চলুন ঘুরে আসি গুজরাত ২: অমদাবাদ হয়ে কচ্ছভূমি

Kala Dungar

গুজরাত বেশ বড়ো রাজ্য, একবারে ঘোরা যায় না। নানা ভাবে ভেঙে ভেঙে গুজরাতের সফরসূচি তৈরি করা যায়। আর এই গুজরাত ভ্রমণের আদর্শ সময় নভেম্বর থেকে মার্চ, ভ্রমণ অনলাইন সাজিয়ে দিচ্ছে গুজরাতের ভ্রমণ-ছক। আজ দ্বিতীয় কিস্তি।

ভ্রমণসূচি 

প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন – রাত্রিবাস অমদাবাদ

ভ্রমণ শুরু করুন অমদাবাদ থেকে। হাওড়া-অমদাবাদ সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস প্রতি দিন রাত ১১.৪০-এ হাওড়া ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় তৃতীয় দিন দুপুর ১২.০৫-এ। শালিমার-ওখা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার শালিমার থেকে রাত ৯টায় ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় বৃহস্পতিবার সকাল ৬-১০-এ। শালিমার-ভুজ সুপারফাস্ট  এক্সপ্রেস প্রতি শনিবার রাত ৮.২০-তে ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় সোমবার সকাল ৭.৫৫ মিনিটে। কলকাতা-অমদাবাদ এক্সপ্রেস প্রতি শনিবার দুপুর ১.১০-এ কলকাতা স্টেশন ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় সোমবার সকাল ৭.১৫ মিনিটে।  শালিমার-পোরবন্দর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস প্রতি শুক্র ও শনিবার রাত রাত ৯টায় ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় রবিবার ও সোমবার সকাল ৬-১৫-য়। কবিগুরু এক্সপ্রেস প্রতি রবিবার রাত ৮.১০-এ সাঁতরাগাছি ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় মঙ্গলবার সকাল ৮.৪৫-এ। হাওড়া-গান্ধীধাম গর্ভ এক্সপ্রেস প্রতি সোমবার রাত ১১টায় ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় বুধবার সকাল ৯.১৫-য়।

সবরমতী আশ্রম, অমদাবাদ।

দিল্লি থেকে সব চেয়ে ভালো ট্রেন অমদাবাদ রাজধানী। প্রতি দিন নিউদিল্লি স্টেশন থেকে রাত ৭.৫৫-য় ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৮.৪৫-এ। আশ্রম এক্সপ্রেস প্রতি দিন দিল্লি থেকে বিকেল ৩.২০-তে ছেড়ে অমদাবাদ পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৬.২০-তে। এ ছাড়াও আরও দৈনিক, ত্রিসাপ্তাহিক, সাপ্তাহিক ট্রেন আছে দিল্লি থেকে অমদাবাদ যাওয়ার জন্য।

মুম্বই থেকে ছ’ থেকে ন’ ঘণ্টার মধ্যে অমদাবাদ পৌঁছোনোর জন্য দিনেরাতে অনেক ট্রেন আছে। এমন ট্রেন বাছুন যাতে সকালে অমদাবাদ পৌঁছে যেতে পারেন। তা হলে সেই দিনটা অমদাবাদ ঘোরাঘুরির জন্য রাখতে পারেন। ট্রেনের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in।

ভারতের যে কোনো জায়গা থেকে বিমানে পৌঁছোতে পারেন অমদাবাদ। উড়ানের সময় গুগুল সার্চ করে পেয়ে যাবেন।

জামা মসজিদ, অমদাবাদ।

কী দেখবেন অমদাবাদে

সবরমতীর ধারে অমদাবাদ। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা রয়েছে এই শহরের। এখানে দ্রষ্টব্য অনেক। প্রায় তিনটে দিন লেগে যায় অমদাবাদ দেখতে। শুরু করুন রিভার ফ্রন্ট দিয়ে। চলুন লাল দরোজার কাছে সিদি সৈয়দ জালি মসজিদ। এর পর ভদ্রা ফোর্ট ও ভদ্রকালী মন্দির দেখুন। তার পর চলুন সরখেজ রোজায় সুলতান মামুদ বেগারার সমাধি দেখতে। দেখুন রানি সিপ্রির মসজিদ, স্বামীনারায়ণ মন্দির, জামা মসজিদ, তিন দরওয়াজা। দেখুন এক গুচ্ছ মিউজিয়াম — ক্যালিকো মিউজিয়াম অব টেক্সটাইলস, বেচার ইউটেনসিল মিউজিয়াম, কাইট মিউজিয়াম। দেখে নিন সর্দার পটেল মিউজিয়াম। বিনোদনের হরেক ব্যবস্থা সহ কাঁকারিয়া হ্রদ। হ্রদের পাড়ে বাল বাটিকা। দেখে নিন রেলস্টেশনের দক্ষিণে সারঙ্গপুর রোডে শেকিং মিনারেট তথা ঝুলতা মিনার। 

দেখুন গান্ধীজির গড়া সবরমতী আশ্রম। এলিস ব্রিজে সবরমতী পেরিয়ে শহর থেকে ৭ কিমি উত্তরে সবরমতীর ধারে আশ্রম। এলিস ব্রিজে সবরমতী পেরোনোর আগে দেখুন ভিক্টোরিয়া গার্ডেন

রয়েছে আরও দ্রষ্টব্য — শাহ আলমের রৌজা (শহর থেকে ৩ কিমি দক্ষিণ পুবে), রানি রূপমতী মসজিদ (মির্জাপুরে), মসজিদ-ই-নাগিরা (মানেকচকে), দরিয়া খাঁয়ের সমাধি (গুজরাতের সর্বোচ্চ গম্বুজ), আদালজ ভাভ তথা স্টেপওয়েল (১৯ কিমি), অক্ষরধাম মন্দির (২৩ কিমি দূরে গান্ধীনগরে) ইত্যাদি।

নল সরোবর।

অমদাবাদ অবস্থানকালে এক দিন ঘুরে আসুন লোথালনল সরোবর – অমদাবাদ থেকে ৭৫ কিমি, ট্রেনে তিন ঘণ্টার পথ লোথাল। বাসও চলে। তবে সময় বাঁচাতে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়াই ভালো। সিন্ধু সভ্যতার সমসাময়িক সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে লোথালে। বলা হয়, হরপ্পা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ৫০০ বছরে পরেও লোথাল সভ্যতা টিকে ছিল। পরবর্তী কালে বন্যায় ধ্বংস হয় এই সভ্যতা। লোথাল দেখে চলুন ৪০ কিমি দূরের নল সরোবর পাখিরালয়। দেশ-বিদেশ থেকে আসা পাখিরা শীতে আস্তানা গাড়ে নল সরোবরের বেট থেকে বেটে। বেট অর্থে দ্বীপ। নল সরোবর দেখে ফিরে আসুন ৬৬ কিমি দূরের অমদাবাদে।

চতুর্থ দিন – রাত্রিবাস ধ্রানগাধরা

ক্ষুদ্র রনের জন্য বিখ্যাত ধ্রানগাধরা। রাত্রিবাস করুন দেবজিভাই ধামেচার ইকো ক্যাম্পে। দেবজিভাইয়ের উদ্যোগে বিকেলে একটা সাফারি করুন বন্য গাধার অরণ্যে।

হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন, ধোলাভিরা।

অমদাবাদ থেকে ধ্রানগাধরা ১২৪ কিমি, যেতে পারেন ট্রেনে, বাসে বা গাড়িতে। তবে ট্রেনের সময়ের সঙ্গে আপনার সময় মিলতে নাও পারে।

পঞ্চম দিন – সকালেও একটা সাফারি করুন দেবজিভাইয়ের উদ্যোগে। দুপুরে রওনা হন ভাচাউয়ের উদ্দেশে। দূরত্ব ১৩৫ কিমি। রাত্রিবাস ভাচাউ

ধ্রানগাধরা থেকে ভাচাউ  ট্রেনে, বাসে বা গাড়িতে আসতে পারেন। তবে ট্রেনের সময় দেখে নেবেন আপনার ভ্রমণসূচির সঙ্গে খাপ খায় কিনা।

ষষ্ঠ দিন –ঘুরে আসুন হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন ধোলাভিরা। যাতায়াত ৩০০ কিমি। রাত্রিবাস ভাচাউ।

সূর্যাস্তের সময়ে মান্ডবী সৈকতে।

সপ্তম দিন – আজ চলুন মান্ডবী। ভাচাউ থেকে মান্ডবীর দূরত্ব ১৩০ কিমি। কচ্ছ উপসাগরের তটে মাণ্ডবী। সৈকতশহর মান্ডবীতে দেখুন বিজয়বিলাস প্যালেস, নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত। রাত্রিবাস মান্ডবী।

অষ্টম, নবম ও দশম দিন – রাত্রিবাস ভুজ।  

অষ্টম দিনে মাণ্ডবী থেকে আসুন ভুজ। সোজা পথে দূরত্ব ৫৮ কিমি। কিন্তু আপনি আসুন ঘুরপথে। প্রথমে যান ভারতের শেষ প্রান্ত কোটেশ্বর, (কোটিলিঙ্গেশ্বরের মন্দিরনারায়ণ সরোবর। দূরত্ব ১৪৬ কিমি। নারায়ণ সরোবরে কিছুক্ষণ কাটিয়ে চলুন লাখপত (দুর্গনগরী, গুরু নানকের স্মৃতিধন্য)। দুরত্ব ৩৫ কিমি। লাখপাত থেকে আসুন মাতা নো মাঢ়। দূরত্ব ৪১ কিমি। দর্শন করুন মা আশাপুরাকে। এখান থেকে চলে আসুন ভুজ। মাণ্ডবী থেকে মোট দূরত্ব ৩১৭ কিমি।

নবম দিনে ভুজ দর্শন। দেখে নিন আলামপন্না দুর্গে রাও লাক্ষা প্রাসাদ, মহারাও প্রাসাদ ও আয়না মহল, হামিরসর লেকের পুবে শারদ বাগ প্যালেস, প্রাগ মহল প্রাসাদ, লেকের দক্ষিণ পুবে কচ্ছ মিউজিয়াম ইত্যাদি।

দশম দিনে ভুজ থেকে চলুন সাদা রন দেখতে। জায়গার নাম ধোরদো। দূরত্ব ৮০ কিমি। ধোরধো থেকে যেতে পারেন কচ্ছের সর্বোচ্চ পর্বত কালো দুঙ্গার দেখতে। দূরত্ব ৪৮ কিমি। উচ্চতা ৪৫৮ মিটার। এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখে ফিরে আসুন ভুজ, দূরত্ব ৯০ কিমি। 

কচ্ছের ক্ষুদ্র রন।

একাদশ দিন – ঘরে ফেরা।

ভুজ থেকে সরাসরি কলকাতা ফিরতে পারেন। ভুজ-শালিমার এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার দুপুর ৩.০৫ মিনিটে ভুজ থেকে ছেড়ে শালিমার পৌঁছোয় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায়। গান্ধীধাম থেকেও ফেরার ট্রেন ধরতে পারেন। গর্ভ এক্সপ্রেস প্রতি শনিবার বিকেল ৬.১০-এ ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় সোমবার দুপুর ১২.৫৫-য়। ভুজ থেকে গান্ধীধাম ৫৮ কিমি।

ভুজ থেকে আমদাবাদ ফিরে সেখান থেকেও হাওড়ার ট্রেন ধরতে পারেন। দূরত্ব ৩৩১ কিমি। সে ক্ষেত্রে এক রাত আমদাবাদে থেকে পরের দিন ট্রেন ধরুন।

ভুজ থেকে সরাসরি মুম্বই ফেরার দৈনিক ট্রেন আছে। ভুজ থেকে দিল্লি ফেরার ট্রেন বরেলি এক্সপ্রেস, সপ্তাহে চার দিন। না হলে অমদাবাদ হয়ে দিল্লি ফিরুন।

বিমানেও অমদাবাদ থেকে দেশের যে কোনো জায়গায় ফিরতে পারেন।

নারায়ণ সরোবর।

কী ভাবে ঘুরবেন

(১) অমদাবাদের স্থানীয় দ্রষ্টব্য এবং লোথাল ও নল সরোবর (যদি সময় করে উঠতে পারেন) গাড়ি ভাড়া করে নিন। রাজ্য পর্যটনের সারা দিনের ট্যুরে অমদাবাদ ঘোরায় কিনা খোঁজ করে নিন – ০৭৯-২৬৫৭৮০৪৪/২৬৫৭৮৯৪৬/২৬৫৮৯১৭২।

(২) ভাচাউ থেকে ধোলাভিরা চলুন গাড়ি ভাড়া করে।

৩) ভাচাউ থেকে দু’ দিনের জন্য গাড়ি নিয়ে মাণ্ডবীতে রাত কাটিয়ে পরের দিন কোটেশ্বর-লাখপত-মাতা নো মাঢ় ঘুরে ভুজে এসে গাড়ি ছেড়ে দিন।

(৪) ভুজে ঘুরুন স্থানীয় যানবাহনে। ধোরদো, কালো দুঙ্গার যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিন।

প্রাগ মহল, ভুজ।

কোথায় থাকবেন

একমাত্র অমদাবাদ ছাড়া কোথাওই গুজরাত পর্যটনের কোনো হোটেল নেই। অমদাবাদে গান্ধী আশ্রমের উলটো দিকে রয়েছে গুজরাত পর্যটনের হোটেল তোরণ গান্ধী আশ্রম। অনলাইনে বুক করার জন্য লগইন করুন www.gujarattourism.com । এ ছাড়া সব জায়গাতেই রয়েছে বেসরকারি হোটেল এবং রিসোর্ট। হোটেল বুকিং-এর একাধিক ওয়েবসাইট থেকে তা বুক করতে পারেন। শুধু ধ্রানগাধরায় থাকার চেষ্টা করবেন দেবজিভাই ধামেচার ইকো ক্যাম্পে। বিভিন্ন রকম কটেজ আছে এখানে। ধ্রানগাধরায় সাফারির ব্যবস্থা করে দেবেন দেবজিভাই নিজে। যোগাযোগ ৯৮২৫৫৪৮০৯০। ওয়েবসাইট www.littlerann.com

(প্রথম ছবিটি কালা দুঙ্গারে সানসেট পয়েন্ট)

আরও পড়ুন: চলুন ঘুরে আসি গুজরাত ১: বডোদরা-মধেরা-পাটন-অমদাবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *