যমুনার পাড়ে শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি ও কর্মভূমি মথুরা-বৃন্দাবন কার্যত যমজ শহর। দু’টির দূরত্ব ১৪ কিমি। ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় তীর্থস্থান। সারা বছরই তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। আর দোলের সময় তো কথাই নেই। তখন এই মথুরা-বৃন্দাবন হয়ে যায় মিনি ভারত। তিন-চারটে দিন অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারেন এখানে।
মথুরায় কী দেখবেন
শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির – এখানেই রয়েছে কেশব দেব মন্দির, গর্ভগৃহ মন্দির, ভাগবত ভবন ও রঙ্গভূমি যেখানে কংসের সঙ্গে কৃষ্ণের যুদ্ধ হয়েছিল।
পোতরা কুণ্ড – শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দিরের কাছেই, এখানে শিশু কৃষ্ণের পোশাক কাচা হত।
জামা মসজিদ – শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির থেকে প্রায় ১ কিমি। সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে তৈরি।
বিশ্রাম ঘাট – যমুনার পাড়ে মথুরার মূল ঘাট। এখানে যমুনায় নৌকা বিহার করে অনান্য ঘাট দেখে নেওয়া যায়।
দ্বারকাধীশ মন্দির – বিশ্রাম ঘাটের কাছেই।
কংস কেল্লা – দ্বারকাধীশ মন্দিরের কাছে। যমুনার পাড়ে।
শ্রীভূতেশ্বর মহাদেব মন্দির – শ্রী কৃষ্ণের মহারাসে যোগ দেওয়ার জন্য মহাদেব এখানে গোপীর সাজে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ ও গোপীরা এখানে মহাদেবের আরাধনা করেন।
চামুণ্ডা দেবীর মন্দির – অন্যতম শক্তিপীঠ।
গীতা মন্দির – মথুরা-বৃন্দাবনের রাস্তায়। এখানে রয়েছে গীতা স্তম্ভ, যেখানে ভাগবত গীতা খোদিত আছে।
মথুরা মিউজিয়াম – কুষান ও গুপ্ত যুগের অনেক নিদর্শন এই মিউজিয়ামে রয়েছে।
বৃন্দাবনে কী দেখবেন
শ্রীরাধা মদনমোহন মন্দির – বৃন্দাবনের অন্যতম প্রাচীন মন্দির। শ্রীচৈতন্য, সনাতন গোস্বামীর স্মৃতিবিজড়িত।
কালীয় ঘাট – মদনমোহন মন্দির থেকে হাঁটাপথে তিন মিনিট। এখানেই কালীয় নাগকে দমন করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।
শ্রীরাধারমণ মন্দির – ১৫৪২ সালে গোপাল ভট্ট স্বামীর নির্মিত।
বাঁকেবিহারী মন্দির – নিধিবনে বাঁকেবিহারীর মূর্তি খুঁজে পাওয়ার পর ১৮৬২ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রেম মন্দির – বৃন্দাবনের রমন রেতিতে, অপেক্ষাকৃত নবীন মন্দির।
শ্রীকৃষ্ণ-বলরাম মন্দির – বৃন্দাবনের রমন রেতিতে ইস্কনের মন্দির।
বৃন্দাবন চন্দ্রোদয় মন্দির – ইস্কনের একটি গোষ্ঠীর মন্দির।
রাধাবল্লভ মন্দির – ১৫৮৫ সালে লাল বেলেপাথরে নির্মিত বৃন্দাবনের অন্যতম প্রাচীন মন্দির।
রাধা দামোদর মন্দির – গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের মন্দির, ১৫৪২ সালে নির্মিত।
নিধিবন – রাসলীলা করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ প্রতি রাতে এখানে আসতেন।
রঙ্গজি মন্দির – বৃন্দাবন শহরের কেন্দ্রস্থলে।
কাত্যায়নী পীঠ – অন্যতম শক্তিপীঠ।
কেশী ঘাট – যমুনার পাড়ে বৃন্দাবনের প্রধান ঘাট। এখানেই কংসের পাঠানো অশ্ব-দৈত্যকে হত্যা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।
মথুরা-বৃন্দাবনের আশেপাশে
গোকুল – মথুরা থেকে ৮ কিমি, শ্রীকৃষ্ণের ছোটোবেলা প্রায়ই কাটত এখানে। এখানে আছে নন্দ ভবন।
গোবর্ধন পাহাড় – ২১ কিমি মথুরা থেকে, ১৯ কিমি বৃন্দাবন থেকে, পুরো রাস্তা গাড়ি যায়, পাশ দিয়ে ভালো হাঁটার রাস্তা।
কুসুম সরোবর – গোবর্ধন পাহাড় থেকে ২ কিমি, এখানেই রাধা ও কৃষ্ণের দেখা হত।
রাধা কুণ্ড – কুসুম সরোবর থেকে ২ কিমি।
কোকিলাবন – মথুরা থেকে ৫১ কিমি, নানা গাছপালার মাঝে শনি মন্দির।
বরসানা – মথুরা থেকে ৫২ কিমি, বৃন্দাবন থেকে ৪২ কিমি, রাধার জন্মস্থান। রয়েছে রাধারানি মন্দির। কথায় বলে বৃন্দাবনে বাঁকেবিহারী মন্দির দেখলে বরসানায় রাধারানি মন্দির দেখতে হয়। ‘লাঠ মারো হোলি’র জন্য বিখ্যাত।
নন্দগাঁও – বরসানা থেকে ৮ কিমি, মথুরা থেকে ৫৪ কিমি এবং বৃন্দাবন থেকে ৪৮ কিমি দূরে অবস্থিত নন্দ-যশোদার বাসভূমি। এখানেই প্রতিপালিত হয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। টিলার উপরে শ্রীনন্দজির মন্দির।
কী ভাবে যাবেন
ভারতের প্রায় সব জায়গার সঙ্গে ট্রেনপথে মথুরার যোগ রয়েছে। ট্রেনের সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in। বিমানে যেতে হলে আগরা যেতে হবে। আগরা থেকে মথুরা ট্রেনে, বাসে বা গাড়িতে যেতে পারেন। দূরত্ব ৫৭ কিমি।
কোথায় থাকবেন
মথুরা–বৃন্দাবনে থাকার অনেক জায়গা রয়েছে। গুগুল সার্চ করলেই সন্ধান পাওয়া যাবে।
আরও পড়তে পারেন
পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ৩: গুয়াহাটি-শিলং-চেরাপুঞ্জি-মওলিননং-ডাওকি
পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ১: গুয়াহাটি-হাফলং-শিলচর
পুজোয় চলুন/ উত্তরপূর্ব ভ্রমণছক ২: গুয়াহাটি-পোবিতোরা-কাজিরাঙা-মাজুলি-শিবসাগর