
সপ্তাহান্ত কাটানোর মতো সুন্দর জায়গা, বেশ খোলামেলা, সঙ্গে ছোটোদের পার্ক। পাশেই একটি লেক, যেখানে চার সিটের নৌকায় প্যাটেল সহযোগে করা যাবে নৌকাবিহার। আবার এই লেকের মাঝে রয়েছে একটি ছোট্ট কিন্তু আকর্ষণীয় অ্যাকোয়ারিয়াম। পাশাপাশি এই বাগানেই রয়েছে প্রায় ১২০০ গাছের রকমারি গোলাপ। সঙ্গে নানা রকমারি ফুলও। এই বাংলায় এক সঙ্গে সব চেয়ে বেশি ফুল বন দফতরের এই বাগানেই ফোটে বলে জানালেন বিট অফিসার তাপস কারক। শুধু তা-ই নয়, ছোটো ছোটো বনসাই গাছের মোড়কে বাগানের মধ্যে হাঁটার রাস্তা। এর সঙ্গে জুড়ে দিন শালের বাগান। সঙ্গে লাল চন্দন, সাদা চন্দন, পিয়াশালের বাগান। এ সব কিছু কিন্তু প্ল্যান্টেশন করে তৈরি করা। এ সবের সঙ্গে পাবেন পাখির চিড়িয়াখানা। ময়ূর, এমু পাখিরা আপনাকে অভিবাদন জানাবে। সঙ্গে পাবেন খরগোশও।
আরও পড়ুন পুজোয় চলুন: গন্তব্য মধ্যপ্রদেশ ১
এতক্ষণে হয়তো মনে কৌতূহল জন্মেছে, এ সব এক জায়গায় পাওয়া যাবে! হ্যাঁ। পাওয়া যাবে, ‘পরিমল কানন’-এ, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোডে। বন বিভাগের ৪০০ বিঘা এলাকা জুড়ে বিস্তৃত চোখজুড়োনো একটি স্পট। ওঃ হ্যাঁ, বলতে ভুলেই গেছি, রয়েছে টয় ট্রেনও, যা চড়ে আপনি ‘পরিমল কানন’-এর কিছুটা অংশ হইহই করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। আরও রয়েছে – বিভিন্ন ওষধি গাছের বাগান। আবার এই বাগানের অভ্যন্তরে রয়েছে ১৫০ আসন বিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম, যেখানে সারা বছরের প্রতিটা রবিবারই লেগে থাকে মিটিং। সরকারি প্রচেষ্টায় এত সুন্দর জায়গার জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।
-
বাগানের একাংশ।
কী করে পত্তন হল ‘পরিমল কানন’-এর? বন বিভাগের এই জমিকে আশেপাশের দখলদারি থেকে রুখতে সেই ১৯৮৮-৮৯ সালে মাত্র এক-দেড় একর জমি ঘিরে একটি পার্ক তৈরি হয়। সেই সময় মাইকে করে গ্রামে গ্রামে প্রচার চালানো হত বিকালে পার্কে আসার জন্য। আর আজ এর থেকে বছরে আয় হয় চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ লক্ষ টাকা। এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তৎকালীন শাসকদলের নেতা সুশান্ত ঘোষ। পরে বনমন্ত্রী পরিমল মিত্র উদ্যোগী হন। এটি প্রায় পরিপূর্ণ রূপ দেওয়ার পর পরই এখান থেকে একদিন ফেরার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তার পরই তাঁকে স্মরণ করে এই বাগানের নাম রাখা হয় ‘পরিমল কানন’, যা বর্তমানে আরও সুচারু ভাবে সেজে উঠেছে।
বছরের সব সময়ই এখানে মানুষজন আসেন। তবে শীতকালে গোলাপ-সহ বিভিন্ন ফুলের সৌন্দর্যের আকর্ষণ ‘পরিমল কানন’-এর মহিমাকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। শীতকাল তো এখানে জমজমাট। একসঙ্গে ষাট-সত্তরটি পিকনিক পার্টি পিকনিক করতে পারেন কোনো রকম অসুবিধা ছাড়াই। তবে বর্ষার সময় এখানে প্রকৃতির আর এক রূপ, জানালেন তাপসবাবু। এখানে বসে প্রকৃতির সেই রূপ দেখার সুযোগ কখনোই হাতছাড়া করা যায় না।
-
গোলাপ বাগান
আপনি এখানে পৌঁছোলে কাছাকাছি পেয়ে যাবেন আরও অনেক স্পট। ঠিক পাশেই রয়েছে বিখ্যাত আরাবাড়ি ফরেস্ট রেঞ্জ। দেখা মিলতে পারে হাতির। ২০-২৫ কিমির মধ্যে পেয়ে যাবেন গড়বেতায় অবস্থিত শিলাবতী নদীর তীরে গণগনি। তার পরেই তো বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, টেরাকোটা মন্দির ভাস্কর্যের জন্য যার খ্যাতি বিশ্বজোড়া।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়ার শালিমার টার্মিনাল থেকে সকালে আরণ্যক এক্সপ্রেস বা সাঁতরাগাছি থেকে রূপসী বাংলা ধরে চন্দ্রকোনা রোড স্টপেজ। এ ছাড়া বাঁকুড়া, পুরুলিয়াগামী যে কোনো ট্রেন। সময় লাগে তিন ঘণ্টার মতো। স্টেশন থেকে দেড় কিমি, পেয়ে যাবেন যে কোনো যানবাহন। এ ছাড়া কলকাতা থেকে বাসেও আসতে পারেন, দূরত্ব ১৬৩ কিমি। আর নিজস্ব গাড়ি থাকলে তো সোনায় সোহাগা।
-
ডব্লিউ বি এস এফ ডি এ-র কটেজ।
কোথায় থাকবেন
থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত আছে পরিমল কাননে। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির দ্বিশয্যা এসি পরিবহন কটেজ, নন-এসি বকুল ও বলাকা কটেজ। এ ছাড়া রয়েছে নন-এসি দ্বিশয্যা ঘর ও ডরমিটরি। ফোন ৮৩৩৭০৬৬৮৮২, ৯৭৩২৬৭৭১৮২। অনলাইন বুকিং https://wbsfda.org/