রাজস্থান বেড়ানোর আদর্শ সময় শীত। শীত চলবে মার্চের শেষ পর্যন্ত। ভ্রমণ অনলাইন সাজিয়ে দিচ্ছে রাজস্থান বেড়ানোর ভ্রমণছক। আজ প্রথম কিস্তি।
ভ্রমণসূচি
প্রথম ও দ্বিতীয় দিন – ভ্রমণ শুরু করুন আগ্রা দিয়ে। আগ্রা দেশের প্রায় সব শহরের সঙ্গে ট্রেন ও বিমানপথে যুক্ত। হাওড়া থেকে বিকানের এক্সপ্রেস সোম, বৃহস্পতি ও শুক্র এবং জোধপুর এক্সপ্রেস মঙ্গল, বুধ, শনি ও রবিবার রাত ১১.২৫ মিনিটে ছেড়ে আগ্রা ফোর্ট পৌঁছোয় দ্বিতীয় দিন সন্ধে ৭.২০ মিনিটে। শিয়ালদহ অজমের এক্সপ্রেস রোজ রাত ১০.৫৫ মিনিটে ছেড়ে আগ্রা ফোর্ট পৌঁছোয় দ্বিতীয় দিন সন্ধে ৬.৪০ মিনিটে। আরও ট্রেন আছে।
তৃতীয় ও চতুর্থ দিন – আগ্রায় অন্তত দু’টো রাত থাকুন। দেখুন তাজমহল, আগরা ফোর্ট, ইতমাদ-উদ-দৌল্লা, সিকান্দ্রা, রামবাগ, চিনি কা রৌজা, দয়ালবাগ এবং ফতেপুর সিক্রি।

পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিন – রাত্রিবাস ভরতপুর। প্রথম দিন দেখে নিন লোহাগড় দুর্গ ও কেওলাদেও ঘানা জাতীয় উদ্যান। দ্বিতীয় দিন চলুন ৩৪ কিমি দূরের দীগ। দেখে নিন মুনসুন প্রাসাদ তথা দীগ দুর্গ, সুরজমল প্রাসাদ, গার্ডেন প্যাভিলিয়ন, রূপসাগরের শিশ মহল, পুরানা মহল, শ্বেতপাথরের হিন্দোলা প্রাসাদ ইত্যাদি।
আগ্রা থেকে ভরতপুর ট্রেনে যাওয়াই সুবিধাজনক। ভোর থেকে ট্রেন। বেশির ভাগ ট্রেন মেলে আগরা ফোর্ট থেকে। ঈদগা আর ক্যান্টনমেন্ট থেকেও ট্রেন পাওয়া যায়। ঘণ্টা খানেক সময় লাগে। সড়কপথে আগরা থেকে ভরতপুর ৫৫ কিমি, বাস চলে নিয়মিত। গাড়ি ভাড়া করেও আসতে পারেন।
সপ্তম দিন – রাত্রিবাস দৌসা। দৌসা থেকে সকালে চলে যান ১৩ কিমি দূরের ভান্ডারেজ। দেখে নিন প্রাসাদ আর রাজস্থানের সব চেয়ে আকর্ষণীয় স্টেপ-ওয়েল ভান্ডারেজ বাউড়ি। দৌসা ফিরে দুপুরের আহার সেরে চলুন ৩০ কিমি দূরে ভানগড় দুর্গ। ‘হানাবাড়ি’ বলে খ্যাত ভানগড় দুর্গে সন্ধে নামলে থাকা যায় না।
ভরতপুর থেকে সকাল ৭টার আগরা ফোর্ট-অজমের ইন্টারসিটি ধরে দু’ ঘন্টায় চলে আসুন দৌসা।

অষ্টম ও নবম দিন – রাত্রিবাস জয়পুর। জয়পুরে দেখে নিন হাওয়া মহল, জয়গড় দুর্গ, নাহাড়গড় দুর্গ, সিসোদিয়া রানি কি বাগ, বিদ্যাধরজি কি বাগ, বিড়লা মন্দির, মোতি ডুংরি, যন্তরমন্তর, সিটি প্যালেস, জলমহল, অ্যালবার্ট হল মিউজিয়াম, অম্বর দুর্গ ও প্রাসাদ (১১ কিমি), গলতা ও সূর্য মন্দির (১০ কিমি পুবে, হেঁটে পাহাড়ে চড়া) ও সঙ্গানের (১৬ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের জৈন মন্দির ও প্রাসাদ)।
দৌসা থেকে জয়পুর ট্রেনে আসাই সুবিধাজনক। সক্কাল থেকে ট্রেন আছে। ট্রেন বিশেষে দেড় থেকে দু’ ঘণ্টা সময় লাগে। বাসে বা গাড়িতেও আসা যায়। দূরত্ব ৫৮ কিমি।
দশম দিন – রাত্রিবাস সরিস্কা। সক্কাল সক্কাল জয়পুর থেকে বেরিয়ে বাসে বা গাড়িতে চলুন সরিস্কা, দূরত্ব ১১৩ কিমি। বিকেলে ও পরের দিন সকালে দু’টো সাফারি করার চেষ্টা করুন।

একাদশ ও দ্বাদশ দিন – রাত্রিবাস অলওয়র। নবম দিন সকালে সরিস্কায় একটা সাফারি করে রওনা হয়ে যান অলওয়র। বাসে বা গাড়িতে চলে আসুন ৩৭ কিমি পথ। গাড়িতে এলে পথে দেখে নিন শিলিশেড় লেক ও প্রাসাদ। আলোয়ারে দেখে নিন সিটি প্যালেস তথা মিউজিয়াম, বালা কিলা বা অলওয়র দুর্গ, মুসি মহারানি কি ছত্রি, করণীমাতা মন্দির, পুরজন বিহার, বিনয় বিলাস প্রাসাদ (১০ কিমি, বিজয়সাগরের পাড়ে), জয়সমন্দ লেক (৬ কিমি) এবং শিলিশেড় লেক ও প্রাসাদ (যদি সরিস্কা থেকে আসার পথে দেখা না হয়ে থাকে)।
ত্রয়োদশ দিন – দিল্লি হয়ে ফিরুন ঘরপানে। অলওয়র থেকে দিল্লি ১৬০ কিমি, মুহুর্মুহু বাস আছে। সকাল থেকে পরপর ট্রেন রয়েছে আলোয়ার-দিল্লি, সাড়ে তিন ঘণ্টা মতো সময় লাগে। দিল্লি ভারতের সব জায়গার সঙ্গে ট্রেন ও বিমানপথে যুক্ত।
কোথায় থাকবেন
সব জায়গাতেই রয়েছে বেসরকারি হোটেল। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তাদের সন্ধান পেয়ে যাবেন। ভরতপুর, জয়পুর, সরিস্কা, অলওয়রে পাবেন রাজস্থান পর্যটনের হোটেল। শিলিশেড়েও রাজস্থান পর্যটনের হোটেল আছে। আলোয়ারে না থেকে, এখানেও থাকতে পারেন। আগরায় বেসরকারি হোটেল ছাড়াও পাবেন উত্তরপ্রদেশ পর্যটনের হোটেল।

কী ভাবে ঘুরবেন
রাজস্থানের শহরগুলিতে স্থানীয় গাড়ি বুক করে দ্রষ্টব্য দেখে নেবেন। তবে জয়পুর শহরের দ্রষ্টব্যস্থানগুলি রাজস্থান পর্যটনের বাসে দেখতে পারেন। আগাম সিট পর্যটনের ওয়েবসাইট থেকে বুক করে নিতে পারেন।
প্রয়োজনীয় তথ্য
(১) অনলাইন হোটেল বুকিং করার জন্য রাজস্থান পর্যটনের ওয়েবসাইট https://rtdc.tourism.rajasthan.gov.in/
(২) অনলাইনে বাস বুকিং করার জন্য রাজস্থান পরিবহণ নিগমের ওয়েবসাইট https://rsrtconline.rajasthan.gov.in
(৩) রাজস্থান পর্যটনের কলকাতা অফিস – কমার্স হাউস, ২ গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, কলকাতা ৭০০০১৩, যোগাযোগ – ০৯৪১৪২ ৫৩২৯৯
(৪) অনলাইনে বুকিং-এর জন্য উত্তরপ্রদেশ পর্যটনের ওয়েবসাইট https://upstdc.co.in/
(৫) ট্রেন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেখে নিন erail.in–এ।
(৬) গুগুল সার্চ করে উড়ানের সময় পেয়ে যাবেন।
(প্রথম ছবি ভানগড় দুর্গের)
আরও পড়তে পারেন
সোনায় মুড়ল কেদারনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহ, সাজানো হল সাড়ে পাঁচশো পাতে
নভেম্বরে কাশ্মীরে জাফরান উৎসব, শিকারা উৎসব, প্রস্তুতি তুঙ্গে
বাগবাজারের নব বৃন্দাবন মন্দির ও মদনমোহন মন্দিরে অন্নকূট উৎসব