চোখধাঁধানো স্থাপত্যের প্রাসাদ: জয় বিলাস প্যালেস, গোয়ালিয়র

Jai Vilas Palace, Gwalior

ভারতের অতীত ইতিহাস নানা দিক দিয়ে সমৃদ্ধ। এই দেশে এক সময় ছিল শত শত রাজারাজড়ার রাজত্ব। তারই ফলস্বরূপ দেশ জুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাসাদ। প্রতিটিরই কিছু না কিছু বিশেষত্ব আছে। বেশির ভাগ প্রাসাদই মিশ্র সংস্কৃতির নজির। বেশ কিছু প্রাসাদ রোমান স্থাপত্যশৈলীতে অনুপ্রাণিত। আবার বেশ কিছু প্রাসাদ ইসলামিক স্থাপত্যে প্রভাবিত। দেখে আসা যাক এ রকমই কিছু অনন্য প্রাসাদ। আজ চলুন মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে, দেখে নিন জয় বিলাস প্যালেস তথা জয় বিলাস মহল।

ইতিহাস

তৎকালীন গোয়ালিয়র করদরাজ্যের (প্রিন্সলি স্টেট) মহারাজা জয়াজি রাও সিন্ধিয়া (১৮৪৩-১৮৮৬) জয় বিলাস মহল তৈরি করেন ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে। এই প্রাসাদেই ১৯০৫-এর ২০ ডিসেম্বর সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সম্রাট প্রিন্স অব ওয়েলস তথা সপ্তম এডোয়ার্ড এবং রানি মেরিকে। বেলেপাথরে দুধ-সাদা রঙের এই প্রাসাদের স্থপতি ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্যার মাইকেল ফিলোস, যিনি পরিচিত ছিলেন মুখেল সাহেব হিসাবে। তিনতলাবিশিষ্ট এই প্রাসাদ তিন ধরনের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। প্রথম তলটি তৈরি হয়েছে টাস্কান স্থাপত্যরীতিতে, দ্বিতীয় তল ইতালিয়ান ডোরিক এবং তৃতীয় তল কোরিন্থিয়ান নকশায় তৈরি হয়েছে।

দরবার হল।

মিউজিয়াম

১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর গোয়ালিয়রের তৎকালীন রাজমাতা বিজয়রাজে সিন্ধিয়া তাঁর স্বামী মহারাজা স্যার জিওয়াজি রাও সিন্ধিয়ার স্মৃতিতে প্রাসাদের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশকে মিউজিয়ামে পরিণত করেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ মিউজিয়ামের উদ্বোধন করেন। মহারাজা স্যার জিওয়াজি রাও সিন্ধিয়া ছিলেন গোয়ালিয়রের শেষ মহারাজা।

এই মিউজিয়াম দেখলে মরাঠা ইতিহাস, কলা-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। তা ছাড়া সিন্ধিয়াদের জীবনযাপনের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। এখানে রয়েছে ৪১টি গ্যালারি। আঠারো থেকে বিশ শতক, এই সময়কালের নানা সংগ্রহ প্রদর্শিত হয়েছে এই মিউজিয়ামে। এখানে রয়েছে রাজপরিবারের যানবাহন, গোলাপ-কাঠের আসবাবপত্র, নানা ভাস্কর্য, সিন্ধিয়া সেনাবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র, রাজপরিবারের পোশাকআশাক, নানা ধরনের শিল্পকলা ইত্যাদি।

তা ছাড়াও এই মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছে ভারত তথা ইউরোপের বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের বিরল চিত্রাঙ্কন, লিথোগ্রাফ, পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি। প্রাসাদের দরবার হল দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবেই।          

মিউজিয়ামের একাংশ।

দর্শনের সময়

সোমবার বাদে মঙ্গলবার থেকে রবিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত।  

দর্শনীর হার

জনপ্রতি ৩০০ টাকা।

কী ভাবে যাবেন

মধ্যপ্রদেশ পর্যটন-সম্পদে ভরপুর। একবারে দেখে শেষ করা যায় না। কয়েক বার আসতে হয়। এ ভাবেই মধ্যপ্রদেশ ভ্রমণে এসে দেখে নেবেন সিন্ধিয়াদের গোয়ালিয়র। আর গোয়ালিয়রের অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্য জয় বিলাস প্যালেস। ভারতের প্রায় সব বড়ো শহরের সঙ্গে ট্রেন ও বিমানপথে যুক্ত গোয়ালিয়র। ট্রেনের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in। গোয়ালিয়র স্টেশন থেকে জয় বিলাস প্যালেস ২.৫ কিমি। উড়ানের সময় গুগুল সার্চ করলে পেয়ে যাবেন। এয়ারপোর্ট থেকে জয় বিলাস প্যালেসের দূরত্ব ১২.৫ কিমি।

আরও পড়তে পারেন

চোখধাঁধানো স্থাপত্যের প্রাসাদ: সিটি প্যালেস, জয়পুর  

চোখধাঁধানো স্থাপত্যের প্রাসাদ: লক্ষ্মীবিলাস প্রাসাদ, বডোদরা

চোখধাঁধানো স্থাপত্যের প্রাসাদ: উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, আগরতলা

চোখধাঁধানো স্থাপত্যের প্রাসাদ: মাইসোর প্যালেস 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *