পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ১: গুয়াহাটি-হাফলং-শিলচর

১ অক্টোবর ষষ্ঠী, দুর্গাপুজো শুরু। আর দিন কুড়ি পরেই শুরু হয়ে যাবে জুন মাস। শুরু হয়ে যাবে পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের আসনের আগাম সংরক্ষণ। ও দিকে কোভিড-আতঙ্ক কাটিয়ে বাঙালি বেড়াতে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে। সুতরাং আর দেরি নয়। এখনই করুন পুজোর ভ্রমণ পরিকল্পনা। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ভ্রমণ অনলাইন এ বারও সাজিয়ে দিচ্ছে এক গুচ্ছ ভ্রমণ পরিকল্পনা। শুরু করছে উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম দিয়ে।

সফরসূচি

প্রথম দিন – গুয়াহাটির উদ্দেশে রওনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে গুয়াহাটি ট্রেন ও বিমানপথে যুক্ত।

যথারীতি কলকাতা থেকে যাওয়ার বেশ কিছু ট্রেন আছে। সরাইঘাট এক্সপ্রেস প্রতি দিন বিকেল ৩:৫৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়ে গুয়াহাটি পৌঁছোয় পরের দিন সকালে ১০.০৫-এ। কামরূপ এক্সপ্রেস সোম ও শুক্রবার বাদে বাকি দিনগুলোয় সন্ধে ৬টায় হাওড়া থেকে ছেড়ে গুয়াহাটি পৌঁছোয় পরের দিন বিকেল ৩:৪০-এ। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস প্রতি দিন সকাল ৬:৩৫-এ শিয়ালদহ থেকে ছেড়ে গুয়াহাটি পৌঁছোয় পরের দিন ভোর ৩:৪০ মিনিটে। এ ছাড়াও আরও ট্রেন আছে। বিস্তারিত দেখে নিন erail.in-এ।

দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিন – গুয়াহাটিতে রাত্রিবাস। এই দু’ দিনে শহরের দ্রষ্টব্যগুলো দেখে নিন

(১) কামাখ্যা মন্দির — শহর থেকে ৯ কিমি দূরে নীলাচল পাহাড়ে কামাখ্যা মন্দির।

(২) ভুবনেশ্বরী মন্দির — কামাখ্যাদেবীকে পুজো দিয়ে চলুন নীলাচল পাহাড়ের মাথায় ভুবনেশ্বরী মন্দিরে। কামাখ্যা থেকে ১ কিমি। ভুবনেশ্বরী মন্দির চত্বর থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য ভোলার নয়।

(৩) নবগ্রহ মন্দির – শহরের প্রাণকেন্দ্রে, নবগ্রহ পাহাড়ের শিরে। এখানে কোনো মূর্তিপুজো হয় না। গ্রহের আকারে পাথরের স্থাপত্য। সেখানেই পুজোর ব্যবস্থা। পাহাড়ের উপর থেকে গুয়াহাটি শহর ও ব্রহ্মপুত্রের অসাধারণ ভিউ।

ব্রহ্মপুত্রে পিকক আইল্যান্ড।

(৪) উমানন্দ মন্দির — ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে পিকক আইল্যান্ড। সেখানে উমানন্দ মন্দির। দেবী কামাখ্যার ভৈরব। এখানেই রয়েছে চন্দ্রশেখর মন্দির। কাছারি ঘাট বা ফ্যান্সিবাজার ফেরি ঘাট থেকে বোটে চেপে ব্রহ্মপুত্রের ওপর দিয়ে উমানন্দ যাওয়া এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

(৫) বশিষ্ঠ আশ্রম – শহর থেকে ১২ কিমি দূরে, পাহাড় থেকে নেমে আসা তিনটি ঝরনাধারায় সৃষ্টি হয়েছে বশিষ্ঠ গঙ্গা। কাছেই বশিষ্ঠ মন্দির, শিব মন্দির।

(৬) বালাজি মন্দির – তিরুপতি মন্দিরের আদলে গড়া, শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ১০ কিমি দূরে লোখরা এলাকায়।

(৭) চিড়িয়াখানা – মনোরম পাহাড়ি পরিবেশে বন্যজন্তুর সংগ্রহ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। লাগোয়া বটানিক্যাল গার্ডেন।

হয়গ্রীব মাধব মন্দির, হাজো।

চতুর্থ দিন – আজও থাকুন গুয়াহাটিতে। চলুন তীর্থস্থান হাজো। গুয়াহাটি থেকে দূরত্ব ৩৫ কিমি। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে খুব পবিত্র তীর্থস্থান। দেখুন ‘মণিকূট’ পাহাড়ের মাথায় হয়গ্রীব মাধবমন্দির, মাধব দেউল, পোয়া মক্কা, ‘মদনাচল’ পাহাড়ের মাথায় কেদারেশ্বর মন্দির। হাজো ফেরার পথে ১৬ কিমি দূরে চলুন শুয়ালকুচি, মুগা শিল্পীদের গ্রাম। শুয়ালকুচি থেকে ফিরুন গুয়াহাটিতে, দূরত্ব ৩৫ কিমি।

পঞ্চম দিন – আজও থাকুন গুয়াহাটিতে। চলুন কামরূপের খাজুরাহো, মদন কামদেব গুয়াহাটি থেকে ৪০ কিমি। ১০ থেকে ১২ শতকে পাল রাজাদের আমলে তৈরি ২৪টিরও বেশি মন্দিরের কমপ্লেক্স। ফিরে আসুন গুয়াহাটিতে।

ট্রেনে হাফলং-এর পথে।

ষষ্ঠ দিন – চলুন শৈলশহর হাফলং দিনের বেলার ট্রেনে, উপভোগ করুন লামডিং-বদরপুর হিল সেকশনের অপার সৌন্দর্য। প্রতি দিন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস গুয়াহাটি ছাড়ে ভোর ৩.৫০ মিনিটে, হাফলং পৌঁছোয় সকাল ১০.১৫ মিনিটে। এ ছাড়াও কিছু সাপ্তাহিক, দ্বিসাপ্তাহিক ট্রেন আছে। বিস্তারিত দেখে নিন erail.in-এ। রাত্রিবাস হাফলং।

সপ্তম দিন – হাফলং ঘোরাঘুরি। রাত্রিবাস।

বরাইল পর্বতমালায় ৩০০০ ফুট উচ্চতায় শৈলশহর হাফলং। অসমের একমাত্র হিলস্টেশন। এখানে দেখবেন —

হাফলং লেক, গরম জলের প্রস্রবণ, ঝুলন্ত ব্রিজ, মুওলপং ভিউ টাওয়ার, প্রাচীন সার্কিট হাউস, প্রাচীন কালীবাড়ি এবং হাফলং চার্চ। ঘুরে আসতে পারেন ৯ কিমি দূরের জাটিঙ্গা, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে কৃষ্ণপক্ষের রাতে পাখিদের আত্মহননের জন্য খ্যাত।

হাফলং লেক।

অষ্টম দিন – আসুন বাঙালির শহর শিলচরে। দূরত্ব ৯৬ কিমি। হাফলং থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে আসুন শিলচর। ঘোরাঘুরি, রাত্রিবাস শিলচর। হাফলং থেকে ট্রেনেও আসতে পারেন শিলচর। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস প্রতি সোম, বুধ ও শনি নিউ হাফলং থেকে সকাল ১০.২০ মিনিটে ছেড়ে শিলচর পৌঁছোয় দুপুর ২:৩০ মিনিটে।

নবম দিন – সারা দিন শিলচর ঘোরাঘুরি। রাত্রিবাস শিলচর।

শিলচরে দেখবেন বরাক নদীর পাড় থেকে সূর্যোদয়, গান্ধী বাগে ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্তম্ভ, কাছাড় ক্লাব, কাছাড়ি রাজবাড়ি, দোলু লেক, ইসকন মন্দির, ২০ কিমি দূরে খাসপুরে ডিমাসা রাজাদের রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ, কাঁচাকান্তি কালীমন্দির (শহর থেকে ১৭ কিমি)।

দশম দিন – ঘরপানে রওনা। সোম, বুধ ও শুক্রবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস সকাল ১১:১০ মিনিটে শিলচর ছেড়ে শিয়ালদহ পৌঁছোয় পরের দিন সন্ধে ৭.২৫ মিনিটে। কলকাতা ফেরার আরও ট্রেন আছে। বিস্তারিত দেখে নিন erail.in-এ।  

ডিমাসা রাজাদের কাছারির ধ্বংসাবশেষ, খাসপুর। ছবি সৌজন্যে এএসআই, গুয়াহাটি সার্কল।

কী ভাবে ঘুরবেন

একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে গুয়াহাটি শহরে ঘুরে নিন। গুয়াহাটি থেকে ট্রেনে আসুন হাফলং। হাফলং শহরে ঘোরাঘুরির জন্য অটো, জিপ বা অন্য গাড়ি মেলে। একটা গাড়ি ভাড়া করে শিলচর চলে আসুন। শিলচরে ঘুরুন স্থানীয় যানে।

কোথায় থাকবেন

গুয়াহাটি স্টেশনের কাছেই রয়েছে অসম পর্যটক উন্নয়ন নিগমের প্রশান্তি টুরিস্ট লজ। হাফলং-এ রয়েছে অসম পর্যটন উন্নয়ন নিগমের টুরিস্ট লজ। শিলচরে আছে প্রশান্তি টুরিস্ট লজ। কিন্তু অনলাইনে বুকিং-এর কোনো ব্যবস্থা নেই। বুকিংয়ের জন্য অসম পর্যটনে যোগাযোগ ০৩৬১-২৫৪৭১০২/২৫৪২৭৪৮/২৫৪৪৪৭৫। কলকাতা অফিসে যোগাযোগ ০৩৩-২২২৯৫০৯৪। গুয়াহাটির প্রশান্তি ট্যুরিস্ট লজের সঙ্গে যোগাযোগ: ০৩৬১-২৫৪৪৪৭৫। শিলচরে প্রশান্তি ট্যুরিস্ট লজের সঙ্গে যোগাযোগ: ০৩৮৪২-২৩২৩৭৬। হাফলং-এ ট্যুরিস্ট লজের সঙ্গে যোগাযোগ: ০৩৬৭৩-২৩৬৪৬৮।

এ ছাড়া তিনটি শহরেই বিভিন্ন মানের বিভিন্ন দামের বেসরকারি হোটেল রয়েছে। খোঁজ পাবেন makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।

নিউ হাফলং স্টেশন।

মনে রাখবেন

(১) ষষ্ঠ দিন দুপুরের মধ্যে হাফলং পৌঁছোতে পারলে সপ্তম দিন দুপুরের খাওয়া সেরে শিলচর রওনা হন। সে ক্ষেত্রে বিকেলে শিলচরে পৌঁছে যাবেন। সপ্তম ও অষ্টম দিন শিলচরে কাটিয়ে নবম দিন ঘরে ফেরার ট্রেন ধরতে পারেন।

(২) যদি শিলচর থেকে বিমানে ফেরেন তা হলে নবম দিন বিকেলেই ঘরপানে রওনা হতে পারেন।

(৩) হাতে কয়েকটা দিন থাকলে শিলচর থেকে চলে যাওয়া যায় শিলং, ২১৫ কিমি। মেঘালয় পরিবহণের নানা ধরনের বাস এই রুটে চলে নিয়মিত। শিলং-চেরাপুঞ্জি ঘুরে গুয়াহাটি চলে আসা যায়।

(৪) গুয়াহাটিতে কামাখ্যা মন্দিরের খোলা-বন্ধের সময় আগাম জেনে নিলে বেড়ানোর প্ল্যান করতে সুবিধা হবে।

(৫) উমানন্দ মন্দির সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত খোলা।

(৬) হাতে কম সময় থাকলে একই দিনে হাজো ও মদন কামদেব ঘুরে আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শুয়ালকুচি বাদ দিতে পারেন। একটা গাড়ি ভাড়া করে প্রথমে ৩৫ কিমি দূরে হাজো চলুন। হাজো ঘুরে চলুন ৩৩ কিমি দূরে মদন কামদেব। সেখান থেকে গুয়াহাটি ফিরুন, ৪০ কিমি।

(৭) ট্রেনের সময়সূচির জন্য দেখে নিন erail.in । 

আরও পড়তে পারেন

প্রথম ভারত গৌরব ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু হচ্ছে ২১ জুন, যাবে নেপালের জনকপুরেও

আর হেঁটে চড়াই ভাঙা নয়, কাদ্দুখাল থেকে রোপওয়েতে চলুন সুরখণ্ডা দেবী দর্শনে

ট্রেকিং-এর নতুন গন্তব্য: মুন্নারের কাছে মিসাপুলিমালা

সেলফি নেওয়া, ছবি তোলা, ভিডিও করা মানা গঙ্গাসাগরে কপিলমুনি মন্দিরে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *