ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: দ্য হার্ট অব ইনক্রেডিবল্ ইন্ডিয়া – ভারতের হৃদয়ে অবস্থান করছে মধ্যপ্রদেশ। প্রকৃতি, তীর্থস্থান, ইতিহাস, ভাস্কর্য – কী নেই এই রাজ্যে। ছত্তীসগঢ় বেরিয়ে যাওয়ার পরেও এই রাজ্যটি আয়তনে এত বড়ো যে এক বারে দেখে শেষ করা যায় না। বার বার যেতে হয়। ভ্রমণ অনলাইন এই পর্বে সাজিয়ে দিচ্ছে মধ্যপ্রদেশ বেড়ানোর নানা ছক। এটা মধ্যপ্রদেশ নিয়ে প্রথম পর্ব। আগামী পর্বে থাকবে আরও মধ্যপ্রদেশ। আগের তিনটি পর্বে ছিল গাড়োয়াল, কুমায়ুন এবং রাজস্থান।
ভ্রমণছক ১ – ইলাহাবাদ-খজুরাহো–বান্ধবগড়-কানহা-জবলপুর-পাঁচমাড়ি
প্রথম দিন – ইলাহাবাদের উদ্দেশে রওনা।
ইলাহাবাদের সঙ্গে ভারতের সব বড়ো শহর যুক্ত। এমন ট্রেন ধরার চেষ্টা করুন যাতে সকাল সকাল ইলাহাবাদ (এলাহাবাদ) পৌঁছোতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কলকাতা থেকে এলাহাবাদ যাওয়ার সব চেয়ে ভালো ট্রেন হাওড়া-কালকা মেল (হাওড়া ছাড়ে রোজ সন্ধে ৭.৪০, ইলাহাবাদ পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৯টা), হাওড়া-মুম্বই মেল (হাওড়া ছাড়ে রোজ রাত ৯.৫৫, ইলাহাবাদ পৌঁছোয় সকাল ১১.১৫), বিভূতি এক্সপ্রেস (হাওড়া ছাড়ে রোজ রাত ৮টায়, ইলাহাবাদ পৌঁছোয় পরের দিন বেলা ১২টায়), অজমের এক্সপ্রেস (রোজ শিয়ালদহ ছাড়ে রাত ১০.৫৫, ইলাহাবাদ পৌঁছোয় পরের দিন বেলা ১২টা), জোধপুর এক্সপ্রেস (হাওড়া ছাড়ে রোজ রাত ১১.৩৫, ইলাহাবাদ পৌঁছোয় পরের দিন বেলা ১২.২৫), তুফান এক্সপ্রেস (হাওড়া ছাড়ে রোজ সকাল ৯.৩৫, ইলাহাবাদ পৌঁছোয় পরের দিন ভোর ৫.০৫), চম্বল এক্সপ্রেস (মঙ্গল, বুধ, শুক্র ও রবি হাওড়া থেকে ছাড়ে বিকেল ৫.৪৫, ইলাহাবাদ পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৭.২৫)। এ ছাড়াও এক গুচ্ছ সাপ্তাহিক, দ্বি-সাপ্তাহিক ট্রেন আছে।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে যাত্রা করে পরের দিন সকালে ইলাহাবাদ পৌঁছোনোর রোজ দু’টি ট্রেন আছে – নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেস, মহানন্দা এক্সপ্রেস।
দিল্লি ও মুম্বই থেকে রওনা হয়ে পরের দিন সকালে ইলাহাবাদ পৌঁছোনোর এক গুচ্ছ ট্রেন আছে।
দ্বিতীয় দিন – ইলাহাবাদ পৌঁছোনো। রাত্রিবাস ইলাহাবাদ (এলাহাবাদ)।
তৃতীয় দিন – সারা দিন ঘোরাঘুরি করে ইলাহাবাদ থেকে রাত ১০.২৫-এর বারাণসী-খাজুরাহো লিঙ্ক এক্সপ্রেস ধরুন। ত্রিসাপ্তাহিক ট্রেনটি সোম, বুধ ও শনিবার ইলাহাবাদ থেকে পাওয়া যায়।
কী দেখবেন ইলাহাবাদে –
প্রয়াগ সঙ্গম, আকবরের দুর্গ (দুর্গ দেখার জন্য অনুমতি চেয়ে আগাম চিঠি লিখতে হয় Commandant, Ordnance Depot, Fort –কে), অশোক পিলার (দুর্গের প্রবেশ ফটকের বিপরীতে), খসরু বাগ (জংশন স্টেশন লাগোয়া), আনন্দ ভবন (নেহরু পরিবারের বসতবাড়ি), ভরদ্বাজ আশ্রম, আলফ্রেড তথা মতিলাল নেহরু পার্ক), ঝুসি ((ইলাহাবাদ থেকে ৯ কিমি দূরে যমুনার অপর পাড়ে চন্দ্র মৌর্য ও গুপ্ত যুগের শহর), ভিটা (ইলাহাবাদ থেকে ১৭ কিমি দূরে যমুনার অপর পাড়ে মাটি খুঁড়ে আবিষ্কৃত মৌর্য, কুষাণ ও গুপ্ত যুগের সমৃদ্ধ নগরী) এবং কৌশাম্বী (ইলাহাবাদ থেকে ৫৭ কিমি দূরে যমুনাতীরে বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শহর)।
চতুর্থ দিন – ভোর ৫.২০ মিনিটে পৌঁছে যান খজুরাহো। রাত্রিবাস খাজুরহো।
পঞ্চম দিন – আজও থাকুন খজুরাহোয়।
খজুরাহোয় দেখুন –
১৩ বর্গ কিমি জুড়ে খজুরাহোর মন্দিররাজি তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত – ওয়েস্টার্ন, ইস্টার্ন ও সাদার্ন। তবে পশ্চিমি গোষ্ঠীরই প্রশস্তি বেশি। পশ্চিম অঞ্চলই খাজুরাহোর প্রাণকেন্দ্র। ১২টি মন্দির নিয়ে পশ্চিমের মন্দিররাজি। সবগুলো না পারলে অবশ্যই দেখবেন কাণ্ডারীয় মহাদেব, লক্ষণ, বিশ্বনাথ, চিত্রগুপ্ত ও দেবী জগদম্বার মন্দির। পশ্চিম গোষ্ঠীর দক্ষিণে শিব সাগর বা লেক। সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে চৌষাট যোগিনী মন্দির।
দুলাদেও আর চতুর্ভুজ, এই দুই মন্দির নিয়ে দক্ষিণ গোষ্ঠী। খজুরাহোর মেন স্কোয়ার থেকে দেড় কিমি দক্ষিণে দুলাদেও মন্দির। আর দুলাদেও থেকে দেড় এবং পশ্চিম থেকে চার কিমি দূরে বিমানবন্দরের পথে শিখরধর্মী চতুর্ভুজ মন্দির।
পশ্চিম তথা বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিমি পুবে নিনোরা তালের পাড়ে দুটি ভাগে পুবের মন্দিররাজি। ৩টি মন্দির জৈন, একই চত্বরে। আর ৩টি হিন্দু মন্দির গ্রামময় ছড়িয়ে। আদিনাথ, পার্শ্বনাথ ও শান্তিনাথ মন্দির দেখে তার পর দেখে নিন জবারী মন্দির, বামন মন্দির ও ব্রহ্মা মন্দির।
দ্বিতীয় দিনে সক্কালেই চলুন পান্না জাতীয় উদ্যানে। উদ্যানের মাডলা গেট ২৪ কিমি। জাতীয় উদ্যান দেখে আরও ৭ কিমি পশ্চিমে গিয়ে দেখে নিন পাণ্ডব ফলস্। খজুরাহো ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে চলুন ৫ কিমি উত্তরে ১৯ শতকের পাহাড়ি দুর্গ তথা রাজনগর প্রাসাদ এবং আরও ১৯ কিমি উত্তরে রাজা ওয়াটারফলস্।
ষষ্ঠ দিন – চলুন বান্ধবগড়, দূরত্ব ২২৭ কিমি। বাসে গেলে সাতনায় বদল করে টালা চলুন। না হলে গাড়ি ভাড়া করে চলুন। রাত্রিবাস বান্ধবগড়।
সপ্তম দিন – সকালে ও বিকেলে সাফারি করুন। রাত্রিবাস বান্ধবগড়।
অষ্টম দিন – খুব সকালে বেরিয়ে পড়ুন। গাড়ি ভাড়া করে চলুন কানহার কিসলি বা মুক্কি গেটে, দূরত্ব কম-বেশি ২৫০ কিমি। সময় থাকলে বিকেলে একটা সাফারি করুন। রাত্রিবাস কানহা।
নবম দিন – সকালে ও বিকালে সাফারি করুন। রাত্রিবাস কানহা।
দশম দিন – গাড়ি ভাড়া করে চলুন জবলপুর, দূরত্ব ১৯৭ কিমি। রাত্রিবাস জবলপুর।
একাদশ দিন – রাত্রিবাস জবলপুর।
জবলপুরে দেখুন –
জবলপুরের মূল আকর্ষণ মার্বেল রকস্, শহর থেকে ২৩ কিমি পশ্চিমে। নর্মদা নদীর খাতে দুই তীরে শ’ খানেক ফুট উঁচু খাড়া পাহাড় ম্যাগনেসিয়াম চুনাপাথরের। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলোয় সে এক অপরূপ দৃশ্য। নৌকাবিহার করুন নর্মদার বুকে। পাহাড় যেখানে শেষ হয়েছে তার নাম মানকিস লিপ, ডান হাতে দত্তাত্রেয় মুনির গুহা। মহর্ষি ভৃগুও তপস্যা করেছেন এই পাহাড়ে। এই জায়গার নাম ভেরাঘাট।
ভেরাঘাটের কাছেই ১০৮ ধাপ সিঁড়ি উঠে পাহাড়চুড়োয় চৌষাট যোগিনী মন্দির।ভেরাঘাটের কাছেই ধুঁয়াধার জলপ্রপাত – নর্মদা নদী শ’ খানেক ফুট নীচে আছড়ে পড়েছে। মার্বেল রকসের পথে ৭ কিমি দূরে গোন্ড রাজাদের এক কালের রাজপ্রাসাদ তথা মদল মহল দুর্গ। দুর্গের পাহাড়ি পথে ব্যালান্সিং রক – একের ওপরে আর এক পাথরখণ্ডের অবস্থান মুগ্ধ করে। বাস বা ট্যাক্সিতে পাহাড়তলি পৌঁছে পায়ে হেঁটে দুর্গ। মার্বেল রকসের পথেই পিসান হরি জৈন মন্দির। শহরে দেখুন মতিলাল পার্ক, রানি দুর্গাবতী মিউজিয়াম।
দ্বাদশ দিন – চলুন পাঁচমাড়ি। জবলপুর থেকে পিপারিয়া যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে। সব থেকে ভালো হয়, সকাল ৭টার বিন্ধ্যাঞ্চল এক্সপ্রেস বা ৮.০৫-এর সঙ্ঘমিত্রা এক্সপ্রেস। পিপারিয়া পৌঁছে যাবেন সকাল ১০.০৪ বা ১০.২৩-এ। পিপারিয়া থেকে পাঁচমাড়ি ৫৪ কিমি পথ, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাস। গাড়ি ভাড়া করেও যেতে পারেন। অথবা জবলপুর থেকে বাসে এলে গদরওয়ারায় বাস বদল করতে হবে। জবলপুর থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন পাঁচমাড়ি, দূরত্ব ২৫১ কিমি। রাত্রিবাস পাঁচমাড়ি।
ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ দিন – রাত্রিবাস পাঁচমাড়ি (৩৫০০ ফুট)।
পাঁচমাড়িতে দেখুন –
পাণ্ডব গুহা, হান্ডি খো, প্রিয়দর্শিনী পয়েন্ট, মহাদেব গুহা, মারাদেও গুহা (গুহার কমপ্লেক্স), পার্বতী গুহা, গুপ্ত মহাদেবের গুহা, চৌরাগড় পাহাড় শিরে শিবমন্দির, রাজেন্দ্রগিরি। ধূপগড় (সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত, শেষ ২ কিমিতে চড়াই উঠে সাতপুরা রেঞ্জে৪৪২৯ ফুটের সর্বোচ্চ শিখর), জটাশংকর গুহা, হার্পারস কেভ, মূল পথের বাঁয়ে অম্বাদেবীর মন্দির, ডাচেস ফলস্ (অসংখ্য সিঁড়ি ভেঙে নামতে হয়), সুন্দরকুণ্ড, যমুনা জলপ্রপাত (বি ফলস্), লিটল্ ফলস্, রজত প্রপাত, বিগ ফলস্, আইরিন পু্ল, চার্চ ইত্যাদি সহ ৫০টিরও বেশি ভিউ পয়েন্ট।
পাঁচমাড়ি অবস্থানে অবশ্যই ঘুরে নেবেন সাতপুরা ন্যাশনাল পার্ক। রজত প্রপাত, অপ্সরা বিহার, পাঞ্চালী কুণ্ডের অবস্থান জাতীয় উদ্যানে।
পঞ্চদশ দিন – ঘরে ফেরা। চলে আসুন পিপরিয়া, দূরত্ব ৫৩ কিমি। ধরুন মুম্বই-হাওড়া মেল। হাওড়া মেল সকাল পৌনে ১০টায় পিপরিয়া ছেড়ে পরের দিন বেলা ১২টায় হাওড়া। অন্য শহরে ফেরার ট্রেনও পেয়ে যাবেন।
ভ্রমণছক ২ – জঙ্গলদর্শন (বান্ধবগড়-কানহা-পেঞ্চ-তাডোবা)
প্রথম দিন – বান্ধবগড়ের উদ্দেশে রওনা। উমারিয়া থেকে ৩৫, শাহদোল থেকে ৬৭, কাটনি থেকে ১০২ এবং সাতনা থেকে ১২০ কিমি। যে কোনো জায়গাতে নেমেই বান্ধবগড় যাওয়া যায়।
হাওড়া থেকে মুম্বই মেল (ভায়া ইলাহাবাদ) ছাড়ে রাত ৯.৫৫ মিনিটে। সাতনা পৌঁছোয় পরের দিন দুপুর ২.৫০ মিনিটে, কাটনি পৌঁছোয় বিকেল সোয়া ৪টেয়। শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে দুপুর ১.১০ মিনিটে ছেড়ে কাটনি পৌঁছোয় পরের দিন দুপুর ১২.২৫ মিনিটে। শিপ্রা এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে ছাড়ে সোম, বৃহস্পতি ও শনি, বিকেল ৫.৪৫ মিনিটে। সাতনা পৌঁছোয় পরের দিন সকাল সোয়া ১১টায়, কাটনি পৌঁছোয় দুপুর ১২.৫৫ মিনিটে। সাতনা/কাটনি থেকে গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানের টালা গেটে। অথবা বাসে টালা মোড়ে এসে সেখান থেকে ট্রেকারে চলে আসুন সাড়ে ৩ কিমি দূরে বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানের টালা গেটে।
কলকাতা থেকে শাহদোল যাওয়ার জন্য তিনটি সাপ্তাহিক ট্রেন আছে, বুধ, শনি ও রবি। দু’টি ছাড়ে শালিমার থেকে আর একটি সাঁতরাগাছি থেকে। তিনটি ট্রেনই পৌঁছোয় সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ। শাহদোল থেকে বাসে চলে আসুন টালা মোড়। সেখান থেকে ট্রেকারে টালা গেটে।
উমারিয়া যেতে হলে বিলাসপুরে ট্রেন বদল করতে হবে। হাওড়া থেকে বিলাসপুর যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে। তবে বিলাসপুর পৌঁছোনোর সময় অনুযায়ী সব চেয়ে ভালো ট্রেন হাওড়া-মুম্বই (ভায়া নাগপুর) মেল এবং আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেস। প্রথমটি বিলাসপুর পৌঁছোয় সকাল সোয়া ৭টায় এবং দ্বিতীয়টি সকাল পৌনে ৮টায়। বিলাসপুর থেকে উমারিয়া যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে। ট্রেন বিশেষে সময় লাগে চার থেকে ছ’ ঘণ্টা। উমারিয়া থেকে আধ ঘণ্টায় জিপে চলে আসুন টালা গেটে।
মুম্বই থেকে এলে কাটনিতে নামাই সুবিধাজনক। প্রচুর ট্রেন আছে। ট্রেন বিশেষে সময় লাগে ১৬ থেকে ২২ ঘণ্টা। দিল্লি থেকে এলে ট্রেন বিশেষে কাটনি বা উমারিয়াতে নামা যায়।
বিমানে এলে নামতে হবে খাজুরাহোয়। সেখান থেকে বান্ধবগড় ২২৭ কিমি। গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন।
দ্বিতীয় দিন – সাতনা/কাটনি/শাহদোল/উমারিয়া পৌঁছে সেখান থেকে চলুন বান্ধবগড়। রাত্রিবাস বান্ধবগড়।
তৃতীয় দিন – সকালে ও বিকেলে জঙ্গল সাফারি করুন। রাত্রিবাস বান্ধবগড়।
চতুর্থ দিন – সকালে আরও একবার সাফারি করুন। দুপুরে লাঞ্চের পর ঘুরে আসুন বান্ধবগড় ফোর্ট। রাত্রিবাস বান্ধবগড়।
পঞ্চম দিন – খুব সকালে বেরিয়ে পড়ুন। গাড়ি ভাড়া করে চলুন কানহার কিসলি বা মুক্কি গেটে, দূরত্ব কম-বেশি ২৫০ কিমি। সময় থাকলে বিকেলে একটা সাফারি করুন। রাত্রিবাস কানহা।
ষষ্ঠ দিন – সকালে ও বিকালে সাফারি করুন। রাত্রিবাস কানহা।
সপ্তম দিন – গাড়ি ভাড়া করে চলুন পেঞ্চের তুরিয়া গেটে, দূরত্ব ১৯৪ কিমি। বিকেলে সাফারি করুন। রাত্রিবাস পেঞ্চ।
অষ্টম দিন – সকালে আরও একটা সাফারি করে বেরিয়ে পড়ুন নাগপুরের উদ্দেশে। সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন নাগপুরে, ৯৫ কিমি। কিংবা গাড়ি ভাড়া করে বা ট্রেকারে ১৫ কিমি দূরের খাওয়াসা এসে বাসে চলে আসুন ৮০ কিমি দূরের নাগপুর। রাত্রিবাস নাগপুর।
নাগপুরে দেখে নিন
ভোঁসলে প্রাসাদ, ভোঁসলে ছত্তিশ, গান্ধীসাগর, গান্ধীবাগ, সতী মন্দির, সর্বেশ্বরা মন্দির ইত্যাদি।
নবম দিন – চলুন তাডোবা। নাগপুর থেকে ভোর ৪.১০-এর কেরল এক্সপ্রেস ধরলে সকাল ৬.৫২-য় চন্দ্রপুর। কিংবা সকাল ৯.৪৫-এর তেলঙ্গানা এক্সপ্রেস ধরলে বেলা ১২.২৩-এ চন্দ্রপুর। সেখান থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন ৪৫ কিমি দূরের তাডোবায়। নাগপুর থেকে বাসে চন্দ্রপুরা এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন তাডোবায়। কিংবা সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে নাগপুর থেকে তাডোবা চলে আসুন, ১৩২ কিমি। বিকেলে তাডোবায় সাফারি করুন। রাত্রিবাস তাডোবা।
দশম দিন – আজও থাকুন তাডোবায়। সকালে-বিকেলে সাফারি করুন। মনে রাখবেন, ভারতে একমাত্র তাডোবাতেই বাঘ দেখার সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশি।
একাদশ দিন – নাগপুর হয়ে ফিরুন ঘরপানে।
দেশের যে কোনো প্রান্তের সঙ্গে নাগপুর ট্রেন ও বিমানপথে যুক্ত। হাওড়া আসার অনেক ট্রেন আছে। তবে সময় অনুযায়ী সুবিধাজনক ট্রেন জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস সকাল ৯.৫০, ওখা-হাওড়া এক্সপ্রেস সকাল ৯.৫০, আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেস ১০.১০ সমরসতা এক্সপ্রেস সকাল ১০.৫৫, মুম্বই-হাওড়া মেল সকাল ১১.১৫, এলটিটি-শালিমার এক্সপ্রেস দুপুর ১.২৫, অমদাবাদ-হাওড়া এক্সপ্রেস বিকেল ৫.৫৫, গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস সন্ধে ৭টা।
ভ্রমণছক ৩ – বারাণসী-খাজুরাহো-ওরছা-শিবপুরী-গ্বালিয়র (গোয়ালিয়র)
প্রথম দিন – বারাণসীর উদ্দেশে রওনা। ভারতের সব বড়ো জায়গা ট্রেন ও বিমান পথে বারাণসির সঙ্গে যুক্ত। সুবিধাজনক ট্রেন ধরে বারাণসী বা দীনদয়াল উপাধ্যায় নগর (মোঘলসরাই) পৌঁছে যান সকালের দিকে।
হাওড়া থেকে বারাণসী যাওয়ার সুবিধাজনক ট্রেন – অমৃতসর মেল (হাওড়া সন্ধে ৭.১০, বারাণসী পরের দিন সকাল ৯.১২); বিভূতি এক্সপ্রেস (হাওড়া রাত ৮টা, বারাণসী পরের দিন সকাল সাড়ে ৯টা); দুন এক্সপ্রেস (হাওড়া রাত ৮.২৫, বারাণসী পরের দিন সকাল ১০.২০); এ ছাড়াও হাওড়া থেকে দীনদয়াল উপাধ্যায় নগর (মোঘলসরাই) আসার এক গুচ্ছ ট্রেন আছে। মোঘলসরাই থেকে বারাণসী ১৯ কিমি, ট্যাক্সি বা অটো করে চলে আসুন।
দ্বিতীয় দিন – রাত্রিবাস বারাণসী।
তৃতীয় দিন – সারা দিন বারাণসীতে কাটিয়ে বিকেল পৌনে ৬টার খজুরাহো লিঙ্ক এক্সপ্রেস ধরে চলুন খজুরাহো। এই ট্রেন সোম, বুধ ও শনি বারাণসী থেকে ছাড়ে।
বারাণসীতে কী দেখবেন, কী করবেন –
দেখুন বিশ্বনাথ মন্দির, আলমগীর মসজিদ, মন্দির ও মসজিদের মাঝে জ্ঞানের কূপ জ্ঞানভাপী, বিশ্বনাথ মন্দিরের বিপরীতে গলিপথে অন্নপূর্ণা মন্দির। এ ছাড়াও দেখুন রানি ভবানীর তৈরি নাগারা শৈলীর দুর্গা মন্দির, রামচরিতমানস স্রষ্টা তুলসীদাসের স্মৃতিতে তৈরি তুলসী মানস মন্দির, বিদ্যাপীঠ রোডে ভারতমাতা মন্দির, কোতোয়ালি থানার পিছনে ভৈরবনাথের মন্দির, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সংকটমোচন মন্দির, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। সন্ধ্যায় দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গারতি দেখুন। বারাণসীতে উত্তরবাহিনী গঙ্গায় রয়েছে ৩৬৫টি ঘাট, যার মধ্যমণি দশাশ্বমেধ। নৌকাবিহার করে যতগুলো সম্ভব ঘাট দেখে নিন। দশাশ্বমেধ ঘাট থেকে নৌকায় বা গোধুলিয়া থেকে বাসে বা অটোয় চলুন ১৮ কিমি দূরে রামনগর (১৭ শতকের রাজবাড়ি, অস্ত্রাগার, সংগ্রহশালা, গঙ্গাকিনারে রাজা জৈৎ নির্মিত দুর্গা মন্দির, প্রাসাদের পিছে গঙ্গা কিনারে ব্যাসদেবের মন্দির)। কাশী-রামনগর পথে ব্যাসকাশী। অবশ্যই ঘুরে আসুন ১০ কিমি বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সারনাথ।
চতুর্থ দিন – ভোর ৫.২০ মিনিটে পৌঁছে যান খজুরাহো। রাত্রিবাস খজুরাহো।
পঞ্চম দিন – আজও থাকুন খজুরাহোয়।
খজুরাহোয় কী দেখবেন (দেখুন ভ্রমণছক ১)
ষষ্ঠ দিন – খজুরাহো থেকে সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে পড়ুন, গাড়ি ভাড়া করে চলুন মিউজিয়াম নগরী ওরছা, ১৭২ কিমি। দুপুর ১২.৩৫-এর খজুরাহো-ঝাঁসি প্যাসেঞ্জার ট্রেনেও আসতে পারেন। ওরছা পৌঁছোয় বিকেল ৫টায়। খজুরাহো থেকে বাসেও আসতে পারেন ওরছা। রাত্রিবাস ওরছা।
সপ্তম দিন – আজও থাকুন ওরছায়।
ওরছায় দেখুন –
বেতোয়া নদীতে ঘেরা দ্বীপে বুন্দেলাদের এক সময়ের রাজধানী ওরছা। ১৭ শতকে বীর সিংদেওর গড়া বহুমুখী খিলানযুক্ত সেতু পেরিয়ে প্রাসাদ কমপ্লেক্স ওরছায়। দেখে নিন রাজামহল প্রাসাদ। মোঘলসম্রাট জাহাঙ্গিরের আমলে ওরছার রমরমা। দেখে নিন জাফরির সুষমামণ্ডিত অনুপম হর্ম্য জাহাঙ্গির মহল (এখানে আজ প্রত্নতত্ত্ব দফতরের মিউজিয়াম)। মান্ডুতে যেমন কান পাতলেই শোনা যায় রূপমতী-বাজবাহাদুরের প্রেমকাহিনি, তেমনই ওরছার বাতাসে ভাসে রাজা ইন্দ্রমণি ও রাজ দরবারের নর্তকী রাই পরভিনের প্রেমগাথা। দেখে নিন ইন্দ্রমণির গড়া রাই পরভিন মহল। রাজামহল ও জাহাঙ্গির মহলের মাঝে ১৮ শতকের শিশমহল। দেখে নিন রানি-কা-মহলও। শিশমহল থেকে ১ কিমি দূরে রামরাজা মন্দির। রামরাজার ডাইনে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে বিগ্রহহীন ভাস্কর্যমণ্ডিত দুর্গাকার চতুর্ভুজ মন্দির। রামরাজা মন্দিরের পাশ দিয়ে মিনিট পনেরোর পথ মাড়িয়ে গ্রামের শেষে অনুচ্চ টিলায় ১৭ শতকের দুর্গাকার লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, ওরছা শৈলীতে ফ্রেস্কো চিত্র ও সিলিং-এর চিত্র অনবদ্য। রামরাজা মন্দিরের বিপরীতে মোঘলি গার্ডেন ফুলবাগ। সেটি পেরিয়ে হরদৌল কা বৈঠক তথা প্রাসাদ। বেতোয়া নদীর তীরে কাঞ্চনঘাটে বুন্দেল রাজাদের রয়্যাল ছত্তিশ (১৪টি)। স্বাধীনতা সংগ্রামী চন্দ্রশেখর আজাদের ওরছায় আত্মগোপনের স্মারক রূপে তৈরি শহিদ স্মারক দেখতে ভুলবেন না।
অষ্টম দিন – সক্কালেই গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন শিবপুরীর উদ্দেশে। প্রথমে চলুন ঝাঁসি। খুব লড়ি মর্দানী উও তো ঝাঁসিওয়ালি রানি থি – দেখে নিন রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের স্মৃতি বিজড়িত ঝাঁসির দুর্গ। ঝাঁসি থেকে চলুন ডাটিয়া, ২৪ কিমি, দেখে নিন জাহাঙ্গির মহল, গোবিন্দ মন্দির প্রাসাদ, সরোবর, গামা পালোয়ানের প্রাসাদ, কর্ণ সাগরের পাড়ে নানান মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ও ছত্তিশ। ডাটিয়া থেকে চলুন শিবপুরী, ১০৫ কিমি। রাত্রিবাস শিবপুরী।
নবম দিন – আজও থাকুন শিবপুরীতে। শহর থেকে ৭ কিমি দূরে মাধব জাতীয় উদ্যান। পারলে সকালে ও বিকেলে, দু’ দফায় সাফারি করুন। বন্যজন্তু দেখার জন্য বেশ কয়েকটি অবজারভেশন টাওয়ার আছে। এর মধ্যে অন্যতম জর্জ কাসল্। উদ্যানের মাঝে সখ্যাসাগর লেকের পাড়ে সূর্যাস্ত রমণীয়। রয়েছে মাধব সাগর লেক। বাস স্ট্যান্ড থেকে ২ কিমি দূরে ভিক্টোরিয়ান বাতিতে আলোকিত, নানা ফুলে শোভিত মোঘল গার্ডেনের ধাঁচে গড়া বাগিচায় সিন্ধিয়া রাজদের ছত্তিশ আরও এক দ্রষ্টব্য। আর আছে মুখোমুখি রাধা-কৃষ্ণ ও শ্রীরাম মন্দির। দেখে নিন ১৯৫৭-য় তৈরি ছবুত্র তথা সিপাহি বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক তাঁতিয়া টোপীর ফাঁসিস্থলে তৈরি স্মারক। আরও এক দ্রষ্টব্য সিন্ধিয়া পরিবারের গ্রীষ্মাবাস মাধববিলাস প্রাসাদ। ওই প্রাসাদ মহল নামে খ্যাত। দেখে নিতে পারেন শিবপুরী থেকে ২৮ কিমি দূরে সুলতানগড় ওয়াটারফল, অন্য দিকে ৩৫ কিমি পাওয়া ওয়াটারফল।
দশম দিন – সকালে বেরিয়ে পড়ুন, চলুন ১১৬ কিমি দূরের গ্বালিয়র, যাকে আমরা গোয়ালিয়র বলি। আধ ঘণ্টা অন্তর বাস ছাড়ে শিবপুরী থেকে, তিন ঘণ্টার পথ। ট্রেনও আছে। সকাল ৮.১০-এর কোটা-ভিন্দ প্যাসেঞ্জার গোয়ালিয়র পৌঁছে দেয় বেলা ১২টায়। তবে ট্রেনের স্বল্পতার জন্য বাসে আসাই সুবিধাজনক। তা ছাড়া গাড়ি ভাড়া করে তো আসাই যায়। রাত্রিবাস গ্বালিয়র।
একাদশ দিন – আজও থাকুন গ্বালিয়রে।
গ্বালিয়রে দেখুন –
(১) গ্বালিয়র ফোর্ট – বাবর বলেছিলেন ভারতের দুর্গগুলোর মধ্যে মুক্তো, ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে গোপাচল পাহাড়ের উপর তৈরি। দক্ষিণ-পশ্চিম বা উত্তর-পুবে দুটি পথে দুর্গে প্রবেশ – দক্ষিণ-পশ্চিমের পথে ৭-১৫ শতকের মধ্যে পাহাড় কেটে তৈরি ২২ জৈন তীর্থঙ্করের মূর্তি, রঙবেরঙের দেওয়ালচিত্র, ৬টি শিলালিপির সঙ্গে মহাদেবের পিতামাতার মূর্তি, পদ্মের উপর দণ্ডায়মান আদিনাথ ও উপবিষ্ট নেমিনাথের মূর্তি; উত্তর-পূর্বে প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম হয়ে ১ কিমি দীর্ঘ বন্ধুর পথ উঠেছে দুর্গের। ৫টি গেট বা মহল পেরিয়ে দুর্গ – আলমগীর গেট, বাদলগড় তথা হিন্দোল গেট, বানসুর বা আরচেরি গেট (আজ লুপ্ত), গণেশ গেট (এখানে রয়েছে চতুর্ভুজ বিষ্ণু মন্দির) ও হস্তী গেট। দক্ষিণ-পশ্চিম বা উত্তর-পূর্ব, যে কোনো গেট দিয়ে দুর্গে ঢুকুন। উত্তর-পূর্ব বা গ্বালিয়র গেট দিয়ে ঢুকলেই বেলেপাথরের গুজরী মহল (রাজ্য প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম), গুর্জর বংশীয় প্রিয়তমা মহিষী মৃগনয়নীর জন্য ১৫১০-এ মান সিং-এর তৈরি। হস্তী গেট পেরোতেই মান সিং প্যালেস (নিজেরই তৈরি), লাগোয়া বিক্রমাদিত্য প্যালেস, অদূরে করণ মন্দির, মানমন্দিরে প্রতি সন্ধ্যায় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো, বিপরীতে ৮০ পিলারের জহর কুণ্ড বা বাউড়ি, মানমন্দিরের পিছনে জাহাঙ্গির মহল ও শাহজাহান মহল, অদূরেই শাশ (শাশুড়ি) আর বহুঁ (বউ) পৃথক পৃথক মন্দির (মন্দির সংলগ্ন চাতাল থেকে শহর দৃশ্যমান), দুর্গের পশ্চিমে প্রাচীনতম (৮ শতকে তৈরি) তেলী-কা-মন্দির; বিপরীতে ষষ্ঠ শিখগুরু হরগোবিন্দর দু’ মাস বন্দিবাসের স্মারক রূপে গড়া গুরদ্বার দাতা বন্দি ছোড়। গুরদ্বারের পশ্চিমে সুরজ কুণ্ড। পশ্চিমে সিন্ধিয়া স্কুল। আর রয়েছে সাধু গ্বালিপার মূর্তি, মসজিদ, ম্যাগাজিন, একখাম্বা তাল, রানি তাল, ছেদি তাল আরও কত কী!
এ ছাড়া দেখুন জয়বিলাস প্যালেস, তানসেনের সমাধি, ফকির মহম্মদ ঘাউসের মকবরা, কোনার্কের আদলে তৈরি সূর্য মন্দির, কিংবদন্তি শাস্ত্রীয় সংগীতকার উস্তাদ হাফিজ আলি খাঁ-এর বাসভবনে তৈরি সরোদ ঘর, রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের সমাধি, তিঘারা ড্যাম (১৭ কিমি), পদাবলি (৩৭ কিমি দূরে প্রচুর প্রাচীন মন্দির সহ দুর্গ)।
দ্বাদশ দিন – চলুন ঘরপানে। গ্বালিয়র ভারতের সব শহরের ট্রেনপথে যুক্ত। হাওড়া আসার ট্রেন সপ্তাহে চার দিন – চম্বল এক্সপ্রেস সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি গ্বালিয়র থেকে ছাড়ে সকাল ৭.১৫-য়, হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৬.৫০ মিনিটে। ট্রেনের স্বল্পতার জন্য গ্বালিয়র থেকে আগরা (ট্রেনে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টার পথ) বা দিল্লি এসে (ট্রেনে ঘণ্টা পাঁচেকের পথ) সেখান থেকে হাওড়া ফেরা যায়।
কোথায় থাকবেন
(১) মধ্যপ্রদেশ পর্যটনের থাকার ব্যবস্থা – খাজুরাহোয় এমপিটি ঝঙ্কার, এমপিটি পায়েল; বান্ধবগড়ের টালা গেটে দ্য হোয়াইট টাইগার ফরেস্ট লজ; কানহার মুক্কি গেটে এমপিটি সাফারি লজ, সরহি গেটের কাছে বাঘিরা জঙ্গল রিসর্ট, কিসলি গেটের একটু আগে মোচায় বাঘিরা জঙ্গল রিসর্ট, কানহার মুক্কি গেট থেকে ১৮ কিমি দূরে গাওয়া কানহা রিসর্ট; পেঞ্চের তুরিয়া গেটে কিপলিং কোর্ট, কর্মঝিরি গেটের কাছে পেঞ্চ ট্রি লজ; জবলপুরে এমপিটি কালচুরি রেসিডেন্সি, এমপিটি মার্বেল রকস্ (ভেরাঘাট); পাঁচমাড়িতে এমপিটি রক এন্ড ম্যানর, এমপিটি গ্লেন ভিউ, এমপিটি চম্পক বাংলো, এমপিটি অমলতাস, এমপিটি ক্লব ভিউ, এমপিটি দেবদারু বাংলো, হিলপট বাংলো, এমপিটি কর্নিকর বাংলো, এমপিটি সাতপুরা রিট্রিট, পঞ্চবটী হোটেল, এমপিটি হাইল্যান্ডস; ওরছায় এমপিটি বেতোয়া রিট্রিট, এমপিটি শিশ মহল; গ্বালিয়রে এমপিটি তানসেন রেসিডেন্সি। অনলাইন বুকিং www.mptourism.com।
(২) মহারাষ্ট্র পর্যটনের থাকার ব্যবস্থা – তাডোবায় জঙ্গল রিসর্ট, নাগপুরে ট্যুরিস্ট রিসর্ট। অনলাইন বুকিং https://mtdchotels.com।
(৩) উত্তর প্রদেশ পর্যটনের থাকার ব্যবস্থা – ইলাহাবাদ তথা প্রয়াগরাজে রাহি ইলাওয়ার্ত; বারাণসীতে রাহি ট্যুরিস্ট বাংলো। অনলাইন বুকিং http://www.uptourism.gov.in/
এ ছাড়াও বারাণসীতে অজস্র ধর্মশালা রয়েছে – বীরেশ্বর পাঁড়ে ধর্মশালা (২৪৫৫২২৭), হরসুন্দরী (২৪৫২৪৪৬), শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া (২৪১২৬৭৪), রামকৃষ্ণ মিশন গেস্ট হাউস (৯৭৯৩২০৫৫৫১), ভারত সেবাশ্রম সংঘ (০৫৪২ ২২২ ১৬৩৯)
সব জায়গাতেই বেসরকারি হোটেল ও রিসর্ট আছে। সন্ধান পাবেন www.booking.com , www.makemytrip.com , www.yatra.com , www.trivago.in , www.airbnb.co.in , www.tripsavvy.com ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।
মনে রাখবেন
১। ট্রেনের বিস্তারিত সময়সূচির জন্য দেখে নিন erail.in
২। ভ্রমণছক ১ থেকে ইলাহাবাদ বাদ দিলে সরাসরি সাতনা আসুন। হাওড়া থেকে মুম্বই মেল (ভায়া ইলাহাবাদ) ছাড়ে রাত ৯.৫৫ মিনিটে। সাতনা পৌঁছোয় পরের দিন দুপুর ২.৫০ মিনিটে। শিপ্রা এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে ছাড়ে সোম, বৃহস্পতি ও শনি, বিকেল ৫.৪৫ মিনিটে। সাতনা পৌঁছোয় পরের দিন সকাল সোয়া ১১টায়। দিল্লি ও মুম্বই থেকে বেশ কিছু ট্রেন আছে যাতে এলে সকাল বা বেলার দিকে সাতনা পৌঁছোনো যায়। সাতনা থেকে বাসে বা গাড়িতে চলুন খজুরাহো, ১১৭ কিমি। বিকেলের দিকে খজুরাহো এসে পৌঁছোলে, পরের দুটো দিন খজুরাহোয় থাকুন। সে ক্ষেত্রে ভ্রমণ এক দিন কমে যাবে।
৩। সাত সকালে অটো, জিপ, ট্যাক্সি, রিকশা বা টাঙা চেপে ঘুরে নিন খাজুরাহোর পুব ও দক্ষিণের মন্দিরগুলো। তার পর দুপুরের খাওয়া সেরে পায়ে পায়ে দেখে নিন পশ্চিমের মন্দিররাজি। এক দিনের বৈকালিক সফরে পশ্চিম দেখা সম্পূর্ণ না হলে পরের দিন আবার বৈকালিক সফর করুন। সে দিন সক্কালেই গাড়ি ভাড়া করে চলুন পান্না জাতীয় উদ্যান। খজুরাহো ফিরে অটো বা জিপ ভাড়া করে ঘুরে আসুন ৫ কিমি উত্তরে ১৯ শতকের পাহাড়ি দুর্গ তথা রাজনগর প্রাসাদ এবং আরও ১৯ কিমি উত্তরে রাজা ওয়াটারফলস্।
৪। বর্ষায় বন্ধ থাকার পর কেন নদীর পুব পাড়ে পান্না জাতীয় উদ্যান ১৫ অক্টোবর খোলে। প্রবেশদ্বারে টিকিট মেলে। নিজেদের ব্যবস্থায় গাড়ি ভাড়া করতে হয়। প্রবেশ ফি ও গাইড চার্জ আলাদা। অগ্রিম টিকিটের জন্য https://forest.mponline.gov.in/
৫। বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে বিশদ জানতে হলে দেখুন https://www.bandhavgarh-national-park.com/
৬। কানহা জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে বিশদ জানতে হলে দেখুন http://www.kanhanationalpark.com/
৭। পেঞ্চ জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে বিশদ জানতে হলে দেখুন www.penchtiger.co.in
৮। তাডোবা জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে বিশদ জানতে হলে দেখুন www.tadobanationalpark.in
৯। মাধব জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে বিশদ জানতে হলে দেখুন http://natureconservation.in
১০। পাঁচমাড়িতে স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করে ঘুরবেন। কিছু জায়গা দেখার জন্য টিকিট কাটতে হয়। সাতপুরা জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে বিশদ জানতে হলে দেখুন www.satpura-national-park.com
১১। নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছেই সাফারি বুক করে নেবেন। সাধারণত সক্কাল থেকে বেলা পর্যন্ত, আবার বিকেলের দিকে সাফারি হয়। একাধিক সাফারি করলে এক এক সময় এক একটা জোনে সাফারি করবেন।
১২। যেখানে থাকবেন সেখানেই পরবর্তী গন্তব্যে যাওয়ার জন্য গাড়ির খোঁজ করে নেবেন।
১৩। বান্ধবগড়ে সাধারণত জঙ্গল সাফারিতে ফোর্ট দেখানো হয় না। যেখানে থাকবেন সেখানকার ম্যানেজারকে বলে ফোর্ট দেখার জন্য জিপ বুক করতে হবে।
১৪। ভ্রমণছক ১-এ জবলপুর বাদ দিলে দু’ দিন কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে কানহা থেকে দশম দিনে চলে আসুন পাঁচমাড়ি, দূরত্ব ৩১২ কিমি।
১৫। ভ্রমণছক ১-এ কানহা বাদ দিলে দু’ দিন কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে বান্ধবগড় থেকে অষ্টম দিনে চলে আসুন জবলপুর, দূরত্ব ১৬৫ কিমি।
১৬। বারাণসী থেকে খাজুরাহোর ট্রেন সোম, বুধ ও শনি ছাড়ে। সুতরাং ভ্রমণছক ৩-এ সেই ব্যাপারটা মাথায় রেখে বারাণসী যাওয়ার টিকিট কাটবেন।
১৭। ভ্রমণছক ৩-এ সারনাথ দেখার জন্য অন্তত একটি বেলা হাতে রাখবেন।
১৮। বারাণসীতে প্যাঁড়া, মালাই, রাবড়ি, লস্যি-সহ বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
১৯। গ্বালিয়র ঘোরার জন্য ট্যাক্সিই উপযুক্ত বাহন, বিশেষ করে দুর্গ পরিক্রমায়। টাঙা/অটো/রিকশা দুর্গ চড়তে অক্ষম, নামিয়ে দেয় দুর্গের পাদদেশে।
২০। গ্বালিয়র ফোর্ট বন্ধ থাকে সোমবার।