চলুন ঘুরে আসি রাজস্থান ৩: বিকানের-জৈসলমের-বাড়মের-জোধপুর

Jaisalmer Fort
সোনার কেল্লা, জৈসলমের।

রাজস্থান বেড়ানোর আদর্শ সময় শীত। শীত চলবে মার্চের শেষ পর্যন্ত। ভ্রমণ অনলাইন সাজিয়ে দিচ্ছে রাজস্থান বেড়ানোর ভ্রমণছক। আজ তৃতীয় কিস্তি।

ভ্রমণ শুরু করুন বিকানের থেকে। হাওড়া থেকে বিকানের এক্সপ্রেস সোম, বৃহস্পতি ও শুক্র রাত ১১.২৫ মিনিটে ছেড়ে বিকানের পৌঁছোয় তৃতীয় দিন সকাল ৬.১৫ মিনিটে। সাপ্তাহিক প্রতাপ এক্সপ্রেস কলকাতা স্টেশন থেকে শুক্রবার রাত ১০.৪৫ মিনিটে ছেড়ে বিকানের পৌঁছোয় রবিবার ভোর সাড়ে ৫টায়। আরও ট্রেন আছে।

দিল্লি থেকে ইন্টারসিটি ধরে এলে বিকেলে বিকানের। মুম্বই থেকে বিকানের এলে, সেটিও বিকেলে বিকানের পৌঁছোয়। বিমানে জয়পুর এসে সেখান থেকে গাড়িতে বিকানের আসা যায়, দূরত্ব ৩৩৪ কিমি। সময় লাগে ৫-৬ ঘণ্টা।

গজনের স্যাংচুয়ারি ও প্রাসাদ।

ভ্রমণসূচি

প্রথম দিন – বিকানের পৌঁছোন। রাত্রিবাস বিকানের।

দ্বিতীয় দিন – আজও থাকুন বিকানেরে। 

বিকানেরে ঘোরাঘুরি

দেখে নিন জুনাগড় দুর্গ, গঙ্গা গোল্ডেন জুবিলি মিউজিয়াম, লালগড় প্রাসাদ, ভাণ্ডেশ্বর ও ষণ্ডেশ্বর জৈন মন্দির কমপ্লেক্স (৫ কিমি), দেবী কুণ্ড সাগর (৮ কিমি), ক্যামেল ব্রিডিং ফার্ম (৮ কিমি) এবং দেশনোকে করণীমাতা মন্দির (বিকানের-অজমের পথে ৩২ কিমি) 

তৃতীয় দিন – চলুন জৈসলমের, সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে পড়ুন বিকানের থেকে। দূরত্ব ৩৫১ কিমি। গাড়িতে চলুন।

পথে দেখে নিন গজনের স্যাংচুয়ারি ও প্রাসাদ (বিকানের থেকে ৩৪ কিমি), কোলায়াতে (আরও ১৮ কিমি) কপিল মুনির মন্দির, ফালোদিতে (আরও ১১৬ কিমি) দুর্গ, দুর্গামন্দির, জৈন মন্দির, জাফরিমণ্ডিত হাভেলি, খিচানে (ফালোদি থেকে ৭ কিমি) সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসা হাজার হাজার সারস, রামদেওরায় (আরও ৫৮ কিমি) রামদেওজির মন্দির

রাজস্থানের রাস্তা খুব ভালো। সব কিছু দেখে বিকেল নাগাদ পৌঁছে যাবেন জৈসলমের। এ দিন বিকেলে দেখে নিন গদিসর লেক।          

খিচানে পাখিদের সমাবেশ।

চতুর্থ ও পঞ্চম দিন –  রাত্রিবাস জৈসলমের।

চতুর্থ দিন সকালে দেখে নিন সোনার কেল্লা, নাথমলজি কি হাভেলি, পাটোয়া কি হাভেলি ইত্যাদি হাভেলি। দুপুরের খাওয়া সেরে চলুন রাজকীয় বাগিচা মূলসাগর, মিউজিয়াম নগরী কুলধ্রা হয়ে স্যাম স্যান্ড ডিউনস (জৈসলমের থেকে ৪২ কিমি পশ্চিমে)। মরুভূমির বুকে রমণীয় সূর্যাস্ত দেখুন।

পঞ্চম দিন সকালে দেখে নিন ভাটি রাজাদের ছত্তীশ বড়াবাগ, ভাটি রাজাদের পূর্বতন রাজধানী লোধুর্বা ও মরুভূমির বুকে মরুদ্যান অমরসাগর। জৈসলমেরে ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে চলুন ডেজার্ট ন্যাশনাল পার্কে (জৈসলমের থেকে ৪৬ কিমি), উটের গাড়িতে সাফারি করুন। এখান থেকে চলুন খুরিতে (আরও ৮ কিমি)। মরুভূমির বুকে সূর্যাস্ত দেখে রাজস্থানের সংগীত-নৃত্য উপভোগ করে জৈসলমের ফিরুন।  

ষষ্ঠ দিন – রাত্রিবাস বাড়মের। জৈসলমের থেকে সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে ১৫৭ কিমি দূরের বাড়মের আসতে ঘণ্টা তিনেক লাগবে। পথে উড ফসিল পার্কে ১৮ কোটি বছরের ১৮টি জুরাসিক বৃক্ষের ফসিল দেখে নিন।

স্যাম স্যান্ড ডিউনসে সূর্যাস্ত।

বাড়মেরে দেখুন

(১) পাহাড়ের শিরে শ্বেতপাথরের অষ্টভুজা দুর্গা

(২) বাড়মের থেকে ৩৮ কিমি দূরে পাকিস্তান সীমান্তের পথে হাজার বছরের মন্দির-স্থাপত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিরাডু

(৩) বাড়মের থেকে ৭ কিমি দূরে মহাবাড় বালিয়াড়ি থেকে অপরূপ সূর্যাস্ত। 

সপ্তম, অষ্টম ও নবম দিন – রাত্রিবাস জোধপুর।

সপ্তম দিন সকালেই রওনা হন জোধপুর, দূরত্ব ১৯৯ কিমি। বাসে, গাড়িতে বা ট্রেনে চলে আসুন। বাড়মের থেকে সকাল ৮টার হৃষীকেশ এক্সপ্রেস জোধপুর পৌঁছোয় সকাল সোয়া ১১টায়।

ডেজার্ট ন্যাশনাল পার্ক, জৈসলমের।

জোধপুরে ঘোরাঘুরি

(১) প্রথম দিন দেখে নিন মেহরনগড় ফোর্ট ও দুর্গের পাদদেশে জশবন্ত সিংহের স্মারকসৌধ তথা ছত্তিশ জশবন্ত থাডা

(২) দ্বিতীয় দিন সকালে দেখুন উমেদ ভবন প্যালেস, কাছেই মহারাজার রেলওয়ে ক্যারেজ, সদর গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম। দুপুরে চলুন শহর থেকে ৮ কিমি উত্তরে ৬-১৪ শতকের পরিহারদের রাজধানী মান্ডোর। দেখে নিন মান্ডোরের এক কিমি আগে বালসমন্দ হ্রদ

(৩) তৃতীয় দিন চলুন সকালে চলুন ৬৬ কিমি উত্তরে থর মরুভূমির বুকে ওশিয়া। ৮-১১ শতকে পরিহারদের তৈরি হিন্দু ও জৈন মন্দিরগুলির ভাস্কর্য দেখার মতো। জোধপুর থেকে সকাল ৬.৫০ মিনিটের জৈসলমের এক্সপ্রেস ওশিয়া পৌঁছে দেবে সকাল ৮.০৮ মিনিটে। বাসে বা গাড়ি ভাড়া করেও আসা যায়। ওশিয়া থেকে ফিরে বিকেলে চলুন ১০ কিমি পশ্চিমে কৈলানা হ্রদ। দেখুন সূর্যাস্ত। মন ভরে যাবে। 

কিরাডুর মন্দির-স্থাপত্য।

দশম দিন – ঘরের পথে রওনা। জোধপুর থেকে সরাসরি ট্রেন আছে হাওড়া, দিল্লি ও মুম্বইয়ের। কলকাতার যাত্রীরা দিল্লি হয়েও ফিরতে পাত্রেন।

কোথায় থাকবেন

সব জায়গাতেই রয়েছে বেসরকারি হোটেল। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তাদের সন্ধান পেয়ে যাবেন। বিকানের, জৈসলমের ও জোধপুরে পাবেন রাজস্থান পর্যটনের হোটেল।

কী ভাবে ঘুরবেন 

বিকানেরে পৌঁছে পুরো ট্যুরটার জন্য গাড়ি বুক করে নিতে পারেন। সেই গাড়িতেই সব দ্রষ্টব্য দেখা হয়ে যাবে। না হলে বিকানের, জৈসলমের, বাড়মের আর জোধপুরে স্থানীয় গাড়ি বুক করে দ্রষ্টব্য দেখে নেবেন।  

মেহরানগড় ফোর্ট, সামনে জশবন্ত থাডা।

 প্রয়োজনীয় তথ্য

(১) জৈসলমেরে সোনার কেল্লা দেখার জন্য গাইডের সাহায্য নিন।

(২) ডের্জার্ট ন্যাশনাল পার্কে সাফারি করার জন্য প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে। জৈসলমেরে যে হোটেলে উঠবেন তারা বলে দেবে কোথায় এই অনুমতিপত্র মেলে।

(৩) অনলাইন হোটেল বুকিং করার জন্য রাজস্থান পর্যটনের হোটেল অনলাইনে বুক করতে পারেন  ওয়েবসাইট https://rtdc.tourism.rajasthan.gov.in/ 

(৪) রাজস্থান পর্যটনের কলকাতা অফিস – কমার্স হাউস, ২ গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, কলকাতা ৭০০০১৩, যোগাযোগ – ০৯৪১৪২ ৫৩২৯৯ 

(৫) ট্রেন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেখে নিন erail.in–এ।

(৬) গুগুল সার্চ করে উড়ানের সময় পেয়ে যাবেন।

(প্রথম ছবিটি জৈসলমেরের সোনার কেল্লার)

আরও পড়তে পারেন

চলুন ঘুরে আসি রাজস্থান ২: জয়পুর-ফতেপুর-বিকানের-অজমের

চলুন ঘুরে আসি রাজস্থান ১: আগ্রা-ভরতপুর-দৌসা-জয়পুর-সরিস্কা-অলওয়র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *