জীবনে অন্তত একবার খাজুরাহো যেতেই হবে

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: খাজুরাহোর মন্দিরগুচ্ছের ভাস্কর্য এক অতুল বিস্ময় জাগায়। যা দেখে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছিলেন এক ভিনদেশি, ইবন বতুতা। ১৩৩৫ থেকে ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে থাকার সময়ে তাঁর সফরনামায় উঠে এসেছে ‘কাজারা’-র মন্দিরের কথা।

তাঁর বিবরণ বলছে, মন্দিরগুলিতে সে সময়েও বিগ্রহ ছিল। তবে মরক্কোর ভূপর্যটককে বিস্মিত করেছিল মন্দিরে থাকা যোগীপুরুষরা। তাঁদের দেহ পাণ্ডুর বর্ণের। মাথার জটা নাকি ভূমি স্পর্শ করেছিল। স্থানীয় মানুষজন, এমনকি ভিনধর্মীরাও আসতেন তাঁদের কাছে।

শুধু ইবন বতুতাই নয়। বুন্দেলখণ্ডের খাজুরাহো অঞ্চলের বিবরণ ধরা পড়েছে বহু ভূপর্যটকের বিবরণে। ৬৪১ খ্রিস্টাব্দে হিউয়েন সাং বা জুয়াংঝং যখন দেখছেন, তখন এখানে ছিল বেশ কিছু বৌদ্ধ মঠ। কিন্তু সেগুলি তখন নিষ্প্রদীপ। বরং কিছু মন্দিরে সে সময় তখন পুজো শুরু হয়েছে।

কিন্তু সেগুলি আজকের বিশ্বখ্যাত ‘খাজুরাহো মন্দির’ নয়। বরং, তাদের পূর্বসূরি। হিউয়েন সাঙের ৪০০ বছর পরে প্রথম খ্রিস্টাব্দে অল বিরুনির ভারত ভ্রমণকালে অবশ্য খাজুরাহোর মন্দিরের স্বর্ণযুগ।

আজ খাজুরাহোতে যে মন্দিরগুলি আমরা দেখি, তাদের গোড়াপত্তন হয়েছিল চান্দেলা বংশের শাসনে। ৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শেষ হয়েছিল বেশির ভাগ মন্দির তৈরির কাজ।

তিনটি মন্দিরপুঞ্জে ভাগ করা যায় নির্মাণগুলিকে। পোশাকি নাম ‘ওয়েস্টার্ন’, ‘ইস্টার্ন’ এবং ‘সাদার্ন’ ক্লাস্টার। এর মধ্যে সব থেকে বেশি এবং সেরা মন্দিরগুলি আছে পশ্চিম দিকের মন্দিরপুঞ্জেই। সবুজ গাছগাছালির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিস্তীর্ণ জমিতে। নির্মাণগুলির মধ্যে সব থেকে বিখ্যাত ‘কান্ডারীয় মহাদেব মন্দির’, ‘লক্ষ্মণ মন্দির’ এবং ‘বিশ্বনাথ মন্দির’।

১২টি মন্দির নিয়ে পশ্চিমের মন্দিররাজি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কান্ডারীয় মহাদেব মন্দির, লক্ষ্মণ মন্দির, লক্ষ্মী মন্দির, বরাহ মন্দির, জগদম্বা মন্দির, বিশ্বনাথ মন্দির ইত্যাদি। পুবের মন্দিরগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে হনুমান মন্দির, জৈন গ্রুপের আদিনাথ মন্দির, পার্শ্বনাথ মন্দির ইত্যাদি আর দক্ষিণ গোষ্ঠীতে রয়েছে দুলাদেও মন্দির, চতুর্ভুজ মন্দির প্রভৃতি।

আজ ‘খাজুরাহো’ ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট। সংস্কৃত শব্দ ‘খর্জুর বাহো’ থেকেই এই নামের জন্ম। ‘খর্জুর’ হল খেজুর, ‘বাহো’ শব্দের অর্থ বহনকারী। আবার অনেক ইতিহাসবিদের মতে, ‘খর্জুর’ এখানে বৃশ্চিক এবং ‘খর্জুরবাহো’ হলেন স্বয়ং মহাদেব। হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি একই প্রাঙ্গণে আছে জৈন মন্দিরও।

‘নাগারা’ ঘরানায় তৈরি খাজুরাহো মন্দিরগুলির বৈশিষ্ট্য হল এর গঠনশৈলি। প্রতিটা মন্দিরের অন্যতম অংশ ‘অর্ধমণ্ডপ’, ‘মণ্ডপ’, ‘মহামণ্ডপ’, ‘অন্তরাল’, ‘গর্ভগৃহ’, এবং ‘প্রদক্ষিণ’। বহিরাংশ বেলেপাথরে তৈরি প্রতি মন্দিরের গর্ভগৃহ তৈরি হয়েছে গ্র্যানাইটে। আদিরসের বাইরেও বহু কিছু উপজীব্য হয়েছে এই মন্দিরের ভাস্কর্যের। পাথরের গায়ে তক্ষণ জাদুতে ফটে উঠেছে সম্রাটের শিকারযাত্রার পাশাপাশি সাধারণ রমণীর কেশবিন্যাস ও প্রসাধনীর বাইরে কুমোরের মৃৎপাত্র তৈরির দৃশ্যও।

কী ভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে খাজুরাহো যাওয়ার সব থেকে সহজ উপায় হল ট্রেনে সাতনা পৌঁছোনো। সাতনা যাওয়ার সব থেকে সহজ উপায় হল হাওড়া-মুম্বই মেল ভায়া গয়া ট্রেনে যাওয়া। ট্রেনটি প্রতি দিন রাত ১১:৩৫-এ হাওড়া থেকে ছেড়ে পরের দিন বিকেল ৪:৪০-এ সাতনা পৌঁছে যায়। সাতনা থেকে খাজুরাহো ঘণ্টা দুয়েকের রাস্তা। বাসে যাওয়া যায়। তবে গাড়ি ভাড়া করে নিলে আরামে যাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *