ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় যেন হরিদ্বারে চলে এসেছি। এ তো হর-কি-পৌড়ির ঘাট। গঙ্গার ঘাটটা এমনই। আসলে এ হল গঙ্গাপারের গড়মুক্তেশ্বর, দিল্লি থেকে ১০৩ কিমি। প্রাচীন কালে পরিচিত ছিল শিব বল্লভপুর নামে। কার্তিক পূর্ণিমায় বড়ো মেলা বসে এই গড়মুক্তেশ্বরে। নাম গঙ্গা স্নান মেলা।
উত্তরপ্রদেশের হাপুর জেলায় অবস্থিত গড়মুক্তেশ্বরের সঙ্গে অনেক পুরাণকথা জড়িয়ে। ভাগবত পুরাণ ও মহাভারতে এই শহরের উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারতের কালে এই গড়মুক্তেশ্বর হস্তিনাপুরের অন্তর্গত ছিল। কথিত আছে, স্বর্গের দেবী গঙ্গা মানবীরূপে মহাভারতের রাজা শান্তনুকে এখানেই দর্শন দেন। সেই সময়ে বাণিজ্যেরও বড়ো কেন্দ্র ছিল এই গড়মুক্তেশ্বর। আবার আরও একটি কাহিনি থেকে জানা যায়, রামের অন্যতম পূর্বপুরুষ রাজা শিবি গঙ্গাপারে প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য শেষ জীবনটা এখানেই কাটিয়েছিলেন।
উপভোগ করুন
গঙ্গার ঘাটে বসে থাকুন, ভালো লাগবে। হরিদ্বার বা বারাণসীর মতো অত ভিড় নেই। আর গঙ্গাও এখানে স্বমহিমায় প্রবাহিতা।
ঘোরাঘুরি
(১) গঙ্গা মন্দির – ১০০ সিঁড়ি যুক্ত প্রাচীন গঙ্গা মন্দির। ৮৫টি সিঁড়ি এখনও অক্ষত। মন্দিরে গঙ্গা ছাড়াও পাথরের ব্রহ্মামূর্তি রয়েছে।
(২) মুক্তেশ্বর মহাদেব মন্দির – মুক্তেশ্বর মহাদেবের নামেই শহরের নাম গড়মুক্তেশ্বর। কথিত আছে, পরশুরাম এই মন্দিরের লিঙ্গ তৈরি করেছিলেন।
(৩) মীরাবাঈ কি রেতি – মুক্তেশ্বর মহাদেব মন্দিরের বিপরীতে এক খণ্ড বালুময় ভূখণ্ড। কথিত আছে, মীরাবাঈ দীর্ঘ দিন এখানে থেকে শ্রীকৃষ্ণের প্রার্থনা করেছিলেন।
(৪) নহুষ কূপ – রাজা নহুষের তৈরি নহুষ কূপ। এখানে রাজা নহুষ যজ্ঞ করেছিলেন। এই কূপের জল আসে গঙ্গা থেকে।
(৫) ব্রিজ ঘাট – আসলে গড়মুক্তেশ্বর হল যমজ শহর, এর সহোদর হল ব্রিজ ঘাট। প্রায় শত খানেক মন্দির আছে এই ব্রিজ ঘাটে – বেদান্ত মন্দির, হনুমান মন্দির, অমৃত পরিসর ইত্যাদি। বেদান্ত মন্দিরে রয়েছে কল্পবৃক্ষ।
(৬) সতী স্তম্ভ – যেখানে হিন্দু বিধবারা সতী হতেন সেখানে তাঁদের স্মারক হিসাবে রয়েছে ৮০টি সতী স্তম্ভ।
(৭) প্রাচীন মসজিদ – শহরের আরও এক আকর্ষণ এক অতি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদগাত্রে যে লিপি খোদাই করা আছে, তা থেকে জানা যায় এটি ৬৮২ হিজরি অব্দে তথা ১২৮৩ খ্রিস্টাব্দে গিয়াসুদ্দীন বলবনের তৈরি।
(৬) সিদ্ধনাথ বাবা শিব মন্দির – গড়মুক্তেশ্বর থেকে ১০ কিমি দূরে ঝাড়িনা গ্রামে মহাভারতের আমলের শিব মন্দির।
কী ভাবে যাবেন
গড়মুক্তেশ্বর দিল্লি থেকে সপ্তাহান্তিক ভ্রমণের জায়গা। দিল্লি থেকে যে রাস্তা কুমায়ুনের অন্দরে ঢুকে গিয়েছে সেই ৯ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরেই গড়মুক্তেশ্বর। দূরত্ব ৯৫ কিমি। দিল্লি থেকে বাসে আসা যায়, গাড়ি ভাড়া করে তো আসাই যায়।
ভারতের যে কোনো প্রান্ত থেকে বিমানে বা ট্রেনে দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে ট্রেনেও গড়মুক্তেশ্বর আসা যায়। দিল্লি, নিউ দিল্লি এবং আনন্দ বিহার টার্মিনাল থেকে সারা দিনই ট্রেন মেলে। ট্রেন বিশেষে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। ট্রেন সম্পর্কে বিশদ তথ্যের জন্য দেখে নিন erail.in।
আরও পড়ুন: আনলকে চলুন: ডুয়ার্সের টিলাবাড়ি
কোথায় থাকবেন
গড়মুক্তেশ্বর স্টেশনের কাছে, গঙ্গাঘাটের কাছে এবং শহর থেকে ২০-৩০ কিমির মধ্যে বহু বেসরকারি হোটেল ও রিসর্ট আছে। ২০ কিমি দূরে গজরৌলায় দিল্লিগামী জাতীয় সড়কের ওপরেও ভালো হোটেল আছে। হোটেল রয়েছে রামনগরগামী জাতীয় সড়কের ওপরেও ১০ কিমির মধ্যে। নেট সার্চ করলে এ সব হোটেলের সন্ধান পেয়ে যাবেন।