চোখধাঁধানো স্থাপত্যের প্রাসাদ: মাইসোর প্যালেস 

Mysore Palace

ভারতের অতীত ইতিহাস নানা দিক দিয়ে সমৃদ্ধ। এই দেশে এক সময় ছিল শত শত রাজারাজড়ার রাজত্ব। তারই ফলস্বরূপ দেশ জুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাসাদ। প্রতিটিরই কিছু না কিছু বিশেষত্ব আছে। বেশির ভাগ প্রাসাদই মিশ্র সংস্কৃতির নজির। বেশ কিছু প্রাসাদ রোমান স্থাপত্যশৈলীতে অনুপ্রাণিত। আবার বেশ কিছু প্রাসাদ ইসলামিক স্থাপত্যে প্রভাবিত। দেখে আসা যাক এ রকমই কিছু অনন্য প্রাসাদ। আজ চলুন মায়সুরু (মহীশুর), দেখে নিন মাইসোর প্যালেস।

মাইসোর প্যালেসের আর-এক নাম অম্বা বিলাস প্যালেস। মাইসোর রাজাদের বাসভবন ছিল এই প্রাসাদ। এখানেই বসত রাজদরবার। পুরোনো দুর্গ তথা প্রাসাদটি তৈরি হয়েছিল চতুর্দশ শতকে, ইয়াদুরায়া রাজাদের হাতে। বার বার এই প্রাসাদের সংস্কার হয়েছে। এবং রাজত্বও হাতবদল হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আসে ওয়েদেয়ার রাজাদের হাতে।

পুরোনো দুর্গ তথা প্রাসাদটি ছিল কাঠের তৈরি। ১৮৯৬ সালে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রাসাদ ভস্মীভূত হয়। মাইসোরের তদানীন্তন রাজা চতুর্থ কৃষ্ণরাজ ওয়েদেয়ার এবং তাঁর মা মহারানি কেমপানানজাম্মান্নি দেবী ব্রিটিশ স্থপতি হেনরি আরউইনকে নতুন প্রাসাদ নির্মাণে বরাত দেন। পাথর, ইট ও কাঠের নতুন প্রাসাদ নির্মাণ সম্পন্ন হয় ১৯১২ সালে।

দ্রাবিড়ীয়, প্রাচ্য, ইন্দো-সারাসেনিক ও রোমান স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণে তৈরি এই প্রাসাদ। মূল প্রাসাদটি শ্বেতপাথরের গম্বুজ-সহ তিনতলাবিশিষ্ট। রয়েছে ১৪৫ ফুট উঁচু পাঁচতলা টাওয়ার। প্রাসাদ চত্বর ২৪৫ ফুট লম্বা এবং ১৫৬ ফুট চওড়া। প্রাসাদের সাতটি গেট আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পূর্বের জয় মার্তণ্ড গেট, উত্তরের জয়রাম-বলরাম গেট এবং দক্ষিণের বরাহ ও অম্বা বিলাস গেট।  

প্রাসাদের মধ্যস্থলে যে ধনুকাকৃতি খিলান রয়েছে তার উপরে রয়েছে সম্পদ, ভাগ্য ও প্রাচুর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী গজলক্ষ্মীর ভাস্কর্য। পুরোনো দুর্গের মধ্যে রয়েছে তিনটি মন্দির, আর মূল প্রাসাদের মধ্যে ১৮টি মন্দির।

মহীশুরের রাজারা চামুণ্ডিদেবীর ভক্ত। তাই প্রাসাদটি চামুণ্ডি হিল্‌স অভিমুখী। প্রাসাদে দু’টি দরবার হল আছে। জয়চামারাজেন্দ্র ওয়েদেয়ারের রাজত্বকালে (১৯৪০-১৯৫০) প্রাসাদের পরিবর্ধন করা হয়।    

প্রাসাদ দেখার নিয়মাবলি

পর্যটকরা তিনটি গেট দিয়ে ঢুকতে পারেন প্রাসাদ চত্বরে – দক্ষিণের বরাহ ও অম্বা বিলাস গেট এবং উত্তরের জয়রাম-বলরাম গেট দিয়ে। প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০০ টাকা এবং ১০ থেকে ১৮ বছর বয়স্কদের জন্য টাকা।  

সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রাসাদে ঢোকার টিকিট পাওয়া যায়।

রবিবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রাসাদে দর্শক সাধারণের জন্য লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয়। এর মধ্যে ইংরেজিতে শো হয় বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার সন্ধে ৭টা থেকে রাত ৮টা। টিকিটের মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১২০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা।

কী ভাবে যাবেন

কর্নাটক ভ্রমণে গেলে অবশ্যই মায়সুরু তথা মহীশুর যাবেন। বেঙ্গালুরু থেকে ১৫৮ কিমি দূরে মহীশুর। ট্রেনে, বাসে বা গাড়িতে আসা যায়। আর মায়সুরু ভারতের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে ট্রেনপথে যুক্ত। বেঙ্গালুরুও ভারতের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে ট্রেন ও বিমানপথে যুক্ত। ট্রেনের বিস্তারিত সময়সূচির জন্য দেখে নিন erail.in। বিমানের সময়সূচি গুগুল সার্চ করে পেয়ে যাবেন।  

আরও পড়তে পারেন

ওড়িশায় ১৩টি নতুন পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা

পুজোয় অদূরে ২ / রাঁচি-ম্যাকলাস্কিগঞ্জ

এ বার থেকে লিফ্‌ট চড়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে ইলোরার কৈলাশ গুহার দোতলায়

পূর্ব উপকূলের অল্প-চেনা সৈকত: মাদকতায় ভরা অপরূপা বাগদা

পূর্ব উপকূলের অল্প-চেনা সৈকত: সূর্যলঙ্কা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *