শান্তিপুরে পালিত হচ্ছে রাস উৎসব, অন্যতম আকর্ষণ রাইরাজা

শুভদীপ রায় চৌধুরী

আজ বাদে কাল শ্রীকৃষ্ণের রাসযাত্রা উৎসব। করোনা-আবহ কাটিয়ে এ বার বেশ ধুমধাম করেই এই উৎসব পালিত হচ্ছে শান্তিপুরেও। আর এই শান্তিপুরে রাস উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ রাইরাজা।  

কার্তিকীপূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত এই রাসযাত্রা বৈষ্ণবদের অন্যতম উৎসব। রাধাকৃষ্ণের যুগল বিগ্রহকে নানা ভাবে সাজিয়ে রাসমঞ্চে নিয়ে আসা হয় আর ধুমধাম করে পালন করা হয় রাস উৎসব।

এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে এক বিশেষ কাহিনি রয়েছে। একবার বৃন্দাবনের রাস উৎসব দেখার ইচ্ছা জেগে ওঠে স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবের। কিন্তু রাস উৎসবে কৃষ্ণ ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের প্রবেশের অধিকার ছিল না। মহাদেব তখন ছদ্মবেশে রাসের উৎসবে প্রবেশ করলে যোগমায়া তাঁকে চিনে ফেলেন। বলা বাহুল্য মহাদেবের ত্রিনয়ন দেখে শ্রীকৃষ্ণও তাঁকে চিনে ফেলেন এবং অন্য পুরুষ রাসের উৎসবে প্রবেশ করেছে বুঝতে পেরে তিনি প্রস্থান করেন। এই অবস্থায় সখীরা চিন্তায় পড়ে যান – শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া রাস উৎসব হবে কী করে? সেই সময় তাঁরা ঠিক করেন, শ্রীরাধাকে একদিনের জন্য কৃষ্ণ সাজিয়ে দোলায় চাপিয়ে নগর পরিভ্রমণ করা হবে। তাই ওই একদিন রাই হলেন রাইরাজা।

শ্রীরাধারমণ জিউ ও শ্রীরাধারানি।

সেই প্রথা আজও পালিত হয় শান্তিপুরের রাস উৎসবে এবং ভাঙারাসের শোভাযাত্রা ও রাইরাজাদের নিয়ে নগরপরিক্রমা যেন এক মহোৎসব শান্তিপুরে। ঐতিহ্যবাহী বড়ো গোস্বামীবাড়ির বিগ্রহদের নিয়ে এবং অন্যান্য বিগ্রহ নিয়ে শোভাযাত্রা শান্তিপুর পরিক্রমা করে। সেই শোভাযাত্রা দেখার জন্য ভিড় করেন দূরদূরান্তের মানুষজনও। আর তাঁরা সাক্ষী থাকেন এক ঐতিহ্যের। তবে জনশ্রুতি অনুযায়ী, মহাদেব যে হেতু দ্বাপরে রাস ভেঙেছিলেন তাই তিনি কলিযুগে শ্রীঅদ্বৈতাচার্য অবতারে জন্মগ্রহণ করে মর্ত্যে রাস উৎসবের সূচনা করেন।

মূলত দুই জায়গার রাসযাত্রা খুবই সমাদৃত – শান্তিপুর আর নবদ্বীপ। এই দুই জায়গার রাস উৎসবের মাহাত্ম্যও অপরিসীম। দুই অঞ্চলের মানুষজনই চায় তাদের অঞ্চলে রাস উৎসবের সাড়ম্বর বেশি হোক। তাই শান্তিপুরের গোস্বামীপ্রভুরা ঠিক করলেন নবদ্বীপের রাসের উৎসবকে টেক্কা দিতে গেলে পুরাণের আশ্রয় নেওয়া প্রয়োজন। আর সেই পুরাণেই তাঁরা পেয়ে গেলেন রাইরাজার কথা।

আর এই রাইরাজাই শান্তিপুরের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তবে শান্তিপুরে যাঁদের রাইরাজা করা হয়, তাঁদের অবশ্যই হতে হয় ১২ বছরের নীচে এবং ব্রাহ্মণবাড়ির কন্যা। যে শিশুকন্যা রাইরাজা হন তাঁকে আগের দিন নিরামিষ আহার করতে হয়। পরের দিন যথাযথ ভাবে নিয়ম মেনে তাঁকে সাজানো হয় এবং যুগলবিগ্রহের সামনে তাঁকে বসানো হয়। সাধারণ মানুষের কাছে এ ভাবেই বেড়ে যায় শান্তিপুরের রাস উৎসবের গুরুত্ব, যা আজ এক মহোৎসবে পরিণত হয়েছে।

আরও এক রাইরাজা।

শান্তিপুরের রাস উৎসবের কেন্দ্রে যিনি থাকেন তিনি হলেন বড়ো গোস্বামীবাড়ির শ্রীরাধারমণ জিউ। এ ছাড়া রয়েছে আরও বিখ্যাত সব বিগ্রহ-বাড়ি – মধ্যম গোস্বামীবাড়ি, মদনগোপাল বাড়ি, সাহাবাড়ি, পাগলা গোস্বামীবাড়ি ইত্যাদি। সেই সব বিগ্রহকে নিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা, সঙ্গে থাকেন রাইরাজারা। বেনারসি শাড়ি, নানা রকমের গয়না, ফুলের গয়না দিয়ে সাজানো হয় রাইরাজাদের এবং তাঁদের নিয়ে নগরপরিক্রমা করা হয়। এই ভাবে ঐতিহ্যের সঙ্গে শান্তিপুরে আজও পালিত হয় রাসযাত্রা, যার মূল আকর্ষণ রাইরাজা।

কী ভাবে যাবেন

শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে চলুন শান্তিপুর। স্টেশন থেকে বড়ো গোস্বামীবাড়ি চলুন টোটোয় বা রিকশায়, দূরত্ব দেড় কিমি। কলকাতা থেকে শান্তিপুর বাসে বা গাড়িতেও যেতে পারেন। দূরত্ব ৯৪ কিমি।

আরও পড়তে পারেন

শান্তিপুরের রাস উৎসবের কেন্দ্রে থাকেন বড়ো গোস্বামীবাড়ির শ্রীশ্রীরাধারমণ জিউ

গোপীনাথ জিউ-এর রাস উৎসবে মেতে উঠেছে শোভাবাজার রাজবাড়ি

এ বার থেকে সারা বছরই আলোকদ্ভাসিত থাকবে চিত্তোরগড় কেল্লা

শীতের মুখে রাজ্যে ই-ভেসেল পরিষেবা শুরু করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার

হেঁটে চিনুন ওড়িশাকে, ভুবনেশ্বরকে কেন্দ্র করে রাজ্য পর্যটন দফতরের উদ্যোগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *