ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: ২২৩০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হাফলঙ অসমের একমাত্র শৈলশহর। ডিমা হাসাও জেলার সদর হাফলঙ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। দিমাসা ভাষায় হাঁফলাঁও-এর অর্থ সাদা উইয়ের ঢিপি। এই হাঁফলাঁও থেকে হাফলঙ। হাফলঙের মূল আকর্ষণ এর প্রকৃতি। পাইনে ছাওয়া, নীল অর্কিড শোভিত এই শৈলশহর। আর লেক এই শহরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে। এখানে সূর্যোদয় মনোরম, যেন লেকের কপালে টিপ। শহরের হৃদপিণ্ড তার ম্যাল, যার বিস্তৃতি বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে লেক পর্যন্ত। পূর্ব হিমালয়ের ছোট্ট এই শৈলশহর সহজেই আপন করে নেয়।
১) ঘুরে আসুন বোরাইল অভয়ারণ্য
ভারতের অভয়ারণ্য মানচিত্রে বিশেষ পরিচিতি এখনও পায়নি এই বোরাইল অভয়ারণ্য। কিন্তু অসমের যত পরিচিত অভয়ারণ্য আছে, তাদের বাইরে এটি একটি গুপ্তধনের মতো। তুষার লরিস, হুলক গাবুন, লঙ্গুর, অসমীয় ম্যাকাকু, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, ক্লাউডেড লেপার্ডের মতো নানা রকম বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর দেখা মেলে এখানে।
২) মাইবাং শহরের ইতিহাস দেখে নিন
হাফলং থেকে ৪৮ দূরে মাইবাং শহরে রয়েছে তৎকালীন ডিমাসা সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ। এর মধ্যে সব থেকে আকর্ষণের বস্তুটি হল একটি পাথর কেটে তৈরি ‘লংথাই নি নোহ।’ ‘স্টন হাউজ’ হিসেবেও পরিচিত এই বাড়িটি।
৩) পাখি দেখতে জাতিঙ্গা
হাফলং থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অবস্থিত জাতিঙ্গা পাখিপ্রেমিকদের কাছে স্বর্গরাজ্য। কত যে পাখির দেখা মেলে এখান থেকে তা ভাবনারও বাইরে। হরেক রকম পাখি দেখা এবং পাখির কলতান শোনার পাশাপাশি আশেপাশের পাহাড়ের দৃশ্যও অতুলনীয় এখান থেকে।
৪) পানিমুর জলপ্রপাত দেখে নিন
হাফলং থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জলপ্রপাতটি আপনারা প্রথম দিনেই দেখে নিতে পারেন। কোপিলি নদী থেকে তৈরি এই প্রপাতটি উত্তরপূর্ব ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় বস্তু। প্রপাতটি যখন নেমে আসে, তখন দুধের মতো রঙ ধরে তার মধ্যে।
৫) হাফলং শহরে
হাফলং শহরে দেখার জন্য আছে হাফলং লেক, শহরের একদম কেন্দ্রস্থলে। লেকের জলে বোটিং হয়। আছে ঝুলন্ত ব্রিজ, প্রাচীন সার্কিট হাউস, প্রাচীন কালীবাড়ি ও হাফলঙ চার্চ। হাফলঙ হিলে অর্কিড গার্ডেন দেখতে ভুলবেন না।
৬) স্থানীয় উপজাতি মানুষদের সঙ্গে মিশুন
দিমাসা, বিয়াতেস, কারবি, থাডু কুকি উপজাতির মতো বহু উপজাতি মানুষ আছেন হাফলঙে। এদের সঙ্গে আলাপ করুন, ভালো লাগবে। এদের কোনো উৎসবের সময় হাফলঙ চলুন। হাফলঙকে অন্য চেহারায় দেখা যাবে।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেন
লামডিং-বদরপুর হিল সেকশনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাফলং যাওয়া উচিত ট্রেনে। কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। এই ট্রেন সপ্তাহে চার দিন (মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও রবিবার) আগরতলা যায় এবং সপ্তাহে তিন দিন (সোম, বুধ ও শনি) শিলচর যায়। প্রতি দিন শিয়ালদা থেকে সকাল ৬.৩৫ মিনিটে ছেড়ে গুয়াহাটি পৌঁছোয় পর দিন ভোর ৪টেয়। ১০ মিনিট পর গুয়াহাটি ছেড়ে নিউ হাফলং পৌঁছোয় সকাল ৯:৫১ মিনিটে ।
এ ছাড়া কলকাতা থেকে নিউ হাফলং যাওয়ার জন্য রয়েছে হাওড়া থেকে সাপ্তাহিক (বৃহস্পতিবার) অরনাই এক্সপ্রেস (তিরুঅনন্তপুরম-হাওড়া-শিলচর) ও সাপ্তাহিক (মঙ্গলবার) গুয়াহাটি এক্সপ্রেস (তিরুঅনন্তপুরম-হাওড়া-শিলচর) এবং আন্দুল থেকে দ্বিসাপ্তাহিক (বুধ ও শনিবার) আগরতলা হামসফর।
বিমান
ভারতের প্রায় সব জায়গার সঙ্গে গুয়াহাটি বিমানপথে যুক্ত। বিমানে গুয়াহাটি এসে সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে যাওয়া যায় হাফলং, দূরত্ব ৩৪৯ কিমি। কিংবা বিমানে শিলচর এসে সেখান থেকেও গাড়িতে পৌঁছে যাওয়া যায় হাফলং, দূরত্ব ১০৬ কিমি।
সড়কপথ
হাফলং অসমের প্রায় সব জায়গার সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত। গুয়াহাটি-হাফলং নিয়মিত বাস চলাচল করে। এ ছাড়া গাড়ি ভাড়া করেও আসা যেতে পারে হাফলং-এ। এ ছাড়াও অসমের প্রায় সব বড়ো শহরের সঙ্গে বাসে যুক্ত হাফলং।
কোথায় থাকবেন
হাফলং-এ অসম পর্যটনের কোনো ট্যুরিস্ট লজ নেই। নানা মানের নানা দামের বেসরকারি হোটেল রয়েছে, যাদের সন্ধান পাবেন গুগল সার্চ করে।