ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: ভারতের পর্যটন মানচিত্রে মধ্যপ্রদেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। বলতে গেলে, দেশের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলির বেশ কিছু মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে রয়েছে। পর্যটকরা সেই সব জায়গায় নিয়মিত বেড়াতে যান। কিন্তু তারই মধ্যে ওরছা যেন কিছুটা ব্রাত্য। পর্যটকরা। বহু পর্যটকই খাজুরাহো দেখে গ্বালিয়র (গোয়ালিয়র) চলে যান। কিন্তু প্রায় পথেই পড়ে ওরছা, অথচ সে দিকে পা বাড়ান না। তাই ওরছাকে জনপ্রিয় করার জন্য মধ্যপ্রদেশ পর্যটন ওরছায় সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করছে।
‘নমস্তে ওরছা’ নামে ওই উৎসব শুরু হবে আগামি ৬ মার্চ, চলবে ৮ মার্চ পর্যন্ত। এই উৎসবে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ওই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ছবি তুলে ধরা হবে পর্যটকদের কাছে। ওই সময়ে যাঁরা ওরছা যাবেন তাঁদের জন্য ‘গাইডেড হিস্ট্রি ট্যুর’-এর ব্যবস্থা করা হবে, অর্থাৎ গাইডের মাধ্যমে ওরছার ইতিহাস তুলে ধরা হবে। থাকবে ‘ফোটোগ্রাফি ট্যুর’ও। পাশাপাশি পর্যটকরা ওই অঞ্চলের নাচ, গান উপভোগ করবেন এবং শিল্পকলার সঙ্গেও পরিচয় হবে তাঁদের।
মধ্যপ্রদেশ সরকারের পর্যটন সচিব ফৈয়জ আহমদ কিদোয়াই বলেন, পর্যটকদের জন্য অফুরন্ত পর্যটনসম্পদ রয়েছে এই মধ্যপ্রদেশে। রাজ্যের যে প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক এবং স্থাপত্যগত পর্যটনসম্পদ রয়েছে সে ব্যাপারে পর্যটকদের আরও পরিচিত করানোর প্রয়াস নিয়েছে রাজ্য সরকার। ‘নমস্তে ওরছা’ উৎসব আয়োজিত হলে সেই উদ্দেশ্য খানিকটা সাধিত হবে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের অনেক কিছুই অতিথিদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন।
‘নমস্তে ওরছা’ উৎসবে ‘ক্র্যাফটস বাজার’ এবং ‘ফুড বাজার’ বসবে। স্থানীয় হস্তশিল্পের সঙ্গে পরিচিত হবেন পর্যটকরা এবং কেনাকাটাও করতে পারবেন। পাশাপাশি, ওই এলাকার নানা মুখরোচক খাবারদাবারের স্বাদও নিতে পারবেন তাঁরা।
উৎসবের প্রথম দিনে ওরছা ফোর্টে উদ্বোধনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বেতয়া নদীর তীরে ‘মহা আরতি’ হবে। এ ছাড়া ‘ফার্ম টু ফর্ক’-এর অভিজ্ঞতা হবে পর্যটকদের। অর্থাৎ এলাকার মানুষজন কী ভাবে ‘জৈব চাষ’-এ অভ্যস্ত হচ্ছেন, তারও পরিচয় পাবেন পর্যটকরা।
ওরছায় ঘোরাঘুরি
(১) বেতোয়ার তীরে ওরছা বুন্দেলাদের রাজধানী ছিল। রাজা বীর সিং-এর তৈরি বহুমুখী খিলানযুক্ত সেতু পেরিয়ে প্রাসাদ কমপ্লেক্স তথা ওরছা ফোর্ট। মোগলসম্রাট জাহাঙ্গীরের বাসের জন্য রাজা বীর সিং-এর অনুপম হর্ম্য জাহাঙ্গীর মহল।
(২) মণি-মুক্তা-কাচের অলংকরণ শোভিত ষোড়শ শতকের রাজামহল প্রাসাদ।
(৩) সপ্তদশ শতকে গড়া রাই পরভিন মহল।
(৪) রাজামহল ও জাহাঙ্গীরমহলের মাঝে শিশমহল।
(৫) শিশমহল থেকে ১ কিমি দূরে রামরাজা মন্দির।
(৬) রামরাজা মন্দিরের ডাইনে দুর্গাকার চতুর্ভুজ মন্দির।
(৭) রামরাজার পাশ দিয়ে মিনিট পনেরোর হাঁটা পথে দুর্গাকার লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির।
(৮) মোগলি গার্ডেন ফুলবাগ।
(৯) ফুলবাগ পেরিয়ে হরদৌল কা বৈঠক তথা প্রাসাদ।
(১০) বেতোয়ার তীরে বুন্দেল রাজাদের রয়্যাল ছত্তীশ।
(১১) রাজামহল এলাকায় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো।
(১২) ওরছা পাখিরালয়।
কী ভাবে ঘুরবেন
(১) ১০-১২ দিনের একটা ভ্রমণ ছক বানিয়ে নিন। শুরু করুন খাজুরাহো থেকে, শেষ করুন গ্বালিয়রে। মাঝে দেখে নিন ওরছা ও ঝাঁসি (উত্তরপ্রদেশ)। খাজুরাহো থেকে গ্বালিয়র (৩০৩ কিমি) যাওয়ার পথে ঝাঁসি। খাজুরাহো থেকে ঝাঁসি ১৭৫ কিমি। ঝাঁসি থেকে ওরছা ১৬ কিমি। ওরছা থেকে গ্বালিয়র ১২৩ কিমি, পথ ঝাঁসি হয়ে।
(২) মধ্যপ্রদেশে সরকারি বাস পরিষেবা ভালো। তবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট গাড়ি ভাড়া করে নিলে সময় বাঁচে।
(৩) ঘোরার জায়গাগুলি স্থানীয় যানে ঘুরে নেবেন।
কোথায় থাকবেন
মধ্যপ্রদেশ পর্যটন উন্নয়ন নিগম (এমপিএসটিডিসি) দেশের অন্যতম সেরা পর্যটন উন্নয়ন নিগম। সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেই ওদের হোটেল রয়েছে। খাজুরাহোতে এমপিএসটিডিসির দু’টি হোটেল আছে, হোটেল পায়েল ও হোটেল ঝঙ্কার। ওরছায় রয়েছে দু’টো হোটেল, বেতোয়া রিট্রিট এবং শিশমহল। গোয়ালিয়র রয়েছে তানসেন রেসিডেন্সি। অনলাইনের বুক করার জন্য লগইন করুন www.mptourism.com। ঝাঁসিতে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ পর্যটনের রাহি বীরাঙ্গনা ট্যুরিস্ট বাংলো। অনলাইন বুকিং upstdc.co.in/। এ ছাড়া সব জায়গাতেই রয়েছে অসংখ্য বেসরকারি হোটেল। সন্ধান পাবেন বেসরকারি হোটেলগুলির ওয়েব সাইটথেকে
কী ভাবে যাবেন
আগে পৌঁছোতে হবে সাতনা। সাতনা দেশের প্রায় সব জায়গার সঙ্গে ট্রেনপথে যুক্ত। হাওড়া থেকে সাতনা যাওয়ার ট্রেন দৈনিক মুম্বই মেল ভায়া এলাহাবাদ অথবা ত্রিসাপ্তাহিক শিপ্রা এক্সপ্রেস।
ফিরুন গ্বালিয়র থেকে। গ্বালিয়রও দেশের প্রায় সব জায়গার সঙ্গে ট্রেনপথে যুক্ত। হাওড়া ফেরার জন্য পাবেন চম্বল এক্সপ্রেস। সপ্তাহে চার দিন চলে। অথবা গোয়ালিয়র থেকে আগ্রা এসে সেখান থেকেও ফেরার ট্রেন ধরতে পারেন। গোয়ালিয়র থেকে আগ্রা ১২০ কিমি। আরও দু’টি দিন আগ্রায় থেকে ঘোরাঘুরি করে নিতে পারেন।
ট্রেনের সময়ের জন্য্ দেখে নিন erail.in/।