শীতে চলুন /২ : থর ঘুরে আরাবল্লি হয়ে জঙ্গলের রাজস্থানে

sam sand dunes

শীতে চলুন /১-এ রাজস্থানের দু’টি ভ্রমণ পরিকল্পনা  দেওয়া হয়েছিল। এ বার আরও দু’টি। ঘুরে আসুন থর মরুভূমি সংলগ্ন দর্শনীয় স্থান অথবা আরাব্বলির কোল থেকে সিটি অব ডন ছুঁয়ে ইতিহাসখ্যাত চিতৌর।তার পর বুঁদির কেল্লা হয়ে বাঘ দেখতে জঙ্গলে। 

ভ্রমণ ছক ১:  বিকানের-জৈসলমের-বাড়মের-জোধপুর

প্রথম দিন – রাত্রিবাস বিকানের

হাওড়া থেকে সরাসরি বা দিল্লি হয়ে এলে সকালেই বিকানের পৌঁছে যাবেন। দিল্লি থেকে ইন্টারসিটি ধরে এলে বিকেলে বিকানের। মুম্বই থেকে বিকানের এলে, সেটিও বিকেলে বিকানের পৌঁছোয়।

কলকাতা থেকে বিকানের যাওয়ার সরাসরি দৈনিক ট্রেন জোধপুর এক্সপ্রেস। হাওড়া থেকে রাত ১১.৩৫-এ ছেড়ে বিকানের পৌঁছোয় তৃতীয় দিন সকাল পৌনে ৯টায়। এ ছাড়াও দু’টি সাপ্তাহিক ট্রেন আছে – হাওড়া থেকে জৈসলমের এক্সপ্রেস (পৌঁছোয় সন্ধ্যায়) এবং কলকাতা স্টেশন থেকে প্রতাপ এক্সপ্রেস (পৌঁছোয় ভোরে)। মুম্বই বা চেন্নাই থেকে ট্রেনও এলে বিকেলে বিকানের পৌঁছোয়। দেশের যে কোনো জায়গা থেকে দিল্লি এসে সেখান থেকেও ট্রেনে বিকানের আসা যায়। দিল্লি-বিকানের সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস দিল্লি সরাই রোহিলা থেকে রাত ১১.৩৫-এ ছেড়ে বিকানের পৌঁছোয় সকাল ৭.২০ মিনিটে এবং ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস সকাল ৮.৪০-এ সরাই রোহিলা থেকে ছেড়ে  বিকানের পৌঁছোয় বিকেল ৪.৩৫-এ।  

দেশের যে কোনো বড়ো শহর থেকে বিমানে জয়পুর এসে সেখান থেকে ট্রেনে বিকানের আসা যায়। সময় লাগে ট্রেন বিশেষে সাড়ে ৬ ঘণ্টা থেকে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। ট্রেনে দিনের যে কোনো সময়ে বিকানের পৌঁছোনো যায়।  সড়কপথে বাস বা গাড়ি ভাড়া করেও আসা যায়, দূরত্ব ৩৪২ কিমি।   

junagarh fort
জুনাগড় ফোর্ট। ছবি সৌজন্যে ফেমাস প্লেসেস ইন ইন্ডিয়া।

দ্বিতীয় দিন – সারা দিন বিকানের ঘুরে রাতে বাস ধরুন জৈসলমের যাওয়ার জন্য।

বিকানেরে দেখে নিন জুনাগড় দুর্গ, গঙ্গা গোল্ডেন জুবিলি মিউজিয়াম, লালগড় প্রাসাদ, ভাণ্ডেশ্বর ও ষণ্ডেশ্বর জৈন মন্দির কমপ্লেক্স (৫ কিমি), দেবী কুণ্ড সাগর (৮ কিমি), ক্যামেল ব্রিডিং ফার্ম (৮ কিমি), গজনের স্যাংচুয়ারি ও প্রাসাদ (বিকানের-জৈসলমের পথে ৩১ কিমি) এবং দেশনোকে করণীমাতা মন্দির (বিকানের-অজমের পথে ৩২ কিমি)

তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিন –  রাত্রিবাস জৈসলমের

বিকানের থেকে জৈসলমের ৩৩০ কিমি। বাসে ঘণ্টা আটেক সময় লাগে। ভোরেই পৌঁছে যান জৈসলমের।

জৈসলমের অবস্থানকালে গাড়ি ভাড়া করে নিন। প্রথম দিন দেখে নিন সোনার কেল্লা, রাজ কা মহল, নাথমলজি কি হাভেলি, পাটোয়া কি হাভেলি, সেলিম সিংজি কি হাভেলি আর গদিসর লেক

jaisalmer fort
সোনার কেল্লা। ছবি সৌজন্যে ট্রান্স ইন্ডিয়া ট্রাভেলস।

দ্বিতীয় দিন সকালে দেখে নিন ভাটি রাজাদের ছত্তীশ বড়াবাগ, ভাটি রাজাদের পূর্বতন রাজধানী লোধুর্বা ও মরুভূমির বুকে মরুদ্যান অমরসাগর। জৈসলমেরে ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে চলুন রাজকীয় বাগিচা মূলসাগর, মিউজিয়াম নগরী কুলধ্রা হয়ে স্যাম স্যান্ড ডিউনস (জৈসলমের থেকে ৪২ কিমি পশ্চিমে)। মরুভূমির বুকে রমণীয় সূর্যাস্ত দেখুন।

ভ্রমণের পঞ্চম দিনে অর্থাৎ জৈসলমের থাকার তৃতীয় দিনে ডের্জার্ট ন্যাশনাল পার্কে উটের গাড়িতে সাফারি করুন। বিকেলে খুরিতে (জৈসলমের থেকে ৪০ কিমি দক্ষিণে) সূর্যাস্ত দেখে রাজস্থানের সংগীত-নৃত্য উপভোগ করে জৈসলমের ফিরুন।

ষষ্ঠ দিন – রাত্রিবাস বাড়মের

জৈসলমের থেকে ১৩৫ কিমি দূরের বাড়মের বাসে ঘণ্টা চারেকের পথ। গাড়িতে এলে পথে ১৮ কোটি বছরের ১৮টি জুরাসিক বৃক্ষের ফসিল দেখে নেওয়া যায় উড ফসিল পার্কে। তবে জৈসলমের থেকে ১৭ কিমি দূরের এই দ্রষ্টব্যটি জৈসলমের অবস্থানকালে তৃতীয় দিন সকালে দেখে নেওয়া যায়।

kiradu temple
কিরাডুর মন্দিরগাত্রে কারুকাজ। ছবি সৌজন্যে রহস্যময়।

বাড়মেরে দেখুন পাহাড়ের শিরে শ্বেতপাথরের অষ্টভুজা দুর্গা, ৩৮ কিমি দূরে পাকিস্তান সীমান্তের পথে হাজার বছরের মন্দির স্থাপত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিরাডু এবং শহর থেকে সাত কিমি দূরে মহাবাড় বালিয়াড়ি থেকে অপরূপ সূর্যাস্ত

সপ্তম, অষ্টম ও নবম দিনজোধপুর

সপ্তম দিন সকালেই রওনা হন জোধপুর, দূরত্ব ২০০ কিমি। বাসে চলে আসুন। ট্রেনও পাবেন। ভোর সাড়ে চারটে থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত গোটা ছয়েক ট্রেন পাবেন। ট্রেন বিশেষে সময় লাগে সাড়ে ৩ ঘণ্টা থেকে ৫ ঘণ্টা।

প্রথম দিন পৌঁছে দেখে নিন মেহরনগড় ফোর্ট ও দুর্গের পাদদেশে জশবন্ত সিংহের স্মারকসৌধ তথা ছত্তিশ জশবন্ত থাডা

জোধপুর অবস্থানকালে দ্বিতীয় দিন সকালে দেখে নিন উমেদ ভবন প্যালেস, কাছেই মহারাজার রেলওয়ে ক্যারেজ, সদর গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম। দুপুরে চলুন শহর থেকে ৮ কিমি উত্তরে ৬-১৪ শতকের পরিহারদের রাজধানী মান্ডোর। দেখে নিন মান্ডোরের এক কিমি আগে বালসমন্দ হ্রদ

mehrangarh fort
মেহরনগড় ফোর্ট ও জশবন্ত থাডা। ছবি সৌজন্যে জার্নি প্ল্যানার।

তৃতীয় দিন চলুন সকালে চলুন ৬৬ কিমি উত্তরে থর মরুভূমির বুকে ওশিয়া৮-১১ শতকে পরিহারদের তৈরি হিন্দু ও জৈন মন্দিরগুলির ভাস্কর্য দেখার মতো। জোধপুর থেকে ট্রেনে দেড় ঘণ্টার পথ ওশিয়া। বাসে বা গাড়ি ভাড়া করেও আসা যায়। ওশিয়া থেকে ফিরে বিকেলে চলুন ১০ কিমি পশ্চিমে কৈলানা হ্রদ। দেখুন সূর্যাস্ত। মন ভরে যাবে।

দশম দিন – ঘরের পথে রওনা।

জোধপুর থেকে সরাসরি ট্রেন আছে হাওড়া, দিল্লি ও মুম্বইয়ের। কলকাতার যাত্রীরা দিল্লি হয়েও ফিরতে পাত্রেন।

ভ্রমণ ছক ২: মাউন্ট আবু-উদয়পুর-চিতৌড়গড়-বুন্দি-রনথম্ভৌর-আগরা

প্রথম ও দ্বিতীয় দিনমাউন্ট আবু

nakki lake
নক্কি লেক। ছবি সৌজন্যে ইউটিউব।

১২১৯ মিটার উঁচু মাউন্ট আবুর কাছের রেলস্টেশন আবু রোড, দূরত্ব ২৯ কিমি। হাওড়া থেকে সরাসরি ট্রেন সাপ্তাহিক অমদাবাদ এক্সপ্রেস। তবে দিল্লি বা জয়পুর হয়ে আসাই সুবিধার। মুম্বই বা অমদাবাদ থেকেও সরাসরি আবু রোড পৌঁছোনো যায়। যেখান থেকেই আসুন আবু রোড স্টেশন থেকে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে মাউন্ট আবু পৌঁছে প্রথম দিন দেখে নিন সানসেট পয়েন্ট থেকে আরাবল্লির কোলে মনোরম সূর্যাস্ত। হনিমুন পয়েন্ট থেকেও সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। কাছেই নক্কি লেক

দ্বিতীয় দিন প্রথমে চলুন শহর থেকে ১৫ কিমি উত্তর-পূর্বে আরাবল্লির সর্বোচ্চ শিখর গুরুশিখর (১৭৭২ মিটার), রয়েছে ব্রহ্মা-বিষ্ণু–মহেশ্বরের মন্দির, পাহাড়ের মাথায় দত্তাত্রেয় মুনির পায়ের ছাপ। এর পর দেখে নিন চৌহান রাজাদের তৈরি অচলগড়, গড় থেকে নীচে অচলেশ্বর শিবের মন্দির। এর পর চলে আসুন শ্বেতপাথরের জৈন মন্দিররাজি দিলওয়ারা, কারুকার্য, অলংকরণ ও ভাস্কর্যে অনন্য। শহরের কাছাকাছি এসে দেখে নিন অর্বুদাদেবী তথা অধরাদেবী তথা দুর্গার মন্দির। দেখে নিন নক্কি লেকের কাছে টোড রকআগের দিন হনিমুন পয়েন্ট না যাওয়া হয়ে থাকলে চলুন সেখানে।

Dilwara temple
দিলওয়ারা মন্দির। ছবি সৌজন্যে ইউটিউব।

তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম দিন ও ষষ্ঠ দিনউদয়পুর

আবু রোড থেকে ৫-৬ ঘণ্টায় বাসে চলে আসুন উদয়পুর। সকালের বাস ধরে এলে দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যাবেন উদয়পুর। ট্রেনেও আসা যায়, তবে বাসে আসাই সুবিধার।

প্রথম দিন দেখে নিন সিটি প্যালেস

উদয়পুর অবস্থানকালে দ্বিতীয় দিন উদয়পুর দেখে নিন। দেখে নিন ক্রিস্টাল গ্যালারি, মহারানাদের ভিন্টেজ গাড়ির প্রদর্শনী, সিটি প্যালেসের উত্তরে জগদীশ মন্দির, পিছলি গ্রামে লেক পিছোলা ও লেকের মাঝে জগনিবাস প্রাসাদ, লেকের দক্ষিণ পাহাড়ে জগমন্দির, লেকের পিছনে সজ্জননিবাস বাগ, লেকের উত্তরে ফতেহ সাগর, ফতেহ সাগরের পূবে বাঁধের নীচে সহেলিয়োঁ–কি-বাড়ি, ফতেহ সাগরে রমণীয় দ্বীপ-উদ্যান নেহরু পার্ক, বিপরীতে মোতি মাগরি পাহাড়ে প্রতাপ স্মারক, শহর থেকে ৫ কিমি পশ্চিমে সজ্জনগড় তথা মনসুন প্যালেস, ৬ কিমি উত্তর-পশ্চিমে উদয়পুরের নবতম আকর্ষণ শিল্পীগ্রাম এবং শহর থেকে ৩ কিমি পুবে শিশোদিয়া রাজাদের অতীতের রাজধানী পাহাড়ে ঘেরা আহার

udaipur city palace
উদয়পুর সিটি প্যালেস। ছবি সৌজন্যে উইকিপিডিয়া।

তৃতীয় দিন তথা ভ্রমণের পঞ্চম দিন একটা গাড়ি ভাড়া করে সারা দিনের জন্য বেরিয়ে পড়ুন শহর থেকে উত্তরে। চলুন রাজসমন্দ-কাঁকরোলি-নাথদ্বার-দেবীগড়-একলিঙ্গজি-নাগদা। প্রথমে চলুন ৬৬ কিমি দূরে রাজসমন্দ লেক এবং কাঁকরোলি। দেখুন মহারানা রাজ সিংহের তৈরি ৭.৭ বর্গ কিমি আয়তন বিশিষ্ট লেক, লেকের পাড়ে শিলালিপি, শ্বেতপাথরের ন’টি মণ্ডপ তথা নওচৌকি, বাগিচা, শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকাধীশ মন্দির ইত্যাদি। এ বার উদয়পুরের দিকে ১৬ কিমি এসে বৈষ্ণবতীর্থ নাথদ্বার, দেখুন শ্রীকৃষ্ণের মন্দির। নাথদ্বার থেকে উদয়পুরের দিকে প্রায় ১৬-১৭ কিমি এগিয়ে এলে দেবীগড়, ১৮ শতকের ফোর্ট প্যালেস। আরও ৭-৮ কিমি এসে একলিঙ্গজি, ৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে তৈরি পিরামিড ধাঁচের মন্দির কমপ্লেক্স। উদয়পুরের দিকে একলিঙ্গজির একেবারে গায়েই নাগদা, রাওয়াল নাগাদিত্যের ১১ শতকের রাজধানী, প্রাচীন নগরী। ফিরে আসুন উদয়পুরে।

kumbhalgarh fort
কুম্ভলগড় ফোর্ট। ছবি সৌজন্যে ট্রাভেল ট্র্যাঙ্গেল।

উদয়পুরে অবস্থানকালে শেষ দিন চলুন রনকপুর-কুম্ভলগড়-হলদিঘাটি। সক্কালেই গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন। প্রথম গন্তব্য ৯০ কিমি দূরের রনকপুর২৯টি জৈন মন্দিরের কমপ্লেক্স, দিলওয়ারাতুল্য। এখান থেকে চলুন ৫০ কিমি দূরে আরাবল্লি পাহাড়ের ঢালে ১০৮৭ মিটার উঁচুতে কুম্ভলগড় দুর্গ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীরে ঘেরা দুর্গ, রানা কুম্ভের তৈরি। দুর্গের নানা মহলে ফ্রেস্কো চিত্র। বহু মন্দির। র‍্যামপার্ট থেকে মাড়োয়ারের সমতল ও আরাবল্লির জঙ্গল-পাহাড় সুন্দর দৃশ্যমান। চার কিমি দূরে কুম্ভলগড় স্যাংচুয়ারি। এ বার উদয়পুর ফেরার পথে চলুন হলদিঘাটি, আকবরের বাহিনীর সঙ্গে রানা প্রতাপের সেই যুদ্ধস্থল, যেখানে প্রাণ দিয়েছিল প্রতাপের প্রিয় ঘোড়া চেতক, কুম্ভলগড় থেকে ৫০ কিমি। হলদিঘাটি দর্শন শেষে ফিরে আসুন ৪০ কিমি দূরের উদয়পুর।

সপ্তম দিন – রাত্রিবাস চিতৌড়গড়

উদয়পুর থেকে ট্রেনে সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ, বাসেও একই সময় লাগে। উদয়পুর-চিতৌড়গড় বাস চলে মুহুর্মুহু। এক দিন থেকে দেখে নিন রানি পদ্মিনী, জহরব্রত, মীরাবাঈ, রানা কুম্ভের স্মৃতিবিজড়িত চিতৌড়গড়

অষ্টম ও নবম দিন – রাত্রিবাস কোটা

ট্রেন আছে বটে, তবে চিতৌড়গড় থেকে কোটা বাসে আসাই ভালো। ভোর থেকেই বাস রয়েছে। বাসের সময় লাগে সাড়ে চার ঘণ্টা থেকে ছ’ ঘণ্টা।

কোটায় দেখে নিন চম্বল নদীর পাড়ে রাও মাধো সিংজির গড়া দুর্গ। দেখে নিন বিভিন্ন মহল। দুর্গের ডাইনে রাও মাধো সিং মিউজিয়াম। দেখুন ১৮ শতকের ভীম মহল, শহরের উত্তরে উমেদ ভ্রমণ প্রাসাদ, দুর্গের পিছনে চম্বলের ওপর কোটা ব্যারেজ, কিশোর সাগর, দ্বীপ মহল, ব্রিজরাজ ভবন প্রাসাদজওহর বিলাস গার্ডেন। সন্ধ্যায় চম্বল উদ্যান অবশ্য দ্রষ্টব্য।

taragarh fort
তারাগড় ফোর্ট। ছবি সৌজন্যে রাজস্থান ট্রিপ।

বুঁদির কেল্লার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। চিতোরের রানা সেই যে পণ করেছিলেন। সেই বুঁদির কেল্লা কোটা থেকে সাড়ে ৩৮ কিমি। আধ ঘণ্টা অন্তর বাস আছে। গাড়ি ভাড়া করেও যেতে পারেন বুঁদি। দ্বিতীয় দিনে চলুন বুঁদি। বাসে করে এলে অটো বা টাঙা ভাড়া করে দেখে নিন ১৩৫৪-য় রাজস্থান শৈলীতে তৈরি বুঁদির কেল্লা তথা তারাগড় ফোর্ট, শহরের প্রান্তে রানিজি কি বাউড়ি, কেল্লা থেকে ৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে ফুল সাগর প্রাসাদ, চোগান গেটে নগর সাগর কুণ্ড, ক্ষার বাগে রাজ পরিবারের ছত্তিশ, জৈৎ সাগর লেক, লেকের উত্তর পাড়ে সুখ নিবাস। বুঁদি থেকে ফিরুন কোটায়। 

দশম দিন –  রাত্রিবাস রনথম্ভৌর

একাদশ দিন – রনথম্ভৌর ঘুরে রাত ১১টার (রনথম্ভৌর থেকে) হলদিঘাটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরে দ্বাদশ দিন সকাল ৬টায় পৌঁছে যান আগরা ফোর্ট স্টেশনে।  

কোটা থেকে রনথম্ভৌর ১৪৪ কিমি, বাসে তিন থেকে চার ঘণ্টার পথ। কিংবা বাসে বা ট্রেনে সোয়াই মাধোপুর এসে মিনিবাস বা গাড়িতে ১৪ কিমি দূরের রনথম্ভৌরে আসা যায়। সব চেয়ে ভালো হয় ট্রেনে এলে। প্রচুর ট্রেন আছে। তবে সব চেয়ে সুবিধাজনক ভোর ৫.২০-এর আগস্ট ক্রান্তি এক্সপ্রেস, ৫.৫৫-এর নিজামুদ্দিন শতাব্দী, ৭.১৫-এর যমুনা ব্রিজ আগরা প্যাসেঞ্জার অথবা  কিংবা ৭.৪০-এর দাওদাই এক্সপ্রেস। খুব বেশি হলে ঘণ্টা দুয়েক লাগে ট্রেনে। তবে সোয়া ৭টার প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি একেবারে রনথম্ভৌর পৌঁছে দেয় কিছু কম তিন ঘণ্টা সময়ে।

ranathambore national park
রনথম্ভৌর ন্যাশনাল পার্ক। ছবি সৌজন্যে নেচার সাফারি ইন্ডিয়া।

দু’টো সাফারি করার চেষ্টা করুন। প্রথমটা যে দিন পৌঁছোবেন সে দিন বিকেলে, দ্বিতীয়টি পরের দিন সকালে। সাফারি করা ছাড়া আর দেখুন পাহাড়ের ওপর কেল্লা। পরের দিন সকালে সাফারি করে এসে কেল্লা দেখুন।  রাতের ট্রেন ধরে রওনা হয়ে যান আগরা।

দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ দিন – রাত্রিবাস আগরা

(আগরা কী ভাবে ঘুরবেনপড়ুন: শীতে চলুন/১: গড়-জঙ্গল-হাভেলির রাজস্থান)

চতুর্দশ দিন – ঘরের পথে রওনা।

দেশের যে কোনো শহরের সঙ্গে ট্রেন পথে আগরার যোগাযোগ রয়েছে। না হলে দিল্লি হয়ে ঘরে ফিরুন।

কোথায় থাকবেন

সব জায়গাতেই রয়েছে বেসরকারি হোটেল। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তাদের সন্ধান পেয়ে যাবেন। সব জায়গায় পাবেন রাজস্থান পর্যটনের হোটেল। আগরায় বেসরকারি হোটেল ছাড়াও পাবেন উত্তরপ্রদেশ পর্যটনের হোটেল।

প্রয়োজনীয় তথ্য

(১) ভ্রমণ ছক ১-এ বাড়মের থেকে রাত ১২টার ট্রেন ধরলে ভোর সোয়া ৫টায় জোধপুর পৌঁছোনো যায়। সে ক্ষেত্রে সকালে মেহরনগড় ফোর্ট, জশবন্ত থাডাউমেদ ভবন প্যালেস, মহারাজার রেলওয়ে ক্যারেজ, সদর গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম দেখে নিন। দুপুরে চলুন মান্ডোর। জোধপুর অবস্থানে দ্বিতীয় দিন চলুন ওশিয়া। সেখান থেকে ফিরে বিকেলে চলুন কৈলানা হ্রদ।

এই প্রোগ্র্যাম করলে ভ্রমণ এক দিন কমে যাবে।

(২) জৈসলমেরে সোনার কেল্লা দেখার জন্য গাইডের সাহায্য নিন।

(৩) ডের্জার্ট ন্যাশনাল পার্কে সাফারি করার জন্য প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে। জৈসলমেরে যে হোটেলে উঠবেন তারা বলে দেবে কোথায় এই অনুমতিপত্র মেলে।

(৪) মাউন্ট আবুতে রাজ্য পরিবহণের সারা দিনের কন্ডাক্টেড ট্যুরে দ্রষ্টব্যগুলো দেখে নিতে পারেন। সরকারি বাসস্ট্যান্ড থেকেই বাস মেলে।

(৫) উদয়পুরের সিটি প্যালেস দেখার জন্য গাইডের সাহায্য নেওয়া ভালো। ঘণ্টা তিনেক সময় লাগে।

(৬) রাজ্য পর্যটনের ব্যবস্থাপনায় কন্ডাক্টেড ট্যুরে চিতৌড়গড় দেখানোর ব্যবস্থা আছে। তবে মাঝে মাঝে এটি বন্ধ হয়ে যায়। চিতৌড়গড়ে যে হোটেলে উঠবেন সেখানে খোঁজ করে নেবেন। অন্যথায় গাড়ি ভাড়া করে নিন।

padmini palace, chittoregarh
রানি পদ্মিনী ভবন, চিতৌড়গড়। ছবি সৌজন্যে চিতৌড়গড় ডট কম।

(৭) চিতৌড়গড় থেকে রাত্রি ১২.০৫-এর কোটা প্যাসেঞ্জার ধরলে ভোর ৫টায় কোটা পৌঁছোনো যায়। সে ক্ষেত্রে সপ্তম দিন উদয়পুর থেকে চিতৌড়গড় এসে চিতৌড়গড় ঘুরে সে দিনই রাতে কোটা প্যাসেঞ্জার ধরা যায়। অষ্টম দিনে কোটা-বুঁদি দেখে নবম দিন সকালেই সোয়াই মাধোপুর গেলে ভ্রমণ এক দিন কমিয়ে দেওয়া যায়।

(৮) রনথম্ভৌরে যে হোটেলে থাকবেন, সেখানে সাফারির ব্যাপারে খোঁজখবর করে নিন।

(৯) আগরা আগে ঘোরা থাকলে রনথম্ভৌর থেকে আগরা হয়ে সরাসরি ঘরে ফিরে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভ্রমণ দু’টো দিন কমে যেতে পারে।

(১০) অনলাইন হোটেল বুকিং করার জন্য রাজস্থান পর্যটনের ওয়েবসাইট https://rtdc.tourism.rajasthan.gov.in/

(১১) অনলাইনে বাস বুকিং করার জন্য রাজস্থান পরিবহণ নিগমের ওয়েবসাইট https://rsrtconline.rajasthan.gov.in

(১২) রাজস্থান পর্যটনের কলকাতা অফিস – কমার্স হাউস, ২ গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, কলকাতা ৭০০০১৩, যোগাযোগ – ০৩৩ ২২১৩ ২৭৪০

(১৩) অনলাইনে বুকিং-এর জন্য উত্তরপ্রদেশ পর্যটনের ওয়েবসাইট https://uptourism.gov.in/

(১৪) ট্রেনের সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *