পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ৩: গুয়াহাটি-শিলং-চেরাপুঞ্জি-মওলিননং-ডাওকি

Kynrem Falls

পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের আসনের আগাম সংরক্ষণ শুরু হয়ে যাবে জুনের একেবারে গোড়ায়। সুতরাং আর দেরি নয়। এখনই করে ফেলুন পুজোর ভ্রমণ পরিকল্পনা। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ভ্রমণ অনলাইন এ বারও সাজিয়ে দিচ্ছে এক গুচ্ছ ভ্রমণ পরিকল্পনা। শুরু করেছে উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে।

সফরসূচি

প্রথম দিন – ঘর থেকে রওনা। (দেখে নিন ভ্রমণছক ১)

দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন – গুয়াহাটিতে ঘোরাঘুরি (দেখে নিন ভ্রমণছক ১)।

চতুর্থ দিন – সকালেই একটা গাড়ি নিয়ে যাত্রা করুন শিলং-এর উদ্দেশে। দূরত্ব ৯৯ কিমি। গুয়াহাটি থেকে নিয়মিত বাসও আছে। পথে পড়বে উমিয়াম লেক তথা বড়াপানি। রাত্রিবাস শিলং।

ওয়ার্ডস লেক, শিলং।

পঞ্চম দিন — আজও থাকুন শিলং-এ। দেখে নিন

(১) ওয়ার্ডস লেক ও বোটানিল্যাল গার্ডেন – শহরের প্রাণকেন্দ্রে।

(২) শিলং গলফ্‌ কোর্স – শহরের নীচের ধাপে পাইনবনে ঘেরা শিলঙের গর্ব। পাশেই রেস কোর্স ও পোলো গ্রাউন্ড। পোলো গ্রাউন্ডের বিপরীতে ট্যুরিস্ট লজের নিচুর ঢালে কালী মন্দির। কাছেই বুদ্ধ মন্দির।

(৩) শিলং পিক – ১০ কিমি দূরে শিলং পিক (৬৪৪৫ ফুট)।

(৪) এলিফ্যান্ট ফলস্‌ – শিলং-চেরাপুঞ্জি পথে ১২ কিমি গিয়ে সামান্য ডাইনে।

(৫) ডন বসকো ক্যাথিড্রাল – তৈলচিত্রে যিশুর জীবনের নানা আখ্যান বর্ণিত। রঙিন কাচে আলোর বিচ্ছুরণ দেখার মতো।

(৬) রামকৃষ্ণ মিশন – ক্যাথিড্রালের কাছেই।

(৭) লেডি হায়দারি পার্ক, মিনি জু ও ফরেস্ট মিউজিয়াম – একই চত্বরে। একই টিকিটে দেখা যায়।

(৮) ক্রিনোলাইন ফলস্‌ – শহর থেকে দেড় কিমি দূরে। লাগোয়া বনসাই ও অর্কিড আকর্ষণ বাড়িয়েছে।

(৯) বিশপ ও বিডন ফলস – ৫ কিমি দূরে।

(১০) রিবং-এ রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি-বিজড়িত ‘মালঞ্চ’ বাড়ি।

(১১) ওয়াংখার বাটারফ্লাই মিউজিয়াম।

এলিফ্যান্ট ফলস্‌, শিলং।

ষষ্ঠ দিন – খাসি পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে শিলং থেকে চলুন চেরাপুঞ্জি। দূরত্ব ৫৪ কিমি। এ দিন থাকুন চেরাপুঞ্জিতে। চেরাপুঞ্জিতে দেখুন –

(১) রামকৃষ্ণ মিশন – চেরাপুঞ্জির একটু আগে।

(২) মওসমাই ফলস্‌ – সার্কিট হাউস থেকে ২ কিমি দূরে বিশ্বের চতুর্থ উচ্চতম জলপ্রপাত।  

(৩) নোহ-কালিকাই ফলস্‌- মওসমাইয়ের কাছে কিংবদন্তিতে ঘেরা জলপ্রপাত।

(৪) কিনরেম ফলস্‌ – ধাপে ধাপে তিন ধাপে নামা জলপ্রপাত, সেলার পথে ১০ কিমি, মেঘালয়ের সর্বোচ্চ।

(৫) ডবল ডেকার রুট ব্রিজ – চেরাপুঞ্জি থেকে ২১ কিমি দূরে নংরিয়াতে। মেঘালয়ের লিভিং রুট ব্রিজগুলি এখন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত।

এ ছাড়াও দেখে নিতে পারেন ইকো পার্ক, সেভেন সিস্টার ফলস্‌, খাংখারাং পার্ক, নংগিথিয়াং ফলস্‌ ইত্যাদি।

ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ, নংরিয়াত।

সপ্তম দিন – চলুন মওলিননং। এশিয়ার সব থেকে পরিচ্ছন্ন গ্রাম। চেরাপুঞ্জি থেকে দূরত্ব ৮০ কিমি। গ্রামের মাঝে সুন্দর চার্চ, পাশ দিয়ে বয়ে গেছে থাইলাং নদী। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ থাইলাং-এর ওপর লিভিং রুট ব্রিজ। আরও দু’টি দ্রষ্টব্য ব্যালান্সিং রক এবং স্কাই ভিউ পয়েন্ট। রাত্রিবাস মওলিননং।

অষ্টম দিন – মওলিননং থেকে চলুন বাংলাদেশ সীমান্তে প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য ডাওকি। দুরত্ব ৩০ কিমি। ডাওকি দেখে ১০ কিমি দূরে সিনডাই গুহা দেখে নিতে পারেন। এ বার ফিরে চলুন শিলং হয়ে গুয়াহাটি। দূরত্ব ১৮০ কিমি। রাত্রিবাস গুয়াহাটি।

নবম দিন – ঘরপানে চলুন। প্রতিদিন দুপুর ১২-২০ মিনিটে গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে পরের দিন ভোর ৫:১৫-য় হাওড়া পৌঁছোয় সরাইঘাট এক্সপ্রেস। কামরূপ এক্সপ্রেস সোমবার ও শুক্রবার বাদে বাকি দিনগুলোয় সকাল ৭.৪০-এ গুয়াহাটি থেকে ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন ভোর সকাল ৬টায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস প্রতিদিন রাত ১০:৫০-এ গুয়াহাটি  থেকে ছেড়ে শিয়ালদহ পৌঁছোয় পরের দিন সন্ধ্যা ৭:২৫-এ। দেশের অন্যান্য জায়গায় যাওয়ার জন্যও ট্রেন পাবেন গুয়াহাটি থেকে। এ ছাড়া দেশের সব বড়ো শহরের সঙ্গে গুয়াহাটির বিমান যোগাযোগ তো আছেই।

মওলিননং গ্রাম, এশিয়ার সব চেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম।

কী ভাবে ঘুরবেন

(১) গুয়াহাটিতে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে ঘুরে নেওয়াই সব থেকে ভালো। গুয়াহাটি থেকে শিলং বাসে আসতে পারেন। তার পর লোকাল ট্যাক্সিতে শিলং ঘুরে নিয়ে ওই গাড়ি নিয়েই চেরাপুঞ্জি-মওলিননং ঘুরে এসে শিলং ছেড়ে দিন। শিলং থেকে বাসে ফিরুন গুয়াহাটি। গাড়ি ভাড়া করেও আসতে পারেন।

(২) শিলং-এ পুলিশবাজার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গাড়ি ভাড়ার তালিকা দেওয়া আছে।

কোথায় থাকবেন

গুয়াহাটিতে থাকা নিয়ে ভ্রমণ-ছক ১ দেখুন।

শিলং শহর জুড়ে হোটেলের ছড়াছড়ি। মেঘালয় পর্যটনের হোটেল পাইনউড (০৩৬৪-২২২৩১১৬), হোটেল অর্কিড (০৩৬৪-২২২৪৯৩৩)।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, ডাওকি।

চেরাপুঞ্জিতে থাকার ভালো জায়গা চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসর্ট (০৯৪৩৬১১৫৯২৫) আর মওলিননং-এ থাকুন মওলিননং গেস্টহাউজ (০৯৮৩০২০৩৯৭৩), ইলা জঙ্গ গেস্টহাউজ (০৯৬১৫০৪৩০২৭) বা স্কাই ভিউ গেস্টহাউজে (০৮৭৩১০৯৫৮০৭, ০৮৫৭৫৬১৫৮৭৭)।

গুগুল সার্চ করলে আরও হোটেলের সন্ধান পাবেন makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidify ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।

মনে রাখবেন

(১) ১) চেরাপুঞ্জিতে ডবল ডেকার রুট ব্রিজ যেতে হলে নামতে হবে হাজার তিনেক সিঁড়ি ভেঙে। সুতরাং ওঠার সময়ে ওই সিঁড়ি ভেঙে উঠে আসতে হবে। হাঁটুর জোর থাকলেই এ পথে যাবেন, নচেৎ নয়।

(২) শিলং-এ জেল রোডে অবস্থিত ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার (০৩৬৪-২২২৬২২০) মেঘালয় ঘোরার তথ্য পেতে পারেন।

(৩) ওয়াংখার বাটারফ্লাই মিউজিয়াম শনি ও রবিবার বন্ধ থাকে।

গুয়াহাটি থেকে শিলং-এর সড়ক।

(৪) গুয়াহাটি ফিরে হাফলং-শিলচর চলা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভ্রমণসূচি আরও দিন তিনেক বাড়বে।

(৫) হাতে আরও সময় থাকলে গুয়াহাটিতে থেকে ভ্রমণ- ছক ১-এ বর্ণিত হাজো ও মদন কামদেব বেড়িয়ে নিতে পারেন।

(৬) ট্রেনের সময়সূচির জন্য দেখে নিন erail.in ।

আরও পড়ুন

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ১: গুয়াহাটি-হাফলং-শিলচর

পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ২: গুয়াহাটি-পোবিতোরা-কাজিরাঙা-মাজুলি-শিবসাগর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *