এ বার অক্টোবরের একেবারে শুরুতেই দুর্গাপুজো। তাই পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের আসনের আগাম সংরক্ষণ শুরু হয়ে যাবে জুনের একেবারে গোড়ায়। সুতরাং আর দেরি নয়। এখনই করে ফেলুন পুজোর ভ্রমণ পরিকল্পনা। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ভ্রমণ অনলাইন এ বারও সাজিয়ে দিচ্ছে এক গুচ্ছ ভ্রমণ পরিকল্পনা। শুরু করেছে উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে।
সফরসূচি
প্রথম দিন – ঘর থেকে রওনা (দেখে নিন ভ্রমণছক ১) ।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন – গুয়াহাটিতে ঘোরাঘুরি (দেখে নিন ভ্রমণছক ১)।
চতুর্থ দিন – একই দিনে ঘুরে নিন হাজো ও মদন কামদেব। একটা গাড়ি ভাড়া করে প্রথমে ৩৫ কিমি দূরে হাজো চলুন। হাজো ঘুরে চলুন ৩৩ কিমি দূরে মদন কামদেব। সেখান থেকে গুয়াহাটি ফিরুন, ৪০ কিমি।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/05/Puja-NE-Assam-Kamakhya-Mandir-11.05-1-1024x576.jpg)
হাজো হিন্দু, বৌদ্ধ এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে খুব পবিত্র তীর্থস্থান। দেখুন ‘মণিকূট’ পাহাড়ের মাথায় হয়গ্রীব মাধবমন্দির, মাধব দেউল, পোয়া মক্কা, ‘মদনাচল’ পাহাড়ের মাথায় কেদারেশ্বর মন্দির।
মদন কামদেব কামরূপের খাজুরাহো – ১০ থেকে ১২ শতকে পাল রাজাদের আমলে তৈরি ২৪টিরও বেশি মন্দিরের কমপ্লেক্স।
পঞ্চম দিন – চলুন পোবিতোরা, দূরত্ব ৫০ কিমি। ভোরবেলায় গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে যাবেন পোবিতোরা। পোবিতোরায় গণ্ডার দেখার সুযোগ অনেক বেশি। এবং পাখিদেরও স্বর্গরাজ্য। এখানে হাতি সাফারি হয়, জিপ সাফারি হয়। রাতে থাকতে পারেন এখানে বা গুয়াহাটি শহরে ফিরেও আসতে পারেন।
ষষ্ঠ দিন – গুয়াহাটি/পোবিতোরা থেকে চলুন কাজিরাঙা। পোবিতোরা-কাজিরাঙা ১৭৯ কিমি এবং গুয়াহাটি-কাজিরাঙা ১৬৭ কিমি। গুয়াহাটি থেকে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন কাজিরাঙা। যদি পোবিতোরায় রাত কাটান তা হলে সকালের হাতি সাফারি করে রওনা হয়ে যান কাজিরাঙার পথে গাড়িতে। রাত্রিবাস কাজিরাঙা।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/05/Puja-NE-Assam-2-Pobitora-13.05.jpg)
সপ্তম দিন – রাত্রিবাস কাজিরাঙা।
কাজিরাঙাকে ভালো ভাবে দেখতে হলে, বুঝতে হলে দু’টো রাত কাটানো দরকার। একাধিক সাফারি করা দরকার। গন্ডার, হরিণ, বুনো মোষ, বন্য শুয়োর দেখতে তো পাবেনই। কপাল ভালো থাকলে বাঘের দেখাও মিলতে পারে।
অষ্টম দিন – সক্কালেই বেরিয়ে পড়ুন মাজুলির পথে। বাসে বা গাড়িতে যেতে পারেন জোরহাট (দূরত্ব ১৩৬ কিমি)। সেখান থেকে ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে মাজুলি। কাজিরাঙা থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করেও আসতে পারেন, দূরত্ব ১৭৫ কিমি। ঘণ্টা পাঁচেক সময় লাগবে। ফেরিতে গাড়ি পার করে দেয়।
মাজুলি বিশ্বের বৃহত্তম নদী-দ্বীপ। নানা মঠ, সত্র ও আখাড়া আছে বৈষ্ণবতীর্থ মাজুলিতে। মাজুলির মূল কেন্দ্র কমলাবাড়ি।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/05/Puja-NE-Assam-2-majuli-13.05-1024x672.jpg)
নবম দিন – ভোরেই গাড়িতে চলুন শিবসাগর, দূরত্ব ৮১ কিমি। রাত্রিবাস শিবসাগর। এখানে দেখে নিন –
(১) শিবসাগর জলাশয় ও মন্দির – ১২৯ একর এলাকা জুড়ে জলাশয়, দক্ষিণ পাড়ে প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন শিবডোল অর্থাৎ শিবমন্দির। সম্ভবত ভারতের শিবমন্দিরগুলির মধ্যে উচ্চতম (৩২ মি)। এরই ডাইনে-বাঁয়ে বিষ্ণুডোল ও দেবীডোল অর্থাৎ দুর্গামন্দির।
(২) রংঘর – শহর থেকে ৬ কিমি দূরে দিঘৌ নদী পেরিয়ে ডিম্বাকার দ্বিতল রংঘর ।
(৩) কারেঙ্গঘর বা তলাতল ঘর – রঙঘরের অদূরে ১৬৯৬ থেকে ১৭১৪-এর নির্মিত কারেঙ্গঘর বা তলাতল ঘর। এর ৪টি তলা ওপরে এবং ৩টি তলা মাটির নীচে।
(৪) জয়সাগর – শিবসাগর থেকে ৫ কিমি দূরে রঙ্গপুরে ৩১৮ একর আয়তনের জল টলটল জয়সাগর।
(৫) গৌরীসাগর – জয়সাগর থেকে ১৬ কিমি দূরে গৌরীসাগর। জলাশয়ের পাড়ে দেবী দুর্গার মন্দির।
(৬) গড়গাঁওয়ের কারেঙ্গঘর – শিবসাগর থেকে ১৩ কিমি পুবে ১৬ শতকের কারেঙ্গঘর তথা পিরামিডধর্মী প্রাসাদ।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/05/Puja-NE-Assam-2-Sibsagar-Rangghar-13.05-1024x577.jpg)
দশম দিন – ঘরের পানে ফিরুন। ট্রেনে ফিরতে হলে গুয়াহাটিতে বদল করতে হবে। শিবসাগর থেকে গুয়াহাটি আসার দৈনিক ট্রেন একটিই। নাগাল্যান্ড এক্সপ্রেস বিকেল ৩.১৮ মিনিটে ছেড়ে গুয়াহাটি পৌঁছোয় পরের দিন ভোর ৩.৪০ মিনিটে। ৫৭ কিমি দূরে জোরহাট চলে আসতে পারেন। জোরহাট থেকে গুয়াহাটি আসার গোটাচারেক ট্রেন আছে। জোরহাট থেকে বিমানেও ফিরতে পারেন। ট্রেনের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in।
বিকল্প সফরসূচি
কাজিরাঙা ১ মে থেকে ৩১ অক্টোবর বন্ধ থাকে। যদি অক্টোবরে ভ্রমণে যান তা হলে আপনার ভ্রমণসূচি থেকে কাজিরাঙা বাদ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ষষ্ঠ দিন পোবিতোরা থেকে গুয়াহাটি ফিরে চলুন শিবসাগর। গুয়াহাটি থেকে রাতের নাগাল্যান্ড এক্সপ্রেস ধরুন। ওই ট্রেন গুয়াহাটি ছাড়ে রাত্রি ৮.৪৫-এ। শিবসাগর পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৮.৫৮-য়। সপ্তম দিন শিবসাগরে কাটিয়ে সেখানকার দ্রষ্টব্য দেখে অষ্টম দিন গাড়িতে চলুন মাজুলি। দূরত্ব ৮১ কিমি। পরের দিন মাজুলি থেকে জোরহাট ফিরে ঘরপানে চলুন।
কোথায় থাকবেন
গুয়াহাটি স্টেশনের কাছেই রয়েছে অসম পর্যটক উন্নয়ন নিগমের প্রশান্তি টুরিস্ট লজ। বুকিংয়ের জন্য অসম পর্যটনে যোগাযোগ ০৩৬১-২৫৪৭১০২/২৫৪২৭৪৮/২৫৪৪৪৭৫। কলকাতা অফিসে যোগাযোগ ০৩৩-২২২৯৫০৯৪। গুয়াহাটির প্রশান্তি ট্যুরিস্ট লজের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ: ০৩৬১-২৫৪৪৪৭৫।
পোবিতোরায় থাকার জন্য রয়েছে আর্য ইকো রিসর্ট, মাইবং ইকো রিসর্ট, পোবিতোরা ভিলেজ ইকো ক্যাম্প ইত্যাদি, বুকিং-এর জন্য দেখুন: pobitora.com। রয়েছে অসম পর্যটনের প্রশান্তি ট্যুরিস্ট লজ, যোগাযোগ ৯৮৫৪০৯২১৯২।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/05/Puja-NE-Assam-2-Pobitora-Prashanti-13.05-1024x627.jpg)
কাজিরাঙার প্রবেশ ফটকের ঠিক বাইরে মূল সড়কের ধারে প্রচুর হোটেল, রিসর্ট, হোমস্টে আছে। থাকতে পারেন অসম পর্যটনের বনানী লজ (যোগাযোগ: ০৩৭৭৬-২৬২৪২৩), অরণ্য ট্যুরিস্ট লজ (যোগাযোগ:০৩৭৭৬-২৬২৪), রিশেপসন সেন্টার (যোগাযোগ: ৭০৮৬৭২২৩৫৬, ৮১৩৪০৩৫৪৫৬, ৮৮২২০২২০৮৮, ৯৬১৩২৬৮৮৬১) ইত্যাদি জায়গায়। এ ছাড়াও অসম পর্যটনের আরও অনেক জায়গা আছে যেখানে থাকা যায়। বিশদ জানার জন্য দেখুন https://tourismcorporation.assam.gov.in/।
মাজুলি থাকার অনেক জায়গা আছে। বিভিন্ন মানের, বিভিন্ন দামের। আগাম সংরক্ষণ না করেও চলে যাওয়া যায়। তবে নিশ্চিন্ত থাকার জন্য আগাম সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এখানে কমলাবাড়িতে আছে অসম পর্যটনের প্রশান্তি ইকো ট্যুরিজম প্রজেক্ট। যোগাযোগ: ৯৪৩৫৭৩৪১৩৮।
শিবসাগরে থাকার জন্য রয়েছে অসম পর্যটনের ট্যুরিস্ট লজ (যোগাযোগ: ০৩৭৭২-২২২৩৯৪), রুদ্রসাগরে রয়েছে রুদ্রসিং এথনিক ভিলেজ।
গুয়াহাটি, পোবিতোরা, কাজিরাঙা, মাজুলি, শিবসাগর – সব জায়গাতেই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় অনেক থাকার জায়গা আছে। গুগুল সার্চ করলেই মিলবে তার সন্ধান।
কী ভাবে ঘুরবেন
একটা গাড়ি বা অটোয় ঘুরে নিতে পারেন গুয়াহাটি শহর। একটু দূরের জায়গাগুলো যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিন। আর মাজুলি ও শিবসাগর ঘুরে নিন গাড়ি বা অটোয়।
মনে রাখবেন
(১) পোবিতোরায় জিপ সাফারি হয় সকাল ৭টায় এবং বিকেল ৩টেয়। হাতি সাফারি হয় সকাল সাড়ে ৬টায় ও দুপুর ২.৩০-এ। সময়ের বদল হতে পারে। ওখানে পৌঁছে জেনে নেবেন। পোবিতোরায় একটা রাত কাটাতে পারলে ভালো হয়।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/05/Puja-NE-assam-2-Kaziranga-13.05-1024x655.jpg)
(২) কাজিরাঙা ১ মে থেকে ৩১ অক্টোবর বন্ধ থাকে। জিপ সাফারির সময় সকাল ৮টা থেকে ১০টা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টে। হাতি সাফারির সময় ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা এবং সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা। সময়ের বদল হতে পারে। ওখানে পৌঁছে জেনে নেবেন।
(৩) গুয়াহাটিতে কামাখ্যা মন্দিরের খোলা-বন্ধের সময় আগাম জেনে নিলে বেড়ানোর প্ল্যান করতে সুবিধা হবে।
(৪) উমানন্দ মন্দির সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত খোলা।
(৫) হাতে কম দিন থাকলে ভ্রমণ সূচি থেকে হাজো ও মদন কামদেব বাদ দিতে পারেন। (৬) ট্রেনের বিস্তারিত সময়সূচি জেনে নেওয়ার জন্য দেখে নিন erail.in।
আরও পড়ুন