হৈমন্তীপার্বণ: বটকৃষ্ণ পাল পরিবারের জগদ্ধাত্রীপুজোর ১২৩ বছর

শুভদীপ রায় চৌধুরী

কলকাতার বেনিয়াটোলা স্ট্রিটে পাল পরিবারের জগদ্ধাত্রীপুজো ১২৩ বছরে পড়ল। ১৩০৭ বঙ্গাব্দে তথা ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে এই পুজো শুরু করেছিলেন এই পরিবারের বিখ্যাত মানুষ বটকৃষ্ণ পাল।      

পাল পরিবারের আদি নিবাস হাওড়ার শিবপুরে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে বটকৃষ্ণ পাল সেখানে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তী কালের প্রথিতযশা এই পুরুষটি ১২ বছর বয়সে কলকাতায় মামার বাড়িতে চলে আসেন। একটু বড়ো হয়ে শুরু করেন ব্যবসা। কালক্রমে সেই ব্যবসা বৃহৎ মহীরুহের আকার ধারণ করে। প্রখ্যাত ওষুধ ব্যবসায়ী ও প্রস্তুতকারক হিসাবে তাঁর নাম ও যশ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বটকৃষ্ণ পাল অ্যান্ড কোং’।

বটকৃষ্ণ পাল মহাশয় ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ৭৭ বেনিয়াটোলা স্ট্রিটে জমি কিনে তাঁর সুবৃহৎ বসতবাড়ি নির্মাণ করেন। ওই বাড়িতে এক সুরম্য সুন্দর কারুকার্যখচিত ঠাকুরদালান তৈরি করেন। এই ঠাকুরদালানেই ১৩০৭ বঙ্গাব্দে মহাসমারোহে জগদ্ধাত্রীমাতার পুজো শুরু হয়।

চার সখী পরিবৃতা মা জগদ্ধাত্রী সিংহের পিঠে দু’ পা মুড়ে বাবু হয়ে বসে।

এই পুজো করার আগে শিবপুরে বটকৃষ্ণ পালের পরিবারে অভয়া দুর্গামাতার পুজো হত। বটকৃষ্ণবাবুর ইচ্ছা ছিল বেনিয়াটোলার বসতবাড়িতে শিবপুরের অভয়ামায়েরই পুজো করার। কিন্তু তাঁর উত্তরপুরুষদের মুখে জানা যায়, বটকৃষ্ণ পালের স্ত্রীকে মা স্বপ্নাদেশে জানান, তিনি শিবপুরের আদি বাড়িতেই পুজো পেতে চান এবং আদেশ করেন বেনিয়াটোলার বাড়িতে মা দুর্গার আরও এক রূপ পদ্মাসীনা জগদ্ধাত্রীর পুজো করতে।

মায়ের আদেশে বটকৃষ্ণ পাল মহাশয় আজীবন ৭৭ বেনিয়াটোলা স্ট্রিটের বসতবাড়িতে জগদ্ধাত্রীপুজো করে গেছেন। পরবর্তী প্রজন্মও নিষ্ঠাভরে সেই ঐতিহ্য ধরে রেখে পুজো করে আসছে। এ বছর এই পুজো ১২৩ বছরে পদার্পণ করল।

পালবাড়িতে পুজোর আয়োজন।

পাল পরিবারের জগদ্ধাত্রী প্রতিমার বিশেষত্ব হল, বাহন সিংহের পিঠে মা দু’ পা মুড়ে বাবু হয়ে বসে আছেন। মায়ের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর চার সখী। মাকে স্বর্ণালংকারে ভূষিত করা হয়। মায়ের সাজসজ্জা আগে ঢাকা থেকে শিল্পী এনে তৈরি করানো হত। এখন কলকাতার শিল্পীরাই তৈরি করেন। আকন্দ তুলোর ছোটো ছোটো আঁশ বের করে মায়ের বাহন সিংহের সর্বাঙ্গে আঠা দিয়ে গায়ের লোম হিসাবে লাগানো হয়, যা শৈল্পিক সুষমামণ্ডিত। ঠাকুরের পিছনে থাকে ধাতুনির্মিত বাহারি পাতা ও দৃষ্টিনন্দন ফল-শোভিত এক অনন্য চালচিত্র।

দিনে তিন বার পুজো ছাড়াও হয় সন্ধিপুজো। তাতে আধ মণ চালের নৈবেদ্য, গোটা ফল, ১০৮ পদ্ম ও প্রদীপ নিবেদন করা হয়। দেবীর নিরঞ্জনের সময় লরিতে চৌকির ওপর চালচিত্র সমেত সখী-সহ মাকে অধিষ্ঠিত করা হয়। বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রা আরও এক ঐতিহ্য। এই ভাবে পালবাড়িতে প্রাচীন ধারামতেই আজও পুজো পেয়ে আসছেন মা জগদ্ধাত্রী ।

আরও পড়তে পারেন

হৈমন্তীপার্বণ: পরিবেশ আর স্থান মাহাত্ম্যেই অনন্য ব্রহ্মশাসনের জগদ্ধাত্রীপুজো

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ‘ডিজনিল্যান্ড’? অর্থনীতি চাঙ্গা করার পরিকল্পনা শ্রীলঙ্কার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *