হেঁটে চিনুন ওড়িশাকে, ভুবনেশ্বরকে কেন্দ্র করে রাজ্য পর্যটন দফতরের উদ্যোগ

ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: ওড়িশা মানেই পুরীর সমুদ্রসৈকত বা জগন্নাথের মন্দির নয়, ওড়িশা মানেই কোনারকের সূর্যমন্দির নয়, ওড়িশা মানেই ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির নয়, ওড়িশা মানে আরও অনেক কিছু।

ওড়িশার ঐতিহ্য, ওড়িশার ইতিহাস, ওড়িশার সংস্কৃতি, ওড়িশার মন্দির-স্থাপত্য সেই রাজ্যের বড়ো পর্যটন-সম্পদ। সেই সম্পদের সঙ্গে পর্যটকদের পরিচিত ঘটাতে ওড়িশা পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশন (ওটিডিসি) এক নতুন উদ্যোগ শুরু করেছে, যার নাম ‘ওড়িশা ওয়াকস্‌’ (Odisha Walks)। অর্থাৎ হেঁটে ওড়িশা চেনার পরিকল্পনা।

সম্প্রতি ভুবনেশ্বর এক অনুষ্ঠানে এই উদ্যোগের সূচনা করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওটিডিসি-র চেয়ারপারসন ড. লেনিন মহান্তি এবং ডিরেক্টর অব ট্যুরিজম অ্যান্ড এমডি রামচন্দ্র যাদব।

লিঙ্গরাজ মন্দির।

‘ওড়িশা ওয়াকস্‌’ সম্পর্কে ড. লেনিন মহান্তি বলেন, এটা একটা ‘হেরিটেজ ওয়াক’, হেঁটে ওড়িশাকে দেখা। আপাতত ভুবনেশ্বরকে ঘিরে এই এই গাইডেড ট্যুরগুলো হবে। ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির, মুক্তেশ্বর মন্দির বা ধৌলি মোটামুটি পরিচিত পর্যটকদের কাছে। কিন্তু এর বাইরেও এখানে আরও অনেক জায়গা আছে যা এই শহরের অতি প্রাচীন স্থাপত্য-সম্পদ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আচার-প্রথার সাক্ষ্য বহন করে। এই স্বল্প-পরিচিত পর্যটন-সম্পদের সঙ্গে পর্যটকদের পরিচিত করানোই এই ‘হেরিটেজ ওয়াক’-এর উদ্দেশ্য।

হাঁটার ৫টি সার্কিট

আপাতত এই হাঁটার জন্য ৫টি সার্কিট বেছে নেওয়া হয়েছে। এই হাঁটার মেয়াদ হল দু’ ঘণ্টা। এই হাঁটায় গাইডের ব্যবস্থা থাকবে, যিনি প্রতিটি জায়গার ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য ব্যাখ্যা করে বোঝাবেন পর্যটকদের।

ওড়িশা ওয়াকস্‌ ১: পাথরে খোদিত রোমান্স

এই হাঁটায় থাকছে পরশুরামেশ্বর মন্দির, মুক্তেশ্বর মন্দির, কেদার-গৌরী মন্দির, শুকসারি মন্দির, বৈতাল দেউল ও একামরা বন।

ওড়িশা ওয়াকস্‌ ২: একামরার স্থাপত্য-বিস্ময়

এতে থাকছে বৈতাল দেউল, চিত্রকারিণী মন্দির, লিঙ্গরাজ মন্দির, অনন্ত বাসুদেব মন্দির, বিন্দুসাগর, উত্তরেশ্বর মন্দির ও একমারা বন।

একামরা বন।

ওড়িশা ওয়াকস্‌ ৩: প্রাচীন শতকে ভুবনেশ্বরের বিশ্বায়ন – উদয়গিরি-খণ্ডগিরি

এতে থাকছে হাতি গুমফা, পাতালপুরী গুমফা, মঞ্চপুরী গুমফা, গণেশ গুমফা ও রানি গুমফা।  

ওড়িশা ওয়াকস্‌ ৪: ধৌলি – করুণার পথ ধরে

এতে থাকছে আধুনিক বৌদ্ধ স্তম্ভ, অশোকের সময়ের শিলালিপি, পাথরে কাটা হাতি, পিস প্যাগোডা বা শান্তি স্তূপ।

ওড়িশা ওয়াকস্‌ ৫: তোসালি থেকে একামরা – বিশ্বজনীন ভুবনেশ্বর

এতে থাকছে ভাস্করেশ্বর মন্দির ও ব্রহ্মেশ্বর মন্দির।

কবে, কখন হাঁটা

প্রতি সপ্তাহান্তে শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার এই হাঁটার আয়োজন করা হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এই হাঁটা চলছে। হাঁটায় যোগ দেওয়ার জন্য ৫০ টাকা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। টিকিট অনলাইনে বুক করা যাবে: www.bookodisha.com কিংবা Book Odisha Modile App থেকেও টিকিট সংগ্রহ করা যাবে।

মুক্তেশ্বর মন্দির।

কিছু স্থানের পরিচয়

মুক্তেশ্বর মন্দির – খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে তৈরি ভুবনেশ্বেরের এই মন্দির ভারতের মন্দির-স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। কলিঙ্গের চন্দ্রবংশীদের আমলে এই মন্দির নির্মিত হয়। এই মন্দির শিবের। পাথরের মন্দিরের গায়ে যে কারুকাজ আছে তা আজও বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।

লিঙ্গরাজ মন্দির – ওড়িশার অন্যতম জনপ্রিয় প্রতীক ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির। পর্যটকদের কাছে খুবই পরিচিত এই মন্দির। একাদশ শতাব্দীতে তৈরি এই মন্দিরের বিগ্রহও শিব। মন্দিরগাত্রের কারুকাজ দেখার মতো। এর গায়ে ব্রহ্ম পুরাণের মতো প্রাচীন ধর্মশাস্ত্র উৎকীর্ণ করা আছে।   

শান্তি স্তূপ – খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ বর্ষে যেখানে কলিঙ্গ যুদ্ধ হয়েছিল, সেই জায়গাতেই তৈরি হয়েছে পিস প্যাগোডা বা শান্তি স্তূপ। ভুবনেশ্বর থেকে ৭ কিমি দূরে ধৌলাগিরিতে তৈরি হয়েছে এই শান্তি স্তূপ। কলিঙ্গ যুদ্ধের পরে সম্রাট অশোকের যে হৃদয় পরিবর্তন হয়েছিল, তারই প্রতীক এই স্তূপ। কলিঙ্গ নিপ্পন বুদ্ধ সংঘ ১৯৭৩ সালে এই স্তূপ নির্মাণ করে।

খণ্ডগিরি গুহা – জৈন সম্প্রদায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র খণ্ডগিরি গুহা। এক সময় এই গুহাগুলিতে বহু জৈন পণ্ডিত বাস করতেন। গুহা-স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন এই খণ্ডগিরি। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে এই গুহাগুলি নির্মাণ করেন রাজা খারবেলা।

শান্তি স্তূপ।

উদয়গিরি গুহা – এই গুহাগুলিও জৈন পণ্ডিতদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এখানে মোট ১৮টি গুহা আছে। রাজা খারবেলা জৈনধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পরে জৈন পণ্ডিতদের জন্য এগুলি তৈরি করে দিয়েছিলেন। জৈন পণ্ডিতরা সারা দেশ হেঁটে ঘুরতেন। তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এই গুহাগুলি তৈরি হয়। তাঁরা এক জায়গায় এক দিনের বেশি থাকতেন না।

(প্রথম ছবি উদয়গিরি গুহার)

আরও পড়তে পারেন

শান্তিপুরের রাস উৎসবের কেন্দ্রে থাকেন বড়ো গোস্বামীবাড়ির শ্রীশ্রীরাধারমণ জিউ

চলুন ঘুরে আসি রাজস্থান ৩: বিকানের-জৈসলমের-বাড়মের-জোধপুর

চলুন ঘুরে আসি রাজস্থান ২: জয়পুর-ফতেপুর-বিকানের-অজমের

চলুন ঘুরে আসি রাজস্থান ১: আগ্রা-ভরতপুর-দৌসা-জয়পুর-সরিস্কা-অলওয়র

পাঁচটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে ‘আকাশপথ’ তৈরি করছে ঝাড়খণ্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *