হৈমন্তীপার্বণ: পরিবেশ আর স্থান মাহাত্ম্যেই অনন্য ব্রহ্মশাসনের জগদ্ধাত্রীপুজো

ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: শক্তির আরাধনার পরেই এই বঙ্গে আসেন মা জগদ্ধাত্রী। কার্তিক মাসের শুক্লানবমী তিথিতে বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে নিষ্ঠার সঙ্গে আরাধনা করা হয় জগদ্ধাত্রীর। কথিত আছে, নদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রই শুরু করেছিলেন দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা, তবে তা ছিল দেবীঘটে পূজা। কোনো নির্দিষ্ট পুজাপদ্ধতি বা মন্ত্র ছিল না। ছিল না কোনো নির্দিষ্ট মূর্তি।  

তা হলে কী ভাবে এল জগদ্ধাত্রীপূজার বিধি? জগদ্ধাত্রীর রূপ? এর পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস।

শান্তিপুর শহর ছাড়িয়ে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরের এক জনপদ। এক সময়ে এখান দিয়েই প্রবাহিত হত ভাগীরথী। কালের নিয়মে সেই ভাগীরথী অবশ্য গতিপথ বদলেছে। কথিত আছে, শান্তিপুরের হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রহ্মশাসনে ধ্যানে বসে চন্দ্রচূড় তর্কচূড়ামণি নামে এক ব্রাহ্মণ জগদ্ধাত্রীপুজোর পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। আর দর্শন করেন জগদ্ধাত্রীর অগ্নিবর্ণা রূপ। তখন থেকেই সেই অগ্নিবর্ণা দেবীর পূজা সাড়ম্বরে পালন করা শুরু করেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র গিরিশচন্দ্র রায়।

ব্রহ্মশাসন গ্রামের ধুলোমাখা মেঠোপথ আর সবুজ গাছপালার হাতছানির মধ্যেই আজও মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে অশ্বত্থ গাছটা, যার তলায় সিদ্ধিলাভ চন্দ্রচূড় তর্কচূড়ামণির। কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র গিরিশচন্দ্র রায় এক সময়ে এই জায়গায় ১০৮ জন ব্রাহ্মণকে বসবাসের জন্য জায়গা দেন। আর তার থেকেই এই জায়গার নাম হয় ব্রহ্মশাসন। এদেরই একজন ছিলেন চন্দ্রচূড় তর্কচূড়ামণি। তিনি সেখানেই ভাগীরথীর ধারে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে তন্ত্রসাধনা করতেন। গিরিশচন্দ্রই চন্দ্রচূড়কে অনুরোধ করেন জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রয়োজনীয় পদ্ধতি এবং মন্ত্র স্থির করতে। এর পরে ধ্যানে বসেন চন্দ্রচূড়। আর সাধনায় বসে তিনি দেখা পান দেবীর। কথিত আছে, সেই সাধনাতেই পুজোর পদ্ধতি এবং মন্ত্রের হদিশ পান চন্দ্রচূড়। এর পরে সেই পদ্ধতি মেনেই তিনি ব্রহ্মশাসনে পুজো শুরু করেন। আর পরবর্তী কালে সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেই জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে আসছে সর্বত্র।

চন্দ্রচূড় তর্কপঞ্চাননের পঞ্চমুণ্ডীর আসন।

আজও সেই পঞ্চমুণ্ডির আসনে ভক্তিভরে পুজো দেন ব্রহ্মশাসনের গ্রামবাসীরা। সেই আসনের সামনেই রয়েছে পুরাতন একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ। মনে করা হয় এটিই ছিল চন্দ্রচূড়ের বাসস্থান। আজও পুজো হয়ে আসছে চন্দ্রচূড় তর্কপঞ্চাননের সেই সাধনপীঠে যেখানে দেবী জগদ্ধাত্রী প্রথম আবির্ভূতা হয়েছিলেন। গ্রামবাসীরা সকলে মিলে সেই পুজোর আয়োজন করেন। এক সময়ে মহামারির কারণে এই ব্রহ্মশাসন ছেড়ে পালাতে শুরু করেন মানুষ। সেই সময়ে এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজোর পাট চলে যায় পাশের এক গ্রামে। যদিও পরে তা ফিরে আসে এখানেই।

এই পুজোয় আড়ম্বর না থাকলেও ভক্তি ও নিষ্ঠায় এই পুজোর তুলনা হয় না। গা ছমছম করা নির্জন পরিবেশ, পাশেই পঞ্চবটী বৃক্ষ ও পঞ্চমুণ্ডীর আসন – এই স্থান মাহাত্ম্যেই আলাদা হয়ে রয়েছে ব্রহ্মশাসনের পুজো। পুজো উপলক্ষ্যে মহোৎসব হয়। পরের দিন দিনের আলো থাকতেই দেবীর বিসর্জন হয়।

কী ভাবে যাবেন

কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে শান্তিপুর যাওয়া যায় লোকাল ট্রেনে। সড়কপথে কলকাতা থেকে শান্তিপুরের দূরত্ব ৯৬ কিমি। গাড়ি ভাড়া করে বা বাসে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে চলে আসতে পারেন শান্তিপুর। সেখান থেকে ব্রহ্মশাসন ৭ কিমি। বাস, ট্রেকার, অটো বা টোটোয় চলে যাওয়া যায়। সরাসরি কলকাতা থেকে গাড়ি ভাড়া করে চলে আসা যাওয়া যায় ব্রহ্মশাসনে।     

আরও পড়তে পারেন

১ নভেম্বর থেকে তিন দিন ব্যাপী জাতীয় আদিবাসী নৃত্য উৎসব ছত্তীসগঢ়ে

তিন বছর পর ফের চালু হল মাথেরনের টয়ট্রেন পরিষেবা

পাখিকে কেন্দ্র করে পর্যটন বিকাশের ভাবনা পাহাড়-ডুয়ার্সে

পর্যটক টানতে দিঘায় জলের নীচে পার্ক গড়ে তোলার ভাবনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *