ঘুরে আসুন প্রকৃতির কোলে শৈলশহর হাফলঙ

haflong

ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: ২২৩০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হাফলঙ অসমের একমাত্র শৈলশহর। ডিমা হাসাও জেলার সদর হাফলঙ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। দিমাসা ভাষায় হাঁফলাঁও-এর অর্থ সাদা উইয়ের ঢিপি। এই হাঁফলাঁও থেকে হাফলঙ। হাফলঙের মূল আকর্ষণ এর প্রকৃতি। পাইনে ছাওয়া, নীল অর্কিড শোভিত এই শৈলশহর। আর লেক এই শহরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে। এখানে সূর্যোদয় মনোরম, যেন লেকের কপালে টিপ। শহরের হৃদপিণ্ড তার ম্যাল, যার বিস্তৃতি বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে লেক পর্যন্ত। পূর্ব হিমালয়ের ছোট্ট এই শৈলশহর সহজেই আপন করে নেয়।

কখন যাবেন

হাফলঙ যাওয়ার সব চেয়ে ভালো সময় এপ্রিল থেকে জুন। এই সময় আকাশ পরিষ্কার থাকে। এবং গরম থাকে না একদমই। প্রবল ঠান্ডা সহ্য করতে পারলে শীতও উপভোগ্য।  

কী ভাবে যাবেন

ট্রেন

লামডিং-বদরপুর হিল সেকশনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাফলং যাওয়া উচিত ট্রেনে। কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। এই ট্রেন সপ্তাহে চার দিন (মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও রবিবার) আগরতলা যায় এবং সপ্তাহে তিন দিন (সোম, বুধ ও শনি) শিলচর যায়। প্রতি দিন শিয়ালদা থেকে সকাল ৬.৩৫ মিনিটে ছেড়ে গুয়াহাটি পৌঁছোয় পর দিন ভোর ৪টেয়। ১০ মিনিট পর গুয়াহাটি ছেড়ে নিউ হাফলং পৌঁছোয় সকাল ১১.৫১ মিনিটে (সপ্তাহে চার দিন) এবং ১১,৫০ মিনিটে (সপ্তাহে তিন দিন)। এ ছাড়া কলকাতা থেকে নিউ হাফলং যাওয়ার জন্য রয়েছে হাওড়া থেকে সাপ্তাহিক (বৃহস্পতিবার) অরনাই এক্সপ্রেস (তিরুঅনন্তপুরম-হাওড়া-শিলচর) ও সাপ্তাহিক (মঙ্গলবার) গুয়াহাটি এক্সপ্রেস (তিরুঅনন্তপুরম-হাওড়া-শিলচর) এবং আন্দুল থেকে দ্বিসাপ্তাহিক (বুধ ও শনিবার) আগরতলা হামসফর। এ ছাড়া দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ট্রেনে গুয়াহাটি এসে সেখান থেকে ট্রেনে নিউ হাফলং যাওয়া যায়। ট্রেন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের জন্য দেখে নিন https://erail.in/

new haflong station
নিউ হাফলঙ স্টেশন।

বিমান

ভারতের প্রায় সব জায়গার সঙ্গে গুয়াহাটি বিমানপথে যুক্ত। বিমানে গুয়াহাটি এসে সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে যাওয়া যায় হাফলং, দূরত্ব ৩৪৯ কিমি। কিংবা বিমানে শিলচর এসে সেখান থেকেও গাড়িতে পৌঁছে যাওয়া যায় হাফলং, দূরত্ব ১০৬ কিমি।

সড়কপথ

হাফলং অসমের প্রায় সব জায়গার সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত। গুয়াহাটি-হাফলং নিয়মিত বাস চলাচল করে। এ ছাড়া গাড়ি ভাড়া করেও আসা যেতে পারে হাফলং-এ। এ ছাড়াও অসমের প্রায় সব বড়ো শহরের সঙ্গে বাসে যুক্ত হাফলং।

কী ভাবে ঘুরবেন

পায়ে পায়ে ঘুরে নেওয়া যায় হাফলং শহর। আর আশেপাশে যেতে হলে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়াই ভালো। বাস পাওয়া যায় বটে, তবে তা খুব নিয়মিত নয়।

কোথায় থাকবেন

হাফলং-এ অসম পর্যটনের কোনো ট্যুরিস্ট লজ নেই। নানা মানের নানা দামের বেসরকারি হোটেল রয়েছে, যাদের সন্ধান পাবেন makemytrip.com, goibibo.com, tripadvisor.in, tourmyindia.com, holidayiq.com প্রভৃতি ওয়েবসাইট থেকে।

haflong lake
হাফলঙ লেক।

কী দেখবেন, কী করবেন 

বরাইল পর্বতমালায় অবস্থিত হাফলঙে দ্রষ্টব্য হল প্রকৃতি। পাহাড়ের গা বেয়ে গড়িয়ে আসা ঝরনার জলে স্নাত হওয়া, পার্বত্য নদীর দুদ্দাড় বেগে ছুটে যাওয়া দর্শন করা, অদূরের পাহাড়শ্রেণির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলা, নানা বর্ণের অর্কিডের সঙ্গে পরিচিত হওয়া – এক কথায় প্রকৃতিকে উপভোগ করাই আপনার একমাত্র কাজ হাফলঙে।

১) দেখার জন্য আছে হাফলঙ লেক, শহরের একদম কেন্দ্রস্থলে। লেকের জলে বোটিং চলে। আছে ঝুলন্ত ব্রিজ, প্রাচীন সার্কিট হাউস, প্রাচীন কালীবাড়িহাফলঙ চার্চ।  হাফলঙ হিলে অর্কিড গার্ডেন দেখতে ভুলবেন না। 

২) পাখি দেখা – পরিযায়ী পাখির স্বর্গরাজ্য হাফলঙ। এখানকার লেক ও অন্যান্য জলাশয়ে হাজার হাজার পাখির বাস। 

৩) বরাইল বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য – নানা ধরনের পাখি ছাড়াও হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, ক্লাউডেড বিয়ার-সহ বিভিন্ন প্রাণীর দেখা মেলে বরাইল অভয়ারণ্যে। গাড়ি ভাড়া করে চলে যান। 

৪) ট্রেকিং – ট্রেকিং-এর আদর্শ স্থান হাফলঙ। ট্রেক করে চলে যান ১৮ কিমি দূরের বেনদাও বাগলাই ওয়াটারফলসে কিংবা ৭ কিমি দূরের এন লাইকুল গ্রামে। ট্রেকিং করে মনে হবে বেশ ভালো একটা সময় কাটালেন।

panimoor waterfalls
পানিমুর ওয়াটারফলস্‌।

৫) অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস – প্যারাগ্লাইডিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসেরও ব্যবস্থা আছে হাফলঙে।

৬) স্থানীয় উপজাতি মানুষদের সঙ্গে মিশুন – দিমাসা, বিয়াতেস, কারবি, থাডু কুকি  উপজাতির মতো বহু উপজাতি মানুষ আছেন হাফলঙে। এদের সঙ্গে আলাপ করুন, ভালো লাগবে। এদের কোনো উৎসবের সময় হাফলঙ চলুন।  হাফলঙকে অন্য চেহারায় দেখা যাবে।    

৭) কেনাকেটা – কেনাকেটা করার সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা হাফলঙ।  বাঁশের নানা শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত অসম। আর সে সব শিল্পকর্মের সব চেয়ে বড়ো বাজার  হাফলঙ।      

আশেপাশে

১) জাতিঙ্গা – ৯ কিমি, পরিযায়ী পাখির মেলা বসে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে কৃষ্ণপক্ষের রাতে পাখিদের আত্মহননের জন্য খ্যাত।

ruins at Maibong
মাইবঙে ধ্বংসাবশেষ।

২) মাইবঙ – ৪৫ কিমি দূরের মাইবঙ অবশ্য গন্তব্য হাফলঙ থেকে। পাহাড়, অসংখ্য ঝরনা আর নানা ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাইবঙ। প্রাচীন কাচরি শাসকদের রাজধানী ছিল এই মাইবঙ। ১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে দিমাশা রাজ্যের রাজধানী ছিল। প্রাচীন রাজত্বের নানা স্মৃতিচিহ্ন ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে এই মাইবঙে। রয়েছে বহু প্রাচীন জলাশয় ও মন্দির। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুই ছাদ বিশিষ্ট এক পাথরে গড়া রামচণ্ডী মন্দির। জমজমাট পিকনিকের আদর্শ জায়গা মোহুর নদীর পাড়।

৩) পানিমুর ওয়াটারফলস্‌ – হাফলঙ থেকে ৫০ কিমি।  ওই অঞ্চলের সব চেয়ে জমকালো ঝরনা।

silchar station
শিলচর স্টেশনে শহিদ স্মারক।

৪) শিলচর – ১০৩ কিমি। বরাক নদীর ধারে শিলচর। বাংলা ভাষা নিয়ে দাবি আদায়ের জন্য ১১টি প্রাণ ঝরেছিল এই শিলচরে ১৯৬১ সালের ১৯ মে। লেকের পাড়ে গান্ধীবাগে এবং শিলচর স্টেশনে  সেই ১১ শহিদের রক্তে রাঙা শহিদ স্মারক অবশ্য দ্রষ্টব্য। অদূরেই কাছাড় ক্লাব, হরিসভা ও দেবী লক্ষ্মীর মন্দির। বিমানবন্দরের পথে ১৭ কিমি গিয়ে উধারবন্ধে দু’শো বছরেরও বেশি পুরোনো শ্রীশ্রীকাঁচাকান্তি দেবীর মন্দির। দুর্গা ও কালীর সমন্বয়ে এই দেবী। আরও ৩ কিমি গিয়ে খাসপুর, সপ্তদশ শতকের কাছাড় রাজাদের রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ। হাফলঙ থেকে বাসে, ট্রেনে বা গাড়িতে চলে আসতে পারেন শিলচর।

আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস: নাথু লার দরজা বন্ধ পর্যটকদের জন্য  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *