পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ৫: গুয়াহাটি-নামেরি-বমডিলা-তাওয়াং-দিরাং

Madhuri Lake

পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের আসনের আগাম সংরক্ষণ শুরু হয়ে যাবে জুনের একেবারে গোড়ায়। সুতরাং আর দেরি নয়। এখনই করে ফেলুন পুজোর ভ্রমণ পরিকল্পনা। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ভ্রমণ অনলাইন এ বারও সাজিয়ে দিচ্ছে এক গুচ্ছ ভ্রমণ পরিকল্পনা। শুরু করেছে উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে। আজ অরুণাচল।

সফরসূচি

ভ্রমণ শুরু গুয়াহাটি থেকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গুয়াহাটি ট্রেন ও বিমানপথে যুক্ত।

যথারীতি কলকাতা থেকে যাওয়ার বেশ কিছু ট্রেন আছে। সরাইঘাট এক্সপ্রেস প্রতি দিন বিকেল ৩:৫৫ মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়ে গুয়াহাটি পৌঁছোয় পরের দিন সকালে ১০.০৫-এ। কামরূপ এক্সপ্রেস সোম ও শুক্রবার বাদে বাকি দিনগুলোয় সন্ধে ৬টায় হাওড়া থেকে ছেড়ে গুয়াহাটি পৌঁছোয় পরের দিন বিকেল ৩:৪০-এ। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস প্রতি দিন সকাল ৬:৩৫-এ শিয়ালদহ থেকে ছেড়ে গুয়াহাটি পৌঁছোয় পরের দিন ভোর ৩:৪০ মিনিটে। এ ছাড়াও আরও ট্রেন আছে। বিস্তারিত দেখে নিন erail.in-এ।

প্রথম দিন – যেখান থেকেই আসুন এ দিনটা গুয়াহাটিতে কাটান। কারণ পরের দিন খুব ভোরে যাত্রা। সময় থাকলে কামাখ্যা মন্দির ঘুরে আসুন।

দ্বিতীয় দিন – চলুন নামেরি, তেজপুর হয়ে। গুয়াহাটি থেকে তেজপুর ১৭৭ কিমি। পথে প্রাতরাশ সেরে তেজপুর আসতে ঘণ্টা পাঁচেক সময় লাগবে। সেখান থেকে নামেরি ৩৭ কিমি, ভালুকপং-এর পথে। রাত্রিবাস নামেরি।

নামেরি ন্যাশনাল পার্ক।

তৃতীয় দিন – আজও থাকুন নামেরিতে। উপভোগ করুন নামেরি ন্যাশনাল পার্ক। সাফারি করুন। সশস্ত্র গার্ড নিয়ে জঙ্গলে হাঁটুন। জিয়া ভরলি নদীতে র‍্যাফটিং করুন বা নৌকাবিহার করুন ।

চতুর্থ দিন – সকালেই বেরিয়ে পড়ুন, গন্তব্য বমডিলা (২৫৩০ মিটার, ৮৩০০ ফুট), দূরত্ব। পথে দেখে নিন –

(১) ভালুকপং দুর্গের ধ্বংসাবশেষ – নামেরি থেকে ২৬ কিমি দূরে, জিয়া ভরলি নদীর তীরে।

(২) অর্কিড আর ক্যাকটাসের অর্কেডারিয়াম – ভালুকপং থেকে ৬ কিমি দূরে টিপি গ্রামে। কাছেই দুর্গামন্দির।

(৩) চিলিপাম গোমপা – টিপি থেকে ৯৬ কিমি। টিপি থেকে বমডিলা যাওয়ার পথে টেঙ্গা মার্কেট থেকে ব্রিজ পেরিয়ে রূপা ভ্যালির পথে। টেঙ্গা মার্কেট থেকে দূরত্ব ১৯ কিমি।

চিলিপাম থেকে বমডিলা, ২৮ কিমি। রাত্রিবাস বমডিলা।

পঞ্চম দিন – এ দিনটাও বমডিলায় থাকুন। দেখে নিন বমডিলা মন্যাস্টেরি, আপার গোম্পা, লোয়ার গোম্পা (মেন মার্কেট রোডে), মিডল্‌ গোম্পা (মেন মার্কেট থেকে ২ কিমি), বমডিলা ভিউ পয়েন্ট, আর আর হিল, আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট সেন্টার

ষষ্ঠ দিন – সকালেই বেরিয়ে পড়ুন, চলুন তাওয়াং (৩০৪৮ মিটার, ১০ হাজার ফুট), দূরত্ব ১৭১ কিমি। পথে পড়বে ৪২১৫ মিটার (১৩১২৮ ফুট) উঁচু সেলা পাস। দেখে নিন সেলা লেক। তাওয়াং শহরে ঢোকার ২৫ কিমি আগে পড়বে নুরানাং ফলস্‌, ১৭-১৮ কিমি আগে জসবন্ত গড়, ১৯৬২-এর ভারত-চিন যুদ্ধে নিহত সৈনিক জসবন্ত সিং-এর স্মৃতিতে তৈরি স্মারক। রাত্রিবাস তাওয়াং।

তাওয়াং মন্যাস্টেরি।

সপ্তম দিন – এ দিনটাও থাকুন তাওয়াং-এ। দেখে নিন –

(১) তাওয়াং মন্যাস্টেরি – পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম, লাসার পরেই। রয়েছে মিউজিয়াম, বুদ্ধের ২০ ফুট উঁচু মূর্তি ইত্যাদি। ওপর থেকে তাওয়াং শহরের অভূতপূর্ব দৃশ্য।

(২) ক্রাফট্‌ সেন্টার – মন্যাস্টেরি থেকে উতরাই পথে।

(৩) তাওয়াং ওঅর মেমোরিয়াল – সিটি সেন্টার থেকে ১ কিমি, ১৯৬২-এর ভারত-চিন যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মৃতিতে তৈরি স্মারকস্তম্ভ।

(৪) উরগেলিং গোম্পা – ষষ্ঠ দলাই লামার জন্মস্থল।

(৫) আন্নি গুম্ফা – শহর থেকে ১২ কিমি।

অষ্টম দিন – সকালে বেরিয়ে পড়ুন। চলুন ভারত-চিন সীমান্তে বুম লা ও দুই দেশের নিয়ন্ত্রণরেখা। যাওয়ার পথে দেখে নিন –

(১) পেঙ্গা টেং সো লেক – তাওয়াং থেকে ১৬ কিমি।

(২) মাধুরী লেক – পেঙ্গা টেং সো লেক থেকে ২০ কিমি। আরও এক নাম সাঙ্গেস্তার লেক। মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ফিল্ম ‘কোয়লা’র শুটিং হওয়ার পর এই লেক মাধুরী লেক হিসাবে পরিচিত।

আরও ১৮ কিমি গেলে পৌঁছে যাবেন বুম লা (৪৬৩৩ মিটার বা ১৫২০০ ফুট)।

গোরসাম চোর্তেন।

এ বার বুম লা থেকে চলুন জেমিথাং, ৪৩ কিমি। এখানে দেখুন গোরিচেন শৃঙ্গরাজি এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধস্তূপ ১২ শতকের গোরসাম চোর্তেন।

ফিরে আসুন তাওয়াং-এ, দূরত্ব ৬৮ কিমি। এ দিনটা তাওয়াং-এ কাটান।   

নবম দিন – চলে আসুন দিরাং (৪৯০০ ফুট), দূরত্ব ১২৯ কিমি। দিরাং নদীর পাড়ে দিরাং শহর। রাত্রিবাস দিরাং।

দশম দিন – আজও থাকুন দিরাং-এ।

দু’ দিনে দেখে নিন – আপেল বাগিচা, অর্কিড রিসার্চ সেন্টার, ইয়াক রিসার্চ সেন্টার, উষ্ণ জলের কুণ্ড (৫ কিমি দূরে), ৫০০ বছরের পুরোনো কালচক্র গোম্পা, দিরাং জং, সাংটি ভ্যালি (৭ কিমি) ইত্যাদি।

একাদশ দিন – চলুন তেজপুর, দূরত্ব ১৯৬ কিমি। রাত্রিবাস।

দ্বাদশ দিন – ঘরপানে চলুন। তেজপুর থেকে সরাসরি বিমানে কলকাতা চলে আসতে পারেন। অথবা গুয়াহাটি এসে বিমান বা ট্রেন ধরতে পারেন। দেশের যে কোনো জায়গা যাওয়ার জন্য গুয়াহাটি থেকে ট্রেন বা বিমান পাবেন। তেজপুর থেকে খুব ভোরে বেরিয়ে চলে আসুন গুয়াহাটি, ১৭৫ কিমি। প্রতি দিন দুপুর ১২-২০ মিনিটে গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে পরের দিন ভোর ৫:১৫-য় হাওড়া পৌঁছোয় সরাইঘাট এক্সপ্রেস। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস প্রতিদিন রাত ১০:৫০-এ গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে শিয়ালদহ পৌঁছোয় পরের দিন সন্ধ্যা ৭:২৫-এ।  

সাংটি ভ্যালি।

কী ভাবে ঘুরবেন

(১) অরুণাচল ভ্রমণের জন্য গুয়াহাটি থেকে গাড়ি নেওয়া ভালো। এতে প্রতি দিন গাড়ি বাবদ খরচ হয়তো কিছু বেশি পড়বে, কিন্তু ভালো চালক পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই রাস্তায় ভালো চালক পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্তত একটা ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে, ড্রিঙ্ক করে যেন গাড়ি না চালায়।

(২) তাওয়াং-এর উচ্চতা ১০ হাজার ফুট। বুম লার উচ্চতা ১৫ হাজার ফুটেরও বেশি। তাই তাওয়াং ভ্রমণে চার দিন রাখা হয়েছে। প্রথম দিন বমডিলা থেকে গিয়ে বিশ্রাম। দ্বিতীয় দিন তাওয়াং ও তার আশপাশ, তৃতীয় দিন বুম লা, পি টি সো লেক, মাধুরী লেক ইত্যাদি ঘুরে নিন। শেষ দিনের জন্য জেমিথাং। ধীরেসুস্থে ঘুরুন।

(৩) কার রেন্টালের জন্য গুয়াহাটিতে যোগাযোগ করতে পারেন – আউম অ্যাসোসিয়েটস (মেল করুন care.aumassociates@gmail.com, ফোন ৮৮৭৬৫৭৭৭৯০), আসাম অন হুইলস (৯৪৩৫১৯২৫৭০, ৮১৩৫০০০২৮৩), হিউজ কমার্শিয়াল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (মেল করুন info@hugecarrentals.com, ফোন ৯৪৩৫১০৮৪৮২), আইগুয়াহাটি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (মেল করুন info@iguwahati.com, ফোন ৯৪৩৫০১৬৮৩৩, ৯২০৭১০২২১৭), লেটস সি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস (যোগাযোগ ০৯৪৩৫৩৮৬৩২৮)।

বমডিলা।

কোথায় থাকবেন

নামেরিতে থাকুন নামেরি ইকো ক্যাম্পে। বুকিং-এর জন্য দেখুন ওয়েবসাইট www.nameri.co.in । বমডিলায় থাকতে পারেন বমডিলা মন্যাস্টেরি গেস্টহাউসে। যোগাযোগ ০৩৭৮২-২২৩২৩২।

গুয়াহাটি স্টেশনের কাছেই রয়েছে অসম পর্যটক উন্নয়ন নিগমের প্রশান্তি টুরিস্ট লজ। যোগাযোগ ০৩৬১-২৫৪৪৪৭৫। তেজপুরে থাকার জন্যও রয়েছে অসম পর্যটনের প্রশান্তি টুরিস্ট লজ, যোগাযোগ ০৩৭১২-২২১০১৬। অসম পর্যটনের কলকাতা অফিসে যোগাযোগ ০৩৩-২২২৯৫০৯৪।

অরুণাচলে বিভিন্ন জায়গায় থাকার জন্য হোটেল, হোমস্টের জন্য দেখুন www.arunachaltourism.com। গুগুল সার্চ করলে আরও হোটেলের সন্ধান পাওয়া যাবে।

নামেরি ইকো ক্যাম্প।

মনে রাখবেন

(১) নামেরিতে ঘোরার জন্য সশস্ত্র গার্ড, জঙ্গল সাফারি, নদীতে নৌকাবিহার বা র‍্যাফটিং-এর ব্যবস্থা রিসর্ট থেকেই করে নেওয়া যাবে।

(২) অরুণাচল ভ্রমণের জন্য ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) সংগ্রহ করতে হবে। কলকাতা, দিল্লি, গুয়াহাটি, শিলং, তেজপুর, ডিব্রুগড়, নর্থ লখিমপুর, যোরহাটে অরুণাচল সরকারের ডেপুটি রেসিডেন্ট কমিশনারের অফিস থেকে আইএলপি সংগ্রহ করতে হয়। কলকাতা অফিসের ঠিকানা The Deputy Resident Commissioner, Govt. of Arunachal Pradesh, CE-109, Sector-1, Salt Lake City, Kolkata. 033-23341243/ 23589865 । অনলাইনে আবেদন করতে পারেন www.arunachaltourism.com ।

(৩) তাওয়াং থেকে বুম লা যাওয়ার জন্য সেনা বিভাগের কাছ থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। স্থানীয় গাড়িচালকরা এই অনুমতিপত্র সংগ্রহে সাহায্য করেন।

(৪) যথেষ্ট শীতবস্ত্র ও উচ্চতাজনিত অসুস্থতা ঠেকাতে ওষুধপত্র নেবেন।

(৫) ট্রেনের সময়সূচির জন্য দেখে নিন erail.in। 

আরও পড়তে পারেন

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ১: গুয়াহাটি-হাফলং-শিলচর

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ২: গুয়াহাটি-পোবিতোরা-কাজিরাঙা-মাজুলি-শিবসাগর

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ৩: গুয়াহাটি-শিলং-চেরাপুঞ্জি-মওলিননং-ডাওকি

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ৪: শিলং-চেরাপুঞ্জি-মওলিননং-গুয়াহাটি-ভালুকপং-বমডিলা-তাওয়াং-দিরাং

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *