জায়গায় ফিরতে পারেন।
কী ভাবে ঘুরবেন
(১) অমদাবাদের স্থানীয় দ্রষ্টব্য এবং লোথাল ও নল সরোবর (যদি সময় করে উঠতে পারেন) গাড়ি ভাড়া করে নিন। রাজ্য পর্যটন সারা দিনের ট্যুরে অমদাবাদ ঘোরায় কিনা খোঁজ করে নিন ০৭৯-২৬৫৭৮০৪৪/২৬৫৭৮০৪৬/২৬৫৮৯১৭২।
(২) ভাচাউ থেকে ধোলাভিরা চলুন গাড়ি ভাড়া করে।

৩) ভাচাউ থেকে দু’ দিনের জন্য গাড়ি নিয়ে মাণ্ডবীতে রাত কাটিয়ে পরের দিন কোটেশ্বর-লাখপত-মাতা নো মাঢ় ঘুরে ভুজে এসে গাড়ি ছেড়ে দিন।
(৪) ভুজে ঘুরুন স্থানীয় যানবাহনে। ধোরদো, কালো দুঙ্গার যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিন।
কোথায় থাকবেন
একমাত্র অমদাবাদ ছাড়া কোথাওই গুজরাত পর্যটনের কোনো হোটেল নেই। অমদাবাদে গান্ধী আশ্রমের উলটো দিকে রয়েছে গুজরাত পর্যটনের হোটেল তোরণ গান্ধী আশ্রম। অনলাইনে বুক করার জন্য লগইন করুন www.gujarattourism.com । এ ছাড়া সব জায়গাতেই রয়েছে বেসরকারি হোটেল এবং রিসোর্ট। হোটেল বুকিং-এর একাধিক ওয়েবসাইট থেকে তা বুক করতে পারেন। শুধু ধ্রানগাধরায় থাকার চেষ্টা করবেন দেবজিভাই ধামেচার ইকো ক্যাম্পে। বিভিন্ন রকম কটেজ আছে এখানে। ধ্রানগাধরায় সাফারির ব্যবস্থা করে দেবেন দেবজিভাই নিজে। যোগাযোগ ৯৮২৫৫৪৮০৯০। ওয়েবসাইট www.littlerann.com।
২) উপকূল গুজরাত
এই ভ্রমণটি রাজকোট থেকে শুরু করুন।
কলকাতা থেকে রাজকোটের জন্য রয়েছে সাঁতরাগাছি-পোরবন্দর সাপ্তাহিক কবিগুরু এক্সপ্রেস, প্রতি রবিবার রাত ৯:২৫-এ ছেড়ে রাজকোট পৌঁছোয় মঙ্গলবার বিকেল ৩:২৮-এ। রয়েছে হাওড়া-ওখা এক্সপ্রেস। প্রতি মঙ্গল, শুক্র এবং শনিবার হাওড়া থেকে রাত ১০:৫০-এ ছেড়ে রাজকোট পৌঁছোয় তৃতীয় দিন দুপুর ১.২৬ মিনিটে।
দিল্লি থেকেও দৈনিক ট্রেন নেই। সাপ্তাহিক, দ্বি-সাপ্তাহিক ট্রেন, ২৪ ঘণ্টা মতো সময় লাগে। দুপুরের মধ্যে রাজকোটে পৌঁছোনো যায়, এমন ট্রেন বেছে নিন।
মুম্বই থেকে আসার দু’টি ভালো ট্রেন। সাউ জনতা এক্সপ্রেস মুম্বই সেন্ট্রাল থেকে রোজ বিকেল ৫.১০-এ ছেড়ে পরের দিন সকাল ৬.৪৫-এ রাজকোটে পৌঁছোয়। সৌরাষ্ট্র মেল ছাড়ে মুম্বই সেন্ট্রাল থেকে রোজ রাত ৯.৩৫-এ, রাজকোটে পৌঁছোয় সকাল ১০.১০-এ।

প্রথম দিন – রাত্রিবাস রাজকোট।
জাদেজা রাজপুতদের গড়া রাজকোটে দেখে নিন জুবিলি গার্ডেন, ওয়াটসন মিউজিয়াম, গান্ধীজির বাড়ি (ছেলেবেলা কেটেছিল), রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম (বেলুড় মঠের রেপ্লিকা), লালপরী লেক, আজি বাঁধ (ভাবনগরের পথে ৮ কিমি) ইত্যাদি।
দ্বিতীয় দিন – সকালের দিকটা রাজকোটে কাটিয়ে বিকেল ৩.১০-এর অমদাবাদ-সোমনাথ এক্সপ্রেস ধরে ৫.৩৬ মিনিটে পৌঁছে যান জুনাগড়। রাজকোট থেকে বাস আধ ঘণ্টা অন্তর, ১০২ কিমি রাস্তা, ঘণ্টা তিনেক লাগে। গাড়ি ভাড়া করেও আসতে পারেন। রাত্রিবাস জুনাগড়।
তৃতীয় দিন – রাত্রিবাস জুনাগড়।
জুনাগড়ে দেখে নিন
উপারকোট পাহাড়ে জুনাগড় ফোর্ট। দুর্গে দেখুন বেশ কিছু বৌদ্ধ গুম্ফা, নওগড় ভাভ ও আধি চাধি ভাভ (স্টেপ ওয়েল), বিশাল কামান নিলাম তোপ, জামি মসজিদ, অশোকের সময়ের গুহা।

গিরনার পাহাড়ে ওঠার পথে দেখুন অশোকের শিলালিপি।
তা ছাড়া দেখে নিন বাজেশ্বরী মন্দির, দামোদর কুণ্ড, উনিশ শতকের নবাবি প্রাসাদ রংমহল, জুনাগড় নবাবদের রাজপ্রাসাদ মহাবত মকবরা, নবাবদের গড়া মনোরম উদ্যান শখের বাগ ও চিড়িয়াখানা (রাজকোট রোডে সাড়ে তিন কিমি দূরে) ইত্যাদি।
চতুর্থ দিন – রাত্রিবাস সাসন গির।
জুনাগড় থেকে প্রায় ৬০ কিমি দূরের গির আসার জন্য বাস রয়েছে। গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন। শেয়ার ট্যাক্সিও মেলে।

গিরে বন দফতরের ব্যবস্থাপনায় সাফারি করুন। ঘুরে আসুন ১৩ কিমি দূরের দেবালিয়া সাফারি পার্কও।
পঞ্চম দিন – সকালে আর একটা সাফারি করে চলুন দিউ। রাত্রিবাস দিউ।
ষষ্ঠ দিন – রাত্রিবাস দিউ।
সাসন গির থেকে সকাল ১০.৪৭-এর প্যাসেঞ্জার ট্রেন বিকেল ৩টেয় পৌঁছে দেয় দিউ থেকে আট কিমি দূরে দেলওয়াদা। স্টেশন থেকে দিউ যাওয়ার হরেক ব্যবস্থা। বাস বা গাড়ি ভাড়া করেও দিউ আসতে পারেন, দূরত্ব ৯০ কিমির মতো।

তিন দিকে আরব সাগর আর উত্তর দিকে ব্যাকওয়াটারে ঘেরা দ্বীপভূমি দিউ। দিউয়ের মূল আকর্ষণ এর প্রকৃতি। দেখে নিন পরিখা ঘেরা দুর্গ ও তার ভিতরের কারাগার ও মিউজিয়াম। দুর্গের উপর থেকে সাগর ও দিউ শহরকে দেখুন। মোটরবোটে চলুন পানিকোটা সমুদ্রদুর্গ। ঘুরে আসুন নাগোয়া বিচ, জলন্ধর বিচ (লাগোয়া পাহাড় চুড়োয় মন্দির), চক্রতীর্থ বিচ, আমেদপুর মান্ডভি বিচ। দেখে নিন শহিদস্মারক মারওয়ার, সেন্ট টমাস, সেন্ট পলস এবং সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ। শহর থেকে ৪ কিমি দূরে গঙ্গেশ্বর শিব। জোয়ারের জল পা ধুয়ে দিয়ে যায় শিবের।
সপ্তম দিন – রাত্রিবাস সোমনাথ।
সক্কালেই বেরিয়ে পড়ুন দিউ থেকে। বাস চলে, তবে বেশ ভিড় হয়। গাড়ি ভাড়া করে সোমনাথ পৌঁছে যান প্রাতঃরাশের আগে। দূরত্ব ৮৫ কিমি।

সোমনাথে দেখে নিন-
সোমেশ্বর মহাদেব মন্দির, জ্যোতির্লিঙ্গ। রাত ৮টায় মন্দির প্রাঙ্গণে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। বল্লভঘাট থেকে সূর্যাস্ত। অহল্যাবাঈয়ের গড়া পুরোনো সোমনাথ মন্দির। প্রভাস পাটন মিউজিয়াম (বুধ ও ছুটির দিন বন্ধ)। পরশুরামের তপোভূমি। সরস্বতী, কপিলা ও হিরণ্য নদীর ত্রিবেণী সঙ্গম বা প্রভাস তীর্থ। ভালুকা তীর্থ, কথিত যেখানে ব্যাধের তীরে বিদ্ধ হয়েছিলেন কৃষ্ণ।

অষ্টম দিন – গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে সোমনাথ থেকে পোরবন্দর হয়ে চলুন দ্বারকা। দূরত্ব ২৩০ কিমি। রাত্রিবাস দ্বারকা।
পথে দেখে নিন পোরবন্দরে গান্ধীজির জন্মভিটে ‘কীর্তিমন্দির’, সুদামা প্রাসাদ, চোরবাদ সাগরবেলা।
নবম দিন – রাত্রিবাস দ্বারকা।
দ্বারকায় দেখে নিন –

দ্বারকার মূল আকর্ষণ গোমতী তটে দ্বারকাধীশ রণছোড়জির মন্দির, গোমতী নদীতে ঘেরা দ্বীপে কৃষ্ণ মন্দির, রণছোড়জির মন্দিরের দক্ষিণ দ্বার দিয়ে বেরিয়ে ৫৬ ধাপ নেমে গোমতী দেবীর মন্দির, গোমতী-নারায়ণ সঙ্গমে সঙ্গমনারায়ণ মন্দির, লাইট হাউস, পঞ্চপাণ্ডবের নামে মিষ্টি জলের পাঁচটি কুয়া তথা পঞ্চনদ তীর্থ, সামান্য দক্ষিণে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, ভদ্রকালী মন্দির, মীরাবাঈ মন্দির, তারকেশ্বর সাগরবেলা ও শংকরাচার্যের সারদা মঠ।
দশম দিন – সক্কালেই চলুন বেট দ্বারকা। গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন। পথে দেখে নিন দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম নাগেশ্বর, গোপী তালাও, রুক্মিণীদেবীর মন্দির। দেখে পৌঁছে যান ৩২ কিমি দূরে ওখা, সেখান থেকে নৌযাত্রায় বেট দ্বারকা। ওখা শহরে ঢোকার মুখে বেট দ্বারকার ফেরিঘাট।

বেট দ্বারকা ঘুরে এসে ওখা থেকে পৌনে ৩টের ভাবনগর প্যাসেঞ্জার ধরে ৬.২৬-এ পৌঁছে যান জামনগর। ওই ট্রেন ধরতে না পারলে রাত্রি ৮.০৫-এর ওখা-সোমনাথ এক্সপ্রেস ধরে রাত্রি ১০.৩২-এ পৌঁছে যান জামনগর। ওখা থেকে বাস ও গাড়ি ভাড়া করেও আসতে পারেন জামনগর, দূরত্ব ১৫০ কিমি। রাত্রিবাস জামনগর।
একাদশ দিন ও দ্বাদশ দিন – রাত্রিবাস জামনগর।
শীতকালে জামনগরের প্রশস্তি তার পরিযায়ী পাখির জন্য। তাই দু’টো পুরো দিন রাখা হয়েছে জামনগরের জন্য।
জামনগরে প্রথম দিন দেখে নিন –
লাখোটা লেকের মাঝে লাখোটা প্রাসাদ ও মিউজিয়াম। পাথরের সেতুতে পারাপার। লেকের এক পাশে মাছভবন প্রাসাদ, লেক লাগোয়া ড. অম্বেডকর উদ্যান। চণ্ডীবাজারে আদিনাথ ও শান্তিনাথের মন্দির। স্বামীনারায়ণ মন্দির।
১৫ কিমি দূরে খিজারিয়া বার্ড স্যাংচুয়ারি ও ২৮ কিমি দূরের বালাছড়ি সমুদ্র সৈকত।
দ্বিতীয় দিনে চলুন –

৫৫ কিমি দূরে দ্বারকার পথে নারারা মেরিন ন্যাশনাল পার্ক।
ত্রয়োদশ দিন – ঘরে ফেরা।
জামনগর থেকে সরাসরি হাওড়া আসার ট্রেন প্রতি বুধ, বৃহস্পতি ও রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ। দিল্লি আসার ট্রেন মঙ্গল ও শনিবার। মুম্বই আসার গোটা তিনেক দৈনিক ট্রেন আছে।
মনে রাখবেন
(১) হাওড়া বা দিল্লি থেকে রাজকোট বা রাজকোট থেকে হাওড়া/দিল্লি রোজ ট্রেন নেই। সুতরাং ট্রেনের দিন অনুযায়ী যাওয়া-আসার দিন ঠিক করে নিলে ভ্রমণের মেয়াদ কমতে-বাড়তে পারে। সেই ভাবে বিভিন্ন জায়গায় থাকার মেয়াদ একটু এ-দিক ও-দিক করে নিতে হতে পারে। ট্রেনের সময় জানার জন্য দেখে নিন erail.in ।
(২) গিরে পৌঁছে যদি সে দিন বিকেলেই সাফারি করেন, তা হলে পরের দিন সকালে চলুন দেবালিয়া সাফারি পার্ক। সুনিশ্চিত ভাবে সিংহ দেখানোর ব্যবস্থা। গির অরণ্যে সাফারির সময় সকাল ৬টা থেকে ৯টা, সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা এবং বিকেল ৩টে থেকে সন্ধে ৬টা। দেবালিয়া সাফারি পার্ক খোলা সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা, বিকেল ৩টে থেকে ৫টা। বুধবার বন্ধ। অনলাইনে সাফারি বুক করুন www,girlion.in। সাফারি শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যেতে হয়।
আরও পড়ুন শীতে চলুন /২ : থর ঘুরে আরাবল্লি হয়ে জঙ্গলের রাজস্থানে
(৩) গিরনার পাহাড়ে ৯৯০০ সিঁড়ি ভেঙে বা পালকি করে বা ঘোড়ায় চেপে যদি উঠতে চান তা হলে আরও একটা দিন জুনাগড়ে থাকতে হবে। জৈনদের তীর্থস্থান গিরনারের মাথায় রয়েছে নেমিনাথ ও মল্লিনাথের মন্দির। তা ছাড়া আরও নানা মন্দির।
(৪) বিভিন্ন জায়গায় মন্দির, মিউজিয়াম, প্রাসাদ ইত্যাদি খোলার সময় আগাম জেনে নিন। তবে সোমনাথে মন্দির সকাল ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত খোলা।
(৫) সোমনাথে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো অবশ্যই দেখবেন।
(৬) দ্বারকায় রণছোড়জির মন্দির খোলা সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা। মাঝে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ধ।
আরও পড়ুন শীতে চলুন/১: গড়-জঙ্গল-হাভেলির রাজস্থান
(৭) নারারা মেরিন ন্যাশনাল পার্ক দেখার জন্য অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে Conservator of Forest, Marine National Park, Ganjiwada Nagar, Nagnath Gate, Van Shankul, Jamnagar থেকে। যোগাযোগ ০২৮৮-২৬৭৯৩৫৫/২৬৭৯৩৫৭। পার্কের গেটেই পার্ক অনুমোদিত গাইড পাওয়া যায়। অবশ্যই সঙ্গে নেবেন। যে হোটেলে থাকবেন সেখানে জেনে নেবেন ভাটা কখন শুরু হবে। ভাটা শুরু হওয়ার দু’ থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই পার্কে পৌঁছোনো চাই।
কী ভাবে ভ্রমণ করবেন
(১) এই সূচি যে হেতু রাজকোটে শুরু হয়ে জামনগরে শেষ, তাই রাজকোট থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে জামনগরে ছেড়ে দিতে পারেন। তবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট গাড়িও করতে পারেন। গুজরাতে বাস পরিষেবা ভালো। বাসে বা পয়েন্ট টু পয়েন্ট গাড়িতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেলে স্থানীয় দ্রষ্টব্য স্থানীয় যান ভাড়া করে দেখে নিন।
(২) গিরে সকালে সাফারি করলে সাসন গির স্টেশন থেকে সকালের ট্রেন ধরা মুশকিল। সে ক্ষেত্রে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে আসুন দিউ।
কোথায় থাকবেন
(১) গুজরাতের অধিকাংশ জায়গাতেই রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হোটেল নেই। এই ভ্রমণসূচিতে শুধুমাত্র দ্বারকা এবং জুনাগড়েই যথাক্রমে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের টুরিস্ট বাংলো এবং হোটেল গিরনার রয়েছে। অনলাইনের বুক করার জন্য লগইন করুন www.gujarattourism.com। তবে বাকি সব শহরেই বেসরকারি হোটেল এবং বিচ রিসোর্ট আছে। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে এই সব হোটেলের সন্ধান পেয়ে যাবেন।

(২) গিরে যদি সরকারি ব্যবস্থাপনায় সিংহসদন ফরেস্ট লজে থাকতে চান তা হলে যোগাযোগ — Deputy Conservator of Forest, Wild Life Section, Sasangir, Dist – Junagadh 362135. ph 02877-285541/285540 । গিরে অনেক বেসরকারি হোটেলও আছে।
(৩) দিউয়ের হোটেল ও তার বুকিং সম্পর্কে বিশদে জানার জন্য দেখুন www.diutourism.com ।

(৪) সোমনাথে শ্রী সোমনাথ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় লীলাবতী অতিথি ভবন, মাহেশ্বরী অতিথি ভবন, সাগর দর্শন গেস্ট হাউস এবং তন্না অতিথিগ্রুহতে থাকার সুবন্দোবস্ত আছে। অনলাইন বুকিং www.somnath.org ।