ভরতপুরে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন, পশ্চিমবঙ্গের নতুন পর্যটন কেন্দ্র?

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: বছর পঞ্চাশ আগে উদ্ধার হয়েছিল বৌদ্ধমূর্তি। এ বার সেখানেই মাটির তলা থেকে বেরিয়ে এসেছে ইটের গাঁথনি, কালো ও লাল রঙা মাটির পাত্র, স্থাপত্যের একাধিক নিদর্শন। ইতিহাসের হাতছানি গোটা ভরতপুর গ্রাম জুড়ে। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসসমৃদ্ধ পর্যটন তালিকায় যুক্ত হতে পারে আরও একটি নাম। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার বুদবুদের কাছে অবস্থিত ভরতপুরের গ্রামবাসীরা।

পানাগড় রেলস্টেশনের দক্ষিণ দিকে ৫ কিলোমিটার দূরে দামোদর নদের তীরে অবস্থিত এই ভরতপুর গ্রাম। এই গ্রামেই রয়েছে কয়েকশো বছর আগেকার বৌদ্ধস্তূপ। এটিই স্বাধীন ভারতবর্ষে পশ্চিমবঙ্গে আবিষ্কৃত প্রথম বৌদ্ধস্তুপ। ১৯৭১ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল খননকার্য। মাঝে কেটে যায় প্রায় ৫২টি বছর। এর পর এ বছর জানুয়ারি মাস থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ফের সেখানে খনন কার্য শুরু হয়।

গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত নতুন করে খননকার্য হয়। তাতে বৌদ্ধস্তূপ সংলগ্ন জমি খনন করতেই কয়েকটি ঘরের ইটের দেওয়ালের হদিশ পাওয়া যায়। মূল স্তূপের মাটির নীচে ৩২ ইটের গাঁথনি বেরিয়ে আসে। অনুমান করা হয়, এটি দামোদরের বিধ্বংসী বন্যায় বিনষ্ট কোনো প্রাগৈতিহাসিক সৌধের অংশ। ইট দিয়ে এটি পরে নির্মাণ করা হয়। এটি ওড়িশার রত্নগিরি স্তূপের অনুরূপ।

এ ছাড়াও ওই এলাকা থেকেই সম্প্রতি উঠে এসেছে লাল ও কালো মাটির পাত্র বিশেষ। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের কলকাতা সার্কেলের আধিকারিক শুভ মজুমদার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ভরতপুরে একাধিক স্থাপত্যের হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে একটি ঘর বা কক্ষ রয়েছে। কালো ও লাল মাটির কিছু পাত্র পাওয়া গিয়েছে। হাজার বছর আগে এই এলাকায় জনবসতি ছিল। তার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।”

খননকার্য চলাকালীন গৌতম লামার নেতৃত্বে ৩০ জনের একটি বৌদ্ধসন্ন্যাসীদল পরিভ্রমণে এসেছিলেন। স্থানীয় সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওহালিয়া খননকার্যের কাজ খতিয়ে দেখতে আসেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশে প্রাচীন স্থাপত্যগুলিকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে প্রাচীন ঐতিহ্য বিদ্যমান। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে খননকার্য চালিয়ে তা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরা হবে।”

গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এত দিন ধরে অবহেলায় পড়েছিল বৌদ্ধস্তূপটি। নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে ফের খননকার্য হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। আগামী দিনে রনডিহা জলাধার, কসবা প্রাচীন শিবমন্দির, সিলামপুর ও এখানকার বৌদ্ধস্তূপকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার। প্রচুর পর্যটক আসবে এই গ্রামে। এলাকায় আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *